বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ আজ বিকেলে লুৎফুল যখন নাজনীনের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়, তখনও সে জানত না আজ সন্ধ্যায় তার জন্য কী গভীর বিস্ময় আর শিহরণ অপেক্ষা করছিল । লুৎফুল- এর বড় ছেলে আবির এবার ক্লাস এইটে উঠেছে। গতমাসে আবির একটা মোবাইল ফোন হারিয়ে ফেলেছে।
এখন আবার একটা মোবাইল কিনে দেওয়ার জন্য চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেছে।
। যাত্রাবাড়ির কাছে একটা বেসরকারি কলেজে বাংলার অধ্যাপক লুৎফুল; গোনাগুন্তির সংসার তার, আবিরের একটার পর একটা বায়নায় বিপর্যস্ত সে। নাজনীনই ছেলেকে লাই দিয়ে মাথায় তুলেছে! কথাটা আজ রাগের মাথায় নাজনীনকে সরাসরি বলেই ফেলল লুৎফুল । নাজনীনও ছাড়বে কেন- গনগনে মুখে চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলে কথার বিষ উগড়ে দিল।
নাজনীন যে বুকের ভিতরে এত ক্ষোভ পুষে রেখেছে তা কে জানত!
মন অশান্ত থাকলে নিউমার্কেটের দিকে যায় লুৎফুল। নতুন বই এসেছে কিনা দেখতে। অধ্যাপনার পাশাপাশি লেখালেখিও করে লুৎফুল । এরই মধ্যে তার দুটো কবিতার বই বার হয়েছে। কবিতায় ডুবে থেকে সংসারের জ্বালাযন্ত্রণা ভুলে থাকে অর্ন্তমুখি ও কল্পনাপ্রবণ লুৎফুল ।
সেই সঙ্গে কবিতায় শ্যামলা রঙের একটি কিশোরীকে মূর্ত করে তোলে । সেই কিশোরীর নাম- মাহফুজা; লুৎফুল-এর সঙ্গে একই কলেজে পড়ত । অবশ্য মাহফুজার ডিপার্টমেন্ট ছিল আলাদা । তারপর কখন যে লুৎফুল-এর
জীবন থেকে হারিয়ে গেল বড় বড় ডাগর চোখের ছিপছিপে শ্যামলা সেই মেয়েটি । আজও লুৎফুলের স্মৃতিতে বেঁচে আছে মাহফুজা ।
অর্ন্তমুখি ও কল্পনাপ্রবণ লুৎফুল আজও মাহফুজা কে মনে রেখেছে; আজও মাহফুজা কে গভীর ভাবে ভালোবাসে সে ।
আজ নিউমার্কেটে ঢোকার মুখে দূর থেকে ওবায়দুরকে দেখতে পেয়ে থমকে দাঁড়াল লুৎফুল । অনেক বছর পর ওবায়দুর কে দেখল লুৎফুল । তা কম করে পনেরো বছর তে হবেই। ওবায়দুর আর সে একই কলেজে পড়ত।
ওবায়দুর ফুল কিনছিল। কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই মুহূর্তেই চিনতে পেরে লুৎফুল কে জড়িয়ে ধরল ওবায়দুর । দু’জনের বয়েসই এখন প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি । তবে জিন্সের প্যান্ট আর টি-শার্ট পরা ওবায়দুরকে লুৎফুল-এর তুলনায় বেশ স্মার্টই লাগে । ওবায়দুর অবশ্য বরাবরই স্মার্ট ছিল ।
কলেজের মেয়েদের কাছে ভীষণ পপুলার ছিল সে।
ওবায়দুরের গায়ের রং ফরসা, বেঁটে, মাথায় সামান্য টাক, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। ওকে দেখে মাহফুজার কথা মনে পড়ে গেল লুৎফুল-এর । ওবায়দুরদের ডিপার্টমেন্টেই ছিল মাহফুজা । লুৎফুল ছিল মুখচোরা।
কলেজে মেয়েদের সঙ্গে সেভাবে মিশতে পারত না। দূর থেকে কেবল শ্যামলা, ছিপছিপে আর ডাগর ডাগর চোখের মাহফুজা কে দেখত । মাহফুজাকে নিয়ে কবিতা লিখত। গোপনে ...
এমন না যে কলেজ জীবনে ওবায়দুরের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ট ছিল লুৎফুল- এর। (এবং ডিপার্টমেন্টও আলাদা ছিল।
) তবে ওবায়দুরের ব্যবহার ভীষণ অমায়িক ঠেকল। হয়তো চল্লিশ ছুঁই ছুঁই ওবায়দুর এরই মধ্যে জীবনের বহু অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে গিয়ে জড়তামুক্ত হয়ে উঠেছে । হয়তো সে জন্যই সে লুৎফুল- এর কাঁধে হাত দিয়ে বলতে পারল, চল দোস্ত, তোকে একজনের বাড়ি নিয়ে যাব।
কার বাড়ি? লুৎফুল খানিকটা বিস্মিত হয়।
আহা, আগে চল না।
ওরা পাশাপাশি হাঁটতে থাকে। একটা গুমোট দিনের শেষে সন্ধ্যা নামছিল। শুক্রবার। নিউমার্কেটে বেশ ভিড়।
ওবায়দুরের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে লুৎফুল-এরও বিষাদও ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছিল।
তার নাজনীন কিংবা আবির-এর কথা মনে পড়ছিল না। ওবায়দুর একটা পার্ক করা গাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। সাদা রঙের টয়োটা আভানজা। গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে ওবায়দুর বলল, ওঠ।
গাড়িতে ভিতরে ঢুকে বসতে বসতে ঈর্ষা হচ্ছিল লুৎফুল-এর।
ওবায়দুর একটা প্রাইভেট ব্যাঙ্কে চাকরি করে বলল। ভালো গুছিয়ে নিয়েছে বোঝা গেল।
ওবায়দুর বলে, তোদের ওদিকে জমির কাঠা কত করে রে লুৎফুল ?
কিনবি?
হু। দেখি।
আচ্ছা আমি খোঁজখবর নিয়ে তোকে জানাব ।
ওকে। আমার মোবাইল নাম্বার সেভ করে রাখ।
নাজনীন বারবার ফোন করছিল বলে ফোন অফ করে রেখেছিল লুৎফুল । এখন অন করল। ওবায়দুর নাম্বার বলে।
লুৎফুল নাম্বারটা সেভ করে নেয়। তারপর বলে, অ্যাই ওবায়দুর? আমরা যাচ্ছি কোথায় বলবি তো!
তোর কি মাহফুজা কে মনে আছে? আমাদের কলেজে পড়ত?
লুৎফুল- এর বুক ধক করে ওঠে। বলে, হ্যাঁ। ঘাম টের পায়, হাতের তালুতে, ঘাড়ে।
আমরা এখন মাহফুজার ওখানে যাচ্ছি।
মাহফুজা ঢাকায় থাকে? হঠাৎ ভীষণ তৃষ্ণা টের পায় লুৎফুল।
হ্যাঁ।
কোথায় ?
কাছেই। চল দেখবি।
ওর হাজব্যান্ড কি করে? প্রশ্নটা লুৎফুল না-করে পারল না।
মাহফুজার ডির্ভোস হয়ে গেছে।
ওহ্ । কি হয়েছিল জানিস?
না, আমাকে বলে নি। একটা মেয়ে আছে সুইটির মানে মাহফুজার । ক্লাস এইটে পড়ে।
বলে টার্ন নেয় ওবায়দুর।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে লুৎফুল । একই ছাদের নীচে বেঁচে আছে বলে নাজনীন কে নিয়ে মধুর স্বপ্ন দেখতে পারে না সে । লুৎফুল সংসারের প্রতিদিনের ব্যর্থতা আর গ্লানি ভুলে থাকে কল্পনায় মাহফুজা কে জীবন্ত করে তুলে । এখন মাহফুজার ডির্ভোসের কথা শুনে বিষন্ন বোধ করে সে।
ভেবেছিল কোথাও সুখে সংসার করছে তার মনের মানুষ!
এলিফ্যান্ট রোডের একটা গলির ভিতরে ঝকঝকে ফ্ল্যাটবাড়ি। চারতলার বাঁদিকের ফ্ল্যাট। সাজানো গোছানো ড্রইংরুম। দামী আসবাবপত্র। এসিও আছে।
ড্রইংরুমে ঢুকে শরীর জুড়িয়ে গেল। লুৎফুল খানিকটা অবাক হয়। ফিসফিস করে জিগ্যেস করে, মাহফুজা কি চাকরিবাকরি কিছু করে ?
না। বলে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা সিগাররেট ধরালো ওবায়দুর ।
তাহলে?
মাহফুজার কিছু ক্লায়েন্টস আছে ।
আমার বসও ওর ক্লায়েন্ট। বস এখানে এসে মাঝে মাঝে রিল্যাক্স করে। ওবায়দুর বলল।
তার মানে মাহফুজা ... লুৎফুল কথা শেষ করতে পারল না।
ওবায়দুর বলল, রিয়েলিটি দোস্ত।
লুৎফুল কী বলতে যাবে- মাহফুজা এল। দীর্ঘকাল পর কল্পনার নারী বাস্তব দেহ নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তার শরীর ভীষণ কেঁপে ওঠে। অদ্ভূত এক আবেগ টের পায় । নিজের অজান্তেই উঠে দাঁড়ায় সে ।
মাহফুজার পরনে সাদা রঙের শাড়ি। কালো ব্লাউজ। কপালে সবুজ রঙের টিপ। ছোট গোল ফ্রেমের চশমা পরা শ্যামলা মুখটা গম্ভীর। এককালের সেই শ্যামলা রংটি কেমন কালো হয়ে গেছে।
এ কয় বছরে বেশ মুটিয়েছে মাহফুজা, শ্যামলা ছিপছিপে তন্বী আর নেই। বড় বড় ডাগর চোখ প্রাণহীন । দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে লুৎফুল । তার কেন যেন মনে হল মাহফুজাকে না-দেখলেই হয়তো ভালো ছিল।
ওবায়দুরও উঠে দাঁড়িয়েছে।
মাহফুজার দিকে ফুলের তোড়া বাড়িয়ে দিয়ে সে বলল, হ্যাপি বার্থ ডে সুইটি ।
ফুলের তোড়া নিয়ে হাসার চেষ্টা করল মাহফুজা । তারপর বলল, আমার আবার জন্মদিন। বলে লুৎফুল-এর দিকে তাকাল। লুৎফুল কে ঠিক চিনতে পারছে না মনে হল ।
ওবায়দুর বলল, আরে, এ হল লুৎফুল । আমাদের কলেজে মানবিক বিভাগে ছিল। কেন তোমার মনে নেই?
মাহফুজা এবার মনে হয় চিনতে পারল যে । বলল, ও। কতদিন পর।
কেমন আছ? ঢাকায় থাক? মাহফুজার কন্ঠস্বর কেমন নিষ্প্রাণ ঠেকল। লুৎফুল আহত বোধ করে । আশ্চর্য হয়ে যায় সে। যাকে নিয়ে দু-দুটো কবিতার বইয়ে অন্তত শখানেক কবিতা লিখেছে, সে কিনা তাকে মনে রাখেনি!
একটা মেয়ে ড্রইংরুমে ঢুকল। শ্যামলা।
সালোয়ার কামিজ পড়া। আঠারো- উনিশ এর মতো বয়স হবে। হাতে ট্রে । ট্রেতে দুটো কাপ। এই মেয়েটিই দরজা খুলে দিয়েছিল।
মেয়েটা টেবিলের ওপর ট্রে রেখে চলে যায়।
আজ মাহফুজার জন্মদিন । কেক আশা করেছিল লুৎফুল। নেই। তার মানে জীবনে সুখি হয়নি মাহফুজা!
মাহফুজা বলল, নাও কফি খাও।
বলে লুৎফুল- এর হাতে কফির কাপ তুলে দেয় মাহফুজা । বুকের আঁচল বেশ খানিকটা সরে যায়। কালো রঙের ব্লাউজ, কাঁধের একপাশে ব্রার স্ট্যাপ স্পস্ট । ওদিকে তাকিয়ে লুৎফুল- এর চোখ আটকে যায়। চমৎকার সেইপ, ভরাট।
ভিতরে প্রবল কাঁপুনি টের পায় সে । এত কাল মাহফুজা কে কল্পনায় দেখেছে কেবল। কল্পনাতেও ছোঁয়নি। বাস্তবের ছোঁওয়ার কথাও কখনও ভাবেনি। মাহফুজ কে নিয়ে লেখা একটি পদ্য চকিতে মনে পড়ে যায় তার।
শীতসন্ধ্যায় সাগরপাড়ে
দাঁড়িয়ে ছিলে লোকের ভিড়ে;
ফিরে এলে আমার নীড়ে
কল্পনদীর অরূপ তীরে।
ওবায়দুরের দিকে আড়চোখে তাকায় লুৎফুল । ওবায়দুর সিগারেট টানছে। মোবাইল বার করে কী যেন দেখছে।
হঠাৎ ‘তেরে মেরে প্রেম কাহানি’ বলে একটা পরিচিত হিন্দি গানের রিংটোন বেজে উঠল।
। মাহফুজা সোফার ওপর থেকে মোবাইল তুলে নেয়। তারপর নাম্বার দেখে। তারপর মোবাইল কানে ঠেকিয়ে বলে, হ্যাঁ, বলেন, আচ্ছা, কেন মিসেস জেসমিন আপনাকে রেট বলেনি? আশ্চর্য! হ্যাঁ। বুঝলাম তো।
ক’জন? ওকে। কাল দুপুরে ফ্রি আছি। না, আমার এখানে প্রোবলেম আছে, আমার বাড়িঅলা ঝামেলা করছে। না না, প্লেস আপনিই ঠিক করবেন। ওকে? মাহফুজা মোবাইল অফ করে দেয় ।
মাহফুজাকে কিছুটা ক্লান্ত মনে হল।
লুৎফুল অবাক হয়ে যেতে থাকে ...
মাহফুজা বলল, শোন না ওবায়েদ, আমার বাড়িওয়ালা কী বদমাইশি শুরু করেছে। কথা নেই বার্তা নেই হুট করে ভাড়া সাড়ে তিন হাজার টাকা বাড়িয়ে দিল। আমি বললাম দিতে পারব না। ওমাঃ অমনি নোটিশ পাঠালো।
অক্টোবরের মধ্যে ফ্ল্যাট ছাড়তে হবে। এখন কী করি বল তো?
ওবায়দুর এক মুখ ধোঁওয়া ছেড়ে বলল, নো প্রোবলেম সুইটি। আমি আজই বস- এর সঙ্গে কথা বলছি। উত্তরায় শৈবাল অ্যাপার্টমেন্ট-এর কাজ অল মোস্ট কমপ্লিট। বসকে ওখানে তোমাকে একটা ফ্ল্যাট রেডি করে দিতে বলব।
মাহফুজা উচ্ছ্বসিত বলল, থ্যাঙ্কস ওবায়েদ। আমি তাহলে নিশ্চিত হলাম। নোটিশ পাওয়ার পর না আমি ভীষণ টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম। কোথায় যাই। যে কোনও ফ্ল্যাটে তো ওঠা যায় না।
হাজারটা প্রশ্ন করে।
ওবায়দুর হাসে। কফির কাপে চুমুক দেয়। একমুখ ধোঁওয়া ছাড়ে।
মাহফুজা বলল, শুনলাম বস নাকি সিঙ্গাপুর গেছেন?
হ্যাঁ।
বস অবশ্য এই উইকেই ঢাকায় ফিরবেন। আঠাশ তারিখ নতুন টিভি চ্যানেল উদ্বোধন।
শুনলাম জলি রহমান আছে বসের সঙ্গে? মাহফুজার কন্ঠস্বর কেমন খসখসে হয়ে ওঠে।
হুমম।
জলি রহমান তো আগে আফজাল মল্লিকের সঙ্গে ছিল।
ওবায়দুর বলল, শেয়ারে কোটি টাকা লস করে মাইল্ড স্ট্রোক করেছে আফজাল মল্লিক । আর জলিপাখিও উড়ে গেছে। বেচারা আফজাল মল্লিক এখন একাই থাকে, দেখাশোনার কেউ নেই। জলি রহমান- এর জন্য বুড়ো বয়েসে বউকে ডির্ভোস দিল। ছেলেমেয়েরাও বাপকে এড়িয়ে চলে।
লুৎফুল কিছুই বুঝতে পারছিল না। কে বস? কে জলি রহমান? কে আফজাল মল্লিক? ও বোঝে যে ও একটা সীমাবদ্ধ জগতে বেঁচে আছে, যে জগতে কল্পনাই কেবল লাগামহীন। ওর কফির স্বাদ তেতো লাগে। মাহফুজার কথা বলার ভঙ্গি ভালো লাগে না। সে পাঁজরে ক্ষীণ ব্যথা অনুভব করতে থাকে।
সামান্য উদ্বেগ বোধ করে লুৎফুল । আবির দুপুরের পর রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল; ও কি বাড়ি ফিরে এসেছে? নাজনীন কি খুব টেনশন করছে?
ওবায়দুরের মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠল। কার সঙ্গে কথা বলছে সে। একটু পর ফোন অফ করে মাহফুজার দিকে তাকিয়ে বলল, সিফাত ফোন করেছিল। আমাকে এখুনি একবার গুলশান যেতে হবে।
কেন? মাহফুজার কালো মুখে ক্ষীণ উদ্বেগ ফুটে উঠল।
আমার শাশুড়িকে দু'দিন আগে গুলশানের একটা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। অবস্থা নাকি ক্রিটিকাল।
ও।
মাহফুজা? ওবায়দুর উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে।
বল। বলতে বলতে মাহফুজা উঠে দাঁড়াল।
ওবায়দুর বলল, আজ তুমি না হয় লুৎফুল কে একটু সময় দাও। ওকে এদ্দিন পরে দেখলে।
মাহফুজা হাসল।
বলল, ওকে। বলে লুৎফুল-এর দিকে গভীর চোখে তাকাল।
ওবায়দুর বলল, ফোন করিস দোস্ত। আর জমির কথা মনে রাখিস। আরে তোকে আমি মিছিমিছি খাটাবো না।
টু পাসেন্ট পাবি।
লুৎফুল মাথা নেড়ে উঠে দাঁড়াল।
আর মোবাইলটা এখন বন্ধ রাখ দোস। এসব সময়ে বউয়ের ফোন না এলেই ভালো। বলে চোখ টিপে ওবায়দুর।
মাহফুজা হিহি করে হেসে ওঠে। বলে, বউকে ভীষণ ভয় কর বুঝি? কেমন বউ? সুন্দরী?
লুৎফুল ম্লান হাসে। নাজনীনের মুখটা মনে পড়ে গেল তার। মনের ভিতরে ক্ষীণ অপরাধ বোধ টের পেল সে । তবে লুৎফুল লেখক বলেই অপরাধ বোধ ছাপিয়ে গভীর এক কৌতূহল তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে তাকে।
নির্জনে মাহফুজাকে পাওয়ার গভীর এক কৌতূহল।
ওবায়দুরকে বিদায় করে এসে মাহফুজা বলল, চল লুৎফুল । আমরা ও ঘরে যাই।
তারপর নীল আলো জ্বলা নির্জন এক সুগন্ধি ছড়ানো বেডরুমে লুৎফুল কে নিয়ে যায় মাহফুজা । এই মুহূর্তে তার সামনে কল্পনার মানসীর বাস্তব শরীর ।
সে এখন তার কল্পনাকে স্পর্শ করবে । লুৎফুল তীব্র শিহরণ বোধ করে। একটু পর মনের মধ্যে সামান্য দ্বিধা নিয়েই কল্পনার দেহটির দিকে হাত বাড়াতে যায় লুৎফুল... মাহফুজা বুকের আঁচল ফেলে ব্লাউজের বোতাম খুলতে খুলতে খসখসে স্বরে বলে, আমার রেট পাঁচ হাজার। এখন সব টাকা না থাকলে পরে এসে বাকি টাকা দিয়ে যেও কেমন।
মুহূর্তেই জমে যায় লুৎফুল।
ভালোবাসার এক নারীর কল্পনায় মগ্ন হয়ে সংসারের প্রতিদিনের যাবতীয় গ্লানি আর ব্যর্থতা ভুলে থাকত সে , এর পর বেঁচে থাকাটা ঠিক কেমন হবে সেটা ভাবতেই তার করোটিতে, মগজে আর দেহের কোষে কোষে তীব্র শিহরণ টের পায় ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।