আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাওলানা সাঈদীর বিচার

সরকারী সাক্ষীর চরিত্রই সরকারী চরিত্র এমপি সার্টিফিকেট দিলেন সম্মুখযুদ্ধের : সাক্ষী বলেন মুক্তিযুদ্ধ করি নাই ‘মো: সুলতান আহম্মেদ হাওলাদার, পিতা মৃত হোচেন আলী হাওলাদার, গ্রাম চিথলিয়া, ৭ নম্বর শঙ্করপাশা ইউনিয়ন, ডাকঘর পারেরহাট, উপজেলা ও জেলা পিরোজপুর। সে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করিয়া আমার সাথে থাকিয়া সুন্দরবন এলাকায় বীরত্বের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধ করিয়াছে। ’ এটি একটি প্রত্যয়নপত্র। পত্রটি দিয়েছেন পিরোজপুর সদর আসনের এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ এ কে এম এ আউয়াল।

চিঠি ইস্যুর তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০। প্রত্যয়নপত্রটি যাকে দেয়া হয়েছে সেই সুলতান আহম্মেদ হাওলাদার গত বুধবার ২১ নভেম্বর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরদিন বৃহস্পতিবার জেরার সময় সুলতান আহম্মেদ আদালতে বলেছেন, তিনি কোনো মুক্তিযোদ্ধা নন। তিনি বা তার পরিবারের কেউ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী তাকে জেরা করেন।

জেরার সময় বেরিয়ে এসেছে তিনি কোনো মুক্তিযোদ্ধা নন, বরং কলা চুরিসহ তিনটি চুরির মামলার আসামি। এমপি এ কে এম এ আউয়ালের কাছে গতকাল নয়া দিগন্তের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় এ প্রত্যয়নপত্র বিষয়ে। তিনি বলেন, কাকে কখন কোন চিঠি দিয়েছি তা এ মুহূর্তে মনে নেই। সুলতান আহম্মেদ লোকটি কে তা-ও আমি চিনি না। জেরার সময় সুলতান আহম্মেদকে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী প্রশ্ন করেন, ‘আপনি তালিকাভুক্ত কোনো মুক্তিযোদ্ধা কি না?’ তখন সুলতান আহম্মেদ বলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধাই নই’।

মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী তখন প্রশ্ন করেন- ‘আপনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য পিরোজপুর সদর এমপি এ কে এম এ আউয়ালের কাছে দরখাস্ত করেছেন এবং এমপি আপনাকে ডিও লেটার দিয়েছেন। তখন সুলতান আহম্মেদ বলেন, ‘সহায়ক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য দরখাস্ত করেছি। মুক্তিযোদ্ধার সমর্থনকারী হবার জন্য। ’ এরপর মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী স্পষ্ট করে জানতে চান মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য দরখাস্ত দিয়েছেন কি না? তখন তিনি বলেন, না। সাক্ষী সুলতান আহম্মেদকে কলা চুরির মামলায় পিরোজপুর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জেল দেন সুলতান আহম্মেদকে।

পিরোজপুর জজ কোর্ট সে সাজা বহাল রাখেন। বর্তমানে হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে মামলাটি। এ ছাড়া সুলতান আহম্মেদের বিরুদ্ধে ট্রলার চুরির দায়ে অপর দু’টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে বরিশালে। জেরার সময় এসব মামলার কথা স্বীকার করেছেন সুলতান আহম্মেদ। তার বিরুদ্ধে জোর করে চরের জমি দখলে রাখারও অভিযোগ রয়েছে।

সুলতান আহম্মেদ সম্পর্কে এসব তথ্য প্রকাশ করে মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা আদালতকে জানান, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তি হয়ে ভাতা গ্রহণ, চুরির মামলা থেকে খালাস পাওয়া, চিথলিয়া চরে ১০ বিঘার মতো জমি দখল অব্যাহত রাখা, সরকারি আর্থিক সুবিধা গ্রহণ এবং আরো সরকারি সুবিধা গ্রহণের আশায় সুলতান আহম্মেদ আদালতে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে জঘন্য অপবাদ দিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষী সুলতান আহম্মেদ এ অভিযোগ সত্য নয় বলে জবাব দেন। গত বুধবার সুলতান আহম্মেদ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে চতুর্থ সাক্ষী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দেন। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত চারজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিলেন। এর মধ্যে তিনজনের বিরুদ্ধে চুরির মামলা হয়েছে বিভিন্ন ঘটনায়।

এ ছাড়া অন্য মামলাও রয়েছে এ তিন সাক্ষীর বিরুদ্ধে। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার বাদি এবং প্রথম সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদার চুরির মামলায় জেল খেটেছেন। পরে তিনি এ সাজা থেকে খালাস পেয়েছেন বলে আদালতে বলেছেন। এ ছাড়া স্ত্রীর যৌতুক মামলায় তার সাজা বহাল রয়েছে এবং বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী রুহুল আমিন নবিনের বিরুদ্ধেও বিদ্যুৎ চুরির মামলা হয়েছে বলে আদালতে তথ্য প্রকাশ করেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা।

গত বৃহস্পতিবার চতুর্থ সাক্ষী সুলতান আহম্মেদের বিরুদ্ধে তিনটি চুরির মামলার তথ্য প্রকাশ পেল। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী ছিলেন রুহুল আমিন নবিন। মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা সাক্ষী রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে বিদ্যুতের মিটার টেম্পারিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ চুরির মামলায় জেল খাটার অভিযোগ আনেন। এ ছাড়া তিনি পূবালী ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বরফ কল স'াপন করেন এবং ব্যাংক লোন শোধ না করায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। তার বরফ কল নিলামে তুলে পারেরহাট বাজারে ঢোল পেটানো হয়।

বর্তমান মামলায় সাক্ষী দেয়ার বিনিময়ে সাক্ষী রুহুল আমিনের বিপুল অঙ্কের সুদ মওকুফ করা হয়েছে এবং সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পেয়ে চলতি মাসেই তিনি ব্যাংকের আসল লোন শোধ করেছেন বলে আদালতকে জানান মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিলের মামলায় অপরাধ স্বীকার করে জরিমানা দিয়ে তিনি মুক্তি পান বলেও জানানো হয়। মামলার বাদি ও প্রথম সাক্ষী মাহবুবুল আলম হাওলাদারের বিরুদ্ধেও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ করেছেন মাওলানা সাঈদীর আইনজীবীরা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।