সাঈদীর মানবতা বিরোধী অপরাধের সাক্ষ্য দিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান। ১৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতির সকাল ১০ টা বেজে ৩৫ মিনিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলার ২৬ তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিতে আসেন গুণী এই সাংবাদিক। তিনি সাঈদীর যুদ্ধাপরাধ(মানবতা বিরোধী) মামলার মূল সাক্ষী ছিলেন।
১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ সালে দৈনিক সমকালে প্রকাশিত একটি শিরোনাম সংবাদের ওপর তিনি তিন সদস্য বিশিষ্ট ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে অভিযুক্ত সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম আবেদ খানকে জেরা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম কৌসুলি সৈয়দা হায়দার আলী আবেদ খানের জবানবন্দি গ্রহণে ট্রাইব্যুনালকে সহায়তা করেন। আবেদ খান ট্রাইব্যুনালে তার পরিচয় দেন। তিনি বলেন, আমার নাম আবেদ খান, পেশায় আমি একজন সাংবাদিক। ১৯৪৫ এর ১৬ এপ্রিল আমার জন্ম। সাংবাদিকতায় কিছুদিন পর আমার ৫০ বছর পূরণ হবে।
১৯৬২ সালে আমার সাংবাদিকতা আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়। কিন্তু আমি ছাত্র থাকা কালীন অবস্থায় লেখা লেখির সাথে যুক্ত ছিলাম। ২০০৭ সালে আমি দৈনিক সমকালের সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করি।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি সৈয়দ হায়দার আলী আবেদ খানকে একটি দৈনিক পত্রিকার শিরোনাম সংবাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আবেদ খান ওই সংবাদের সত্যতা স্বীকার করে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, ২০০৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ‘গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে’ শিরোনামের একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধি সংবাদটি প্রেরণ করে। আমি ডেস্কে এটিকে কম্পাইল করে লিড আকারে প্রকাশ করি। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসন চলছিলো। সংবাদ প্রতিবেদনটি কাদের বিরুদ্ধে ছিলও রাষ্ট্রপক্ষের এমন প্রশ্নের জবাবে আবেদ খান বলেন, সংবাদটি জামাতে চার নেতার বিরুদ্ধে ছিলও।
১ নম্বর দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, ২ শাহজাহান চৌধুরী, ৩ গোলাম পারোয়ার ও ৪ আবু তাহের। এই চারজনের নামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিলো ওই প্রতিবেদনে।
সেখানে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো। সাঈদী পাড়েরহাট বন্দরে রাজাকার বাহিনী গঠন করে। সাঈদী ও তার সাত সদস্যর রাজাকার বাহিনী পাড়ের হাটের বিশিষ্ট ধনাঢ্য ব্যবসায়ী নারায়ণ চন্দ্র সাহা, মদন সাহা, বিপদ সাহার দোকানে ও ঘর বাড়িতে লুট পাট চালায়।
ওই লুণ্ঠন কারী দল আল-বদর, আল-শামস ও রাজাকার বাহিনীর সদস্য নিয়ে গঠিত হয়েছিলো।
এ সংবাদ প্রকাশিত হবার পর দেলোয়ার হোসেন সাঈদী পিরোজপুর যুগ্ম জেলা জজ আদালতে আমার বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার মানহানি মামলা করে। ৪/২০০৭ নম্বরের ওই মামলায় আমি পিরোজপুর যুগ্ম জেলা জজের নিকট জবাব দেই। পরবর্তীতে আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়।
আদালতে আবেদ খানের বক্তব্য শেষ হলে তিনি আরো কিছু বলার জন্য আদালতের অনুমতি প্রার্থনা করে।
অভিযুক্ত সাঈদী আইনজীবী এ ধরনের বক্তব্য প্রদানের তীব্র বিরোধিতা করেন। রাষ্ট্রপক্ষ বক্তব্য প্রদানের পক্ষে মত দেন। পরিশেষে আদালত বলেন, আপনি সাঈদীর সাথে প্রাসংঙ্গিকতা রেখে বক্তব্য দিবেন। ট্র্যক ছেড়ে চলে গেলে আমরা সে বক্তব্য রেকর্ডে নেবো না। উত্তরে আবেদ খান বলেন আমি এই যুদ্ধাপরাধ মামলার প্রাসঙ্গিকতা রেখেই বক্তব্য প্রদান করবো।
আবেদ খান বলেন, জামায়াতে প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে মওদুদী। পাকিস্তান প্রস্তাব শুনে তিনি এর বিরোধিতা করেন। তাৎক্ষনিক বিরোধিতা তিনি পাকিস্তানকে নাপাকিস্তান বলে মন্তব্য করেন। ১৯৪৬ এর দেশ বিভাগে পর মওদুদী পাকিস্তানে গিয়ে কাদিয়ানি দাঙ্গায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। পাঞ্জাবের সেই দাঙ্গায় মওদুদীর উসকানিতে বহু কাদিয়ানী মারা যায়।
মওদুদির বিচার হয়। বিচারে মওদুদীর প্রাণ দণ্ডাদেশ হয়। পরবর্তীতে তিনি বিচার থেকে মাফ পেয়ে যান।
একই দর্শন বাংলাদেশের জামাতে ইসলাম এখনো অনুসরণ করে। তারা এদেশে প্রতিটি গণতান্ত্রিক সংগ্রামের বিরোধিতা করেছে।
বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলনকে এরা প্রতিবেশী দেশের চক্রান্ত ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকে তারা একই কায়দায় প্রতিবেশী দেশের ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছিলো। এর প্রতিশোধ নিতে তারা মুক্তিসংগ্রামীদের হত্যা, তাদের মা-বোনদের ধর্ষণ ও বহু পরিবারকে বাস্তুহারা করেছিলো। এদেশের সংখ্যা লঘুদের তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করার পেছনে জামাতের ভূমিকা রয়েছে। ১৯৭১ সালে জামাতিতের অত্যাচারে মানুষ নিরাপত্তার খোজে দিক বি দিক ছোটাছুটি করেছে।
সেদিন শহরে মানুষ গ্রামে আর গ্রামের মানুষ শহরে আশ্রয় নিয়েছিলো।
আবেদ খানের বক্তব্য শেষে জেরা করে অভিযুক্ত সাঈদীর আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। জেরায় আবেদ খান বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জামাতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা অবদুর রহিম তার আত্মীয় , বিশিষ্ট সাংবাদিক আকরাম খাঁ তার আত্মীয়। বৈবাহিক সূত্রে এ দুজন ব্যক্তি আবেদ খানের আত্মীয় হয়েছেন বলে তিনি জানান। মওদুদী তার বই লেখার মাধ্যমে পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগান।
আগামী সোমবার পর্যন্ত জেরা ও সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবি করে ট্রাইব্যুনাল। খবরের সূত্র এই লিংকে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।