আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘরামীর কান্নায় স্তব্ধ এজলাস কক্ষ

নবতাবিরোধী অপরাধে আটক জামায়াতের শীর্ষ নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ২৩তম সাক্ষী মধুসুদন ঘরামী তার জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বিভিন্ন কথা স্মরণ করে ৮০ বছর বয়স্ক ঘরামী হৃদয়বিদারক কান্নায় ভেঙে পড়লে স্তব্ধ হয়ে পড়ে পুরো এজলাশ কক্ষ। বুধবার সকালে একটি সিকবেড শুয়ে তার জবানবন্দি দিয়েছেন মধুসদন ঘরামী। এ সময় তার পাশে একজন ডাক্তারও ছিলেন। মধুসদন ঘরামী জবানবন্দিতে বলেন, দেলাওয়ার সিকদার ৭১ এ সাঈদী নামে পরিচিত ছিলেন।

এই দেলাওয়ার সিকদার আমাকে, কৃষ্ণ সাহা ও ডা. গণেষকে মসজিদে বসিয়ে মুসলমান বানায়। তখন আমার নাম রাখে আলী আশরাফ ও কৃষ্ণ সাহার নাম রাখা হয় আলী আগবর। কিন্তু কৃষ্ণ সাহা মুসলমান হয়ে আল্লার নাম নিয়েও বাঁচতে পারেনি। কয়েকদিন পর তাকে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, দেলাওয়ার সিকদার আমাদের বলেছিল তোমরা মুসলমান হলে মরবা না, তা না হলে বাঁচবা না।

ঘরামি সাক্ষ্য দিতে গিয়ে তার জবানবন্দিতে আরও বলেন, একদিন বিকেল ৪টা কি সাড়ে ৪টার দিকে আমার বাড়িতে রাজাকাররা আসে। তখন আমি বাড়িতে ছিলাম না। বাড়িতে আসার পর আমার স্ত্রী আমাকে বলে, তোমাকে যে মুসলামান করেছিল, সে এসেছিল। স্ত্রী আরও বলে, ‘আমাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আমি আর বলতে পারছি না, আমার চিন্তা করও না তুমি পালাও।

’ এ কথা বলে তিনি এজলাস কক্ষে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তখন তার কান্নায় স্তব্ধ হয়ে পড়ে সমস্ত এজলাশ কক্ষ। কারও কারও চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তেও দেখা যায়। তিনি বলেন, যুদ্ধের শেষে আমার স্ত্রীর একটি কন্যা সন্তান হয়। আমি তার নাম রাখি সন্ধ্যা।

স্ত্রী এখন কোথায় আছে রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলীর জবাবে তিনি বলেন, স্ত্রীকে লোকজন গঞ্জন অপমান করলে তখন আমি আমার শ্যালককে বলি কি করবা? তখন শ্যালক বলে, ভারতে নিয়ে যাই। কিছুদিন পর স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে শ্যালক ভারতে চলে যায়। এরপর থেকে তাদের সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি। এ কথা বলে তিনি আবারও কন্নায় ভেঙে পড়েন। অপর এক পশ্নের জাবাবে ঘরামী জানান, তিনি আর বিয়ে করেননি।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত এ সময় তাকে প্রশ্ন করেন। বর্তমানে আসামি পক্ষের জেরা চলছে। এর আগে মঙ্গলবার তাকে উপস্থিত করা হলেও অসুস্থতার কারণে তার সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত করা হয়। ওইদিন ঘরামীকে ট্রাইব্যুনাল এজলাসে উপস্থিত করা হলে বিচারপতি নিজুমল হক বলেন, তার শারীরের যে অবস্থা তাকে দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ অমানবিক। কারণ তার অবস্থার কারণে আসামি পক্ষের জেরা করা সম্ভব নয়।

এ সময় জামায়াতের আইনজীবী তাজুল ইসলামও একই কথা বলেন। পরে এক আদেশে বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ বলেন, অসুস্থতাজনিত কারণে সাক্ষ্য প্রদান করতে অপারগ হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন এবং আসামি পক্ষের সম্মতিতে আজ সাক্ষগ্রহণ স্থগিত করা হলো। প্রসঙ্গত, সাক্ষী মধুসুদন ঘরামীর সাক্ষ্যগ্রহণ অনেক আগে হওয়ার কথা থাকলেও অসুস্থতার করণে তা সম্ভব হয়নি। ৮০ বছর বয়স্ক মধুসুদন বর্তমানে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এদিকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে বুধবার সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় করাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১২  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.