আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফাজায়েল আমল, না হাদিস অনুযায়ী আমরা আমল করবো?

► লেখার উদ্দেশ্যঃ এসব লেখার উদ্দেশ্য তাবলীগের ভুল ধরা না, বরং ইসলামের স্বার্থেই ইসলামে নতুন আগত আমল বা বিদায়াতগুলোকে মুসলমানদের কাছে তুলে ধরা। বলতে পারেন এটা গঠনমূলক সমালোচনা। আপনি যদি এই লেখায় কোন ভুল ধরতে চান, তাহলে অবশ্যই কোরআন ও হাদিস দিয়ে ভুল ধরবেন। আপনি সঠিক হলে আমি মেনে নিব। যেখানে কোরআন হাদিস দিয়ে একটা কথা ভুল প্রমাণ করা হয়েছে, সেখানে কোরআন হাদিসের প্রমাণ ছাড়া শুধু আবেগের বশে তর্ক করা মানে আপনি কোরআন-হাদিসের অমান্য করছেন।

► মুল কথাঃ তাবলীগদের ফাজায়েল আমল বইয়ের লেখক মওলানা জাকারিয়া বলেছেন, “(আজকাল) দ্বীন ও দ্বীনের বিধান সমুহ উপেক্ষা করিয়া নিজের মনগড়া চিন্তা ধারার মাধ্যমে দ্বীনের উন্নতি কামনা করা হইতেছে” (ফাজায়েল তাবলীগ বইয়ে ১৫ পৃষ্ঠা)। তার এই কথাটা মনে রেখে তারই নিজের উল্লেখিত নিচের গল্পগুলো পড়ুন- ১. আবু বকর জারীর (রঃ) বলেন, আমার কাছে এক গোলাম থাকিত যে সারাদিন রোজা রাখিত ও সারারাত্রি তাহাজ্জুদ আদায় করিত। একদিন সে আমার নিকট আসিয়া বলিল আমি ঘটনাক্রমে আজ রাত্রে ঘুমিয়া পরিলে স্বপ্ন দেখিলাম মেহরাবের দেয়াল থেকে সেখান হতে কয়েকজন অপূর্ব সুন্দরি ও একজন কুৎসিত মেয়ে আসিল। আমি তাহাদের জিজ্ঞাসা করিলে তারা বলিল, আমরা হলাম আপনার বিগত রাত্রিসমুহ আর এই কুৎসিত মেয়েটি হল আপনার আজকের রাত্রি। (ফাজায়েল নামাজ, ৯৪ পৃষ্ঠা) ২. সুফি আব্দুল ওয়াহেদ একদিন এমন স্বপ্ন দেখার পর তিনি কসম করলেন, যে রাত্রে আর কখনো তিনি ঘুমাবেন না।

পরে ৪০ বছর তিনি রাত্রে কখনো ঘুমাননি। (ফাজায়েল নামাজ, ৯৪ পৃষ্ঠা, পুরো গল্প না লিখে শধু মুল কথাটা লিখলাম)। ৩. জনৈক বুজুর্গ মাজহার সাদির বরাতে ঐ একই পৃষ্ঠায় জান্নাতের অল্প বয়সের কিশোরীদের লোভ দেখিয়ে একই গল্প দেওয়া হয়েছে। একই ধরনের অনেক গল্প ও কিচ্ছা ৯৫, ৯৬, ৯৭ ও ৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা আছে। ৪. খলিফা আব্দুল আজিজের নামে একটি কিচ্ছা লিখে বলা আছে, “খেলাফত লাভের পর হইতে তাহার ফরজ গোছলের প্রয়োজন হয় নাই” অর্থাৎ তিনি তার স্ত্রী সস্পর্শ থেকে সবসময় দূরে থেকে ইবাদতে মগ্ন ছিলেন।

(৯৯ পৃষ্ঠা) ৫. ছাবেত নামক এক বুজুর্গ ৫০ বছর একটানা রাত্রিতে না ঘুমিয়ে কাটানোর ফলে সে মারা যাওয়ার পর লোকজন তার কবরে দেখল যে সে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কবরের ভিতর নামাজ পড়ছে। (১০১ পৃষ্ঠা) ৫. এমনকি ইমাম আবু হানিফাসহ আরও কিছু ব্যক্তির নামে মিথ্যা বানোয়াট কথা তৈরি করে লেখা আছে, তারা এক ওযু দিয়ে ৫০ বছর এশা ও ফজরের নামাজ পড়তেন। (১০২ পৃষ্ঠা) তাবলীগের এসব এমন অসংখ্য গল্প-কিচ্ছার মাধ্যমে সারাদিন রোজা ও সারারাত্রি নামাজ আদায় করলে অনেক বড় সওয়াবের লোভ দেখানো হয়েছে। এখন দেখা যাক, রাসুল (সঃ) আমাদের এ বিষয়ে কি শিক্ষা দেয়- হজরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিস –> তিন ব্যক্তি পরস্পরের সাথে কথা বলছিল। একজন বলল, “আমি সারাদিন রোজা রেখে যাব, কখনো ভাঙবোনা"।

অন্যজন বলল, “আমি সারারাত নামাজ পরবো”, আরেকজন বলল, “আমি মেয়েদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকব ও কখনো বিয়ে করবনা। ” তখন রাসুল(সঃ) বলেন, “আল্লাহর শপথ আমি তোমাদের চেয়ে আল্লাহ্‌কে অধিক ভয় করি ও বেশি তাকওয়ার অধিকারী। আমি রোজা রাখি আবার ছেড়েও দেই, আমি নামাজও পড়ি, আবার ঘুমাইও এবং আমি বিবাহও করি। জেনে রেখ, যে আমার সুন্নাত থেকে দূরে থাকবে, সে আমার অন্তরভুক্ত না। ” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম) এখন লক্ষনীয়ঃ ১. তাবলীগ আমাদের শিক্ষা দেয়, সারাদিন রোজা রাখ ও স্ত্রীর সংস্পর্শে না গিয়ে ও না ঘুমিয়ে সারারাত নামাজ পড়।

২. রাসুল (সঃ) আমাদের শিক্ষা দেয়, মাঝে মাঝে দিনে রোজা রাখ ও মাঝে মাঝে ছেড়ে দাও (নফল রোজা), স্ত্রীর সংস্পর্শে যাও এবং রাতের কিছু অংশ ঘুমাও, কিছু অংশ ইবাদত কর। এখন প্রশ্নঃ যারা কোরআন-হাদিস অধ্যয়ন না করে শুধু ফাজায়েল আমল অধ্যয়ন করে তা অনুযায়ী যদি সারাদিন রোজা ও সারারাত্রি নামাজ আদায় করেন, সেটা কি রাসুল (সঃ) কে অনুসরন করা, না তাবলীগের মওলানা জাকারিয়া কে অনুসরন করা হবে? একজন মুসলমান হিসেবে কোনটা মান্য করা উচিৎ আমাদের- রাসুলের আদর্শ, না তাবলীগদের ফাজায়েল আমলের আদর্শ? ► যদি ইসলাম বিষয়ে একটা বইয়ে একটাই কোরআন এর বিপরীত বানোয়াট ও নতুন কিছু থাকে, তাহলে মুসলমানদের জন্য সেই একটাই কারন যথেষ্ট সেই বইকে আর অনুসরন না করা। সেখানে "ফাজায়েল আমল" বইয়ে শত শত কোরআন ও হাদিস বিরোধী কথা রয়েছে। তাদেরকে ভুল ধরলেও তারা এসব মেনে নিজেদের ঠিক করবেনা তো বটেই, উপরন্তু তারা মানুষকে তাদের ফাজায়েল আমলের গল্প কিচ্ছা অনুযায়ীই চলতে বলবে। অথচ রাসুল (সঃ) বলেছেন, “নেতা, উপনেতা বা দাম্ভিক ধোঁকাবাজ লোক ছাড়া আর কেউ কিচ্ছা কাহিনী বর্ণনা করেনা”।

(আবু দাউদঃ ৩৬২৪) আসলে মওলানা জাকারিয়া নিজে একজন সুফি ছিলেন এবং আপনি ফাজায়েল আমল লক্ষ্য করে দেখবেন সেগুলো মুসলামদনেরকে দোআ, নামাজ ও জিকির নির্ভর সুফিবাদ তথা বৈরাগ্যবাদের দিকেই নিয়ে যায়। কিন্ত ইসলামে কোন বৈরাগ্যবাদের স্থান নেই, নেই নিজের পরিবার ও স্ত্রীর হক নষ্ট করে ৪০ দিন, ১২০ দিন বা একবছর বৈরাগীর মত ঘুরে বেড়ানো, যা রাসুল (সঃ), সাহাবারা, তাবেঈ, তাবে তাবেঈগন বা চার মাজহাবের সম্মানিত ইমামগন কখনোই করেননি। ► তাবলীগ নিয়ে লিখলেই যে সাধারন একটি মন্তব্য শুনতে হয় তা হল এগুলো নাকি মুসলিম উম্মাহ্‌র মধ্যে বিদ্বেষপরায়ণতা বা বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য লেখা। তাদেরকে বলতে চাই, কেউ যদি ইসলামে নতুন ও ভুল জিনিস প্রচার করতে চায়, তাহলে কি একজন মুসলমান হিসেবে সেটার ভুল ধরে সঠিক কথা প্রচার কি আপনার দায়িত্ব না? যেখানে সুস্পষ্টভাবে তাবলীগদের আমলের বইয়ে কোরআন ও হাদিস তথা ইসলামের বিপরীত একের পর এক ভুল বের হয়ে আসছে, সেখানে সেই বই অনুযায়ী আমল করা কি ইসলামের বিপরীতে চলা না? এরপরেও একগুঁয়ের মত তারা কেন সেই ভুল বই ছেড়ে দিয়ে হাদিস ও কোরআন অনুযায়ী আমল করতে চায় না? সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যপার হল, তারা শুধু নিজেরা না, তাদের দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষকে এই ভুল আমলের পথে নিয়ে যাচ্ছে। আপনি নিজে বলেন, যারা কোরআন হাদিস পড়েনা এমন সাধারন মানুষ যখন এসব গল্প কিচ্ছা পড়বে ও শুনবে তারা কি তখন কোরআন হাদিসের বিপরীতে এসব গল্প অনুযায়ীই আমল করবেনা? এমন আমল করলে কি তখন জান্নাত পাওয়া যাবে? কোরআন হাদিসের বিপরীত বানোয়াট কিছু গল্প কিচ্ছার ভুল প্রমাণিত করাকে আপনি যদি মুসলিম উম্মাহ্‌র মধ্যে বিদ্বেষপরায়ণতা বা বিভেদ সৃষ্টি করা বলেন, তাহলে এমন বিদ্বেষপরায়ণতা করা বরং প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।

অনেকে বলতে পারেন, ভুল আমল বা হাদিস অনুসরন করলেও তাবলীগরা তো মানুষকে নামাজ পড়াচ্ছে। তাদের জন্য প্রশ্ন- মানুষ পবিত্রতা অর্জন করার জন্য পানি দিয়ে ওযু করে। আপনি যদি মুত্র দিয়ে ওযু করেন, তাহলে কি সেই ওযু হবে? ► আমার আগের পোস্টঃ তাবলীগদের কোরআন ও হাদিস বিরোধী মনগড়া গল্প Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।