মাত্র ১১ বছর বয়সে সেই যে ক্রিকেট ব্যাটটাকে নিজের সঙ্গী বানিয়েছিলেন, সেটার সঙ্গে কাটিয়েছেন দীর্ঘ ২৯টি বছর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারটাই তো ২৪ বছরের। ক্রিকেটের বাইরে যে অন্য কিছুই এই এতগুলো বছরে ভাবেননি, সেটা টেন্ডুলকার নিজেই বলেছেন বেশ কয়েকবার। কিন্তু কোনো না কোনো এক সময় তো ক্রিকেটকে বিদায় বলতেই হতো। উপেক্ষা করতেই হতো ২২ গজের হাতছানিকে।
নামিয়ে রাখতেই হতো দীর্ঘদিনের সঙ্গী ব্যাটটা। দেবতার স্বীকৃতি পেলেও সত্যিই তো আর অমরত্ব পাওয়া সম্ভব নয়। তাই ৪০ বছর বয়সে এসে শেষ পর্যন্ত সেই বেদনাদায়ক কাজটা করতে হলো টেন্ডুলকারকে। বিদায় বলতে হলো ক্রিকেট অঙ্গনকে।
আর কোনো দিন ক্রিকেট খেলতে পারবেন না বলে কি এখন কিছুটা বিষণ্নই হয়ে যাবেন টেন্ডুলকার? দীর্ঘদিনের সতীর্থ সৌরভ গাঙ্গুলী কিন্তু তেমন আশঙ্কার কথা ইতিমধ্যেই জানিয়ে রেখেছেন।
তবে শুধু মন খারাপ করে বসে থাকাও তো আর টেন্ডুলকারের মতো কিংবদন্তির পক্ষে সম্ভব নয়। কিছু না কিছু একটা তো করেই যেতে হবে জীবনের বাকিটা সময়। অবসরের পর এখন কী করবেন টেন্ডুলকার? কোন ভূমিকায় দেখা যাবে ভারতের ক্রিকেট দেবতাকে?
অবসর গ্রহণের পর অনেক কিংবদন্তি খেলোয়াড়ই গ্রহণ করেছেন ধারাভাষ্যকারের দায়িত্ব। টেন্ডুলকারের কাছেও যে এমন অসংখ্য প্রস্তাবই আসবে, সেটা নিঃসন্দেহেই বলা যায়। কিন্তু টেন্ডুলকার কি সত্যিই হাঁটবেন সাবেক তারকা সুনীল গাভাস্কার, রবি শাস্ত্রী, সৌরভ গাঙ্গুলী বা শেন ওয়ার্নদের পথে? নাকি ভিন্ন কিছুরই পরিকল্পনা করছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান?
বিতর্ক আর কলঙ্কের ছড়াছড়ি যে ক্রিকেট অঙ্গনে, সেখানকার শীর্ষ তারকা হয়েও টেন্ডুলকার সারা জীবনই ছিলেন নিষ্কলুষ।
একের পর এক বিস্ময়কর সাফল্য সত্ত্বেও টেন্ডুলকারকে সব সময়ই দেখা গেছে সেই চিরচেনা নম্র-বিনয়ী একজন মানুষ হিসেবে। সেই টেন্ডুলকারকেই এ বছরের জুনে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে শপথ নিতে দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন অনেকেই। আজীবন পাঁকমুক্ত একটা জীবনযাপনের পর শেষবেলায় কেন পড়লেন রাজনীতির গাড্ডায়? অনেকের মনেই হয়তো এসেছিল এমন প্রশ্ন।
দুই যুগ ধরে ক্রিকেট মাঠে এমন সব কীর্তি গড়েছেন, যা দিয়ে আজীবনই স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারবেন লিটল মাস্টার। তবে নিজেকে শুধুই সংখ্যার হিসাব দিয়ে স্মরণীয় করে রাখতে চান না টেন্ডুলকার।
গত জুনে সাংসদ হিসেবে শপথগ্রহণের সময় তিনি বলেছিলেন, ‘শুধু ক্রিকেটই না, দেশের সব ধরনের খেলাধুলার উন্নতির জন্য কাজ করার সুযোগ আমার আছে। শুধু ক্রিকেটীয় পরিসংখ্যানের জন্য না, ক্রীড়াজগতের অগ্রগতিতে অবদান রেখে স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারলেই আমি বেশি খুশি হব। ’ ভারতের ক্রীড়ামন্ত্রী হতে পারলেই তো সেই কাজটা সবচেয়ে ভালোভাবে করতে পারবেন টেন্ডুলকার। তেমন প্রস্তাব ইতিমধ্যে দিয়েও ফেলেছেন ভারতের আরেক কিংবদন্তি অ্যাথলেট মিলখা সিং। অনানুষ্ঠানিকভাবে টেন্ডুলকারকেই ক্রীড়ামন্ত্রীর আসনে বসানোর সুপারিশ করেছেন ‘ফ্লাইং শিখ’ নামে খ্যাত এই অ্যাথলেট।
কে জানে, দেশ পরিচালনায় অংশ নিয়ে দেশের ক্রীড়াজগতের উন্নতি সাধনের পরিকল্পনা হয়তো সত্যিই আছে টেন্ডুলকারের।
ভারতের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক কপিল দেবের প্রত্যাশাটা অবশ্য কিছুটা ভিন্ন। মন্ত্রিত্বের মতো গুরুগম্ভীর দায়িত্বের মধ্যে না গিয়ে শচীনকে উদীয়মান খেলোয়াড়দের নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন কপিল, ‘শচীনের সামনে অনেক সুযোগ আসবে। কিন্তু আমার ইচ্ছা, সে যেন তার অমূল্য অভিজ্ঞতাগুলো তরুণ খেলোয়াড়দের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। তারা শচীনের প্রতিটা শব্দ মনে গেঁথে নেবে।
’ টেন্ডুলকারকে কোচিং দুনিয়ায় আসার পরামর্শ শুধু কপিলই নন, আরও অনেকেই নিশ্চিতভাবেই দেবেন। ভবিষ্যতে সত্যিই কী করবেন সেটা সময়ই বলে দেবে।
তবে আপাতত অবসর সময়ের একটা বড় অংশ যে টেন্ডুলকার স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের নিয়েই কাটাবেন, সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে এমনটাই করতে দেখা গেছে তাঁকে। হয়তো সময় দেবেন শাশুড়ি আনাবেল মেহতার মুম্বাইভিত্তিক এনজিও আপনালয়েও।
টেন্ডুলকারের পৃষ্ঠপোষকতাতেই প্রতিবছর সুবিধাবঞ্চিত ২০০ শিশুকে স্বনির্ভর করে তোলার কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান। এর বাইরেও দাতব্যের উদ্দেশ্যে নানাবিধ কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে দেখা যেতে টেন্ডুলকারকে। — এনডিটিভি
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।