চাঁদপুরে বিএনপির গণমিছিলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ২ বিএনপি কর্মী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়নি বলে জানান পুলিশ সুপার মোঃ শহীদ উল্লাহ চৌধুরী। বুধবার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ২ ব্যক্তির মৃত্যুর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। তাতে মৃত লিমন ছৈয়াল ও আবুল হোসেন মৃধার শরীরে গুলিবিদ্ধ স্থান ১.৫ সে.মি. ব্যাসের ও ছিদ্র কালচে পোড়া দাগ পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, খুব কাছাকাছি থেকে ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা তাদের গুলি করা হয়েছে, যা পুলিশের কোন গুলির আঘাত নয়। এ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে প্রমাণিত হয়, সেদিন পুলিশ গুলি করেনি।
বরং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেদিনের ঘটনায় পুলিশ ২২ রাউন্ড গ্যাস শেল, ১০৫ রাউন্ড শটগান এবং ৪ রাউন্ড চাইনিজ রাইফেলের ফাঁকা গুলি করেছে। যাতে মানুষ মারা যাওয়ার কথা নয়। তবে মিছিলে তৃতীয় কোন শক্তি পরিস্থিতি ঘোলাটে করার জন্য গুলিবর্ষণ করেছে। এতে পুলিশেরও ২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে। এছাড়া নিহত আবুল হোসেন মৃধার স্ত্রীর মামলায় উল্লেখ রয়েছে অর্থাৎ মামলায় বলা হয়েছে, সন্ত্রাসী প্রকৃতির ১০০ থেকে ১৫০ ব্যক্তি রামদা, কিরিচ, ককটেল এবং গুলিবর্ষণ করে।
এদিকে পুলিশ সুপার এক লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ চাঁদপুর জেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে তীব্র মতবিরোধ চলে আসছে। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৯ জানুয়ারি চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলো গণমিছিলের সিদ্ধান্ত নেয়। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিজের মধ্যে পারস্পরিক সংঘর্ষ ঘটায় এবং জামায়াত-শিবির ও অন্য উগ্রপন্থী ইসলামী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিশে গণমিছিলে অংশগ্রহণ করে যে কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটিয়ে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর সম্ভাবনায় ওই মাঠে গণমিছিলের অনুমতি দেয়া হয়নি। প্রশাসনিক অনুমতি না পাওয়া সত্ত্বেও জেলা বিএনপির দু’গ্র“প তাদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য গণমিছিল করার সিদ্ধান্তে অটল থাকে। বিবদমান গ্র“প দু’টির মধ্যে মারাÍক সংঘর্ষ এবং জানমালের ব্যাপক ক্ষতির আশংকা থাকায় চাঁদপুর শহর এলাকায় আইন-শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা নেয়া হয়।
ঘটনার দিন ২৯ জানুয়ারি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান শেষে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে এবং হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সরকারিভাবে ইস্যুকৃত হাতিয়ার গুলি, ঢাল-লাঠিসহ অফিসার ফোর্স মোতায়েন করেন। ডিউটিতে মোতায়েনকৃত পুলিশ অফিসার ও ফোর্সদের আইনি সহায়তা প্রদানের জন্য সেদিন বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শামীমুল হক পাভেলকেও মোতায়েন করা হয়। ঘটনার দিন বেলা সাড়ে ১১টায় বিএনপির বিবদমান দু’গ্র“পের ৩-৪ হাজার নেতাকর্মী মারাÍক অস্ত্রশস্ত্র, বোমা, ককটেল, লাঠিসোঠা, ইট-পাটকেল ইত্যাদি নিয়ে হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ দখল করার জন্য অগ্রসর হতে থাকলে তাদের বারবার সতর্ক করা হয়। কিন্তু মিছিলকারীরা তাতে কর্ণপাত না করে মাঠের সামনের রাস্তায় ও মাঠে পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এদের সঙ্গে জামায়াত ও শিবিরের ৪-৫শ’ উচ্ছৃংখল নেতাকর্মী আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা ইত্যাদি নিয়ে মিছিলে যোগ দেয়।
বিএনপি’র দু’গ্র“প, জামায়াত ও শিবিরের মিছিলকারীরা মাঠ দখল করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য নিজেরা দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লিপ্ত হয়ে গোলাগুলি ও পরস্পরের সঙ্গে মারামারি শুরু করে। তাদের গোলাগুলিতে একজন মিছিলকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে মাঠে পড়ে যায়। আতংকে ও প্রাণভয়ে হাসান আলী প্রাইমারি স্কুলে ছোট ছোট ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা ছোটাছুটি করতে থাকে। দাঙ্গাকারীদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টাকালে মিছিলকারীরা চারদিক থেকে পুলিশের ওপর বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে এবং কয়েকটি বোমা- ককটেল ছুড়ে মারে। কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িসহ আরও কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে।
নারী কনস্টেবলদের টানা-হেঁচড়া করে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। পুলিশের সরকারি অস্ত্র-গুলি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। দাঙ্গাকারীদের হামলায় কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ ৪০-৪২ জন পুলিশ গুরুতর জখম হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ১০৫ রাউন্ড শটগান, ৪ রাউন্ড চাইনিজ রাইফেলের ফাঁকা গুলি করে। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
তবে মিছিলকারীদের পারস্পরিক গুলিবিনিময়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ ব্যক্তি প্রাণ হারায়।
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।