আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

''বিশ্বভালবাসা দিবস'' প্রেক্ষিত বাংলাদেশ।

চাই। আজ বিশ্ব ব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। যদিও তা আনুষ্ঠানিকভাবে valentines eve নামে গতকাল সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়ে গেছে নানা আয়োজনের মাধ্যমে। আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস,এর উৎপত্তি নিয়ে এই valentines day এর উৎপত্তি নিয়ে বহু ইতিহাস থাকলেও এটি পাশ্চাত্যের ভোগবাদি ও পূঁজীবাদি তথা corporate স্বার্থের একটি content । উৎস, ইতিহাস ঐতিহ্য যাই হোক না কেন বিশ্বের তাবত সুশিল, আধুনিক মনস্ক, ডিজিটাল, সমাজ এটাকে বানিজ্যিকভাবে নিয়েছে যথাযথ ভাবেই।

মূলতঃ২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইটাইন'স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচার-অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দি করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্য খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দি অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেইটাইনের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদন্ড দেন।

সেই দিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেইটাইন'স স্মরনে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন' দিবস ঘোষণা করেন। খৃষ্টানজগতে প্রাদ্রী-সাধু সন্তানদের স্মরন ও কর্মের জন্য এ ধরনের অনেক দিবস রয়েছে। যেমন : ২৩ এপ্রিল - সেন্ট জজ ডে, ১১ নভেম্বর - সেন্ট মার্টিন ডে, ২৪ আগস্ট - সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে, ১ নভেম্বর - আল সেইন্টম ডে, ৩০ নভেম্বর - সেন্ট এন্ড্রু ডে, ১৭ মার্চ - সেন্ট পযাট্রিক ডে। পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্ম দিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য।

তাই গির্জা অভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা কসুর করে না। খৃস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন উৎসব পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উৎযাপন করা নিষিদ্ধ দেয়। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানীতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়। বর্তমানে গোটা বিশ্বেই দিবসটি বিশেষভাবে পালিত হচ্ছে নানা বর্নিল আয়োজনে এ ক্ষেত্রে অঘোষিত পৃষ্ঠ পোষকের ভূমিকা পালন করছে সব ধরনের মিডিয়া যতটা না দিবসটির কারণে তার থেকেও বেশী বাণিজ্যিক কারণেই।

বর্তমান কালে, পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যায় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকোলেট, অন্যান্য উপহার সামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করতে, এবং আনুমানিক প্রায় ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদাপ্রদান করা হয়। ফুলের আধিকাংশই লাল গোলাপ, প্রেমের সিম্বল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ দিনটিকে টার্গেট করে তারকা মানের হোটেল থেকে শুরু করে রিসোর্ট, বিনোদন কেন্দ্রগুলো ব্যস্ত থাকে নানা বিধ পার্টি, যুগল বন্দি নাচ সহ বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজনে যার কোনটাই ফ্রি নয় সবার জন্য উম্মুক্ত তো নয়ই। ১৯৯৩ সাল হতে এই দিবসটি বাংলাদেশে পালন করা শুরু হয়, যার অন্যতম পুরোধা বিশিস্ট সাংবাদিক, মুক্তিবুদ্ধির অন্যতম একজন ধারক বাহক, পাশ্চাত্য মনস্ক জনাব শফিক রেহমান এর হাত ধরে।

প্রথমত তৎকালিন সাপ্তাহিক যাযাদির মাধ্যমেই তিনি এটা শুরু করেন, এটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সক্ষম হন। আমাদের কলেজ লাইফের একেবারে শুরুতে এর ছিটে ফোঁটা না পেলেও শিক্ষা জীবনের শেষ প্রান্তে এসে একটু একটু করে ডানা মেলতে শুরু করে এই দিবস। বিশেষভাবে যাযাদির ভালবাসা দিবসের সংখ্যাগুলো তখন অগ্রিম বুকিং না দিলে পাওয়াটাই দুস্কর ছিলো, ভালবাসা দিবস সংখ্যায় পাঠকের লেখা ভালোবাসার অসংখ্য গল্পই শুধু নয়, ১৪ই ফেব্রয়ারীতে দিনভর যাযাদির সেইসব তরুন লেখকদের নিয়ে আয়োজন থাকত নানা কর্মসূচীর। পরবর্তীতে যাযাদি কার্যালয়ের সম্মুখের সড়কটির নামকরণ করা হয় লাভ রোড হিসেবে। তার লাল গোলাপ অনুষ্ঠানটি এখোনো প্রচাতি হয়,যেমন আজো হবে বাংলাভিশনে রাত ১১.২৫ মিনিটে।

সেই যে শুরু ভালোবাসা দিবস পালনের, সেলফোন কোম্পানীগুলোর বিভিন্ন প্যাকেজের কল্যানে (ডিজুস, জয় পার্টনার হালের আড্ডা) ভালোবাসা ভালোভাবেই ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের সারাদেশের তরুন সমাজের নিকট মোবাইল প্রেম নামে আরো একটি কর্পোরেট কনটেন্ট হিসেবেই গ্রামীন ফোনের ডিজুস প্যাকেজের মিলার গাওয়া সেই জিঙ্গেলে “তুমি কি সারা দেবে, তুমি কি আবার সারা দেবে” এর সাথে মিলা কেই গিলে দিয়েছে তাদের কাছে। ভালোবাসা দিবসের বাঁধ ভাঙা ভালোবাসা আমাদের জাতীয়, সমাজ, রাষ্ট্রীয় কোন ব্যবস্থাকেই ভালোবাসার বন্ধনে বাঁধতে সাহায্য না করলেও,দেশব্যাপী তৈরী করেছে লাখো, পরিমল, মানিকদের মত লুল ও অগনিত আধুনিক রোমিও ইভটিজার যাদের সহিংস লোলুপ ভালোবাসায় পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে কত না তরুনীর জীবন। প্রভা, মিলা, শখ, শারিকা, পোড়শীর মত হাজারো হট জুলিয়েটরা দেশ ব্যাপী আধুনিকতার নতুন সংজ্ঞার সাথে, ব্যক্তি স্বাধিনতা, সম্ভ্রব, ভালোবাসার নতুন ব্যাখ্যা দিয়ে নিজেদের অপকর্মগুলোকেই পুঁজি করে বহাল তবিয়তে সেলিব্রেটি ইমেজ নিয়ে আমাদের রক্ষন শীল ইমেজের বারোটা ঠিক বাজিয়ে ছেড়েছে। সেই সাথে মফস্বল শহরে এমন কি থানা সদরেও পারসোনা কনটেন্ট নিয়ে ঠিকই ভালোবাসার বিকিকিনি করে চলেছে তথাকথিত বিউটি পার্লার নামের মিনি মিনি শারিরীক বিনোদন কেন্দ্রগুলো।

আজ শুধু ভালোবাসা দিবসেই নয় থার্টি ফাষ্ট, পহেলা ফাল্গুন, পহেলা বৈশাখ সবগুলোকেই পন্য বানিয়ে এদেশে ব্যবসা করে যাচ্ছে একটি বিরাট চক্র সেখানে মিডিয়া নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থেই ভালোবাসার সরাসরি সম্প্রচারে নেমে পড়ে, শুধু দিবস ভেদে রঙ ও ঢঙে পরিবর্তন হয় তবে টার্গেট একই থাকে। আজো যেমন চ্যানেলগুলো মধ্যরাত অব্দি ব্যস্ত থাকবে ভালোবাসার সম্প্রচারে। কিন্তু একটু ভালোবাসা যেখানে বদলে দিতে পারত সমাজ, পরিবেশ, ক্রমশ হিমালয় পর্বত হয়ে ওঠা ফল্টিসিষ্টেম কে এমন কি গোটা বাংলাদেশটাকেই। সেখানে এতে ব্যাপক ভালোবাসা আমাদের সমাজের সন্ত্রাস, ব্রোকেন হাউজ ফ্যামিলী, বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকিয়ার বলী শত শত প্রাণ, কোনটাকেই কমাতে কিংবা দমাতে তো পারেইনি সেই সাথে বিগড়ে দিয়েছে আমাদের আগামী নেতৃত্ব তরুন সমাজকে। পরিশেষে ভালোবাসা দিবসে,সন্তানের প্রতি পিতার চিরন্তন ভালোবাসার ছোট একটি উদাহরণ দিতে চাই, আমার নিজের প্রত্যক্ষ করা ,কোন এক ছোট আবাসিক হোটেলে কর্মরত, সম্পূর্ণ অশিক্ষিত গরীব কর্মচারীর জীবন থেকেই।

তার প্রথম সন্তানটি কন্যা সন্তান , জন্মগতভাবে অসুস্থ সন্তানটি, আল্লাহর মেহেরবানিতে বিগত আড়াই বছর টিকে আছে শুধু তার অসাধারণ ত্যাগের জন্য, কেননা সন্তানটিকে প্রতি মাসেই শ্বাস কষ্টের জন্য নেবুলাইজার দিতে হয়,হাসপাতালে নিতে হয়। মায়ের বুকের দুধ না পেলেও টিকে আছে চড়াদামে কেনা বেবিফুডের কল্যাণে অথচ জানামতে কত রাত সে না খেয়ে কাটিয়েছে, নিজে অসুস্থ হলেও সন্তানটিকে বেসরকারী হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করিয়েছে প্রায় তিন সপ্তাহ যাবত। গত শনিবারে তার দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়েছে তাও সিজারীয়ান বেবি, চড়ম অর্থ কষ্টের মধ্যেই জমীর ফসল অগ্রিম বিক্রি করে, ছাগল বিক্রি করে এবং বাকিটা ঋণ নিয়ে আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলো, আলোবাসার সেই মহেন্দ্রক্ষনটির জন্য। হয়তোবা আল্লাহ তাকে হতাশ না করে দ্বিতীয় সন্তান হিসেবে একটি পুত্র সন্তান দিয়েছেন। যদিও টাইফয়েড, ওর নিজেকেই আক্রান্ত করেছে তবুও দমাতে পারেনি পিতার ভালোবাসা, তাই সে প্রচন্ড জ্বর নিয়ে কাঁপতে কাঁপতেই হাজির থাকে স্ত্রী-সন্তানের পাশে, অসুখে ভেঙ্গেপড়া শরীর নিয়েই পুরো দিন সদর হাসপাতালে পড়ে থাকে দুটি সন্তানের জন্য আদি অকৃত্রিম ভালোবাসাময় বাবা হয়ে।

এমন ভালোবাসার কারনেই আজো টিকে আছে আমাদের সমাজের পরিবার প্রথা, পিতামাতার ভালোবাসা ,চড়ম বানিজ্যিক তথা কর্পোরেট যুগেও সবাই গা-ভাসিয়ে প্রফেশনাল নামের রোবট হয়ে যায়নি । বিশ্বভালোবাসাদিবস বাংলাদেশ সহ বিশ্বব্যাপি যেকোনভাবে পালিত হলেও আমদের মত একেবারে নগন্য মানুষের তাতে কিছু নাহলেও, এই দিনটি আমাদের মাঝে সার্বজনিন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা সঞ্চার করুক সেই আশাবাদ ব্যক্ত করে সবাইকে নিরন্তর ভালোবাসা জানিয়ে বিদায় নিলাম।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।