আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গডফাদার-৩১

জামাল বরাবরই ঘুম থেকে দেরিতে উঠে। ততক্ষণে জহির সাহেব বাসা থেকে বেরিয়ে যান, কতদিন আগে যে সকাল বেলা জহির সাহেব জামালকে দেখেছেন মনে নেই। শুধু সকাল বেলা কেন জামাল গভীর রাতে বাসায় ফিরে ততক্ষণে জহির সাহেব ঘুমিয়ে পড়েন। ফলে পিতা-পুত্রের সাক্ষাত হয় খুব কমই। আজ বাসায় ফিরেই জামাল জহির সাহেবের পাঁ ছুয়ে সালাম করল।

জহির সাহেব কোন কিছু না বুঝে অবাক হয়ে জামালের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। জামাল বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে অষ্ফুটস্বরে বলল, বাবা! ছেলের হঠাৎ এমন পরিবর্তন দেখে জহির সাহেবের দু'চোখ সজল হয়ে উঠল তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কী রে? হঠাৎ কী হলো? জামাল বলল, বাবা কয়েকদিন থেকে লোক জন আমাকে বলাবলি করছে, গতকাল কয়েকজন আমার অফিসে এসেছিল, আমি এখনো সম্মতি দিইনি। কী রে? ব্যাপারটা খুলে বল্‌বি তো? কীসের সম্মতি? বাবা সবাই বলছে এবার পৌরসভা নির্বাচনে আমাকে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য। আমার আসলে নির্বাচন করার ইচ্ছা নেই কিন্তু সবাই খুব ধরেছে, আমি বলেছি বাবার সঙ্গে পরামর্শ করি বাবা যদি অনুমতি দেয় তবে আমি আপনাদের প্রস্তাবে সম্মত আছি। কিন্তু তোকে তো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে রায়হান চেয়ারম্যানের সঙ্গে, তুই কি তার সঙ্গে পারবি? বাবা দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে, রায়হান চেয়ারম্যান তিনবার চেয়ারম্যান হয়েছেন।

এলাকার অনেক লোক এখন নতুন মুখ চায়। দোয়া করি বাবা আল্লাহ যেন তোর মনস্কামনা পূরণ করেন। অতঃপর তার মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করল। ফাহমিদাও একইভাবে জামালের জন্য দোয়া করলেন। তারপর জামাল তার বেড রুমে ঢুকে অনন্যাকে বুকে জড়িয়ে ধরল।

অনন্যা মুচ্‌কি হাসি দিয়ে বলল, শুনেছি, তুমি চেয়ারম্যান পদে দাঁড়াবে ভালো কথা তাই বলে স্ত্রীর প্রতি হঠাৎ করে ভালোবাসা উতলে পড়ল কেন? স্ত্রী তো স্ত্রী-ই। অনন্যা তুমি আমার স্ত্রী, সহধর্মিণী। তোমাকে ছাড়া যে আমি অসম্পূর্ণ। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু আগে এই অনুভূতিটা প্রকাশ করতে পারিনি আজ তোমাকে বুকে জড়িয়ে আমার ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশ করলাম।

অনন্যা জামালের বুকে মাথা রেখে ফিসফিস করে বলল, আমার কাছ থেকে তাহলে ভোটের ক্যানভাস শুরু করলে। জামাল অনন্যার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আবেগজড়িত কণ্ঠে বলল, হুঁ। অনন্যা বলল, দেখ আমি তোমার স্ত্রী তুমি ভোট না চাইলেও আমি তোমাকে ভোট দিব, তোমার ভোটের জন্য কাজ করবো। তুমি ভোটে জিতে চেয়ারম্যান হবে তাতে তুমি যেমন আনন্দিত হবে তেমনি আমিও। জামাল মলিনমুখে বলল, অনন্যা তুমি ভাবলে আমি শুধু ভোটের জন্য তোমার সঙ্গে ভালোবাসার অভিনয় করলাম।

আসলে তা না, তুমি প্রথমে আমার স্ত্রী তারপর ভোটার। স্বামী হিসেবে যদি আমি তোমার মন জয় করতে না পারি তবে ভোটারদের মন জয় করব কীভাবে? অনন্যা বলল, তুমি কষ্ট পেয়েছ? আমি আসলে এভাবে বলতে চাইনি, সেদিনই তো আমাদের মন এক হয়ে গেছে, এখন মন জয়ের কথা আসবে কেন? তোমার জন্য মানুষের মন জয় করার পালা এখন শুরু হলো। হ্যাঁ অনন্যা তুমি ঠিকই বলেছ, এখন সময় এসেছে মানুষের মন জয় করার। তুমি আমাকে সহযোগিতা করো আমি যেন চেয়ারম্যান হতে পারি। দেখ আমি একজন সাধারণ গৃহিণী, জীবনে কোনদিন রাজনীতি করিনি, ভোট সম্পর্কে আমার তেমন কোন ধারণা নেই, তুমি কলেজে নির্বাচন করেছ, রাজনীতি করছ, কাজেই তুমি যেভাবে বলবে আমি তোমাকে সেভাবে সহযোগিতা করবো।

তুমি আমাকে নিশ্চিন্ত করলে অনন্যা, আমি মনে করি তুমি তোমার পছন্দের কয়েকজনকে নিয়ে একটা দল গঠন কর। তুমি মেয়েদের কাছে ভোটের ক্যানভাস করবে। আমাকে নির্বাচনে জিততে হবে। আমার দক্ষতা, অর্থ, ক্ষমতা সবকিছু কাজে লাগিয়ে আমাকে জিততে হবে তুমি আমার পার্শ্বে থেকো অনন্যা, বলে জামাল অনন্যার হাত দু'টো নিজের হাতের মধ্যে নিল। অনন্যা জামালের বুকে মাথা রেখে রুদ্ধ কন্ঠে বলল, অবশ্যই থাকবো।

ব্যবসা, রাজনীতি সবকিছু সামলে নিয়ে একটু সুযোগ পেলেই জামাল ছুটে যায় জুঁইয়ের কাছে। জুঁইয়ের মুখের দিকে তাকালেই জামালের সমস্ত ক্লান্তি যেন দুর হয়ে যায়। জামাল গেটে গিয়ে কলিং বেল এ টিপ দিলেই জুঁই গেট খুলে দেয়। একদিন কথা প্রসঙ্গে জামাল বলেছিল, জুঁই তুমি আমার কলিং বেল এ টিপ দেয়ার ধরন বুঝ নাকি? জুঁই মুচকি হেসে জবাব দিয়েছিল, জি। জামাল বাসায় ঢুকলেই জাহানারা নাস্তা তৈরি করতে চলে যায়।

যুথির আরো কয়েকটা পরীক্ষা বাকী আছে তাই তার ব্যস্ততা এখনো কমেনি। জামাল বাসায় ঢুকতেই জুঁইকে একা পেয়ে চুটিয়ে আড্ডা দেয়। শুধু আড্ডা বললে ভুল হবে। ঢাকা শহরে দু'জনে একরকম খোলামেলা মেলামেশা করার পর জামাল সুযোগ পেলেই জুঁইর সঙ্গে আদিম আনন্দে মেতে উঠে, জামাল যেমন ঘরে সুন্দরী স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও নতুনত্বের নেশায় মেতে উঠে তেমনি জুঁইও অর্থের লোভ আর বিবাহ পূর্ব যৌন সঙ্গমের স্বাদ পেয়ে আদিম নেশায় মেতে উঠে। ইদানিং জুঁই দু'একদিন জামালের সঙ্গ না পেলেই উতলা হয়ে উঠে।

কোনকিছুতেই মন বসে না কাউকে কিছু বলতেও পারেনা। মেয়ের মনের অবস্থা জুঁইয়ের মা বুঝতে পারেন কিন্তু সংসারে অনটন আর জামালের ফার্মে জাহিদ চাকরি করে বলে শত কষ্ট মনের মধ্যে চেপে রেখে কৌশলে জুঁইকে আড়াল করার চেষ্টা করে। কিন্তু জামালের প্রতি জুঁইয়ের আগ্রহ আর আসক্তি দেখে তিনি কিছু বলতে পারেন না। নিত্যদিনের মতো জামাল বাসায় ঢুকেই সোজা জুঁইয়ের রুমে চলে গেল। যুথি রুমে তখন পড়ছিল তার মা পার্শ্বে বসে ছিল।

জামাল এক রকম ইচ্ছা করেই যুথিকে ডাক দিল। যুথি ঘরে ঢুকে সালাম দিল। জামাল জিজ্ঞেস করল, তোমার ক'টা পরীক্ষা বাকী আছে যুথি? দু'টা ভাইয়া। কবে পরীক্ষা? পরশু দিন। তবে তো তোমাকে ডেকে ডিসটার্ব করলাম।

জুঁই যুথির দিকে রাগান্বিত স্বরে তাকিয়ে বলল, যুথি তুই যা ভালোভাবে লেখাপড়া কর্। যুথি চলে গেল। যুথি চলে যাবার পর জামাল বলল, জুঁই আজ অনেকক্ষণ থাকবো। জুঁই বলল, থাকবেন। কিন্তু খালা তো অন্যান্য দিনের মতোই নাস্তা তৈরি করতে গেল।

নাস্তা খাবার পর তো মা আপনাকে বের করে দিচ্ছে না। তার চেয়ে তুমি খালা আম্মাকে ডাক দাও, বেশিক্ষণ থাকার একটা ইস্যু তৈরি করি। জুঁই বের হয়ে গেল কিছুক্ষণ পর খালা আম্মা ভিতরে আসতেই জামাল পাঁ ছুয়ে সালাম করল। জাহানারা জিজ্ঞেস করলেন, বাবা হঠাৎ সালামের কী হলো? খালা আম্মা আমি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছি, দোয়া করবেন যেন আমি চেয়ারম্যান হতে পারি। অবশ্যই দোয়া করবো বাবা তুমি যেন চেয়ারম্যান হতে পারো, আল্লাহ যেন তোমার মনস্কামনা পূরণ করেন বলে তিনি চলে যাচ্ছিলেন।

খালা আম্মা। জাহানারা ফিরে দাঁড়ালেন, জি বাবা। খালা আজ আপনার বাসায় ভাত খাবো। জাহানারা অবাক হয়ে বললেন, তুমি ভাত খাবে আমাদের বাসায়? হ্যাঁ অবাক হচ্ছেন কেন? না অবাক হচ্ছি না বাবা, ঠিক আছে তুমি বস আমি রান্না করছি, বলে তিনি চলে গেলেন। জাহানারা রুম থেকে বের হয়ে যাবার পর জামাল তার চেয়ার থেকে উঠে জুঁইয়ের কাছে গেল।

জুঁইয়ের থুতনি উচু করে তার চোখে চোখ রাখল। জুঁইয়ের হাত ধরে তাকে চেয়ার থেকে টেনে তুলল তারপর বাহু বন্ধনে জাড়িয়ে ধরে বুকে সজোরে চেপে ধরল। জুঁইয়ের দু'গাল চুমুতে ভরিয়ে দিল এবং এক পা দু'পা করে হাঁটতে হাঁটতে জুঁইকে বিছানায় শুইয়ে দিল। ততক্ষণে জুঁই জামালের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। বেশ কিছুক্ষণ পরস্পরকে দলিত মোথিত করে ঝড় তুলল।

একজনের ঢেউ অপরজনের উপর আছড়ে পড়ল। দু'জনের শরীর বাদ্যযন্ত্রের মতো বেজে উঠল, সুখের যন্ত্রনায় অস্ফুট শীৎকার দিয়ে একসময় ঝড় থেমে গেল। তারপর দু'জনে নিস্তেজ হয়ে পড়ল। দু'জনে বিছানা থেকে উঠল। জামাল কাপড়-চোপড় গুছিয়ে নিয়ে বলল, জুঁই আমি এখন আসি।

জুঁই বলল, খেয়ে যাবেন, না খেয়ে গেলে মা খুব মাইন্ড করবে। তাহলে তুমি একবার দেখে এসো। জুঁই রান্নাঘরে গিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করল, মা রান্না কি আরো অনেকক্ষণ দেরি হবে? জুইয়ের এলোমেলো চুল অগোছাল কাপড়-চোপড় এবং বিধস্ত মুখচ্ছবি দেখে জাহানারার মাতৃহৃদয় কান্নায় ভরে গেল। তিনি মনে মনে বললেন, ছিঃ কলংকিনী ছিঃ। কিন্তু মুখে কিছুই বললেন না।

মৃদু কন্ঠে বললেন, রান্না শেষ মা তুই যা আমি নিয়ে আসছি। তুমি বসো মা আমি নিজে নিয়ে যাচ্ছি, বলে জুঁই নিজে জামালকে খাবার পরিবেশন করাল। তারপর জামাল বাসা থকে বের হলো। জামাল চলে যাবার ঘন্টাখানেক পর জাহিদ বাসায় ফিরল। জাহিদ বাসায় না ফেরা পর্যন্ত প্রতিদিনই রাতের খাবার বন্ধ থাকে।

জাহিদ বাসায় ফেরার পর সবাই একসঙ্গে খাবার খায়। আজও সবাই খাবার টেবিলে একসঙ্গে খেতে বসল। জুঁই তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে রুমে চলে গেল। জাহানারা জাহিদকে বলল, বাবা জাহিদ তোকে একটা কথা বলতে চাচ্ছি। বলো মা? জুঁই তো লেখাপড়া শেষ করে বসে আছে বয়সও অনেক হয়েছে ওর বিয়ে-শাদী দেওয়া যে খুব জরুরী হয়ে গেছে বাবা।

হ্যাঁ মা আমিও তাই ভাবছি। তবে আর দেরি না করে- মা আমি জামাল ভাই'র ফার্মে চাকরি করি, সামনে জামাল ভাই'র ইলেকশন, ইলেকশন পর্যন্ত আমি ব্যস্ত থাকবো। তারপর না হয়- ঠিক আছে বাবা তবে আমি ততদিনে আত্মীয়-স্বজনদের বলে রাখি ভালো ঘর-বর পাওয়া গেলে ইলেকশনের পর বিয়ে হবে। ঠিক আছে তুমি সবাইকে বলে দাও। চলবে.. গডফাদার-০১  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।