আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জেসাস রিবর্ন (ছোট গল্প)

নিজের সম্পর্কে লেখার কিছু নেই । সাদামাটা । জেসাস রিবর্ন অস্থির ভাবে পায়চারী করলেন তিনি ঘরের ভেতর এদিক থেকে সেদিক । মুষ্ঠিবদ্ধ করলেন হাত দুটি বার কয়েক । তার এতোদিনকার কোমল চোখে আস্তে আস্তে আগুনের লালচে আভা জাগতে শুরু করলো ।

ঠোটদুটো শক্ত হয়ে বসে গেল পরষ্পর । তার স্ত্রী কি যেন বলতে এসেও তার দিকে চেয়ে থমকে গেলেন । তিনি ঈশারায় স্ত্রীকে কি যেন বললেন , মুখ খুললেন না । চোখদুটো বড় বড় করে একটা অজানা আতঙ্ক নিয়ে স্ত্রী তাকিয়ে থাকলেন তার দিকে । তার এতোকালকার শান্ত মানুষটির দিকে ।

এমোনটি তো দেখেননি কখোনও তিনি । কি হয়েছে বুঝতে পারলেন না । কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলেন । পায়চারী থামিয়ে তিনি স্থির দৃষ্টিতে তাকালেন চব্বিশ বছর আগে যে মেয়েটিকে জীবনের সঙ্গী করে এনেছিলেন তার দিকে । ঠোট জোড়া নড়ে উঠলো তার – ‘ তুমি কি জানো কি হয়েছে আমার ?’ নাহ্‌ , স্ত্রীর ভয়ার্ত জবাব ।

চোখে আগুনের ফুলকি ঝিলিক দিয়ে উঠলো তার । তিনি বুঝতে পারলেন কি যেন একটা ঘটে যাচ্ছে তার নিজের ভেতর । ঠিক কোনখানে ধরতে পারলেন না । কঠিনতম কষ্টে নিজেকে সংযত রাখলেন তিনি । আবারো নড়ে উঠলো ঠোট – ‘ অঞ্জলী, যে আমাকে তুমি চেন গেল চব্বিশটি বছর ধরে , সেই আমি আর আমাতে নেই ।

আমার ভেতরে অদ্ভুত একটা কিছু ঘটে যাচ্ছে – আমার রক্তের প্রতিটি বিন্দুতে বিন্দুতে একটা আশ্চর্য্য প্রতিশোধের প্রচন্ড জোয়ারের শব্দ আমি শুনতে পাচ্ছি । এতোদিন পড়ে পড়ে শুধু মারই খেয়েছি আমরা – তুমি , আমি সবাই । এই কথিত সমাজ আর অন্ধ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক খান কয়েক লোক আর তাদের তল্পিবাহকদের কারনে আমাদের সবার পিঠ ঠেকে গেছে দেয়ালে । আমাদের কাউকে ভদ্রভাবে, শান্তিতে বাঁচতে দেবেনা ওরা । আমাদের সন্তানদের আতঙ্কিত প্রহর, দিন , মাস, বছর কাটবে মাটিতে মুখ বুজে কারন প্রতিবাদের প্রতিটি পথ বন্ধ করে রেখেছে ওরা ।

আমরা মরছি প্রতিদিন – মরতেই থাকব । এভাবে বেঁচে থাকা চলেনা । এটাকে রুখতে হবে এবং এখনই । এই বিষবৃক্ষকে উপরে ফেলতে হবে যাতে এই মাটিতে সবুজ দূর্বাঘাস নিশ্চিন্তে মাথা তুলতে পারে আবারো’ । তিনি থামলেন ।

অদ্ভুত এক স্বর্গীয় আলোকে তার শরীর জ্বলে উঠলো । দেহে ভর করলো এক অজানা সর্বগ্রাসী শক্তি । দক্ষিন বাহু আস্তে আস্তে আশ্চর্য্য এক ভঙ্গীমায় উর্দ্ধে উঠে গেল তার । বিড়বিড় করে বললেন – ‘বি হোল্ড’। থেমে গেল চরাচর ।

হতবিহ্বল স্ত্রীর চোখের পর্দা থেকে হারিয়ে গিয়ে তিনি দেখলেন উন্মুক্ত রাজপথের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি । একজন যিশুর মতো । দৃশ্যমান যাবতীয় পার্থিব কিছু অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে দেখলো তাকে । এমোন একটি মানুষ তারা দেখেনি কোনওদিন । এক মসীহা ।

জানালায় থমকে যাওয়া চড়ুই, উড়তে উড়তে থেমে যাওয়া কাকটি বুঝলো, এবার হাযার বছর পরে ক্রুশবিদ্ধ হবে অন্য কেউ । এই যিশু নয় । থমকে যাওয়া জনপদের ভেতর দিয়ে তিনি এগিয়ে চললেন দৃপ্ত পদে । কাঁপতে থাকলো পায়ের নীচে পড়ে থাকা ধরণী । মূহুর্তে পৌঁছে গেলেন গন্তব্যে ।

হাতের পাঁচ আঙ্গুলে অবলীলায় তুলে আনলেন সেই শতনারী ভোগী ধর্ষককে । আর ঝুলিয়ে দিলেন ষ্টেডিয়ামের সুউচ্চ ফ্লাড লাইটের পোষ্টে । ধর্ষকের নিম্নাঙ্গ থেকে দড়িতে বাঁধা আধলা ইটখানা দুলতে থাকলো পেন্ডুলামের মতো । সতর্ক মৃত্যুর ঘন্টা বেজে উঠলো চারদিকে । বৈশাখী উৎসবে যারা বোমা মেরে নিভিয়ে দিয়েছিলো যাবতীয় মঙ্গল প্রদীপ তাদেরকেও তুলে আনলেন একে একে ।

তাদের পাপিষ্ঠ হাতে বোমা বেধে দিয়ে চাপ দিলেন দ্রুত । ছিটকে গেলো হাতগুলো । কান গেল ছিড়ে । তারপর ক্ষতবিক্ষত দেহগুলোকে ঝোলালেন আগের দেহটির পাশে । যে লোকটি এসিড ছুড়ে বীভৎস করে দিয়েছিলো মেয়েটির জীবনময় শরীর তাকেও তুলে আনলেন অবলীলায় ।

স্টেডিয়ামের ব্যাটারীর দোকানে রাখা এসিড ভরা পাত্রে ছেড়ে দিলেন আস্তে আস্তে । গগনবিদারী চীৎকারের সাথে সাথে শরীর থেকে খসে গেলো চামড়া । গলতে শুরু করলো মাংশ । মরলো না লোকটি । লাইট পোষ্টে ঝোলালেন তাকেও ।

এরপর একে একে তুলে আনলেন বিষবৃক্ষের বীজ বপনকারী পাপীদের , বুক উচু করে চলা সব অপরাধী । তুলে আনলেন সেইসব ধোঁকাবাজদের যারা কথা দিয়ে কথা রাখেনি কোনওদিন । তুলে আনলেন তাদের ও যারা কোনও কিছু না করেই সবকিছুর মৌরসীপাট্টা নিয়ে নিয়েছে নিজেরাই । ঝোলালেন এক এক করে । ঠুকে দিলেন পেরেক তাদের শরীরে ।

সুউচ্চ ফ্লাড লাইটের পোষ্টগুলো ভরে গেলো সেইসব উৎপীড়ক, অত্যাচারী, লোভী অমানুষের ক্রুশবিদ্ধ শরীরে । থমকে গিয়ে স্থির হয়ে যাওয়া জনপদ এবার নড়ে উঠলো যেন । করতালিতে মুখরিত হলো আকাশ । লক্ষ লক্ষ স্বস্তির নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো লক্ষ লক্ষ দেহের পিঞ্জর থেকে । ঘূর্নিঝড় হয়ে তা ধেঁয়ে গেল স্টেডিয়ামের দিকে ।

ঝুলে থাকা দেহগুলো কেঁপে কেঁপে উঠে দুলতে থাকলো উত্তর থেকে দক্ষিনে, পশ্চিম থেকে পুবে । ফুল বিক্রেতা দুটো ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ছুটে এলো কোথা থেকে । অতি সযতনে ওরা তুলে দিল তার হাতে রক্তে মাখা একটি তুলি আর কুড়িয়ে আনা একটুকরো কাগজ । তিনি স্মিত হাসলেন । অভয়ের হাসি ।

তারপর উপুড় হয়ে তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুললেন লেখাগুলো – “ এই নিষ্পাপ শিশুদের হাসি যেন মুছে না যায় আর কোনওদিন । এই শাস্তিই এদের একমাত্র প্রাপ্য । এখোনই সময় । এদের কে এভাবেই রুখে দিন । ” উঠে দাড়ালেন তিনি ।

কাগজটি লটকে দিলেন স্টেডিয়ামের গেটে । উৎসর্গ দেশকে ভালোবেসে, এখানের মানুষগুলোকে ভালোবেসে অনেক কথা লেখা হয় এখানে সেখানে । মানুষের কল্যানে প্রায় সবাই-ই লিখে খাকেন, “শুভবুদ্ধির উদয় হোক” বা “ অন্যায় দুর হোক” জাতীয় কথা । একজন ব্যর্থ মানুষের মতো এভাবে ক্ষমা করা ছাড়া যাদের আর করার কিছু নেই । এতে হয়তো উপরের আগুন নিভলো বটে কিন্তু আমাদের ভেতরে ধিকিধিকি জ্বলতে থাকা আগুনের কি হবে ? একটা পলায়নী মনোবৃত্তি থেকে যারা সাহস করে ঝাঁপ দিতে এগিয়ে আসেন কলমের মতো একটি শক্তিশালী অস্ত্র নিয়ে , যার সাড়া মেলে প্রতিদিন ব্লগের পাতায় আপনাদের লেখাতে, তাদের জন্যে উৎসর্গীত ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।