আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উঠট্যা পড়। চল তাজিংডং জয় করে আসি।

ভব ঘুরতে চাই। ভবঘুরে হতে চাই না। ৩,৪,৫ ছুটি ছিল। সঙ্গে আরো দুই দিন ছুটি ম্যানেজ করে ফেললাম। ২ তারিখ রাতে মোট ১২ জন বান্দরনের উদ্দ্যেশে যাত্রা শুরূ করলাম।

৮ জন উঠলাম এস.আলম এ আর বাকি ৪ জন হানিফ এ। প্রায় ১৫ দিন আগে গিয়েও সরাসরি বান্দরবানের টিকেট সংগ্রহ করতে পারিনি। অগত্য চিটাগাং পর্যন্ত সকাল ৬ টার আগেই পৌছে গেলাম। এখান থেকে একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করে ৮ টার দিকে বান্দরবান শহরে পৌছে গেলাম। এখান থেকে একটা চান্দের গাড়ি ভাড়া করে ক্যাক্ষংঝিরি বাজার পৌছালাম, সেখান থেকে নৌকায় করে প্রায় আড়াই ঘন্টা পর আমরা রূমা বাজার গেলাম, রূমা বাজার থেকে চঁান্দের গাড়ি করে বগা লেকের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরূ করলাম, ইতিমধ্যে আমাদের এক বন্ধু এই রাস্তা দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল সে আর সামনে যাবে না।

মায়ের কোলের ছেলে কোলেই ফিরে যাবে। যাহোক ঘন্টা দুয়েক এর মধ্যেই বগা লেকে পৌছালাম। আহ! লেকে বিকালের দৃশ্য অসাধারন। যে যার মত কিছু ঝটপট ছবি তুললাম, এই আলোতে ছবিগুলি বেশি জীবন্ত হয়ে ধরা দেয়। সেদিন রাতে বগা থেকে পরদিন সকালে কেওকেরাডং আর জাদিপাই ঝরনার উদ্দেশ্যে হাটা দিলাম।

ও বলতে ভুলে গেছি, রূমা বাজার থেকেই আমরা একজন গাইড নিয়ে নিয়েছি। সকাল ৭ টায় শুরূ করে দার্জিলিংপাড়া হয়ে দশটার আগেই সবাই মিলে কেওকেরাডং এ উঠলাম। উঠলাম বললাম এই জন্য যে এখানে জয় করলাম শব্দটা খুব বেশি বেমানান হয়ে যায়। এবার সকলে মিলে জাদিপাই ঝরনা দেখতে যাত্রা শুরূ করলাম। প্রায় দেড় ঘন্টা হেঁটে আমরা জাদিপাই এসে পড়লাম।

জাদিপাই এর রাস্তা ভয়ংকর রকমের খারাপ। গতবার যখন নাফাখুম গেছিলাম তখন্ও এতো কষ্ট হয়নি। তবে জাদিপাই পৌছে আমাদের সব কষ্ট মূহুর্তে ম্লান হয়ে গেল যখন দেখলাম পাহাড়ের গায়ে রংধনু খেলা করছে। জাদিপাই সত্যিই সুন্দর, তবে কষ্টের কথা ভেবে যারা এখন না যাওয়ার কথা ভাবছেন তাদের জন্য খবর হলো আগামী বছরের মধ্যে এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলবে। জাদিপাই থেকে ফিরতে আমাদের প্রায় তিন ঘন্টা লাগল।

পথে জাদিপাইপাড়া আর পাচিংপাড়ায় আমরা যাত্রা বিরতি দিয়েছি। কেওকেরাডং ফিরে আমরা দুপুরের খাবার খেলাম, কেওকেরাডং এর মালিক লালা ভাই আগে থেকেই আমাদের খাবার রেডি করে রেখেছিল। আমাদের গ্রপের সকলে সেইদিনই বগাতে ফিরে এল। থেকে গেলাম শুধু চারজন যাদেরকে তাজিংডং হাতছানি দিচ্ছে। গাইড ঠিক করলাম ২ জন।

সেদিন রাতেই তেল, মসলা, শুকনা খাবার পাচিংপাড়া থেকে কিনে রাখলাম, কারন পথে আর কোন দোকান পাব না, আর ঐখানে বোম আদিবাসীদের বেশিরভাগই তেল মসলা ছাড়া রান্না করে। সেদিন রাত কাটালাম কেওকেরাডং এর চূড়ায়। পরদিন ভোর পাচটায় আমরা গিয়ে গাইডকে ডেকে উঠালাম। যাত্রা শুরু করলাম ছয়টার দিকে, ইচ্ছা ছিল মুরংপাড়া গিয়ে ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করব। কিন্তু কপাল খারাপ, কারবারি(আদিবাসীদের নেতা) বাড়িতে না থাকায় সেখানে খাবার জুটল না।

সাথে থাকা হালকা কিছু খাবার খেয়ে হাটা শুরু করলাম, ভয়ংকর সুন্দর সে রাস্তা, পথে পথে ঝরনা, পানির খুব একটা অভাব নেই। এক বোতলে স্যালাইন অন্য বোতলে পানি ভরছি কিছু সময় পর পর। ঘন্টা খানিক হাটার পর শুরু হল আসল বেচে থাকার লড়াই। প্রচন্ড খাড়া সে এক পায়ে রাস্তা, একটু এদিক ওদিক হলে হাজার খানেক ফুট নিচে পড়ে যাব। এর আগে ছোট কিছু পাহাড়ে উঠলেও এটা একেবারেই অন্যরকম।

হটাৎ করেই আমাদের মত কারো তাজিংডং জয়ের স্বপ্ন দেখা উচিত না। ঘন্টা তিনেক নিরবিছিন্ন হাটা, পথে কোন মানুষ, পশু পাখি কারো সাথেই আমাদের দেখা হয়নি। এবার পৌছালাম বাকলাইপাড়া, এখানেও বিধিবাম, পাড়ার সবাই দা্ওয়াত খেতে গেছে প্রাতাপাড়ায়, কারবারি বাড়িতে নেই তাই আমরা একটু বসার সুযোগও পেলাম না। অতপর পাশের আর্মি ক্যাম্পএ রিপোর্ট করে আরো কিছুক্ষন হেটে পৌছালাম প্রাতাপাড়াই। সেখানে বিরাট আয়োজন।

কিন্তূ তা আমাদের জন্য নয়। ওরা খাবে কালো হরিণ। অগত্য আমাদের জন্য মুরগি ধরে জবাই করা হলো। পাহাড়ি চাল আর প্রচন্ড শক্ত মুরগি দিয়ে পরম তৃপ্তি নিয়ে আমাদের দুপুরের খাওয়া শেষ করলাম। একটু রেষ্ট নিয়ে এবার হাটা শুরু করলাম সিমল্তাংপি পাড়ার উদ্দেশ্যে, তিন ঘন্টায় যখন সেখানে পৌছালাম তখন প্রায় সন্ধা।

রাতে কারবারির বাড়িতে থাকলাম। বারবিকিউ করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু দেড় ঘন্টা পোড়ানোর পরও এই পাহাড়ি মোরগ এর কিছুই করা সম্ভব হল না। অগত্য নিরস্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। আহ প্রতিটা রাত ঘুম যা হয়েছে না সারাদিন হাটার পর! পরদিন সকাল সাতটায় শুরূ হল আমাদের তাজিংডং যাত্রা, মাত্র এক ঘন্টা হেটেই পৌছে গেলাম আমাদের দেশের সর্ব্বোচ চূড়ায়। আহ সে এক অন্য অনুভূতি, ফোন করলাম প্রিয় মানুষদেরকে ভাগ করে নিলাম আমাদের আনন্দ সবার সাথে।

তাজিংডং এর ঠিক পাশের পাহাড়টাকে(চিরচিনময়) বেশি উচু মনে হল। অতপর ফেরার পালা, প্রথম বিরতি নিলাম শেরকমপাড়ায়, এর পর বোডিংপাড়া হয়ে থানচি। বোডিংপাড়ার ব্যাপারটা অন্যরকম, একই সাথে আদিম আর আধুনিক। সেদিন রাতে থানচি থাকলাম, পাহাড়িকা হোটেলে খেলাম (ডাল, ভাত, আলুভর্তা-কত দিন পর!) পরদিন রাত দশটার মধ্যেই ঢাকা চলে এলাম, কিছু সাদাসিদা চমৎকার মানুষের ছবি, চিরচিনময় পাহাড়ে পাখির নাচ, ভোর রাতে কেওকেরাডং পাহাড়ের উপর তারা খসে পড়ার দৃশ্য, জাদিপাই ঝরনাতে রংধনুর রং বদল, আর ভয়ংকর সুন্দর কিছু রাস্তার স্মৃতি মাথায় নিয়ে। উঠট্যা পড়।

চল তাজিংডং জয় করে আসি। ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে তবেই যাওয়া উচিৎ। প্রয়োজন পড়লে আওয়াজ দিয়েন, পরামর্শ দিব উপদেশ নয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.