জীবনের জন্যই এই সব কথামালা যে কোন রচনা কিংবা লেখাই লেখকের নিজস্ব সম্পদ। এর পিছনে কতটা মানসিক শ্রম, মননশীলতা, অনেক ক্ষেত্রে কায়িক শ্রম, সময়ের সুযোগ ব্যয় সম্পর্কিত বিষয়াদি জড়িত তা লেখক মাত্রই জানেন। ব্লগের কল্যানে আমরা ছোটখাটো লিখিয়েরা ও কিছুটা জানি। কিছুটা কেন বলি, নিজের লেখা অন্য কারো নামে দেখলে সব টাই বুঝি। অনেক ব্লগেই দেখি, ''মৌলিক লেখাগুলো অন্য কোথাও ব্যবহারে আপত্তি থাকিবে'' কিংবা ''লেখা অনুমতিবিহীন যত্রতত্র ব্যাবহার নিষেধ'' টাইপ সতর্কতা।
যাদের বই আমরা পড়ি কিংবা প্রকাশিত বইয়ের ক্ষেত্রে ও কিন্তু এই কথাটি খাটে। বরং প্রকাশিত বই গুলো থেকেই অনলাইন সতর্কতার বিষয়টি এসেছে, আমার বিশ্বাস। আর অনলাইনে তো লেখা চুরি করা সব চেয়ে সহজ বিষয়। যাই হোক, মূল আলোচনায় আসা যাক; আমরা সাধারণঃত যে সব বই দেখি, সেখানে লেখা প্রকাশক কিংবা লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত হতে দেখি। কেউ যাতে নকল কিংবা নিজের নামে প্রকাশ না করে তার জন্য দন্ডবিধির সতর্কতাটা থাকে সর্বোচ্চ।
লেখার মালিকানা সংরক্ষণ কিংবা চুরি ঠেকাতে আমাদের পূর্ব পুরুষরা বোধ হয় একটু উগ্র কিংবা শ্লীলতার সীমাই লংগন করতেন। পুথি কিংবা স্তোতি লিপিকরের হাত দিয়ে সুন্দর ও সর্বকাল জয়ী কিছু বাণীর পাশাপাশি মালিকানা সংরক্ষণে কিছু কু কথা কিংবা বিশ্রী বাক্য ও বেড়িয়ে এসেছিলো। নিম্নে কিছু তুলে ধরা হলঃ
(ক) ''জত্নেন লিখিতং গ্রন্থ্য জসচোর অতি পুস্তকং
মাতাচ যুকরি তস্যা পিতা ভবতি গদ্ধ্রপ। । ''
(যত্নের লেখা পুথি চোরের মা শুকরি ও বাবা গর্দভ হবে।
)
(খ) ''এই পুস্তক যে হরে তার চোদ্দ পুরুষ নরকে পড়ে। ''
(গ) এই গ্রন্থ জে জানিবার স্বরুপ চুরি করিয়া রাহিবেক
সেই মহাপাপের পাতকি। সেই বিয়ান্যা হইবেক। ''
(জানতে বা পড়তে চুরি করলে ও মহাপাপের পাতক এবং পুত্র বা কন্যার শাশুড়ির সাথে অবৈধ সম্পর্ক হওয়ার অভিশাপ বর্ষণ)
(ঘ) ''এ গ্রন্থ যে হরিবেক তাহাকে গো ব্রাহ্মণ বধ লাগিবেক। ''
(গো হত্যা এবং ব্রহ্ম হত্যা হিন্দু ধর্মে শুধু পাপই না, শোনাটাই নাকি পাপ।
তখনকার হিন্দুদের ভয় দেখানোর জন্য এর চাইতে আর কি বিষয় তোলা যেত। )
(ঙ) ''এ গ্রন্থ যে চুরি করিবেক সে আপনার শাশুড়িকে লইবেক। ''
(এটা বোধ হয় বুঝানোর কিছু নাই। নিম্নমানের রুচি বোধ ধারী পুথি লেখকদের অভিশাপ বোধ করি। )
(চ) ''এই পুথি যে চুরি করিয়া লইয়া যাইবে সে সামুড়ে হইবে এবং স্ত্রী হত্যা গো হত্যা বধের ভাগি হইবে।
''
(এখানে নারী হত্যার পাপ আরোপিত হবার সতর্কতা এসে গেছে। )
(ছ) ''জদ্যপি লিখিল পুথি চুরি করে যে
মহীপাপে ভুক্তমান করে তবে সে
পরকালে রৌরব নরকে হয় স্থিতি
জেই জন হরিবেক আদিকান্ত পুথি। ''
(পুথি চোরকে যন্ত্রণাময় নরকে যাওয়ার অভিশাপ দেওয়া হয়েছে এখানে। )
(জ) ''এ পুস্তক জে চুরি করিবেক সে সাসুড়া হইবেক। এবং এ পুস্তক পড়িয়া যে নিন্দা করিবেক সে বওয়া হইবেক।
''
(পুথিচোরকে অবৈধ সম্পর্কের অভিশাপ দেওয়ার পাশাপাশি যে পুথি পড়ে নিন্দা বা সমালোচনা করবে তাকে বখাটে বা বয়ে যাওয়া বলে গালি দেওয়া হয়েছে। )
(ঝ) ''চুরি করে জিনি নিবেন তাহারা এই বেবথা এই গংগার বন্দনা পুতি জেনি নিবে তিনি মত্রাসর থানে বেত খাবে আর আমিই কান মলিএ দিব আর এবং তাহার মাতা ধরে কিল মারিবে। ''
(এখানে আর কোন অভিশাপ না। যেন নিজের দুষ্ট ছেলেকে শাস্তি দেওয়ার কথা বলছেন। )
(ঞ) ''মার না করি যদি গালি দাও মোরে
পাইলা বহুল দুঃখ গোরের ভিতরে।
''
(ভালোভাবে না পড়ে সমালোচনা করলে কবরের ভিতর দূঃখ পাওয়ার অভিশাপ দেওয়া হয়েছে এখানে। এটা নিশ্চয় মুসলমান কোন পুথি লিপিকরের লিখা। )
______________________________________________
কৃতজ্ঞতাঃ
এটি কোনভাবেই আমার মৌলিক লেখা না। আমি শুরুর কথা ছাড়া সবটাই তো অন্য খান থেকে নিলাম। উনি ও নিয়েছেন এবং কৃতজ্ঞতায় রেখেছেন পূর্বসুরীদের।
আমি আপাতঃত তার নাম ও বইয়ের কথাটাই বললাম।
বাংগালির কুসংস্কার - শ্রীকান্ত বসু।
দ্রষ্টব্যঃ শত চেষ্ঠায় ও সব বানান ঠিক রাখা গেলোনা।
______________________________________________ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।