(মুহাম্মদ রুহুল আমীন নগরী)
ভারত বর্ষে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষার সূচনা ১৩০০ ঈসায়ী সনের প্রথম দিকে সুলতান কুতুবুদ্দীন আইবেকের আমলে হয়। মুলতানের গভর্ণর নাসিরুদ্দীন কুবাচাহ মুলতানের “উচ্ছ” নামক স্থানে “মাদ্রাসায়ে ফীরুজী” নামে একটি মাদ্রাসা স্থাপন করেন। কালের প্রবাহে ভারতবর্ষে অসংখ্য কওমী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে।
বৃটিশ শাসনামলের শেষ দিকে মাদ্রাসার জন্য ওয়াক্ফকৃত জমিজমা সরকার কর্তৃক বিশেষ কৌশলে বিলুপ্ত করার কারণে ধীরে ধীরে মাদ্রাসার সংখ্যা হ্রাস পেয়ে যায়। ১৮৫৭ ঈসায়ী সনে আলেমদের এক সাগর রক্ত বন্যা ভেসে যাওয়ার পর ১৮৬৬ ঈসায়ী সনে ভারতের উত্তর প্রদেশে দেওবন্দ নামক স্থানে দারুল উলূম দেওবন্দ মাদ্রাসা স্থাপন করা হয়।
দেওবন্দ মাদ্রাসাকে বর্তমান বিশ্বের কওমী মাদ্রাসা সমূহের মূল উৎস বললে মোটেই অত্যুক্তি হবে না। আমাদের দেশের কওমী মাদ্রাসা সমূহ দারুল ঊলূম দেওবন্দের নিয়ম নীতি ও পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে পরিচালিত হচ্ছে। (সূত্রঃ এদারার সংবাদ সম্মেলন) আঠারো শ’ সাতান্ন সালের সিপাহী বিপ্লবে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলেন বিপ্লবী মুজাহীদগণ। তখন ঘোর অন্ধকার নেমে আসল ভারতের ভাগ্যাকাশে। ফলে বৃটিশ উপনিবেশ সাম্রাজ্যবাদীদের শাষণ ক্ষমতা আরো সুসংহত হয়।
দিলøীর মসনদে বৃটিশরা পাকা পোক্ত হওয়ার পর প্রথমেই যে কাজটিকে গুরুত্ব দিয়েছিল, তা ছিল ইসলাম- মুসলমানদের দ্বীনি ঐতিহ্য, সভ্যতা, শিক্ষা-সংস্কৃতি চিরতরে ধ্বংশ করা, যাতে মুসলমানরা কোন দিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে। যে জাতিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে, চাপ প্রয়োগ করে দাবানো যায়নি, তাদের চিন্তাধারায় আস্তে আস্তেÍ এমন পরিবর্তন আনতে হবে যে, তারা এক ভিন্ন জাতি হিসেবে যেন নিজেদের অ¯িÍত্ব ভুলে যায়।
তারা নিজেদের দ্বীনি ঐতিহ্য, সভ্যতা-সংস্কৃতি এবং সোনালী অতীত থেকে দিনে দিনে গাফেল হয়ে যায়। এমনকি দীর্ঘদিন পরে যেন তাদের একথা স্বরণ না থাকে যে, তারা কেমন সিংহের জাতি ছিল অথচ আজ শৃগালে পরিণত হয়েছে। এই হীন উদ্দেশ্য পূরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা তারা এই গ্রহণ করলো যে, মুসলমানদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন কিছু বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হবে যার দ্বারা তাদের ম¯িÍস্কে প্রভাব প্রতিপত্তি পূর্ণ দমে বসে যায় এবং এতে তারা প্রভাবিত হয়ে স্বীয় বিবেক বুদ্ধি দ্বারা মুক্ত চিন্তাার যোগ্যতাই যেন একেবারে হারিয়ে ফেলে।
আগ্রাসী ইংরেজ শক্তি মুসলমানদের ঈমান আক্বিদা, তাহযীব- তামাদ্দুনের উপর ব্যাপক কোঠারাঘাত হানে।
১৮৫৭ সালে সংঘটিত ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর ব্রিটিশ সরকার ভারতের মুসলমান তথা আলেম স¤প্রদায়কে এর মূল নায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের উপর এক লোমহর্ষক নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ অধ্যায়ের সূচনা করে। লাখ লাখ আলেমকে প্রকাশ্যে দিবালোকে শহীদ করা হয়। ত্রাস ও ভীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে স্বাধীনতার স্বপ্নালোটির আশা আকাংখাকে মুছে ফেলার উদ্দেশ্যে দিনের পর দিন শহীদের বিকৃত লাশ বৃক্ষের ডালে ডালে লটকিয়ে রাখা হয়, ইতিহাস অনুসন্ধানে জানাগেছে, দিলøীর চাঁদনীর চক থেকে নিয়ে ‘খায়বার’ নামক স্থান পর্যন্ত এমন কোন বৃক্ষ বাকি ছিলো না যেখানে কোন একজন আলেমের (শহীদের) লাস ঝুলেনি। কোন আলেমকে দেখলেই পাষান্ডরা নির্বিচারে হত্যা করতো।
এক তথ্য মতে ১৮৬৪ সাল থেকে ৬৭ সাল পর্যন্ত ১৪ হাজার মুসলিম মিলøাতের ধর্মীয় নেতা হক্কানী উলামায়ে কেরামকে ফাঁসির কাষ্টে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়। গ্রামকে গ্রাম খুঁজেও একজন আলেম পাওয়া যেতো না। নিরাশা- হতাশায় পূঞ্জিভূত মেঘমালার বিদ্যুৎ চমকে শিউড়ে উঠছিলো উপমহাদেশের আলেমগণ। ধীরে ধীরে নেমে আসছিলো অশিক্ষা-কুশিক্ষা, কুসংস্কৃতি, শিরক, বিদআতের এক চরম দুর্যোগ।
অপর দিকে ব্রিটিশরা স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য চিরস্থায়ী করতে হলে ভারতীয় মুসলমানদেরকে আর্থিক অভাব অনটন ও চরম দুরাবস্থায় ফেলতে হবে।
তাদের অন্তর থেকে আল কোরানের আলো চীর তরে নিভিয়ে ফেলতে হবে। মুসলিম বিদ্বেষী ইংল্যান্ডের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, ব্রিটিশ জাতীয় সংসদ অধিবেশন চলাকালে পবিত্র কোরআন উত্তোলন করে বলেছিলো- “যতদিন এই পু¯Íক অবশিষ্ট থাকবে ততদিন পৃথিবী কৃষ্টি ও সভ্যতা লাভ করতে পারবে না। ’ এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইংরেজরা ১৮৬১ সালে ভারত বর্ষে তিন লক্ষ কোরআন শরীফের কপি জ্বালিয়েছিল। ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষা নীতি সম্পর্কে ইল্যান্ডের লর্ড ম্যাকালে সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছিলো “ভারতীয়দের জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো, এমন এক যুব স¤প্রদায় সৃষ্টি করা যারা বংশে ভারতীয় হলেও মন ম¯িÍষ্কে হবে খাঁটি বিলাতী। ” এ হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নানা আইন ফরমান জারী করে মুসলমানদের থেকে নবাবী জমিদারী কেড়ে নিয়ে প্রতিবেশী হিন্দুদের মাঝে বন্টন করে দেয়।
ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকুরী এক কথায় জীবন জীবিকার সকল ক্ষেত্র থেকে মুসলমানদেরকে বঞ্চিত করে রাখে। তখন ফার্সীর স্থানে ইংরেজী ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে মুসলমানদের ঈমান আকিদা বিনষ্টের এক সুপরিকল্পিত হীন প্রয়াস চালিয়ে যায়। লর্ড ম্যকলে ভারত বর্ষের জনগণের জন্য নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের প্রস্তাব পেশ করলো এবং এই উদ্দেশ্য পূরণে এক দীর্ঘ সুপারিশমালা তৈরি করলো যার মধ্যে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে ঠাট্টা বিদ্রæপ করা হল।
মুসলমান এবং উলামায়ে কেরামের উপর ভিত্তিহীন অভিযোগ আরোপ করে। শেষে উলেøখ করা হয় যে, “এখন আমাদের এমন একটা শ্রেণী সৃষ্টির জন্য চেষ্টা করা উচিত, যারা আমাদের এবং এই কোটি কোটি মানুষের মধ্যে দোভাষীর কাজ আঞ্জাম দিতে পারে, যাদের উপর আমরা বর্তমানে কর্তৃত্ব চালাচ্ছি, এমন এক শ্রেণী যারা রক্ত এবং রঙ্গের দিক দিয়ে ভারতীয় হবে কিন্তু চাল-চলন, সভ্যতা-সংস্কৃতি, স্বভাব-চরিত্র এবং বুদ্ধি ও বিবেচনার দিক দিয়ে ইংরেজী হবে।
” মুসলমানদের মসিতষ্ক ধোলাই করে- তাদেরকে সর্বকালের জন্য ইংরেজদের অনুগতগোলাম বানানোর এই ষড়যন্ত্র প্রকৃতপক্ষে ভারত বর্ষের উপর নিজেদের কর্তৃত্ব দীর্ঘায়িত করারই এক ষড়যন্ত্র ছিল। যে কর্তৃত্ব ভারতবাসীদের বিভিন্ন স্বাধীনতা আন্দোলনের কারণে সর্বদা ডামাডোল থাকত, যা রক্ষার জন্য তাদের বন্দুক-কামানের শক্তি হার মেনেছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দানকারী আলেমদেরকে জনসাধারণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে ভন্ড নবী মীর্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ও স্যার সৈয়দ আহমদ প্রমূখকে (সাম্রাজ্যবাদীরা) খরিদ করে তাদের মাধ্যমে সংগ্রামী আলেমদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারে মেতে উঠে। আর খৃষ্টান মিশনারীদের গ্রামেগঞ্জে ব্রাহ্মণ্যবাদির প্রবক্তা স্বামী দিয়ানজীর শুদ্ধি আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলমানদের ধর্মান্তরিত ও বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালায়। তখনকার অবস্থার ভয়াবহতায় মনে হচ্ছিলো এদেশে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য আর বুঝি উদিত হবে না।
শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, সবকিছু বুঝি ধ্বংশের অতল গহŸরে নিপতিত হবে। মুসলমানদের ঈমান-আকীদা, তাহজীব-তামাদ্দুন আর বুঝি রক্ষা করা যাবে না। উপমহাদেশ হয়তো বা হবে আরেক স্পেন। কর্ডোভার জামে মসজিদের মতো কুতুব মিনার ও নির্জীব হয়ে যাবে। আলøাহু আকবার ধ্বনিতে আর বুঝি উপমহাদেশের আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে উঠবে না।
সে ছিল মুসলিম জাতির এক চরম মর্মান্তিক দুর্যোগের সময়। মোট কথা ইংরেজরা তাদের দৃষ্টিতে মুসলমানদের ইসলামী মূল্যবোধ ও জেহাদী প্রেরণাই যেহেতু তাঁদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনের মূল কারণ, তাই তারা ইসলাম ও ইসলামী মূলবোধ ধর্মীয় শিক্ষা সভ্যতার পিঠে কুঠারাঘাত করতে কিছুই অবশিষ্ট রাখেনি এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে এদেশের জনসাধারণের উপর চাপিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে হাজার হাজার ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্র মক্তব-মাদ্রাসা,মসজিদ ধ্বংশ করে সমগ্র ভারতে হাজার হাজার পাশ্চাত্য শিক্ষাকেন্দ্র, স্কুল, কলেজ, গীর্জা, মিশন স্থাপন করতে লাগল।
কিন্তু তখন কতিপয় দূরদৃষ্টি সম্পন্ন বিজ্ঞ হক্কানী উলামায়ে ক্বেরাম এই ভয়াবহ ষড়যন্ত্র এবং এর সুদূর প্রসারী ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। ১৮৫৭ সালের আযাদী আন্দোলনের ঐতিহাসিক শামিলির ‘জেহাদ’ যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন যথা-আমিরুল মুমিনিন হাজী ইমদাদুলøাহ মুহাজীরে মক্কী (র), মাওলানা রশিদ আহমদ গং গুহী, হুজ্জাতুল ইসলাম কাসেম নানুতুবী (র) প্রমুখ। উলেøখিত জেহাদে হযরত মাওলান হাফিজ জামীন (র) শহীদ হন।
ভাগ্যক্রমে উক্ত তিন মণীষী বেঁচে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতা বিদ্রোহের বীর সেনানী আমিরুল মোজাহিদীন হাজী ইমদাদ উলøাহ মুহাজীরে মক্কী (রঃ) থানা ভবন সরকারের পতনের পর আত্মগোপন করে মক্কা শরীফে হিজরত করেন এবং সেখান থেকেই ইংরেজের বিরুদ্ধে পূণরায় তাঁর সঙ্গী সাথীদের সংগঠিত করতে থাকেন।
সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর মাওলানা কাসেম নানুতবী (রঃ), মাওলানা রশিদ আহমদ গাংগুহী (র) প্রমূখ বীর মোজাহীদরা আবার কর্মক্ষেত্রে নেমে আসেন। দীর্ঘ চিন্তা-ভাবনার পর আপাততঃ সশস্ত্র যুদ্ধ পরিহার করে (রাজনীতির মাধ্যমে ইংরেজদের সরাসরি মোকাবেলা থেকে সরে দাঁড়ালেন) কৌশলগত দিক অবলম্বন করলেন। ইংরেজদের প্রণীত নতুন শিক্ষা ব্যবস্থার অবর্ণনীয় ক্ষতি থেকে মুসলমানদেরকে হিফাজত করার জন্য সাংস্কৃতিক যুদ্ধের পথ অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ বিরুধী স্বাধীনতা আন্দোলনের চেতনা জাগরুক রাখা, ইলম-আমল, ঈমান-আকিদা ও ইসলামী তাহযীব তামদ্দুন সংরক্ষণ ও স¤প্রসারণের সুমহান বা¯Íব কর্মসূচী হাতে নেওয়া হয়। এমহান কর্মসূচী ও উদ্দেশ্য রূপায়ণ ও বা¯Íবায়নের লক্ষ্যে হাজী ইমদাদুলøাহ মোহাজিরে মক্কীর ইংগিতে কাশেম নানুতভীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ভারতের সাহারানপুরের দেওবন্দ নামক স্থানে (১৮৬৬ সালের ৩০ মে) ১৫ ইমুহাররাম ১২৮৩ হিজরী রোজ বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠা করা হয় আজকের বিশ্ববিখ্যাত ‘দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা’।
এ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যের প্রতি ইংগিত করে কাছেমনানতবী বলেছিলেন- ‘এটি নিছক একটি বিদ্যালয়ের নাম নয়; এটি ইসলাম তথা স্বাধীনতা আন্দোলনের মজবুত দূর্গ, এটি হচ্ছে মোজাহীদদের সেনানিবাস’। আরও রবেণ্য ব্যক্তিবর্গের মতে- দারুল উলুম দেওবন্দ হচ্ছে মুঘল সাম্রাজ্য পতনের পর ইসলামের আলো প্রজ্জলিত রাখার একটি উচ্চ মিনার। বৃটিশ বেনিয়াদের ইসলাম বিদ্ধেষী চক্রান্ত মোকাবেলায় সশস্ত্র সংগ্রামের পরিবর্তে একটি পরোক্ষ সংগ্রামের নাম দারুল উলুম দেওবন্দ।
যা লাখো শহীদের প্রাণঢালা রক্তের সিঞ্চনে স্বাধীনতা আন্দোলনের চেতনা নিয়ে অসংখ্য শাখা-প্রশাখায় ভারত বর্ষের প্রতিটি অঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিটি শাখা-প্রশাখা স্বাধীনতা পাগল মোজাহীদদের দুর্গম দূর্গে পরিণত হয়। লাখো সূর্য সন্তান জন্ম দেয়। জন্ম দেয় মোজাহীদ মোবালøীগ, আর আউলিয়া। যাদের নিরলস প্রচেষ্টা, অনুপ্রেরণায় আবার বিদ্রোহী কাফেলার দুর্দমনীয় যাত্রা শুরুহয়।
জ্বলে উলে বিদ্রোহের লেলিহান অগ্নিশিখা, কেঁপে উঠে ভারতবর্ষ।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়ে বিদ্রোহের প্রচন্ড কম্পনে। দেশবাসীর হাতে ফিরে আসে আবার এদেশ। এদেশের বুকে আবার উদিত হয় স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। তাই “দারুল উলুম দেওবন্দ” সকলের নিকট একটি বিদ্রোহ, একটি জেহাদ, একটি চির অ¤øান ইতিহাস।
হিংস্র ইংরেজদের দাবানল থেকে জাতিকে উদ্ধার করে দারুল উলুম দেওবন্দ (তার প্রতিষ্ঠিত সূর্য সন্তাানেরা) যে সফলতার পরিচয় দিয়েছে তা সর্বকালের ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।
আর এ বিশ্ববিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দের অনুস্বরণে বিশ্বে (বাংলাদেশে) হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কওমী মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। এসব মাদ্রাসাই জন্ম দিচ্ছে অগণিত আলেম, মুফতী, মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, সমাজ সংস্কারক, দেশপ্রেমিক, মর্দে মুজাহিদ। যারা দেশ ও জাতির তরে জীবনকে তুচ্ছ করে মরণকে বরণ করতে জানে। এ সম¯Í আত্মত্যাগী সংগ্রামী উলামায়ে কেরামের দ্বারাই এ উপমহাদেশে ঈমানদীপ্ত বৃহৎ কাফেলা শত বাধা বিপত্তির সাগর পাড়ি দিয়ে আজ দু’টি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র শক্তির অধিকারী হয়েছেন।
সংগ্রামী সে কাফেলার ত্যাগী ভূমিকার কথা আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ হওয়া সত্বেও দূর্ভাগ্য ক্রমে আমরা সেসব বর্তমান প্রজন্মের সামনে যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারিনি।
যা আমাদের এক চরম ব্যর্থতা। ১৭৫৭১৯৪৭ সাল পর্যন্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রদূত ছিল এসব কওমী মাদ্রাসা ও উহার উলামায়ে কেরাম। দারুল উলুম দেওবন্দ ও এই সম¯Í কওমী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার বুনিয়াদী উদ্দেশ্য মুসলমান এবং ইসলামকে ধ্বংশ করার যে পরিকল্পনা লর্ড মেকলে নতুন শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে করেছিল, সেটাকে অকার্যকর করে ইসলামী ঊলূমকে ঠিক ঠিকভাবে হিফাজত করা এবং জীবন উৎসর্গকারী এমন এক দল উলামা (নায়বে নবী) তৈরী করা, যারা কঠিন থেকে কঠিন অবস্থায় (পিচঢালা প্রাচীরের ন্যায়) দ্বীনকে শুধু হিফাজতই করবে না এবং দ্বীনকে অন্যের নিকট প্রচার ও প্রসারের দায়িত্বও পালন করবে।
একথা সত্য যে, দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার সময় এমন ছিল- যখন ভারতবর্ষে কোন দ্বীনী প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা নতুন নতুন মুসিবতকে ডেকে আনারই নামান্তর।
দারুল উলুম দেওবন্দ ও তার শাখা কওমী মাদ্রাসার ছাত্ররা শুধু প্রকাশ্যে ইসলামের গুণেই গুণান্বিত হতো না বরং বা¯Íবেও একজন সৎ ও খাঁটি মুসলমান হয়ে বেরুচ্ছে, যাদের প্রত্যেকের চলাফেলা উঠাবসা মানুষকে ইসলামের পথ দেখাচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসার প্রতিনিধিত্বশীল র্বোডগুলোকে তাদের পাঠ্যসূচিকে যুগোপযোগী করতে পারলে,সেখানকার আলেমগন জাতীয় র্পযায়ে আরো বেশী অবদান রাখতে পারতেন । কয়েক বছর যাবত দেশে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষার সনদের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য সংশ্লীষ্টরা আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু আওয়ামীলীগ ও বিএনপির কোন সরকারই কওমী সনদের স্বীকৃতি দেয়নি।
বহুকাল থেকে চলে আসা পুরোনো সেলেবাসকে কোন সরকারই মানতে নারাজ,অপর দিকে কওমী ধারার উলামায়ে কেরামে বিশাল একটি অংশ সেলেবাস পরির্বতনে নারাজ।
সিলেট কেন্দ্রীক মাদ্রাসা শিক্ষা র্বোড আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালিমের পক্ষ থেকে ও কওমী সনদের দাবী র্দীঘ দিনের।
এদারার সূচনা: আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বাংলাদেশ হলো দারুল উলুম দেওবন্দের আর্দশ অনুস্বরণে পরিচালিত কওমী মাদ্রাসা সমুহের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সম্মিলিত প্রতিষ্ঠান। এই শিক্ষার্বোড মুলত: সিলেট বিভাগ কেন্দ্রীক কওমী মাদ্রাসা গুলোর একটি শিক্ষার্বোড। ভারত বর্ষের প্রখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা সাইয়্যিদ হুছাইন আহমদ মাদানী (রঃ) ১৯২৩ সালে পূণ্যভূমি সিলেট আগমণ করেন, তখন শহরের নয়াসড়কে অবস্থিত খেলাফত বিল্ডিং-এ এক দারুল হাদীস মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তখন তিনি তদানীন্তন আসাম প্রদেশের মাদ্রাসাগুলোর সমন্বয়ে “আসাম প্রাদেশিক আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালীম” গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
।
১৯২৮সালে মাদানী (রঃ) দারুল উলুম দেওবন্দে চলে যাওয়ার পর সাময়িকভাবে এদারার অগ্রগতি স্থিমিত হয়ে আসে। পরবর্তীতে তাঁরই নির্দেশে কর্মবীর ডাক্তার মুর্তাজা চৌধুরী (রঃ) এর উদ্যোগে ১৯৪১ সালের ১৬ মার্চ ডাক্তার মুর্তাজা চৌধুরীর জননী মরহুমা হুসনে আরা ভানুর ইছালে ছওয়ার উপলক্ষে তাঁর বাস ভবনে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা ছহুল উসমানী ভাগলপুরীর (রঃ) সভাপতিতে অনুষ্ঠিত সভায় বিভিন্ন মাদ্রাসার মুহতামীম ও উ¯Íাদসহ বিশিষ্ট আলেমগণ উপস্থিত ছিলেন। এ সভায় প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুল হক চৌধুরী মুক্তারপুরীকে সভাপতি, তদানীন্তন আসাম প্রদেশের আইন সভার সদস্য মাওলানা ইব্রাহিম চতুলীকে সেক্রেটারী জেনারেল এবং ডাক্তার মুর্তাজা চৌধুরীকে সংগঠক করে নীতির সমর্থক মাদ্রাসা সমূহ থেকে উপযুক্ত সংখ্যক সদস্য গ্রহণে “আযাদ দ্বীনী তালীমী এদারা” নামে দ্বিতীয় পর্যায়ে উক্ত বোর্ড গঠন করা হয়।
উ্েরলøখ্য যে, এ সময় এগারটি মাদ্রাসা নিয়ে এ বোর্ডের কার্যক্রম শুরু হয়।
সেই এগারো প্রতিষ্ঠান হল ঃ (১) রানাপিং মাদ্রাসা (২) বাঘা মাদ্রাসা (৩) রাজাগঞ্জ মাদ্রাসা (৪) রেংগা মাদ্রাসা (৫) বারকুট মাদ্রাসা (৬) হামছাপুর রশিদপুর মাদ্রাসা (৭) দারুল উলুম মৌলভী বাজার মাদ্রাসা (৮) রায়পুর মামরকপুর মাদ্রাসা (৯) বাহুবল মাদ্রাসা (১০) সৈয়দপুর মাদ্রাসা (১১) হাসনাবাদ মাদ্রাসা।
তখন বোর্ডের সাথে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন তারা হলেন যথাক্রমে- (মাদ্রাসা ক্রমানুসারে) মাওলানা রিয়াসত আলী চৌঘরী,মাওলানা সিরাজুল হক দাড়িপাতনি,মাওলানা বশির আহমদ শায়খে বাঘা, মাওলানা হাফিজ আব্দুল করীম শায়খে কৌড়িয়া, মাওলানা আরফান আলী, মাওলানা বদরুল আলম শায়খে রেংগা, মাওলানা আব্দুল লতিফ বারকুটি, মাওলানা মুকাররম আলী রশিদপুরী, মৌলভী কারী আব্দুল হামিদ হামছাপুরী, মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক ভানুগাছি, মাওলানা আব্দুন নুর ইন্দেশ্বরী, মাওলানা খলিলুর রহমান দাসপাড়ি, মাওলানা মুজ্জাম্মীল আলী রাজনগরী, মাওলানা উবায়দুলøাহ কুমিল্লা, মাওলানা হাবীবুর রহমান শায়খে রায়পুরী, মাওলানা আবুল হাসিম বাহুবলী, মাওলানা সৈয়দ আব্দুল খালিক শায়খে সৈয়দপুরী, মাওলানা মুজাফফর হাসান হাসনাবাদী (রহঃ) প্রমুখ।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর এদারার প্রথম অধিবেশন রানাপিং মাদ্রাসায় বসে, তারপর ২য় বার মিলিত হন রণকেলী গ্রামে। দেশ বিভাগের প্রায় ৪ বছর পর ১৯৫১ সন মোতাবেক ১৩৭২ হিজরী ১৭ই মহররম ডাঃ মুজার্তা চৌধুরী হযরত মদনী (র) এর নিকট (দেওবন্দ গমন করে) থেকে মাওলানা লুৎফুর রহমান শায়খে বর্ণভী ও বশীর আহমদ শায়খে বাঘা (র) বরাবরে একখানা পত্র লিখিয়ে আনেন।
এ পত্রে মদনী (র) সম্মিলিত শক্তি অর্জনের জন্য এদারার কাজকে বেগবান করার নির্দেশ দেন। কর্মবীর ডাক্তার মুর্তাজা চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আব্দুল করিম শায়খে কৌড়িয়া, শায়খে রানাপিং ও শায়খে রেংগা প্রমুখের উদ্যোগে মোগলা বাজার (গুরুন্ড-রেংগা) পূর্ণখলা গ্রামে ১৯৫২ সালে মাওলানা মুকাররম আলী ও মাওলানা সিকন্দর আলী সাহেবের বাড়ীতে সিলেট জেলার কওমী মাদ্রাসা সমূহের উস্তাদ ও বিশিষ্ট আলেম উলামাদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন শায়খুল হাদীস মাওলানা রিয়াসত আলী (রঃ), সভায় জেলার ৩০ (ত্রিশ)টি মাদ্রাসা ও মক্তবের সমন্বয়ে আবার বোর্ড গঠিত হয়। উক্ত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ক্বাঈদুল উলামা, ছদরে জমিয়ত আলøামা আব্দুল করিম শায়খে কৌড়িয়া (রঃ)কে সভাপতি নিযুক্ত করারপর মৃত্য র্পযন্ত প্রায় ৫৩ বছর স্বপদে ছিলেন। শায়খুল হাদীস রিয়াছত আলী রানাপিংগীকে সহ সভাপতি এবং ডাক্তার মুর্তাজা চৌধুরীকে সাংগঠনিক সম্পাদক নিযুক্ত করে এদারার কাজ পুনরায় চালু করা হয়।
উলেøখিত ব্যক্তি বর্গ ছাড়াও শহীদ মাওলানা শামসুল ইসলাম শেরপুরী, মাওলানা বশীর উদ্দীন গৌর করনী ও মাওলানা আব্দুল আজিজ (রহঃ) প্রমুখ পরিচালকবৃন্দের প্রচেষ্টায় বোর্ডটি উন্নতির দিকে অগ্রসর হয়।
১৯৭১ সালে ‘বাংলাদেশ’ স্বাধীন হওয়ায় ১৯৭২ সনে বোর্ডের নাম পরিবর্তন করে “আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বাংলাদেশ” নামকরণ করা হয়। মাওলানা ফখরুদ্দীন গলমুকাপনী তখন সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন। ক্বাঈদুল উলামা হযরত মাওলানা আব্দুল করিম শায়খে কৌড়িয়া (রঃ) ছদর নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মৃত্যু (১২ নভেম্বর ২০০১ সাল) পর্যন্ত সভাপতির পদে ছিলেন। শায়খে কৌড়িয়ার ইন্তিকালের পর সভাপতি নির্বাচিত হন হযরত মাওলানা ফখরুদ্দীন গলমুকাপনি (র),তিনি আমৃত্য সভাপতি ছিলেন।
যিনি দীর্ঘ ২৬ বৎসর এদারার (নাযিম) সেক্রেটারী ছিলেন। ১৪১৯ হিজরীসনে মাওলানা হুছাইন আহমদ বারকুটিকে সাধারনসম্পাদক ও মাওলানা আব্দুল বাসিত বরকতপুরীকে সহ সাধারন সম্পাদক মনোনীত করাহয়। ২০০৭ সালে মাওলানা হুছাইন আহমদ বারকুটিকে সভাপতি ও মাওলানা আব্দুল বাসিত বরকতপুরীকে সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। তারা বর্তমান র্পযন্ত স্বপদে আছেন।
সরকারী স্বীকৃতি: জানাগেছে, কওমী সনদের সরকারী স্বীকৃতির জন্য ১৯৯০ সাল থেকে দাবী আদায়ের জন্য বিভিন্ন মহল মাঠে নামে।
আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালিম বাংলাদেশ গত ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৩ ঈসায়ী বোর্ডের সোবহানীঘাটস্থ কার্যালয়ে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার স্বীকৃতি সম্পর্কিত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা ফখরুদ্দীন শায়খে গলমুকাপনীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাকে সরকারের পক্ষ থেকে বিনা শর্তে যদি স্বীকৃতি নেয়া যায়, তবে আজকের সভা এ ধরনের স্বীকৃতি আদায় করার পক্ষে সমর্থন জ্ঞাপন করে। ২০০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এদারার উদ্যোগে কওমী মাদ্রাসা সমূহের দাওরায়ে হাদীসের সনদের স্বীকৃতি লাভের ব্যাপারে আলোচনার জন্য “পূর্ব সিলেট আযাদ দ্বীনি আরবী কওমী মাদ্রাসা বোর্ড ও হবিগঞ্জ কওমী মাদ্রাসা বোর্ড” এর সমন্বয়ে এক পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মাওলানা আশরাফ আলী বিশ্বনাথী (রঃ)। সভায় স্বীকৃতি আদায়ের ক্ষেত্রে হাট হাজারী মাদ্রাসার মুহতামীম মাওলানা আহমদ শফি সহ দেশের বিশিষ্ট বুযুর্গদের সাথে মতবিনিময় করে বেফাকের সাথে অন্তর্ভুক্ত না হয়ে সনদের স্বীকৃতির ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্তগৃহীত হয়।
(তথ্য সূত্রঃ এদারার মজলিসে শুরায় গৃহীত ও অনুমোদিত সিদ্ধান্তসমূহ, পু¯Íক)।
কওমী সনদের সরকারী স্বীকৃতির দাবী আদায়ের জন্য ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী মাসিক মদীনা সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান,শায়খুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি ওয়াক্কাস এম,পি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ ৩ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী সহ ইসলামী ব্যক্তিবর্গ কওমী সনদের স্বীকৃতি আদায়ে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। বিগত ৭ জুলাই ২০০৬ ঈসায়ী জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে এডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী তার বাজেট বক্তৃতায় কওমী সনদের স্বীকৃতির ব্যাপারে জ্বালাময়ী ভাষণ দেন।
অপরদিকে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া (বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড), বেফাক, আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালিম বাংলাদেশ সহ দেশের প্রায় ৩০টি আঞ্চলিক বোর্ড, ইসলামী ব্যক্তিবর্গের প্রাণের এ দাবী বাস্তবায়নের জন্য তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার এক পর্যায়ে গত ২১ আগস্ট ২০০৬ ঈসায়ী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঢাকায় দেশের শীর্ষ পর্যায়ের আলেম উলামা ও মাদ্রাসা প্রতিনিধিদের এক বিশাল সম্মেলনে দাওরায়ে হাদীস বিভাগের সনদকে আরবী ও ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর (মাস্টার্সের সমমান) দেয়ার ঘোষণা করেন। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ.ন.ম. এহছানুল হক মিলন, আলøামা আহমদ শফি, মুফতি মাওলানা আবদুর রহমান, মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, মুফতি ফজলুল হক আমিনী এমপি, মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ ওয়াক্কাস এমপি, মাওলানা নূর হোসেন কাসেমী, মুফতি শহীদুল ইসলাম এমপি, এদারার সমন্বয়কারী মাওলানা আব্দুল বাছিত বরকতপুরী, এডভোকেট আবদুর রকিব, মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, মাওলানা আবদুল হালিম বোখারি, মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, মাওলানা আতাউর রহমান খানসহ দেশের প্রায় আট শতাধিক বিশিষ্ট আলেম ও চিন্তাবিদগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এরপর ২০০৬ সালের ৩১ আগষ্ট সিলেট সিটি পয়েন্টে আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বাংলাদেশ আয়োজিত ‘এদারার মাধ্যমে স্বীকৃতি’ বাস্তবায়নের দাবীতে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন- বোর্ডের তৎকালীন নির্বাহী সভাপতি মাওলানা আব্দুল হান্নান শায়খে পাগলা।
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- শায়খুল হাদীস তফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- জাতীয় সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী এম,পি। মাওলানা এনামুল হক ও মাওলানা ফয়জুল হাসান খাদিমানীর যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জিয়া উদ্দীন, স্বীকৃতি বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়কারী মাওলানা আব্দুল বাছিত বরকতপুরী। মাওলানা মুহাম্মদ রুহুল আমীন নগরীর কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- এ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকীব, শায়খুল হাদীস মাওলানা মুহিবুল হক গাছবাড়ী, মাওলানা আব্দুল হান্নান দরগাহ, মাওলানা সিকন্দর আলী, শায়খুল হাদীস মাওলানা নাজির হোসাইন, মাওলানা আব্দুল হান্নান গনেশপুর, মাওলানা ফখরুল ইসলাম খান, শায়খ মাওলানা হাফিজ মুহসিন আহমদ, মাওলানা মুশাহিদ দয়ামীরী, মাওলানা আব্দুল মুমিন, মাওলানা মুশ্তাক আহমদ ছিরামপুর, মাওলানা আব্দুল মতীন, মাওলানা ইউছুফ খাদিমানী, মাওলানা ওয়ারিস উদ্দীন হাসনাবাদ, মাওলানা হাজী ইমদাদুলøাহ, মাওলানা গিয়াস উদ্দীন, মাওলানা আব্দুস ছালাম রশীদী, মাওলানা মাহাবুব রব্বানী, মাওলানা আব্দুল মালিক কাসিমী, মাওলানা আতাউর রহমান, মাওলানা আশরাফ আলী মিয়াজানী, মাওলানা তৈয়বুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা সৈয়দ ফখরুল ইসলাম, মাওলানা আফসার উদ্দীন, মাওলানা আ,হ,ম, ফখরুদ্দীন, মাওলানা আনওয়ারুল ইসলাম, মাওলানা খলীলুর রহমান, মাওলানা শাহ মাশুকুর রশীদ, মাওলানা আব্দুল গফফার ছয়ঘরী, মাওলানা মুহিবুর রহমান, মাওলানা শাব্বীর আহমদ বিশ্বনাথী, মাওলানা হাফিজ আব্দুল গফফার, মাওলানা আব্দুশ শাকুর প্রমুখ।
(সূত্রঃ দৈনিকে সিলেটের ডাক-০১/০৯/০৬ইং) অত্যন্ত দু:খ জনক হলেও সত্য যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ও বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের সাথে অনেক বার বৈঠক, র্দীঘ আন্দোলন সংগ্রাম করার পরও অদ্যাবধি কওমী সনদের স্বীকৃতির বিষয়টি ঝুলন্তই রয়েগেল।
আমাদের বিশ্বাস চলমান কওমী সিলেবাসের মান উন্নয়নসাধন করা। অপর দিকে সরকারের উচিত হলো বিশাল এ জনগোষ্টির রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতির মাধ্যমে জাতীয় কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করেদেয়া। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।