আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

" ছিন্নপত্রের চক্ষুশূল ঃ তিনটি তারকা এবং একটি লেমিনেটিং করা স্টিকার "

ভাষার মাসের প্রথম দিনের দিনালিপি ২০১২ : অল্প একটু দূরত্ব , গুলশান ১ হতে জাহাঙ্গীর গেইট । বাড্ডা সংযোগ সড়কের গুলশান সিগন্যালে একটি বেপরোয়া গতির প্রাইভেট কার এসে থামল আমার ভাড়া করা CNG অটো-রিক্সার পিছনে , অধৈয্যর মত বাঁজাতে শুরু করলো তার হর্ন , আমার অটো-রিক্সার চালক অনেকটা জিমন্যাষ্টের মত একিয়ে-বেকিয়ে তার গাড়ীটি একপাশে চাপিয়ে নিতে সক্ষম হল , আতপর পিছনের সাদা গাড়ীটি ৬” অগ্রসড় হয়ে রক্তচক্ষু মেলে আমার চালকের দিকে কটাক্ষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আবার শুরু করলো তার উদ্দাম হর্ন তার সামনের গাড়ীটির পিছনে (যদিও সিগন্যাল লালবাতিতেই স্থির ),বিরক্ত চোখে আমিও দেখছি লালবাতি এবং সাদা গাড়ীটিকে যার ড্রাইভার সদ্য কৈশোর- উত্তীর্ণ এক যুবক গালে ‘হুজি’ মার্কা দাড়ি এবং শজারু মার্কা চুল ; দ্বিতীয় আসনে একই বসনের আরও একটি নমুনা , পিছনের আসনে একজন তরুণী সামনের দুই আসনের মাঝে গ্রীবা উঁচিয়ে আছে । এবার লক্ষ্য করলাম গাড়ীটির সামনে একটা লেমিনেটিং করা সাদা কাগজে সাঁটা রয়েছে ‘পুলিশ’ । সিগন্যাল ছেড়ে দিলো ; গাড়ীটির পিছনেও আরেকটি লেমিনেটিং স্টিকার একইরকমের । মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন দুপুর ১:২০ , গুলশান সিগন্যাল থেকে আবার আমাদের যাত্রা শুরু হোল অস্বাভাবিক জ্যাম পেরিয়ে , এবার আমার সামনে ‘পুলিশ !’ , আমি তাদের পিছনে এবং একটি ঝকঝকে ও উজ্জ্বল তিন তারকা বিশিষ্ট একটি সেনাবাহিনীর জীপ সাদা গাড়ীটির সামনে ।

কচ্ছপ গতিতে চলছি আমরা , থেকে থেকে সাদা গাড়ীটি তার হর্ন বাজিয়েই চলছে কিন্তু সামরিক বাহনের চালকের সে দিকে কোনও ভ্রুক্ষেপই নেই কেননা সে তার সামনের জ্যাম ঠেলে গাড়ী এবং চাকুরী বাচাতে ব্যাস্ত (যা তাঁর দায়িত্ব )। মহাখালী-বনানী ক্রসিং পর্যন্ত একই অবস্তা । অতঃপর আমরা এগিয়ে চললাম মহাখালী রেল-গেইট সিগন্যাল পর্যন্ত , সিগন্যাল পয়েন্ট এর একটু পূর্বে সাদা ‘পুলিশ !’ গাড়ীটি উন্মুক্ত তিন তারকা বিশিষ্ট সামরিক জীপটিকে ওভার-টেক করে রেল-গেইটের দিকে ধাবিত হোল রাস্তায় ডিউটি রত ট্রাফিক পুলিসের স্যালুটের সাথে এবং আমরা সামরিক রঙের গাড়ী দুটি ( তিন তারকা জীপ এবং আমার ৩ চাকার CNG অটো-রিক্সা দুটির রঙই প্রায় কাছাকাছি )আটকা পড়লাম ট্রাফিক পুলিশের আঙ্গুলি হেলনে । আমার প্রশ্ন হোলও ওই ‘পুলিশ’ লেখা গাড়ীটিতে কোন সে অফিসার ‘অতান্ত্য জরুরী’ কাজে যাচ্ছিল যাকে ট্রাফিক পুলিশ স্যালুট পর্যন্ত দিলো ? আর “ উন্মুক্ত ” তিন তারকা বিশিষ্ট সুশৃঙ্খল গাড়ীটিতে অবশ্যই জেনারেল সাহেবের বাসার কাজের লোক (সামরিক বাহিনীর গাড়ীতে অফিসার যদি আরোহী না হন তবে তারকাখচিত প্লেটটি আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে ) ছিল-না যে তাকে সিগন্যাল ছাড়া তো দূরে থাক একটা সালাম পর্যন্ত দিলো না ট্রাফিক পুলিশটি ? হায় আজ থেকে ৬ বৎসর আগে জনৈক বিচারপতির গাড়ীতে স্যালুট না করার অপরাধে পুলিসের মহাপরিদর্শক , পুলিশ একাডেমির প্রধান এবং পুলিশ ট্রেইনিং কলেজের অধ্যক্ষের কঠিন শাস্তি হয়েছিল । সবচেয়ে ভাল লেগেছে উন্মুক্ত ৩ তারকা বিশিষ্ট জেনারেল সাহেব বা তাঁর দেহরক্ষী বা ড্রাইভার সিগন্যাল এড়িয়ে যাওয়ার জন্য কোনও চেষ্টা বা ট্রাফিক পুলিশকে কোনও ইঙ্গিতও দেন নাই ।

পুনচ্চ ঃ গত ৬/৭ মাসে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় যত ছিনতাই হয়েছে গাড়ী দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে তাঁর ৮০% গাড়ীতে পুলিশ / র‍্যাব লেখা ছিল !!! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।