কয়েকমাসের মধ্যে জামালের হেরোইন-ফেন্সিডিলের ব্যবসা বেশ জমে উঠল। শুধু মাদক ব্যবসা নয় ঠিকাদারী, ধান চাউলের ব্যবসা সবকিছু মিলিয়ে জামালের অর্থনৈতিক অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হলো।
জাহিদ জামালের জেনারেল ম্যানেজার, জামালের পক্ষ থেকে সেই সবকিছু দেখা ভাল করে। জামাল প্রতিদিন সন্ধ্যায় অফিসে বসে সবকিছু তদারকি করে। কোন কোনদিন অফিসের কাজ শেষ করে পার্টি অফিসে বসে আবার কোনদিন ছুটে যায় জাহিদের বাসায়।
তারপর যুথি জোরে চেঁচিয়ে বলে, কে এলো আপা?
জুঁই বলে জামাল ভাই এসেছে। তোর চেঁচামেচি করতে হবে না, তুই ভালোভাবে লেখাপড়া কর্।
তারপর জামালের সাথে গল্প করে। তার মা চা তৈরি করে অনেকক্ষণ পর যুথি চা নিয়ে ঘরে ঢুকে।
আজ জামাল ঘরে ঢুকেই জুঁইকে বলল, জুঁই আগে এক গ্লাস পানি দাও পরে অন্য কিছু খাবো।
জুঁই পানি নিয়ে এলো, জুঁইয়ের হাত থেকে পানির গ্লাস নেওয়ার সময় জামাল ইচ্ছা করে জুঁইয়ের হাত স্পর্শ করল। জুঁই এর শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। হৃৎপিন্ডের স্পন্দন বেড়ে গেল। জামাল পানি রেখে নিজের চেয়ারে বসল। পরপর কয়েকবার পরস্পরের চোখে চোখে পড়ল।
জামাল মুচকি হেসে বলল, জুঁই অনেকদিন থেকে ভাবছি তোমাকে আমি সুন্দর করে সাজাবো।
জুঁই কিছু বুঝতে পারল না, তার মনে হলো হঠাৎ করে জামাল তাকে সাজাতে চাইবে কেন? জুঁই জিজ্ঞেস করল, হঠাৎ করে আমাকে সাজানোর কথা আসছে কেন ভাইয়া?
জামাল সেকথার উত্তর না দিয়ে আবার বলতে শুরু করল, এই ধরো দামি শাড়ি, ব্লাউজ, দামি গয়না এসব পরলে তোমাকে কেমন দেখায়। তুমি এমনিতেই খুব সুন্দর তারপরও শাড়ি পরলে সৌন্দর্য্য আরো ফুটে উঠবে।
জুঁই লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে গেল সে মাথা নত করে বসে রইল। কয়েকমুহূর্ত কারো মুখে কোন কথা নেই।
জামাল বলল, আমাকে খুব কাছের মানুষ মনে করবে।
জুঁই তবুও কিছু বলল না যেমনভাবে বসে ছিল তেমনি অনড়ভাবে কিছুক্ষণ বসে রইল। সে জামালের এসব কথায় অস্বস্থিবোধ করছিল। সে তার চেয়ার থেকে উঠে বলল, যুথির পরীক্ষা তো ও একটু পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত আপনি বসুন আমি চা নিয়ে আসছি?
জামাল জুঁইয়ের পথ রোধ করে দাঁড়ালো, ওটা যুথি আর খালা আম্মার ডিউটি তুমি একটু বসো গল্প করি।
জুঁই তার চেয়ারে বসল।
জামাল বলল, জুঁই তুমি আমাকে কতটুকু জানো বলো তো।
জুঁই নীরবে বসে রইল জামাল আবার বলল, জুঁই কথা বলো।
জুঁই মৃদু হেসে বলল, কী বলব ভাইয়া? আমি জানি আপনি ভাইয়ার বস্, বিশাল ধনী লোক। আপনার অনেক টাকা -পয়সা, বিষয়-সম্পত্তি, আর কিছু জানি না।
এই যেমন বিয়ে করেছি কিনা?
জানি আপনি বিয়ে করেছেন, ঘরে সুন্দরী বউ আছে।
আমি ধনী মানুষ? টাকা-পয়সা বিষয় সম্পত্তির অভাব নেই? ঘরে সুন্দরী বউ আছে? তার মানে আমার সব আছে?
জুঁই মাথা বাঁকিয়ে সায় দিয়ে বলল, জি।
কিন্তু আমার মধ্যেও যে একটা শূন্যতা আছে। সে কথা কি তুমি জানো?
জুঁই মাথা ঝাঁকিয়ে জানাল, তার জানা নেই।
জুঁই সবকিছু থেকেও আমার প্রায় মনে হয় আমার কিছু নেই যখন আমি ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকি তখন আমি যেন অর্থের নেশায় মত্ত থাকি, তারপর ব্যবসার কাজ গুছিয়ে আমি যখন একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় পাই তখন যেন বুক ফেটে যায়, তখন সুখের অভাব অনুভব করি বলতে বলতে জামাল জুঁইয়ের চিবুক উঁচু করে ধরল, জুঁই তুমি আমাকে সুখ দিবে?
জুঁই লজ্জায় চোখ বন্ধ করে বলল, প্লিজ ভাইয়া আপনি আপনার চেয়ারে বসুন।
জামাল জুঁইয়ের চিবুক থেকে হাত নামিয়ে পকেট থেকে টাকা বের করে জুঁইয়ের হাতে দিয়ে বলল, জুঁই রাখো, বলছিলাম না শাড়ি পরলে তোমাকে খুব সুন্দর লাগবে।
শাড়ি কিনবে আবারো যেদিন আমি আসবো সেদিন শাড়ি পরবে, বলে জামাল জুঁইয়ের হাতের মধ্যে টাকা পুরে দিল। কিন্তু জুঁই হাতের মুষ্টি ছেড়ে দিলে টাকা মেঝেতে পড়ে গেল।
মুহূর্তেই জামাল রেগে গেল সে চাপাস্বরে বলল, জুঁই এত অহংকার ভালো না। তুমি এটা না করলেও পারতে।
জুঁই এবার একটু দুর্বল হয়ে পড়ল।
সে জামালের হাত ধরে বলল, সরি ভাইয়া আমি বুঝতে পারিনি আপনি এভাবে রেগে যাবেন।
জামাল জুঁইয়ের হাতে টাকা দিয়ে তার চেয়ারে গিয়ে বসল। এমনসময় যুথি চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো।
যুথি সবসময় হাসি-খুশি থাকে কোনদিন কেউ তার মুখে সামান্য মেঘের ছায়াও দেখেনি। বরাবরের মত যুথি মিষ্টি হেসে বলল, কেমন আছেন ভাইয়া?
জামাল মৃদু হেসে বলল, বিকেলে কাজে খুব ব্যস্ত ছিলাম জুঁই'র সঙ্গে কথা বলে মনটা ভালো হয়েছিল আর তোমাকে দেখে তো মনটা আরো আনন্দে নেচে উঠল।
যুথি মুখ কালো করল, ভাইয়া আপনি কি থামবেন? না থামলে কালকেই বাসায় গিয়ে ভাবীকে বলব, তিনি যেন আপনার চোখের চিকিৎসা করান।
যুথি এতবড় বেরসিক হলে চলবে কী করে বলো। একটু রোমান্টিক হও।
জুঁই চাপা স্বরে বলল, যুথি তুই একটু যাবি, ভাইয়ার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
যুথি চলে গেল।
জামাল জিজ্ঞেস করল, কী কথা? বলো?
ভাইয়া আমি তো চাকরির জন্য বিভিন্ন অফিসে অনেকদিন থেকে এপ্লিকেশন করছিলাম গতকাল একটা ইন্টারভিউ কার্ড এসেছে আগামী শুক্রবার আমার ইন্টারভিউ, ঢাকায়।
জুঁই এতবড় একটা খবর তুমি লুকিয়ে রেখেছ। দেখি তোমার ইন্টারভিউ কার্ডটা, বলে জামাল জুঁই'র দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।
আপনি বসুন আমি নিয়ে আসছি বলে জুঁই বের হয়ে গেল। কয়েকমিনিট পর ইন্টারভিউ কার্ডটা এনে জামালের হাতে দিল।
জামাল কার্ডটা হাতে নিয়ে পড়ে দেখে মনে মনে বলল, জুঁইকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার এই তো সুযোগ। আর একবার যদি ঢাকা নিয়ে যেতে পারি--------।
জামালকে চুপ করে থাকতে দেখে জুঁই জিজ্ঞেস করল, ভাইয়া কি কিছু ভাবছেন?
হ্যাঁ খুঁজে পেয়েছি ঐ অফিসে তো আমার এক ভাই আছে, ভাই মানে আমাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতার ভাই ঐ অফিসের বড় অফিসার। আমার সঙ্গেও বেশ জানা শোনা আছে আমার গলার স্বর শুনলেই চিনবেন বলে জামাল ইন্টারভিউ কার্ডে নাম দেখে বলল, হ্যাঁ রাজ্জাক ভাই তো? আচ্ছা আমি একবার মোবাইল করে দেখি যদি পাই তবে এখনই কথা বলব। বলে জামাল মোবাইল করে কথা বলতে শুরু করল, রাজ্জাক ভাই ভালো আছেন?
অপর পাশ থেকে কী বলল তা শোনা গেল না।
ভাইজান আপনার অফিসে আমার একটা ছোট বোন চাকরির এপ্লিকেশন করেছে, খুব ট্যালেন্ট মেয়ে বলে জামাল মোবাইল ফোনটা কানের কাছে ধরে রাখল। তারপর আবার বলল, আমি রোল নাম্বারটা বলি একটু লিখে নিবেন? প্লিজ!
অপর পাশ থেকে কোন কন্ঠস্বর ধ্বনিত হলো কী না তা বোঝা গেল না।
জামাল আবার বলল, মোবাইলে হবে না সরাসরি যেতে হবে?
কবে?
পরীক্ষার আগের দিন?
কেন্ডিডেটকে ইন্টারভিউ কার্ডসহ পরীক্ষার আগের দিন দেখা করতে হবে।
কোথায় বাসায় নাকি অফিসে?
বাসায় রাত আটটার আগে।
আচ্ছা ভাই ঠিক আছে।
আমি নিজে কেন্ডিডেটসহ ইন্টারভিউর আগের দিন আসছি। বলে জামাল মোবাইল অফ করল।
জুঁই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, ভাইয়া ঐ অফিসের বস্ আপনার পরিচিত?
হ্যাঁ এতক্ষণ কি শুনলে? রাজনীতিবিদদের হাত সম্পর্কে তো তোমার ধারণা নেই।
জুঁই অবাক হয়ে জামালের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
জামালের হাতে কার্ডটা থাকা সত্ত্বেও সে জিজ্ঞেস করল, পরীক্ষা কখন শুরু হবে যেন?
জুঁই বলল, শুক্রবার সকাল ন'টায়।
তারমানে উনার সঙ্গে দেখা করতে হবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, বলে জামাল জুঁই'র দিকে তাকিয়ে বলল, জুঁই তুমি তাহলে সে অনুযায়ী রেডি থাকো। আহ্ আজ খুব ভালো লাগছে। তোমার চাকরিটা একেবারে নিশ্চিত।
জুঁইয়ের মুখের ওপর তখন একটা আনন্দের ছাপ ফুঁটে উঠেছে।
জামাল বলল, আমরা বৃহষ্পতিবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবো।
জুঁই, যুথি তোমরা তাহলে থাকো আমি আসি, বলে জামাল চেয়ার ছেড়ে উঠে যুথির গালে টোকা দিয়ে বলল, তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে বলে জামাল খালা আম্মা আসি বলে উত্তরের অপেক্ষা না করে চলে গেল।
চলবে...
গডফাদার-০১ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।