আমার ঘুম না আসা রাতে তোমার ছায়া খেলা করে অন্য ছায়ার সাথে ছেলেটার চলে যাওয়ার দিনটি থেকে আজ পর্যন্ত সুক্ষ্ম হিসাব রয়েছে আমার কাছে আমি ম্যাথে খুব খারাপ তবুও কি করে যে এই হিসাবটা মনে আছে !
ছেলেটার বর্ণনা দেয়ার কিছু নেই,কিন্তু ওকে দেখার পর আমার খরগোশের কথা মনে হয়েছিল ।
দিনটি ছিল পহেলা বৈশাখ,ঘাসে বসার কিছুক্ষণ পর আমার পেছন থেকে টোকাইয়ের দল জুতা চুরি করে নিয়ে গেলো । আমি জুতার শোকে খালি পায়ে হাকিম চত্বরে হাটছি । শাফিন আহমেদ স্টেজে ওঠার পর জুতার কথা ভুলে আমি লাফালাফি শুরু করে দিলাম আর ছেলেটার চোখে বিস্ময় ছিল । এতদিনের পরিচয়ে এমন গেট টুগেদারে আমার এই অবস্থা দেখে ।
ঐ দিন খরগোশটা একদম হাল্কা পিঙ্ক কালার শার্ট আর আমি পড়েছিলাম লাল । ওর সাথে আমার কবে কয়তারিখে ও কোন কালারের শার্ট পড়েছে এগুলো অদ্ভুতভাবে মনে রয়ে গেছে,এই ছেলের সাথে প্রেম না হলে জানতামইনা আমার মেমরি এত শার্প
আমাদের থিম সং ছিলো,
এক বৈশাখে দেখা হলো দুজনার
জ্যৈষ্ঠতে হল পরিচয়
আসছে আষাঢ় মাস মন তাই ভাবছে কি জানি কি হয়?
কি আর হবে প্রেম হয়ে গেলো,মহা আনন্দে প্রেম শুরু করলাম । ছেলেটার সাথে যে ডেটিং এ যেতে হবে,হাত ধরতে হবে মাথায়ই আসেনি । আমার মত টমবয় একটা মেয়ে ঐ ছেলের দিকে লজ্জায় তাকাতে পারতাম না ।
প্রেম ছিল ৩মাসের,অসাধারণ ৩টা মাস ।
৩মাসে আমাদের ১মিনিটের জন্যেও ঝগড়া হয়নি । গেট টুগেদার দেখা,ফোনে কথা,মেসেজ এতটুকুর মধ্যে ছিল আমাদের প্রেম আর আমরা এতেই অতিমাত্রায় ভালো ছিলাম ।
আমার অভ্যাস ছিল ডায়রি লেখার,ও কল করেই আগে ডায়রি শুনতো । ছেলেটা সামনে খুব চুপচাপ আর লাজুক হলেও ফোনে আমাদের বেশ কথা হত । মাঝে মাঝে ও ল্যাপটপে গান ছাড়তো,আমি আর ছেলেটা চুপচাপ শুনতাম,আমাদের প্রিয় গানগুলো ।
ও কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়লে শুধু ওর নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে ফোন ধরে রাখতাম,কি আজগুবি ব্যাপার ।
পূর্ণেন্দু পত্রীর কথোপকথনে ১৩ইজুলাই নিয়ে একটা কবিতা আছে । স্মৃতিটা হল এক ১৩ই জুলাই বই কিনতে বের হলাম আমি আর নওশীন । কি মনে করে সবুজ শাড়ি পড়েছিলাম জানিনা,আজিজ থেকে যখন বের হয়েছি বৃষ্টিতে ভিজে একাকার দুই বান্ধবী । শুনে কুম্ভকর্ণ ছেলেটা ঘুমটুম বাদ দিয়ে তার বৃষ্টিতে ভেজা সবুজ শাড়ি পড়া মায়াবতীকে দেখতে ভিজে ভিজে চলে আসলো ।
আসার পর ওর ভেজা সবুজ টিশার্ট দেখে আমি আর নওশীন হেসে দিলাম ।
বাসে উঠিয়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত দুজনে চুপচাপ পাশাপাশি হাটলাম । নওশীন কথা বলে যাচ্ছিলো আর কাকভেজা আমি জ্বর আসার পূর্বাভাস হিসেবে কাপছিলাম ঠাণ্ডায় ।
বাসে উঠে যাওয়ার পর ফোনে একটা টেক্সট পেলাম,
মায়াবতী,তোমাকে আজ যেতে দিতে ইচ্ছে করছিলো না কিন্তু তোমার জ্বর এসে পড়বে তাই...সময়গুলো এত দ্রুত চলে যায় কেন?
এরকম একটা ছেলেকে কি করে আমি ভালো না বেসে পারি?
আমাদের এমন টুকরো টুকরো অনেক স্মৃতি আছে । ওর সাথে প্রেম থাকাকালীন অবস্থায় দেখা হয় শেষ,২৭ আগস্ট আর ঐদিন ও বৃষ্টি ছিল ।
৫জনের গেট টুগেদার,শিশুপার্কে ইফতারি চিবানো অথবা আমার জন্মদিনে গ্রামে না গিয়ে দেখা করা । প্রতিটা মুহূর্ত অসাধারণ ছিল!
অনেকে প্রশ্ন করে কেনো ওকে এত ভাবি,আমি এর উত্তর পাইনা । ছেলেটার সাথে আমার ব্রেক আপ হওয়ার এতদিন পরেও আমি এই সুন্দর স্মৃতিগুলি ভেবে বেশ আনন্দ পাই । আমার ভালো লাগে,এবং সবচে সত্য কথা এইযে আমি আমার স্মৃতিগুলোকে অনেক বেশি ভালোবাসি অনেক বেশি ।
ব্রেক আপের পরেও আমাদের যোগাযোগ ছিল,ও ঠিক আগের মতই কেয়ার নিত,আগের মত রেসপন্স করতো কারণটা জানি ।
আমি সাহসী মনের মেয়ে যে কিনা তার এক্সবয়ফ্রেণ্ডকে এখনো ফেবুতে ব্লক করেনি,মাঝে মাঝে অনলাইনে দেখে ।
আমাদের এখনো পর্যন্ত শেষ দেখা ২০১১সালের মে দিবসে । মাঝে শাহবাগে তাকে দু একবার আমি দেখেছি সে আর তার মায়াবতীর দিকে তাকানোর সুযোগ পায়নি ।
তার চলে যাওয়ার পরবর্তী অবস্থায় কাউকে ভালবাসার মত দুঃসাহস করতে পারিনি । হৃদয়টা এতই ভাঙ্গা যে নতুন কাউকে ঐটা দিতে বড্ড বেশি লজ্জা লাগবে ।
যাদের প্রতি একটু ভালোলাগা ছিল সেগুলোর চিন্তা মাথা থেকে ঝেটিয়ে বের করেছি । আমার প্রেমে পড়া এক বন্ধু বলেছিলো,আমি নাকি ভঙ্গুর । যদি কোনভাবে আমি আরেকটা রিলেশনে ইনভল্ভ হই এবং তা ব্রেকআপ হয় তাহলে আমার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা শতকরা শুন্যভাগ । কথাটা আসলেই সত্যি আমার সহ্যশক্তি খুব কম...টিকতে পারবো না । এজন্য কারো প্রতি বিন্দুমাত্র ভালোলাগাকে খুন করি...
কিন্তু মাঝে মাঝে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ইচ্ছে করে ।
ঐ ছেলেটার জন্য,দূরে চলে যাও তবু ছায়া আঁকা থাকে মেঘে টাইপের কথা বলতে ভালো লাগেনা ।
একটা কষ্টের স্মৃতি আছে । আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছি আম্মু জড়িয়ে ধরার পর দেখি তার চোখেও পানি । আমার মা ঐ দিন বুঝেছিল ছেলেটাকে আমি ভীষন পরিমাণে ভালবাসি....না পেয়ে হারানোর চেয়ে পেয়ে হারানোর যন্ত্রণাটা খুব পোড়ায় ।
"Never look back", We said
How was I to know I'd miss you so?
Loneliness up ahead, emptiness behind
Where do I go?
And you didn't hear all my joy through my tears
All my hopes through my fears
Did you know?
Still I miss you somehow
উত্সর্গ : আমি প্রায় প্রতিরাত্রেই রাত্রিলিপি লিখি,লিখেই ড্রাফট করে রাখি ।
রাত্রিলিপি একেকজনকে উত্সর্গ করা থাকে । আজকের রাত্রিলিপিটা আমার বেস্ট ফ্রেণ্ড টুশির জন্য,এই মেয়েটা আমাকে আজ ভয়াবহ কাঁদিয়েছে । দিনদুনিয়ার যত পেইন আজ আমার সামনে এনেছে । দীর্ঘ কনভার্সেশনের একটা বিরাট অংশজুড়ে ছেলেটার উপস্থিতি ছিল,আরো কার কার যেন । টুশি আমাকে কি পরিমাণ ভালবাসে তা মাপতে খুব ইচ্ছে হয় তবুও মেয়েটা আমাকে আজ কাঁদিয়েছে ।
কাঁদানোর পর,রাত ১০টার দিকে ৮টাকা রিকশাভাড়া দিয়ে আমার বাসায় এসে ২মিনিট জড়িয়ে ধরে বসে ছিলো । যাওয়ার আগে আম্মুকে বলে গেছে আমার তাড়াতাড়ি মরে যাওয়া উচিত তাহলে নাকি আমি কষ্ট কম পাবো । এই রাত্রিলিপিটা আমার বেস্ট ফ্রেণ্ডের জন্য,আমি চাই ওর ইচ্ছে পূরণ হোক । লাভ য়্যু সুইটি
২৭ জানুয়ারি ২০১২, ভোর ৪.১৯ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।