আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হানস ফাল্লাদার কথা সাহিত্যে ফ্যাসিবাদ বিরোধীতা

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই মূলঃ জোনাহ রাস্কিন ভাষান্তরঃ মেহেদী হাসান আলোচ্য প্রবন্ধে হানস ফাল্লাদার “এভরি ম্যান ডাইস এলোন”, “উলফ এমং উলভস”, “দ্যা ড্রিঙ্কার” এবং “দ্যা লিটল ম্যান, হোয়াট নাউ?”- এই উপন্যাস গুলো ধরে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনার পথ ধরে স্বাভাবিক ভাবে এসে পড়েছে, জেনী উইলিয়ামস এর লেখা ফাল্লাদার জীবনী গ্রন্থ “মোর লাইভস দ্যান ওয়ান” বইটিও। ফ্যাসিজমের আওতার মধ্যেকার মানুষের জীবনকে কেন্দ্র করে লেখা পাঠক হৃদয় স্পর্শ করে যাওয়া যত বই পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মহৎ সৃষ্টি- “দ্যা ডায়েরী অফ এ ইয়ং গার্ল” বইয়ে- ডাচ তরুণী অ্যানা ফ্রাঙ্কের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে-“ পালিয়ে গিয়েও ফ্যাসিজমের করালগ্রাস হতে রেহাই পাওয়া যায় না”। এলিয়েনর রুজভেল্টের মুখবন্ধ সহ ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত অ্যানা ফ্রাঙ্কের ডায়েরী, কনস্ট্রেশন ক্যাম্প এবং গ্যাস চেম্বারের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার প্রত্যাশায় ইহুদীদের জীবনে প্রতিদিনের তড়পানি সমন্ধে পুরো পৃথিবীকে সজাগ করে তোলে। ফ্রাঙ্কের বলা গল্পগুলো মঞ্চস্থ ও হলিউডে মুভি নির্মিত হয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল, কিন্তু বইটি নিজেও মানুষের মনে অনুরণিত হয়েছিল- এখনও যেমন হয়- বইটির মধ্যে আছে নিদারুন বাস্তবতার সমূহ চিত্র এবং অনুপাঙ্খিক বর্ণনা যা কালের প্রবাহমানতায় সহজেই মুছে যাবার নয়।

একই সাল, ১৯৪৭, দেখতে পায় বিংশ শতাব্দীর জার্মান সাহিত্যের হারিয়ে যাওয়া মানুষ হানস ফাল্লাদার শেষ উপন্যাস “এভরিম্যান ডাইস এলোন” এর প্রকাশনা। “ফ্র্যাঙ্কের ডায়েরীর” মত ফাল্লাদার “এভরি ম্যান ডাইস এলোন” উপন্যাসটি ফ্যাসিবাদের ধ্বংসাত্মক শক্তি সমন্ধে এবং ভয়ে লুকিয়ে থাকা মানুষদের প্রতি ঘটে যাওয়া লোমহর্ষক ঘটনাগুলোর প্রতি পুরো পৃথিবীর মানবিকবোধ সম্পন্ন পাঠকদেরকে সজাগ করে তোলে। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র গুলো ইহুদী নয়, নয় কোন ধর্মীয় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত; এমনকি মার্ক্স, এঙ্গেলস অথবা রোজা লুক্সেমবার্গের ভাবাদর্শকে পর্যন্ত অনুসরণ করে চলেনা। “এভরি ম্যান ডাইস এলোন” ফ্যাসিবাদ সমন্ধে কয়েকটি পরস্পর বিজড়িত গল্প পরিবেশন করে যেগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বার বার করে বলা হতে থাকে মূলগল্পের প্রতিধ্বনিমাত্র নয়। যে সমাজের সাথে ফাল্লাদা সারা জীবন ধরে সংগ্রাম করে আসছে, তার বলা গল্পগুলো কোনভাবেই সেই সমাজের গতিপ্রক্রিয়ার বাইরের কোন বিষয় নয়।

বাস্তবিক পক্ষে, এতগুলো বছর কেটে যাওয়ার পরও তার উপন্যাসগুলো পূর্বের যে কোন সময়ের মত পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে সক্ষম ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধের সবচেয়ে যন্ত্রনাদায়ক দিক এবং কিভাবে ফ্যাসিবাদ প্রত্যেকটি জনমানুষের জীবনকে বিষাক্ত ও পুরো সমাজকে দূষিত করে তোলে। “এভরি ম্যান ডাইস এলোন” উপন্যাস, তার স্রষ্টা হানস ফাল্লাদা এবং তার অন্যান্য সৃষ্টিকর্মগুলো কালোত্তীর্ণ যা সময় সময়ে পুনরাবিষ্কার করতে হয়। ফাল্লাদা তার সময়ে সবচেয়ে পঠিত ঔপন্যাসিক ছিলেন, যদিও সে বর্তমান সময়ে থমাস মান, বারলট ব্রেচট, আলফ্রেড ডবলিন এবং হারমান হেসদের মত লেখকদের কাছাকাছি অবস্থানেও নেই- এদের প্রত্যেকে জার্মান ভাষায় লিখতো এবং বহু ভাষায় তাদের সাহিত্যকর্ম অনুবাদ হয়েছিল। অংশত, ফাল্লাদা কখনই বারলট ব্রেচট বা থমাস মানদের মত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় নি কারন তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের উত্থান-পতন যেমন ঘটেনি তেমনি তার জীবন অন্যদের মত এত প্রশংশনীয়ও ছিল না। ফ্যাসিবাদী সরকারের চোখে সে ছিল পথভ্রষ্ট যদিও সে মননশীল মহান শিল্পী ও সহানুভূতিশীল মানবতাবাদী একজন মানুষ।

দীর্ঘ সময় ধরে মাদকাসক্ত এবং অপরাধপ্রবণতায় ভোগা- অর্থ আত্মসাৎকারী ও একজন চোর- ফাল্লাদার জীবনের সাড়ে সাত বছর বিভিন্ন গরাদে এবং মানসিক হাসপাতালে কাটে, মানসিক জটিলতা ও ভারসাম্যহীনতার তীব্র দহনে। মান, ব্রেচট, ডবলিন এবং অন্যান্যদের থেকে পুরোপুরি আলাদা- সে ছিল পুরোদস্তুর বেখাপ্পা, প্রথাবিরোধী এবং সর্বোতভাবে নিজেকে একজন জার্মান নাগরিক হিসেবে দাবী করা সত্ত্বেও সমাজ বহিঃস্কৃত একজন মানুষ। সে কৈফিয়ত দেওয়ার সুরে বলেছিল, অন্যান্য বড় শিল্পীদের মত দেশের বাইরে গিয়ে সাহিত্য তৈরী করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, আমি জার্মানীর এত গভীরে প্রোথিত যে অন্য কোথাও গিয়ে সাহিত্য চর্চার কথা কল্পনায়ও আনতে পারিনা। অন্য একটি বিষয় উপলক্ষে সে মন্তব্য করেছিল এই বলে যে, একজন জার্মান নাগরিক হিসেবে আমি দেশের বাইরে গিয়ে ইন্দ্রজালিক সুখভোগের চেয়ে এই অভিশপ্ত ও একই সাথে আশীর্বাদপুষ্ট জাতির অভ্যন্তরে কোনরকমে বেঁচেবর্তে থাকাকেই অনেক বেশী শ্রেয় মনে করি। থার্ড রাইখের উত্থান থেকে শুরু করে তার পতন পর্যন্ত ফাল্লাদা জার্মানীতে বসেই জার্মান ভাষায় অবিরাম লেখে গেছেন।

তার সবচেয়ে ভালোমানের উপন্যাস, “উলফ এমং উলভস” ১৯৩৭ সালে প্রথম আলোর মুখ দেখে, যখন ফ্যাসিবাদ জার্মানীতে খুব ভালভাবেই তার অপচ্ছায়া বিস্তার করে ফেলেছে এবং পুরো ইউরোপ জুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে। এই উপন্যাসের পঁচাত্তরতম প্রকাশনা বার্ষিকী- ফাল্লাদার ক্লাসিক সমূহ ও তার অন্যান্য সৃষ্টিকর্মগুলোকে (“এভরি ম্যান ডাইস এলোন” সহ) পুনঃপাঠ এবং লেখকের ক্ষত-বিক্ষত ও বঞ্চিত-লাঞ্ছিত জীবনের উপর নজর বোলানোর যৌক্তিকতা/উপযোগীতা উপস্থাপন করে। এই প্রকাশনা বার্ষিকী একদিকে যেমন সংস্কৃতি ও সাহিত্যে সৃষ্টিশীলতার মধ্যকার পারস্পারিক সম্পর্ক এবং অন্যদিকে তেমনি ফ্যাসিবাদ ও সেন্সরশীপের মধ্যকার ক্রিয়াকলাপকেও বিবেচনা করার সুযোগও তৈরী করে। বিংশ শতাব্দীতে সম্ভবত ফাল্লাদার মত অন্য কোন শক্তিশালী জার্মান লেখক ফ্যাসিবাদের সাথে এত বেশী ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েনি। অবশ্য আরো কিছু লেখক ফ্যাসিবাদের নৃশংসতার শিকার হয়েছিল তার মতই তীব্র এবং প্রত্যক্ষ্য ভাবে- তারা যেন বেঁচে গিয়েছিল তাদের উপর ফ্যাসিবাদী নির্যাতনের গল্পগুলো বলার জন্যই।

ফাল্লাদার সর্বোতকৃষ্টমানের চারটি উপন্যাস- “লিটল ম্যান, হোয়াট নাউ?”, “উলফ এমং উলভস”, “এভরি ম্যান ডাইস এলোন” এবং “দ্যা ড্রিঙ্কার”- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেলভিক হাউজ প্রকাশনী থেকে ইদানিং পুনঃপ্রকাশিত হয়; এই নতুন ভারশনগুলোতে ফাল্লাদাকে নিয়ে দুর্দান্ত কিছু প্রবন্ধ অন্তর্ভূক্ত হয়, যেগুলো উপন্যাসের চরিত্র সৃষ্টিতে তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার উপর দৃষ্টিক্ষেপন করে। রুডলফ ভেলহেম ফ্রেডরিখ ডিটজেন ১৮৯৩ সালে জার্মান মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করে এবং হানস ফাল্লাদা ছদ্মনামে ১৯১৯ সালে হাতে কলম তুলে নেয়। ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য চর্চার দিকে তার লক্ষ্য অবিচল থাকে যদিও আইন-আদালতের সাথে তার বিরামহীন যুদ্ধ এবং নানা ধরনের বন্দীত্বের কারনে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়- উল্টো, এগুলো তার লেখার কাজে অনেক সমৃদ্ধ উপাদান সরবরাহ করে। ফাল্লাদার তিন নম্বর উপন্যাস “ক্লেইনার ম্যান্ন- ওয়াজ নান?”, প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথেই জার্মানীতে সর্বোচ্চ বিক্রির মর্যাদা লাভ করে। “ লিটল ম্যান, হোয়াট নাউ?” শিরোনামে ইংরেজীতে অনুবাদিত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বুক অফ দ্যা মানথ ক্লাবের নির্বাচন লাভ করে, এই উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে একই শিরোনামে জনপ্রিয় মুভিও নির্মিত হয় হলিউডে।

এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার আশি বছর পর এটা জার্মান সমাজে একটি দুয়ার খুলে দেয় যেহেতু এটা ত্রিশের দশকের প্রথমদিকে ফ্যাসিবাদের উত্থানের কালে আলোর মুখই ঠিক মত দেখে উঠতে পারেনি। এই উপন্যাসটি থমাস মানের পরিভাষায়, “জীবনের বেদনাদায়ক সত্য” হিসেবে পরিগণিত এবং ইংলিশ ঔপন্যাসিক গ্রাহাম গ্রীন এই বইটির দেদীপ্যমান চরিত্রগুলোর প্রশংশায় যারপরনাই পঞ্চমুখ হয়ে উঠেন। ছোট লোক বা আসলে কোন মানুষই নয়- হানস পিনেবার্গ ক্ষুদ্র অস্তিত্বে পর্যবসিত। তার বউ এম্মা হচ্ছে, “লিটল ওম্যান” এবং হরস্ট- দ্যা “শ্রিম্প”-তাদের সন্তান যে ভূমিষ্ট হয়েছে এবং বেড়ে উঠছে বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি এবং অস্থিরতার মধ্যে। এম্মা কম্যুনিস্ট পার্টির রাজনীতিকে ধারণ করে; হানস কম্যুনিস্টদের ভোট দেওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেও কখনও দেয়া হয়ে উঠেনা।

বুর্জোয়া অভিজ্ঞতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক চাকরী তাকে বামপন্থীদের সাথে একাত্ম হতে বাধাগ্রস্ত করে। ইতিমধ্যে তার সহ-কর্মীরা ফ্যাসিবাদের সাথে হাত মিলিয়ে ফেলেছে। পিনেবার্গদের মত ভদ্র মানুষগুলোর উপরই সাধারনত খারাপ জিনিসগুলো ঘটে যায়। বড় লোকরা এবং বিশাল, অন্ধ সামাজিক শক্তিগুলো তাদেরকে বিভিন্ন দিকে ঠেলে দিতে থাকে। সুখী সংসার তৈরী করতে এবং একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পিনেবার্গের উদযোগকে ফাল্লাদা অনুপুঙ্খ চিত্রিত করেছেন যদিও ভালবাসা বা মিতব্যায়িতা কোনটিই অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট নয় এবং রাজনৈতিক বিশ্ব ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে।

তারা তড়িৎ বুঝে ফেলে, “তুমি যখন গরীব তখন সকল কিছুই জটিল থেকে জটিলতর হতে শুরু করবে”। উপন্যাসের শেষ পর্যায়ে, পিনেবার্গ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে একটি দোকানের জানালার কাঁচে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়ে চমকে উঠে। “প্রচুর টাকা-পয়সা উপার্জনকারী ভালো ভালো পোশাকে সজ্জিত হওয়া শ্রদ্ধেয় লোকজনদের” দ্বারা পরিবেষ্টিত অবস্থায় “কলারবিহীন একটি জীর্ণ কোট গায়ে হাড্ডি চর্মসার ফ্যাকাশে” হানস পিনেবার্গ দাঁড়িয়ে। সে খুব সহজেই সত্যকে ধরে ফেলতে সক্ষম হয়, “সে এখন এই সমাজের কেউ নয়, এই সমাজ তাকে আর ধারণ করে না এবং তাকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার মধ্যে সমাজের পক্ষে অবাস্তব কিছু নেই”। শেষ অধ্যায়ে লেখক ঘোষণা করে, একাকীত্ব ছাড়া আর কোন কিছুই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে না।

লিটল ম্যান, হোয়াট নাউ?- প্রকাশিত হওয়ার পাঁচ বছর পর সর্বোতকৃষ্ট এবং সবচেয়ে বেশী ছড়িয়ে পড়া উপন্যাস “উলফ এমং উলভস” প্রকাশিত হয়। সুবৃহৎ জাতিসত্ত্বার সঠিক চিত্র, জীবনের নানা স্তর থেকে উঠে আসা জটিল জটিল সব চরিত্র এবং বিশাল সামাজিক প্রেক্ষাপট যা ঐ সময়ের জার্মান জীর্ণ সমাজব্যাবস্থাকে তুলে ধরে ঠিক যেরকম বিশের দশকের প্রথমদিকে তা খন্ড-বিখন্ড হয়ে গিয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং ভার্সাই চুক্তি ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতকে সামনে নিয়ে আসে। ব্যাভারিয়ান সরকারকে ফেলে দিতে হিটলার কর্তৃক শুরু হওয়া ১৯২৩ সালের ব্যার্থ অভ্যুত্থানের ঘটনাকে ফাল্লাদা তার নিজস্ব কায়দায় উপন্যাসের শেষদিকে পরিবেশন করে। হিটলার অথবা তার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কেউ “উলফ এমং উলভস” উপন্যাসে আবির্ভূত হয় নি কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, উপন্যাসে বর্ণিত একটি গুপ্ত সংগঠন ও ব্যার্থ অভ্যুত্থান এই ধরনের ঐতিহাসিক ঘটনারই প্রতিফলন ঘটায়।

এই ষড়যন্ত্রকারীরা প্রত্যেকে প্রচন্ড রকম ঘৃণ্য, অহংকারী, নৃশংস ও ধর্ষকামী জীব হিসেবে আবির্ভূত হয়। তাদের মধ্যে আছে এমন একজন পিশাচ, যে কোন ধরনের কারন ছাড়াই শুধু মাত্র হত্যার খাতিরে মানুষ হত্যা করে। ফাল্লাদা ৮০০ পৃষ্ঠার এই মহৎ শিল্পকর্মটি ১৯৩৬ সালের জুলাই থেকে শুরু করে ১৯২৭সালের মে পর্যন্ত- মাত্র দশমাসের মধ্যে সম্পন্ন করে ফেলে। “উপন্যাসটি আমি একটানে লিখে শেষ করে ফেলি, লেখার সময় আশেপাশে এমনকি ডাইনে বামে পর্যন্ত তাকাইনি” ফাল্লাদা আমাদেরকে জানায়। ১৯৩৬-১৯৩৭, এর মধ্যে তার না লিখে আর কোন রাস্তা ছিল না এবং ঐ সময়কালীন ভয়ানক রাজনৈতিক তোলপাড় তার লেখার কাজকে বিপর্যস্ত করে ফেলতে পারেনিঃ নুরেমবার্গ আইন পাস যা ইহুদীদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয়, কনসেন্ট্রশন ক্যাম্প খোলা; এবং জার্মান সৈন্য কর্তৃক ইউরোপ আক্রমন ও তা দখল করে ফেলা।

প্রথম বাক্য হতে- “একটি মেয়ে এবং একজন পুরুষ ছোট খাট একটা লোহার খাটে শুয়ে ঘুমাচ্ছিল”- শেষ লাইন পর্যন্ত-“শুভ, শুভ রাত্রি”- উপন্যাসটি সচেতন এবং পরিকল্পিতভাবে প্রধান চরিত্রগুলোর জীবনের সকলদিক পর্বেক্ষণ করতে করতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। উপন্যাসটির শিরোনাম রূপক বা আক্ষরিক দু রকম অর্থেই বোধগম্য হয়। ফাল্লাদা আমাদের শোনায়, “এটা ছিল আগ্রাসনের যুগ, ধর্ষকামী সময়”। বন্ধু-বান্ধবের কাছে “উলফ” নামে পরিচিতি লাভকারী নায়ক চরিত্র উলফগ্যাং পাজেল বাদে অধিকাংশ চরিত্রই লুটপাটপরায়ণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ফেরত একজন সফল বুর্জোয়া শিল্পীর ছেলে উলফ, জুয়া খেলার প্রতি চরমভাবে আসক্ত।

বার্লিনের ডেমিমন্ডে কোকেইন আসক্ত লোকজন এবং বেশ্যাদের সাথে জুয়া খেলার টেবিলে(রাউলেট) বসে এক লক্ষ মার্ক হেরে যায়। তার আদরের প্রেমিকা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে প্রেরিত হওয়ার পরও তাকে জুয়া খেলা নিয়েই পড়ে থাকতে দেখা যায়। উপন্যাসের অধিকাংশ সময় জুড়ে পাঠক প্যাজেলকে নিজের কাজের কোন ধরনের দায়িত্ব নিতে অপারগ একজন বদমাশ হিসেবেই ছুড়ে ফেলে দেয়। পর্যবেক্ষণ করা, নিজের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসা, সর্বোপরি একজন মানুষ হয়ে উঠার মত উল্লেখযোগ্য শক্তি-সামর্থ্য এখনও তার মধ্যে অবশিষ্ট আছে। একটি চরিত্র তাকে উল্লেখ করে বলে, সন্তানের পিতা হওয়ার পূর্বে সে অবশ্যই একজন পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠবে।

উপন্যাসের শেষ দিকে প্রেমিকা পেত্রা যখন তাদের সন্তানকে ভূমিষ্ঠ করে, উলফ তখন একজন ব্যাক্তিত্বে পরিণত হয়ে উঠে। এই উপন্যাসের সমাপ্তি, লিটল ম্যান, হোয়াট নাউ? এর চেয়ে যথেষ্ট পরিমাণ সুখী সামাপ্তি। এই কারনেই সম্ভবত যোসেফ গোয়েবলস এটাকে “ সুপার বুক” হিসেবে অভিহিত করে এবং ফাল্লাদার প্রকৃত মেধা আছে- এমনটি উল্লেখ করতেও ছাড়েনি। এতে বোঝা যায় গোয়েবলস এই এই উপন্যাসের ৮০০ পাতা মনঃযোগ সহকারে পড়েনি; আর যদি সে পড়েও থাকে তাহলেও সম্ভবত গুরুত্বের সাথে এর অন্তর্গত অর্থ ঠিক মত বুঝে উঠতে সক্ষম হয় নি। সেন্সরশীপের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য ফাল্লাদাকে যথেষ্ট পরিমাণ বক্রাঘাত, ছদ্মাবরণ, রুপকল্প এবং উপমার আশ্রয় নিতে হয়েছে।

এমনকি যদিও ১৯২৩ সালের ব্যার্থ অভ্যুত্থান এবং অভ্যুত্থানকারীরা এই উপন্যাসটিতে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে, এটা অবশ্য সুস্পষ্টভাবে ভাবাদর্শিক বিষয়গুলোকে নিয়েও আলোচনা করে। আমি কি একজন সংস্কারক? নাকি একজন শিক্ষক? ফাল্লাদা নিজের কাছে প্রশ্ন উত্থাপন করে এবং উত্তরে বলে, “না আমি শুধুমাত্র একজন শিল্পী”। লিটল ম্যান, হোয়াট নাউ? উপন্যাসে যেমন আছে, “উলফ এমং উলভস” এ এমন কোন চরিত্র নেই যে কম্যুনিস্ট বা ফ্যাসিস্টদের সমর্থন করে, যদিও এই উপন্যাসটিতে যে ধরনের অন্তর্গত সামাজিক এবং অর্থনৈতিক শর্তারোপগুলো মানুষকে ফ্যাসিবাদের দিকে ধাবিত করে সেগুলোকেও খুব শক্তিশালী যৌক্তিকতা সহকারে তুলে ধরা হয়েছে। পুরো উপন্যাস জুড়ে টাকা-পয়সা সমন্ধীয় অনেক ব্যাপার স্যাপার আছে সুতরাং এটা বলা যেতেই পারে যে টাকাই হচ্ছে মূল চরিত্রগুলোর অন্যতম। উলফ এমন একটি সমাজ সমন্ধে সত্য উচ্চারণ করে, যে সমাজে সত্যকে দেখে ফেলার অথবা তাকে প্রকাশ করার কোন ধরনের অনুমতি নেই।

যদিও বিশের দশকের জার্মানী এবং বর্তমানের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সুস্পষ্ট কিছু পার্থক্য আছে, তারপরেও এই উপন্যাসটি আমাদের বর্তমান আগ্রাসী সময়কেও রূপক কাহিনী হিসেবে উপস্থাপন করে যা মনে হচ্ছে যেন, ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে এবং যেখানে মানুষরা প্রায়ই প্রত্যাখাত হয় এবং উলফের মত তাদের টাকা-পয়সাগুলো লাস ভেগাসে জুয়ার আসরে এবং শেয়ার ব্যাবসায় ঢেলে দিতে থাকে। “উলফ এমং উলভস” প্রকাশিত হওয়ার পর ফাল্লাদা ধারাবাহিকভাবে লিখতে শুরু করেন কিন্তু তার পরের লেখা বইগুলো সম্যকভাবে রূপকথার মত এবং শিশুদের পাঠ উপযোগী হয়ে উঠতে থাকে। ফ্যাসিবাদ, তার লেখায় ফুটে উঠা স্যাটায়ার এবং তিক্ততাগুলোকে নরম করে নিয়ে আসতে বাধ্য করে, এতে করে এগুলো হয়ে উঠতে শুরু করে আরো কৌশলী এবং গোপনীয়। ১৯৪৪ সালে কারাগার বন্দী থাকা অবস্থায় “দ্যা ড্রিঙ্কার” উপন্যাসটি গোপনে লিখে বাইরে পাচার করে দেওয়ার পরও তার মৃত্যুর তিন বছর অব্দি ১৯৫০ সাল পর্যন্ত অপ্রকাশিত থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ফাল্লাদা তার যথার্থ শিল্পকর্মগুলোকে জনসম্মুখে তুলে ধরতে পারেনি।

তার শেষ সৃষ্টি “এভরি ম্যান ডাইস এলোন” উপন্যাসটিতে জার্মান ফ্যাসিবাদকে একেবারে ভেতর থেকে তার যুদ্ধকালীন ক্ষ্যাপামোর সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত ফুটিয়ে তুলেছেন। ৫০০ এর বেশী পৃষ্ঠা সম্বলিত- বিভিন্ন পর্যায়ের নানা ধরনের চরিত্র ও জটিলতর সামাজিক প্রেক্ষাপটে “এভরি ম্যান ডাইস এলোন” উপন্যাসটিতে “উলফ এমং উলভস” উপন্যাসের তাগড়া ভাব এবং শিল্প দক্ষতা স্থান করে নিয়েছে। একজন পুরষ এবং একজন নারী- অট্টো এবং আন্না কোয়াঙ্গেল- একটি দম্পত্তির জীবন প্রবাহের উপর ফাল্লাদা পুনরায় তার দৃষ্টি নিপতিত করে, যাদের সন্তান যুদ্ধে নিহত হয়েছে এবং এই মৃত্যু তাদেরকে যুদ্ধ ও নাজিবাদ বিরোধী প্রচারণা ছড়িয়ে দিতে প্ররোচিত করে। তাদের প্রতিরোধ কার্যকলাপ অপ্রকাশিতই থেকে যায়, মাঝে মাঝে শুধু পুলিশ, কারারক্ষী এবং নিজেদের কাছে বিষয়টা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। অট্টো পুরোপুরি একজন জার্মান পুরুষ, আন্না একজন নিভৃতচারী সাধারণ জার্মান নারী।

তারা দুজনেই যথাযথভাবে কোমল হৃদয় এবং সজ্জন ব্যাক্তি হলেও- এমন ধরনের মানুষ মোটেই নয় যা ফাল্লাদার মত একজন লেখক যুদ্ধ পরবর্তী একটি নতুন ফ্যাসিবাদবিরোধী সংস্কৃতি শুরু করতে তৈরী করতে চাইবে। উপন্যাসের প্রথম ভাগেই দেখানো হয় কেন এবং কিভাবে শ্রমজীবী শ্রেণীর মানুষ কোন প্রেক্ষিত থেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। দ্বিতীয়ভাগে তাদের গোপন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয় যখন পুলিশ তাদেরকে চিহ্নিত করতে ও তাদের কর্মকান্ড বুঝে ফেলতে অতিমাত্রায় তৎপর হয়ে উঠে। তাদেরকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ, ফ্যাসিবাদী বিচার প্রক্রিয়ায় তাদের উপর নানা ধরনের অকথ্য নির্যাতনের পরও অবমানিত, মনুষত্বহীন অথবা ধ্বংশ না হয়ে যাওয়ার বিষয়গুলো উপন্যাসের তৃতীয়ভাগে সবিস্তারে দেখানো হয়। অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একজন ফ্যাসিস্ট গোয়েন্দা চরিত্র তাদের মামলা দেখাশোনার কাজে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়।

ইতালীয়ান লেখক প্রিমো লেভীর পরিভাষায়- এভরি ম্যান ডাইস এলোন উপন্যাসটি হচ্ছে, “নাজিবাদের বিরুদ্ধে জার্মান প্রতিরোধের বিষয়ে লিখিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাস”। আমি যদি এক নিঃশ্বাসে বর্ণনা করে ফেলতে পারতাম তাহলে বলতাম এটা হচ্ছে, “ভয়ানক ফ্যাসিবাদী শক্তি সমন্ধে লেখা সবচেয়ে মহৎ সৃষ্টি”। ফাল্লাদা এখানে দেখিয়েছে থার্ড রাইখ কিভাবে দীর্ঘ কাল ধরে দিনের প্রতিটি মুহূর্ত কল-কারখানায়, কার্যালয়ে, বাসা-বাড়িতে, ঘাটে-মাঠে, রাস্তার পাশে, পুলিশ সদর দপ্তরে এবং কারাকক্ষগুলোতে তাদের নিয়ন্ত্রন বজায় রেখেছে। “এভরি ম্যান ডাইস এলোন” এমন একটি সমাজের পুরো রূপরেখা প্রদর্শন করে যেখানে নাজিবাদীরা মূল পান্ডা হয়ে রণমূর্তি ধরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নৃশংস ও পৈচাশিকভাবে তারা অমানবিক আইন সমূহ তৈরী করা থেকে শুরু করে সেগুলোকে কার্যে পরিণত করা, বিচার ব্যাবস্থার বিকৃতি সাধন এবং প্রত্যেকটি জনমানুষের নিজ নিজ বেড়ে উঠার প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি ধ্বংশ করে ফেলার আগ পর্যন্ত ক্ষান্ত হয় না।

কোন মানুষই নিরাপদ নয়, কেউ রাত্রে ঠিকমত নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেনা, প্রত্যেকেই যেন সন্দেহের করালগ্রাসের নিচে বসবাস করছে। এই উপন্যাসটি পড়তে গেলে মনে হয় আমরা যেন এমন একটা অন্ধগুহার মধ্যে নেমে যাচ্ছি যেখান থেকে পালিয়ে বাঁচার কোন পথ নেই এবং যদিও এই বইটিতে মানবিক অনুভূতিগুলোও বিদ্যমান। উপন্যাসটির শিরোনাম “এভরি ম্যান ডাইস এলোন”, লিটল ম্যান হোয়াট নাউ? উপন্যাসের শক্তিশালী একটি লাইন, “নাথিং লাস্টেড বাট বিয়িং এলোন” কে প্রতিধ্বনিত করে। লাইনগুলো ফাল্লাদার নিজস্ব বিচ্ছিন্নতাবোধ এবং এমন একটি সমাজের প্রতি তার দর্শন থেকে গৃহীত হয়েছে যেখানে প্রত্যেকটি ব্যাক্তি মানুষ নিজস্ব ব্যাক্তিগত কারাগারে বন্দী হয়ে আছে। এই প্রেক্ষিতটি “উলফ এমং উলভস” উপন্যাসের নায়ক উলফাং প্যাজেলের দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ যে জানে “চরম পরিস্থিতির মধ্যেও যতটুকু সম্ভব মনবিক ও সহানুভূতিশীল থাকা যায়।

কারন আমরা প্রত্যেকে একই উৎস থেকে উত্থিত হয়েছি”। তাদের মত যারা যথেষ্ট পরিমাণ মানবিক থাকার চেষ্টা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ ফাল্লাদাকে জার্মানীর একটি ছোট শহরের মেয়র নির্বাচিত করে এবং সেখানকার নাজিবাদ উৎখাতের গুরু দায়িত্ব অর্পণ করে। তাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছিল, সে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারু রূপে পালন করতে সক্ষম। যাহোক বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক সঙ্গীত “দ্যা ইন্টারন্যাশনাল” এর তেজোদৃপ্ত লাইন-“জাগো, জাগো, জাগো সর্বহারা----অনশন বন্দী কৃতদাস---” গাইবার মত কমরেড সে ছিলনা।

বাস্তবিক পক্ষে তার উপন্যাসে সর্বহারাদের বিদ্রোহ-বিপ্লবে ফেটে পড়া দেখানো হয় নি। এমনকি তার সৃষ্টিকর্মগুলোতে আশা ও শুভবাদকেও জাগিয়ে তোলা হয় নি, তরুণী আনা ফ্রাঙ্ক যেমন তার ডায়েরীতে লিখেছিল, “আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠবে, এই পৈচাশিকতারও পতন আছে এবং এই নৃশংস যুদ্ধের পর শান্তি-কল্যাণ পুনরায় ফিরে আসবে আমাদের মাঝে। ফাল্লাদা সবসময় “উলফ এমং উলভস” উপন্যাসের নায়ক উলফ্যাং প্যাজেলের কার্যকলাপকে অনুসরণ করে চলেনি, যে লোক অবিচ্ছিন্ন, মুক্ত চিন্তা-ভাবনার মধ্যে নিমগ্ন হয়ে থাকে সবসময় এবং বহু ব্যাবহৃত পুরাতন রাস্তায় চলতেও যার মন সায় দেয় না। কিন্তু ফাল্লাদা নিজের এবং তার মানবিক মূল্যবোধের কাছে সৎ থাকার লক্ষে অবিচল ছিল। ত্রিশের ও চল্লিশের দশকের জার্মানীতে ব্রেচট, মান, হেস, ওয়াল্টার বেঞ্জামিন, আলফ্রেড ডবলিন এবং এরকম আরো অনেক জার্মান চিন্তকদের মধ্যে- সমাজ থেকে নির্বাসিত ফাল্লাদা ছিল ভয়ঙ্করভাবে নিঃসঙ্গ এবং পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন একজন মানুষ।

সে কিছু সাহিত্যকর্ম তৈরী করেছিল যা তার নিজের একাকীত্ব ও স্বাতন্ত্রের কথা শৈল্পিকভাবে বলে যায়, সমস্ত পৃথিবীর মননশীল পাঠকদের কাছে, যাদের নিজ নিজ বন্দীত্বের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য শৃঙ্খল ছাড়া হারানোর কিছু নেই। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।