বেদের মেয়ে জোছনা একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। ১৯৮৯ সালে মুক্তি লাভ করে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম ব্যবসাসফল ছায়াছবি। মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন অঞ্জু ঘোষ এবং ইলিয়াস কাঞ্চন। ছবির একটি গান বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে।
চলচ্চিত্রটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও পুননির্মাণ করে মুক্তি দেওয়া হয়। মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন অঞ্জু ঘোষ এবং চিরঞ্জীত। চলচ্চিত্রটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বাধিক বাণিজ্যসফল সিনেমা।
কাহিনী সংক্ষেপ
বঙ্গরাজের এক পরগনার কাজী সাহেবের একমাত্র দশ বছরের মেয়ে জোছনাকে সাপে কাটে। তাকে বাঁচানোর সকল চেষ্টা ব্যর্থ হলে কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেয়া হয় নদীতে।
ভাসতে ভাসতে সেই ভেলা একটি বেদে বহরের তীরে এসে থামে। বেদে বহরের নিঃসন্তান বেদে সর্দার তাকে ভালো করে তোলে এবং জোছনা নামেই নিজের নাতনির মতো একজন পেশাদার বেদেনি হিসেবে গড়ে তোলে। জঞ্ছনা একদিন রাজবাড়ি থেকে সাপখেলা দেখিয়ে ফেরার পথে বঙ্গরাজের উজিরপুত্র “মোবারক” (নাসির খান) জোসনার সম্মানহানি করতে চায়, আর এমন সময় রাজকুমার “আনোয়ার” (ইলিয়াস কাঞ্চন) এসে তাকে উদ্ধার করে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্য গভীর প্রেম হয়ে যায়। বঙ্গরাজ- তার পুত্র যুবরাজ আনোয়ার সকল বিষয়ে এখন পারদর্শী তাই তিনি ঠিক করে উজিরকন্যা “তারা বানু”কে (ফারজানা ববি) পুত্রবধু করে আনোয়ারের উপর রাজ্যের সমস্ত দায়িত্ব অর্পন করবেন।
ঠিক এমন সময় আনোয়ারকে একটি সাপে কাটে, আর তাকে এমন সাপেই কেটেছে যার বিষ নামাতে কোন ওঝাই রাজি হলো না, যখন প্রায় সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ তখনই সেনাপতি পুত্র “রাজ্জাক” (মিঠুন) জোছনাকে সাথে নিয়ে আসে। জোছনা তার নিজের জীবন বাজি রেখে আনোয়ারকে সুস্হ করে তোলে, এর আগে বঙ্গরাজ প্রতিশ্রুতি দেয়- জোছনা আনোয়ারকে সুস্হ করতে পারলে সে যা চাইবে, রাজা রাজসভায় সবার সামনে খুশি হয়ে তাকে তাই দিবেন। এবার চাওয়ার পালা- পূর্ণ রাজসভায় সবার সামনে জোছনা গানের সুরে কী ধন আমি চাইবো রাজা গো... ও রাজ চাই যে রাজকুমারকে কিন্তু রাজার মতে জোসনার চাওয়ার পরিমাণ এতই বেশি যে তাকে পুরস্কারতো দূরের কথা শেষ পর্যন্ত তিরস্কার করে কপালে রক্ত ঝরিয়ে রাজসভা থেকে বের করে দেয়। এবং বেদে বহরের সব ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে তাড়িয়ে দেয় রাজ্য থেকে, এদিকে আনোয়ার এই ঘটনা মায়ের কাছে জানতে পেরে জোছনাকে খুঁজতে বেরিয়ে যায়। খুঁজে পেয়ে জোছনাকে বিয়ে করে নিয়ে আসে প্রাসাদে, পিতা বঙ্গরাজের কথা অমান্য করে জোছনাকে বিয়ে করার অপরাধে বঙ্গরাজ- পুত্র আনোয়ারের মৃত্যুদণ্ড দেন ও পুত্রবধু জোছনাকে পাঠান বনবাসে।
রানীমা নিজ কৌশলে জল্লাদের হাত থেকে পুত্র আনোয়ার ও পুত্রবধু জোছনাকে বাঁচিয়ে দুজনকে একসাথে বনবাসে পাঠিয়ে দেন। শুরু হয় তাদের বনবাস জীবন। জোছনার চেয়ে খাবার খেতে চায় না আনোয়ার, সে চায় নিজে কোনো কাজ করবে এবং রাজপুত্র হয়ে গেল কাঠুরিয়া। দুজনের দিন ভালই যাচ্ছিলো, হঠাৎ একদিন নরসুন্দরের বেশে আগমন ঘটলো উজিরপুত্র মোবারকের। সে ঐ এলাকার জমিদার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে, মোবারক- আনোয়ার ও জোছনাকে চিনতে পেরে মনে মনে ফন্দি আঁটতে থাকে এবং জমিদার বাড়িতে গিয়ে রাতের আঁধারে কিছু অর্থ ও অলংকার চুরি করে জমিদারের একজন প্রহরীকে হত্যা করে।
এবং আনোয়ার ও জোছনার ঘরের পাশে কাঠের স্তুপের মধ্য রেখে আসে। জমিদারের প্রহরী খুন হওয়ায় জোর তালাশ- কে হত্যা করলো তার প্রহরীকে খুঁজতে পাঠালো সব লোক, মোবারক সরাসরি তাদের জানায় এই জঙ্গলে এক তাগড়া জোয়ান স্ত্রী সহ বসবাস করে। জোছনা গেছে ধর্মবাবার কাছে আর এমন সময় জমিদারের প্রহরীরা আনোয়ারকে ধরে নিয়ে যায়, যখন সে জমিদারের প্রশ্নের মুখে তখনই মোবারক রক্ত মাখা খঞ্জর আর চুরি যাওয়া জিনিস পত্র নিয়ে আসে। ফলে বন্দি হয় আনোয়ার, আর জোছনা আনোয়ারকে খুঁজে হয়রান এমনসময় মোবারক তার লালসার শিকার বানাতে চায় তাতে, জোসনা মোবারকের মুখে জ্বলন্ত আগুনের ফুলকি চেপে ধরে পালিয়ে যায়। এদিকে বঙ্গরাজ যখন পুত্র শোকে কাতর তখন সেনাপতিপুত্র রাজ্জাকের অক্লান্ত পরিশ্রম আর নিষ্ঠা রাজার মন জয় করলে, রাজা তার রাজ্যের সমস্ত দায়িত্ব তুলে দেন রাজ্জাকের হাতে।
রানীমা গোপনে রাজ্জাককে জানায় রাজকুমার আনোয়ার এখনো বেঁচে আছে, খুশি হয় রাজ্জাক। এদিকে রাজ্জাকের হাতে রাজ্যের দায়িত্ব তুলে দেয়ায় লোভী উজিরকন্যা তারা বানুকে রাজ্জাকের সাথে প্রেম করতে বলে। কিন্তু তারা ক্ষোভে দুঃখে আত্মহত্যা করতে গেলে রাজ্জাক তাকে বাঁচায় এবং জানায় রাজকুমার আনোয়ার এখনো বেঁচে আছে। ঘটনাচক্রে প্রেম হয়ে যায় ওদের, রাজ্জাক তারা বানুকে ছেলে সাজিয়ে তারকা নাম দিয়ে রাজকুমারের খোঁজে তার মামা জমিদারের কাছে পাঠায়। জমিদার সাহেব তারাকে ছেলে হিসেবে খুশি হয়, জমিদারের কারাগারে বন্দি থাকা আনোয়ার একবুক কষ্ট নিয়ে গেয়ে উঠে- মা... আমি বন্দি কারাগারে আছিগো মা বিপদে বাইরের আলো চোখে পড়ে না।
গান শুনে তারা বেরিয়ে কারাগারের কাছে এসে রাজকুমারকে বন্দি থাকতে দেখে কষ্টে বুক ভেঙে যায় তার। সে মহারাজ জানাতে আনোয়ার বাধা দিয়ে বলে আগে আমার জোছনাকে খুঁজে বের করো। শুরু হয় আনোয়ারের অপরাধের বিচারকার্য বিচারক কাজী সাহেব আনোয়ারকে হত্যার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করলে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে আসে তার ধর্মমেয়ে অনুনয় বিনয় করে স্বামীকে ছেড়ে দিতে। কাজী সাহেব জোছনাকে বলেন, মা এটা বিচারালয় আর বিচারালয়ের বিচারকার্য কোনো আবেগ কথা গ্রহণযোগ্য না। তারা একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে রাজকুমার সম্বোধন করলে কাজী সাহেব জানতে চায় কে রাজকুমার, বঙ্গরাজের পুত্র শুনে বিশ্বাস করেন না তিনি।
এদিকে তারার পাঠানো বার্তায় রাজ্জাকের মাধ্যমে বঙ্গরাজ তার পুত্র আনোয়ার বেঁচে আছে এবং তারই রাজ্যের অধীনে একটি পরগনার জমিদারের কারাগারে হত্যার দায়ে বন্দি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে রওনা দেন সেখানকার উদ্দেশ্যে। সেখানে পৌঁছেই পুত্রকে বিচারালয়ে দেখে বুকে জড়িয়ে নেন তিনি, এবং শ্যালক কাজী সাহেবকে নির্দেশ দেন রাজকুমারকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। কিন্তু রাজকুমার যে নির্দোষ প্রামাণ না করতে পারলে কাজী সাহেব তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়, এমন সময় রাজ্জাক উজিরপুত্র মোবারককে ধরে নিয়ে আসে এবং সে সব দোষ স্বীকার করে। বিচারালয়ে হাজীর জোছনার দাদা-দাদী, জোসনা কাজী সাহেবকে বাবা বলেডাকলে তার পালনকারী দাদা-দাদী বলে বাবা এলো কোথা থেকে আমরা তোকে সাপে কাটা অবস্হায় নদীতে একটি ভেলায় ভাসানো পেয়েছিলাম। শুনে চমকে উঠে কাজী সাহেব জানতে চায় তখনকার কোনোচিহ্ন আছে কি না, ওনারা একটা চিঠি বের করে দেন আর এতেই বেজে ওঠে রাজ্যময় মহামিলনের বাঁশি।
কপি পেষ্ট- উকিপিডিয়া ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।