আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাদিয়ানীর পরে ইলিয়াসীরা (তাবলীগ) যেভাবে মুসলমানদের ধ্বংস করছে

► শুরু কথাঃ বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম শুরুতেই বলি, লেখাটি পুরো না পড়লে আপনি কোন মন্তব্য করবেন না। আমি যা লিখেছি, কোরআন ও হাদিসের আলোকে লিখেছি। আপনি যদি এই লেখায় কোন ভুল ধরতে চান, তাহলে অবশ্যই কোরআন ও হাদিস দিয়ে ভুল ধরবেন। আপনি সঠিক হলে আমি মেনে নিব। যেখানে কোরআন হাদিস দিয়ে একটা কথা ভুল প্রমাণ করা হয়েছে, সেখানে কোরআন হাদিসের প্রমাণ ছাড়া শুধু আবেগের বশ তর্ক করা মানে আপনি কোরআন-হাদিসের অমান্য করছেন।

আর কোরআন-হাদিসের আলোকে তাবলীগদের সূফীবাদের ভুলভ্রান্ত আকিদা, ও বানোয়াট হাদিস-কিচ্ছা ভুল প্রমান করার পরেও যদি আপনি "ফাজায়েল আমলের" কথাই মেনে নেন, তাহলে আমার কিছু বলা নেই। আর আপনি যদি আমার লিখিত কথাগুলো (লেখার বাহিরে না) কোরআন-হাদিস দিয়ে ভুল প্রমাণ করেন, তাহলে আমি কথা দিচ্ছি আমি একেবারে ৩ চিল্লা দিয়ে আসব ইনশাআল্লাহ। ► এই লেখার উদ্দেশ্যঃ আমি নিজেও একসময় তাবলীগের সাথে জড়িত ছিলাম। তাবলীগের সাথে শত্রুতা করে কিংবা কারো আদেশে এই লেখা না, বরং ঈমানের দাবী পুরন করে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাত পাওয়ার আশায় সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় আমার এই লেখা কারন ইসলামের সাথে সাংঘর্শিক বিষয়গুলো তুলে ধরা সব মুসলমানের দায়িত্ব। যেখানে আমি সুস্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এবং আপনাদের দেখিয়ে দিব ইনশাআল্লাহ যে তারা কোরআন হাদিসের উল্টো কথা ও গল্প প্রচার করছে, সেখানে একজন মুসলমান হিসেবে কি চুপ থাকা উচিৎ কারো? ভণ্ড কাদিয়ানী নবী দাবী করেছিল, আর সে সময় রাসুলের এই সুন্নাতধারি দাবীকৃত এই তাবলীগরা ছাড়া আর কেউ তাদের বিরুদ্ধে চুপ ছিলনা।

ভণ্ড কাদিয়ানী নিজেও সুন্নাতি লেবাস পরিধান করতো। আমরা মুসলমানরা চাই, তারা তাদের সুফিবাদের ভ্রান্ত আকিদা, ও বানোয়াট হাদিস-কিচ্ছা প্রচার করা থেকে বিরত থেকে মুল ইসলামের দাওয়াত দিক। তারা যদি তাদের ভিন্ন আকিদা, শিক্ষা ও ভ্রান্ত আমলের বইগুলো অনুসরন করা বাদ দিয়ে কোরআন ও হাদিস অনুসরন করে সে অনুযায়ী আমল ও মানুষকে দাওয়াত দিত, তাহলে মুসলমানদের অনেক বেশি উপকার হত! ► সংক্ষেপে “তাবলীগ জামায়াত” এর ইতিহাস ও দলের নাম বিশ্লেষণঃ কোরআনের এই বাণী “সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ” কে মুল টার্গেট করে ১৯২৬ সালে মওলানা ইলিয়াস আল কান্ধলভি তাবলীগ জামায়াত প্রতিষ্ঠা করেন। (পরে আমরা দেখব এরা কি সত্যি অসৎ কাজের নিষেধ করে কিনা...)। পরবর্তীতে গিয়ে মওলানা জাকারিয়ার সময় থেকে এদের কাজ আরও সুনির্দিষ্ট হয়ে যায়।

উল্লেখ যে, মওলানা জাকারিয়া একজন সুফি মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তাবলীগ অর্থ প্রচার করা, আর জামায়াত অর্থ দল। তাবলীগ জামায়াত অর্থ প্রচারের দল। তারা কি প্রচার করে? যদি ইসলাম প্রচার করে, তাহলে তাদের নাম হওয়া লাগতো “ইসলামে তাবলীগ জামায়াত” বা “দাওয়াতে ইসলামী”। বিধর্মীরা ইসলাম নামটা সহ্য করতে পারেনা বলে আর চিল্লা লাগিয়ে বিধর্মীদের দেশে যাতায়াতের সুবিধার্থেই হয়তো তারা কৌশলগত দিক চিন্তা করে ইসলামের নাম তাদের দলের সাথে যোগ করেনি।

► তাবলীগদের সিলেবাসঃ একই মতবাদ ও বিশ্বাসের সকল মানুষ নিয়ে একটা দল তৈরি হয়। তাবলীগও একটা দল। তাদের মতবাদে বিশ্বাসী মানুষ তৈরি করতে তাদের একটা নির্দিষ্ট সিলেবাস আছে যা সকল তাবলীগদের পাঠ্যবই। কিন্তু এগুলোতে কিছু কোরআন ও হাদিস শিক্ষা থাকলেও এসব বইয়ে অনেক কথা আছে যা কোরআন ও রাসুলের হাদিসের সংঘর্ষশীল ও অপব্যখায় ভরপুর যার প্রমান আমি পরে দিব। তাবলীগদের নিসাব বা সিলেবাস অনুযায়ী আম বই দুইটি।

১. ফাযায়েল আমল যার খণ্ড আটটি- ফাযায়েল নামাজ, তাবলীগ, জিকির, কোরআন, রমজান, দরুদ, হজ ও হেকায়তে সাহাবা। ২. ফাযায়েল সাদাকাত- ২টি খণ্ড। তাদের খাস বইও দুইটি- ১. হায়াতুস সাহাবা। ২. রিয়াদুস সালেহিন (শুধু আরবদের জন্য, কারন আরবরা জাল হাদিস গ্রহন করেনা) । তাদের সিলেবাসে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়ঃ ১. এখানে কোন কোরআন ও এর কোন তাফসীরগ্রন্থ নেই।

তাবলীগরা কখনো কোরআনের অনুবাদ ও এর তাফসীর অধ্যয়ন করে না। তাবলীগের মুরুব্বিরা কোরআনকে শুধু আরবিতে পড়ে অনেক ফায়দা হাসিলের দাওয়াত দিলেও তারা সাধারন মানুষকে অর্থ ও তাফসীরসহ কুরআন বুঝার ব্যপারে নিরুৎসাহিত করে। তারা বলে মুফতি, আলেম না হলে বা আরবি ভাষা না জানা থাকলে কুরআন বুঝা উচিত না। অথচ আল্লাহ বলেছেন, --> “আমি বুঝার জন্য কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি। কেউ কি বুঝতে চায়"? (সূরা কামারঃ ১৭) --> “তারা কোরআন নিয়ে কেন গবেষণা করেনা? তাদের অন্তরে কি তালা লেগে গেছে?” (সূরা মুহাম্মদঃ২৪) ২. তারা নবীর সুন্নাতকে ধারন করে এই দাবী করে।

কিন্তু কোরআনের পরে ইসলামের মুলভিত্তি সহিহ হাদিসগ্রন্থ বুখারি, মুসলিম ইত্যাদি তাদের সিলেবাসে নেই এবং এগুলো পড়তেও তারা উৎসাহ দেয়না। আর ফাযায়েল সিরিজের বইগুলো মওলানা ইলিয়াস ও হায়াতুস সাহাবা বইটা ইলিয়াসপুত্র ইউসুফ কান্ধলভি দ্বারা রচিত। পিতা-পুত্রের একই ভাব ও নির্দিষ্ট মতাদর্শে লিখিত বইগুলোই শুধু তাদের জ্ঞানের মুল উৎস। ৩. তাদের সিলেবাসে লক্ষ্য করে দেখবেন যে জিহাদ সম্পর্কে কোন বই নেই। তারা সুকৌশলে মানুষকে জিহাদ থেকে দূরে রেখে পরকাল ও দোআ-জিকির নির্ভর ইসলাম প্রচার করতে ব্যস্ত।

জিহাদের ব্যখায় তারা যুদ্ধ বা আন্দোলন না করে নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করা বুঝায়। কিন্তু রাসুল (সঃ) এর জীবনী থেকে দেখা যায় তিনি আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াতও দিয়েছেন, সাথে যুদ্ধ, আন্দোলন, সংগ্রামও করেছেন। সাহাবীরা কি শুধু জিকির, আমল করেই তাদের জীবন পার করে দিয়েছেন, না ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আন্দোলন করে তাদের জীবন দান করেছেন? তাবলীগরা বিশ্বাস করে- "নামাজ, রোজা, জিকির করব, কিন্তু জিহাদ করে নিজের প্রাণ দিব না। তার বদলে আরও বেশি বছর বেঁচে থেকে ইবাদত করবো"। এমন লোকদের ব্যপারে আল্লাহ বলছেন--> “তোমরা কি তাদেরকেও দেখেছো, যাদেরকে বলা হয়েছিল, তোমাদের হাত গুটিয়ে রাখো এবং নামায কায়েম করো ও যাকাত দাও? এখন তাদেরকে যুদ্ধের হুকুম দেয়ায় তাদের একটি দলের অবস্থা এই দাঁড়িয়েছে যে, তারা মানুষকে এমন ভয় করেছে যেমন আল্লাহকে ভয় করা উচিত অথবা তার চেয়েও বেশী।

তারা বলছেঃ হে আমাদের রব! আমাদের জন্য এই যুদ্ধের হুকুমনামা কেন লিখে দিলে? আমাদের আরো কিছু সময় অবকাশ দিলে না কেন"? (সূরা নিসাঃ ৭৭) ৪. আরবরা যেহেতু দুর্বল ও জাল হাদিস ও বিভিন্ন কেচ্ছা-কাহিনী (যা ফাযায়েল আমল বইতে আছে) বিশ্বাস করেনা, তাই আরবদেশ গুলোতে এর পরিবর্তে ইমাম নবভি রচিত “রিয়াদুস সালেহিন” পড়ানো হয়। উল্লেখ যে, পৃথিবীর অনেক ভাষায় “ফাযায়েল আমল” বইটি অনুবাদ হলেও আরবি ভাষায় এটার অনুবাদ করা হয়নি। ► মওলানা জাকারিয়া ফাজায়েল আমল বইটি কি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য লিখেছিলেন? এর উত্তর মওলানা জাকারিয়ার নিজের মুখ থেকেই শুনুন। তিনি তার “ফাজায়েল আমল” বইয়ের ভুমিকায় শুরুতেই লিখেছেন, “আল্লাহ তায়ালার তারীফ ও প্রশংসা এবং নবীয়ে করীম (ছঃ) এর উপর দরুদ শরীফ পড়ার পর, ওলামায়ে কেরাম ও ছুফীকুল শিরোমণি, মোজাদ্দেদ দ্বীন, হজরত মাওলানা ইলিয়াস (রহঃ) আমাকে আদেশ করেন যে তাবলীগে দ্বীনের প্রয়োজন অনুসারে কোরআন ও হাদিছ অবলম্বনে যেন একটা সংক্ষিপ্ত বই লিখি। এতবড় বুজুর্গের সন্তুষ্টি বিধান আমার পরকালে নাজাতের উছিলা হইবে মনে করিয়া আমি উক্ত কাজে সচেষ্ট হই।

এখানে লক্ষনীয়ঃ ১. তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য বইটি লিখেন নি। তিনি লিখছেন তার উস্তাদ মাওলানা ইলিয়াস এর সন্তুষ্টি লাভের জন্য। ২. যতটা বিশেষণ তিনি আল্লাহ ও রাসুল (সঃ) এর পরিচয়ে দিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি বিশেষণ দিয়ে তার উস্তাদ মাওলানা ইলিয়াস এর পরিচয়ে দিয়েছেন। ৩. শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করেই পরকালে নাজাত পাওয়া যাবে। কিন্তু তিনি তার উস্তাদের সন্তুষ্টিকে নাজাতের উসিলা বলেছেন।

এটা একটি শিরক যা ইহুদি-নাসারারা করে। আল্লাহ বলেন--> “তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের আলেম, আবেদদের (পীর, দরবেশ, ধর্মযাজক) কে তাদের প্রভু বানিয়ে নিয়েছে এবং মরিয়ম পুত্র মসিহ্‌কেও। অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে তারা শুধুমাত্র এক মা’বূদের ইবাদত করবে যিনি ছাড়া আর আর কোন সত্য মাবুদ নেই। তিনি তাদের অংশী স্থির করা হতে কতইনা পবিত্র!” (সূরা আত্‌ তাওবাঃ ৩১) ► জাল হাদিস কিভাবে উৎপত্তি হয় তার বাস্তব প্রমানঃ তাবলীগী ভাইদের অনুসরনিয় ও পঠিত বই “ফাজায়েল আমল” এর জিকির অধ্যায়ে ৩৫৪ পৃষ্ঠায় নীচের ঘটনাটি উল্লেখ আছে যা আমি সংক্ষেপে উল্লেখ করলামঃ শায়খ আবু করতবী (রঃ) বলেন, আমি শুনিয়াছি যে ব্যক্তি সত্তর হাজার বার কালেমা পড়িবে সে দোযখ হইতে নাজাত পাইবে। ইহা শুনিয়া আমি নিজের ও আমার স্ত্রীর জন্য সত্তর হাজারবার এবং অতিরিক্ত কয়েকনিছাব আদায় করিয়া পরকালের ধন সংগ্রহ করি।

আমাদের নিকট এক যুবক থাকিত এবং সে নাকি কাশফের মাধ্যমে বেহেশত ও দোযখ দেখিতে পাইত, আমি উহাতে সন্দেহ করিতাম। একদিন ঐ যুবক আমার সহিত আহার করিতে বসে চিৎকার করে বলিয়া উঠিল, আমার মা দোযখে জ্বলিতেছে, আমি তাহার অবস্থা দেখিতে পাইতেছি। একথা শুনিয়া আমি মনে মনে আমার পড়া কালেমার অতিরিক্ত নিছাব হতে এক নিছাব (৭০ হাজার) ঐ যুবকের মায়ের নামে বখশিয়া দিলাম, যা আমি ও আল্লাহ ছাড়া আর কেহ জানত না। কিছুখন পর ঐ যুবক বলিয়া উঠিল, চাচা আমার মা দোযখ থেকে নাজাত পাইয়া গেলেন। উক্ত গল্প থেকে একটি নতুন জাল হাদিস তৈরি হয় যা হল- “সত্তর হাজার বার কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পাঠ করে এর সওয়াব মৃত্যু ব্যক্তির নামে উৎসর্গ করলে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে”।

নাউজুবিল্লাহ !!! রাসুলের নামে কি জঘন্য মিথ্যাচার। অথচ রাসুল (সঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইচ্ছাপুর্বক আমার নামে মিথ্যা আরোপ করবে, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা খুজে নেয়”। (সহিহ বুখারি) এই গল্প থেকে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়ঃ ১. জান্নাত ও জাহান্নাম ও মৃত্যুব্যক্তির কি হচ্ছে তা আল্লাহ গায়েব বা অদৃশ্য রেখেছেন। ফাজায়েল আমল কিতাবে যা উল্লেখ আছে তা প্রমাণ করে ঐ যুবক গায়েবের খবর জানত। অথচ গায়েবের খবর একমাত্র আল্লাহ জানেন।

আল্লাহ বলেন--> “বলুন, আল্লাহ ব্যতিত নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে কেউ গায়েবের খবর জানেনা। এবং তারা জানেনা যে, তারা কখন পুনারাজ্জিবিত হবে”। (সুরা নামলঃ ৬৫) ২. শায়খ আবু করতবী (রঃ) ব্যক্তিটা কে? তিনি বলেন, আমি শুনিয়াছি যে...। তিনি কই থেকে শুনেছেন? কোন হাদিসে এমন কথা আছে? ৩. জনৈক আবু করতবী (রঃ) এটাকে কাশফ বলেছেন। অদৃশ্য জগতের কিছু কথা প্রকাশ হওয়াকে কাশফ বলে।

কাশফ সত্য - মিথ্যা দুটোই হতে পারে। তাই শরীয়তের ক্ষেত্রে কাশফ একদম গ্রহণযোগ্য না। ভণ্ডনবী ইবনুস সাইয়েদ বা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানীও বিভিন্ন মিথ্যা কাশফের দাবী ও ঘটনা বর্ণনা করতো। ৪. যদি এমন সহজেই জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, তাহলে জাহান্নামে আর কেউ যেত না। এগুলো বানিয়ে আসলে মুসলমানদের শুধু জিকিরনির্ভর সূফীবাদের দিকে নিয়ে যাওয়ার টার্গেট নেওয়া হয়েছে।

► তাদের বহু জাল হাদিসের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখ করলামঃ ১. এক ঘণ্টা কিছু সময় চিন্তা জিকির করা, ষাট বছর ইবাদতের চেয়ে উত্তম। (ফাজায়েল জিকির, ৩০৪ পৃষ্ঠা) ২. এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা গেলে ৮০ হুকবা জাহান্নামে পুড়তে হবে। (ফাজায়েল নামাজ, ৮৯ পৃষ্ঠা) ৩. পাচ ওয়াক্ত নামাজ পরলে, বিভিন্ন রকম পুরুস্কার, না পরলে বিভিন্ন রকম শাস্তি সংক্রান্ত হাদিসটি। (ফাজায়েল নামাজ, ৮০-৮১ পৃষ্ঠা) ৪. সহজে মুখস্থ করার দোআ সংক্রান্ত দীর্ঘ হাদিসটি (ফাজায়েল কোরআন, ১০৫-১০৯ পৃষ্ঠা) এছাড়া আরও অসংখ্য জাল হাদিস ও বিভিন্ন কেচ্ছা কাহিনী আছে যা উল্লেখ করতে গেলে বিশাল এক বই লেখা হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা হল ফাজায়েল আমল বইটিতে জাল ও দুর্বল হাদিসগুলোকে ঢেকে রাখার জন্য কোন হাদিসের পূর্ণ উৎস দেয়নি।

► তাবলীগদের কোরআন ও হাদিস বিরোধী মনগড়া গল্প ফাজায়েল সাদাকাত, ২য় খণ্ড, ২৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “আবু আলি রোদবারি (রঃ) বলেন, ঈদের দিন একজন ফকির আসিয়া আমাকে বলিল যে এখানে কি কোন পরিস্কার জায়গা যেখানে একজন ফকির মরিতে পারে? আমি ইহা বাজে কথা মনে করিয়া বলিলাম, ভিতরে এসে যেখানে এসে মর। সে ভিতরে আসিয়া ওযু করিয়া দুই রাকাত নামাজ পড়িল ও মারা গেল। আমি তাহার কাফন দাফনের ব্যবস্থা করার পরে দেখিবার জন্য কাফন হটাইয়া দেখিতেই সে চোখ খুলিয়া ফেলিল। আমি তাকে বলিলাম, মৃত্যুর পরেও জীবন? সে বলিল আমি জীবিত ও আল্লাহর প্রত্যেক আশেকই জীবিত থাকেন। আমি তোমায় কাল কিয়ামতে স্বীয় প্রতিপত্তিতে সাহায্য করিব”।

এখানে লক্ষণীয়- ১. ফকির আগে থেকেই তার মৃত্যুর খবর জেনে সে তার মৃত্যুর জায়গা নিজে নিজেই ঠিক করল। ২. সে মারা যাওয়ার পরেও একজন জীবিত মানুষ তাকে তাকে কিছু জিজ্ঞাস করল ও সে শুনল। ৩. কথা শুনার পর সে তার উত্তরও দিল। এখন দেখা যাক কুরআন কি বলে। ১. আল্লাহ বলেন, “... কেউ জানেনা আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানেনা কোন স্থানে সে মৃত্যুবরন করবে।

” (সূরা লুকমানঃ ৩৪) এই আয়াতের ব্যখায় নবী (সঃ) বলেন, “এগুলো গায়িবের কথা এবং এগুলো আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেনা। ” (সহিহ বুখারি) কুরআন আমাদের শিক্ষা দেয়, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা সে কোথায় মারা যাবে। আর তাবলীগরা শিক্ষা দেয় ফকির বুজুর্গরা জানতে পারে তারা কোথায় মারা যাবে !!! ২. আল্লাহ বলেন, “মৃতকে তো তুমি (নবী) কথা শুনাতে পারবে না”। (সূরা নামলঃ ৮৪) তাহলে কিভাবে ঐ ব্যক্তি মৃত ফকিরকে প্রশ্ন করল এবং সে শুনল? ৩. আল্লাহ বলেছেন, “জীবিত ও মৃত কখনো সমান না”। (সুরা আল ফাতিরঃ ২২) অর্থাৎ, কিন্তু গল্পে জীবিত ও মৃত- উভয়েই কথা বলছে অর্থাৎ উভয়েই সমান।

হাদিসে আছে (প্রথম অংশ দেওয়া হল), “একদিন রাসুল (সঃ) ও একজন ইহুদী বসে ছিলেন। এমন সময় একটি জানাজা অতিক্রম করতে থাকলে সে জিজ্ঞাসা করে, “হে মুহম্মদ, এই লাশ কি কথা বলতে পারে?” রাসুল (সঃ) জবাব দেন, “এই বিষয়ে আল্লাহ অধিক অবগত। .। " (আবু দাউদঃ ৩৬০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুদিত) শুধু একটি ঘটনা না, আরও অসংখ্য (যেমন ফাজায়েল সাদাকাত, ২য় খণ্ডের পৃষ্ঠা ২৭০তে উল্লেখ্য দুটি ঘটনা, ৩২২, ৩৫৪ ইত্যাদি পৃষ্ঠাতে) এমন আজগুবি অনেক কিচ্ছা রয়েছে তাবলীগি ভাইদের একমাত্র পঠিত বইগুলোতে। এখন দেখতে পাচ্ছি যে তাবলীগ ও তাদের আমলের বই, এক কথা বলছে, আর কোরআন হাদিস আর এক কথা বলছে।

যেহেতু দুটো বিপরীত কথা, তাহলে এখানে যে কেউ একজন অবশ্যই মিথ্যাবাদী। যেহেতু, কোরআন ও রাসুল (সঃ) কখনো মিথ্যা বলতে পারেনা, সেহেতু যে গল্পটি বলেছে সে অবশ্যই মিথ্যাবাদী। আর যে বইয়ে মিথ্যাবাদীদের দ্বারা তৈরি আজগুবি গল্প, কিচ্ছা কাহিনী দিয়ে ভরা সে বই অনুযায়ী আমল করতেই কি রাসুল (সঃ) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন? বরং রাসুল বলেছেন, “নেতা, উপনেতা বা দাম্ভিক ধোঁকাবাজ লোক ছাড়া আর কেউ কিচ্ছা কাহিনী বর্ণনা করেনা”। (আবু দাউদঃ ৩৬২৪) ► একটু জানুন ও ভাবুনঃ ১. ইহুদী নাসারারা মুসলমানদের একটা জিনিসই ভয় পায়, তা হল জিহাদ। তাবলীগরা এমন ধরনের জিনিস প্রচার করে যা মুসলমানদের কে মুল ইসলাম ও জিহাদ থেকে সরে নিয়ে এসে শুধু জিকিরনির্ভর সূফীবাদের দিকে নিয়ে যায়।

আপনি কি জানেন, ইসরাইলেও তাবলীগরা বাধাহীন ভাবে নিশ্চিন্তে চলাফেরা করে, যেখানে অন্যান্য মুসলমানদের প্রবেশ নিষেধ !!! ২. অন্যান্য সব ভাষায় ফাজায়েল আমল বইয়ের অনুবাদ থাকলেও আরবি ভাষায় এর কোন অনুবাদ নেই। কারন আরবরা দুর্বল, জাল হাদিস ও কিচ্ছা কাহিনীতে বিশ্বাস করেনা। তাই আরব তাবলীগদের বিশ্বস্ত হাদিসগ্রন্থ “রিয়াদুস সালেহিন” পড়ানো হয়। ৩. পাকিস্তান তৈরি হওয়ার সময়, ১৯৫০ সালে যখন সব ইসলামী দল “ইসলামী সংবিধান” প্রণয়নের জন্য আন্দোলন করছিল, তখন এই তাবলীগ নামক ইসলামী দল নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করেছিল, এই জন্য যে এগুলো নাকি ফেতনা, ফ্যাসাদ !!! ৪. ইহুদী খ্রিষ্টানদের তৈরি, নিজেকে নবী হিসেবে দাবীকারী ও নতুন ইসলাম প্রচলনকারী গোলাম আহমেদের তৈরি কাদিয়ানীদের যখন অমুসলিম ঘোষণা ও বিতাড়িত করার জন্য রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সকল ইসলামী দল মতভেদ ভুলে একসাথে ১৯৭৪ সালে “খতমে নবী” আন্দোলন ও প্রতিবাদ করছিল, তখন একমাত্র এই তাবলীগ জামায়াতই কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার আন্দোলনে যেতে অস্বীকার করে নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করেছিল। যুক্তি তাদের যে প্রকৃত জিহাদ হল নিজের নফসের বিরুদ্ধে।

ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য যুদ্ধ বা আন্দোলন করা জিহাদ না, এগুলো ফেতনা, ফ্যাসাদ। অথচ আল্লাহ বলেছেন, "তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকো যতক্ষণ না ফিতনা নির্মূল হয়ে যায় এবং দ্বীন একমাত্র আল্লাহ‌র জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায়"। (সূরা আনফালঃ ৩৯) ৫. সত্য-মিথ্যা যেখানে স্পষ্ট, সেখানে নিরপক্ষ ভুমিকা পালন করা মানেই মিথ্যাকে সমর্থন করা। কাদিয়ানীদের ক্ষেত্রে তাবলীগদের সেখানে নিরপক্ষ ভুমিকা পালন করা মানে এই নয় যে মিথ্যা কাদিয়ানীদেরকেই সমর্থন করা? আপনি কি জানেন কাদিয়ানীরাও যুদ্ধ, আন্দোলনের মাধ্যমে জিহাদ করে ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টাকে ফেতনা, ফ্যাসাদ হিসেবে প্রচার করে? ৫. ভারতে যখন হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা হল, তখন হাজার হাজার মুসলমানদের হিন্দুরা হত্যা করেছিল। এর প্রতিবাদ সব ইসলামী দলই করলে, একমাত্র তাবলীগ ছিল চুপ, ফেতনা ফ্যাসাদের ভয়ে।

এর পুরষ্কার সরূপ তারা ইন্দ্রা গান্ধীর সময়েও তাদের “তাবলীগি” দাওয়াত চালানোর অনুমতি পায়, যখন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক অন্য সকল ইসলামী দলকে নিষিদ্ধ ও বাধা দেওয়া হয়। ৬. এমন কোন বিধর্মী দেশ নেই, যেখানে তাবলীগরা তাদের দাওয়াতি কাজ করতে পারেনা। আপনি অনেক আরবের তাবলীগ দেখতে পাবেন, কিন্তু সউদি আরবে তাবলীগকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করেছে তাদের ত্রুটিযুক্ত একমুখী নির্দিষ্ট ভিন্ন আকিদার কারনে। ৭. রাসুল (সঃ) ও তার সাহাবারা যখন ইসলামের দাওয়াতে বের হতেন, তখন তারা ইহুদীদের হাতে অত্যাচারিত, বাধাপ্রাপ্ত হতেন। এর কারন ইসলামেরর মুল আদর্শ, বিশ্বাসের সাথে তাদের আদর্শ এক হতনা বলে।

অথচ, আজ পর্যন্ত দেখেছেন আমাদের এই তাবলীগ ভাইরা কোথাও গিয়ে অত্যাচারিত, জেল, জরিমানা হয়েছে? এমনকি যেকোনো বিধর্মী দেশে গেলেও তাদের আরও Welcome জানানো হয়। এর প্রেক্ষিতে তারা বলে, এটা নাকি তাদের উপর আল্লাহর রহমত !!! অত্যাচারিত, বাধাপ্রাপ্ত না হওয়াকেই যদি তারা আল্লাহর রহমত বলে, তাহলে কি রাসুল (সঃ) এর উপর আল্লাহর রহমত ছিলনা? (নাউজুবিল্লাহ) ৮. ইসলাম মুসলমানদের দলবদ্ধ হয়ে থাকাকে ফরজ করে দিয়েছে। তারাও দলবদ্ধ। আল্লাহ বলেছেন, "আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা (মানুষকে) সৎকর্মের প্রতি আহবান জানাবে, ভাল কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর তারাই হলো সফলকাম"। (সূরা আলে ইমরানঃ ১০৪) কই তারা কখনো অন্যায় কাজের নিষেধ বা প্রতিবাদ করেছে? কখনোই না।

যেকোনো অন্যায় ও অ-ইসলামিক কাজের প্রতিবাদ করা জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন, “তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখেনইনি তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্য্যশীল”। (সূরা আলে ইমরানঃ ১৪৪) এটা স্পষ্ট যে তারা যেহেতু কোরআনের কিছু অংশ মানছে, আবার কিছু অংশ মানছে না। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যখন বিভিন্ন সরকার অ-ইসলামিক আইন ও কাজ করত, তারা কখনো এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা তো দূরে থাক, এসব নিয়েও আলোচনা করতো না... কারন একটাই- ফেতনা, ফ্যাসাদের ভয়। যেই আল্লাহ প্রদত্ত ধর্ম ইসলামের দাওয়াত তারা দেয়, সেই আল্লাহর নাম ও তার প্রতি বিশ্বাস সংবিধান থেকে মুছে ফেলা হল, আর ফেতনা ফ্যাসাদের ভয়ে তারা চুপ !!! বাংলাদেশের বর্ডারে হিন্দু বি.এস.এফ প্রতিনিয়ত গুলি করে বাংলাদেশিদের পাখির মত মারছে।

এটাওকি রাজনৈতিক ফেতনা? তারা সরকারকে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে না বলে চুপ করে থাকে। ইসলাম কি অন্যায় দেখে চুপ থাকতে বলেছে? অবশ্যই না। যদি না বলে থাকে, তাহলে তাবলীগরা কোন ইসলাম প্রচার করছে? ৯. ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার কথা বললে, তারা বলে তাদের এখনো পর্যাপ্ত জনবল হয়নি। তাই দাওয়াতি কাজ দিয়ে আগে বেশি সংখ্যক মানুষকে ইসলামের দিকে নিয়ে আসতে হবে। অথচ তারা গর্বকরে বলে, পবিত্র হজ্জের পরেই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মুসলিম একত্রিত হয় তাদের বিশ্ব এজতেমায়।

সত্যি, টঙ্গীতে বিশ্ব এজতেমায় তাদের যে সংখ্যক লোক সমাবেত হয়, তারা সবাই যদি একযোগে ইসলামী রাষ্ট্রের দাবীতে বা যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদে ঢাকার দিকে মার্চ শুরু করে, কোন সরকারের ক্ষমতা নাই এত সংখ্যক মানুষকে আটকানোর। ► এবার চিন্তা করে দেখুন, তাবলীগরা কি প্রকৃত ইসলাম মানছে? বরং প্রকৃত ইসলামকে তারা ধীরে ধীরে ধংস করছে । অনেকে বলতে পারেন, তারা একটু হলেও তো ভাল কাজ করছে, মানুষকে নামাজের দিকে ডাকছে। তাদের জন্য উত্তর হল- ওযু করা তো পবিত্র কাজ। কিন্তু আপনি যদি পানি না দিয়ে মুত্র দিয়ে ওযু করেন, তাহলে কি সেই ওযু হবে? মানুষকে ইসলামের দিকে ডাকতে হবে, কিন্তু সেটা করতে হবে রাসুল (সঃ) যে পদ্ধতিতে করে গেছেন সেভাবে; কিন্তু তাবলীগের মত “চিল্লা” নামক বেদায়াত পদ্ধতিতে না।

আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, “ হে মুমিনগন, তোমরা পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কর না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু”। (সূরা বাকারাঃ ২০৮) পূর্ণরূপে মানে এই না যে শুধু সুন্নাতি পোশাক ও লেবাস পরে দোআ, জিকির, নামাজ নিয়ে পরে থাকা। পরিপূর্ণরূপে মানে এটা যে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোরআন সব বিধান ও রাসুলের সুন্নাহ মান্য করে একমাত্র কোরআনের আইন প্রতিষ্ঠা করা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৬৪ বার     বুকমার্ক হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।