সেই ১১ বছর বয়স থেকে শুরু। ৪০ বছরের জীবনের ২৯টি বছরই শচীন টেন্ডুলকার কাটিয়েছেন ক্রিকেট নিয়ে। যে ক্রিকেট তাঁর ধ্যান-জ্ঞান, যেটিকে ছাড়া এক মুহূর্ত ভাবতে পারেন না, সেই ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্কটা ‘অতীত’ হয়ে গেল আজ! লিটল মাস্টারের ভেতরটা কতটা হাহাকার করছে, বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই হাহাকার আর শূন্য যেন প্রবল বেগে বেরিয়ে আসতে চাইল তাঁর বিদায়ী অনুষ্ঠানে।
দুই যুগের বেশি সময় ধরে বোলারদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেওয়া টেন্ডুলকার আজ নিজেই কেঁপে উঠলেন।
কাঁপা কাঁপা কণ্ঠেই কথা বলার শুরু করলেন। কিন্তু পারলেন না। ভক্তদের মুহুর্মুহু করতালিতে আটকে গেল তাঁর কথা। বেরিয়ে এলো তাঁর ভেতরের চিত্রটা। টেন্ডুলকার বললেন, আপনারা এমন করলে আমি আরও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ব।
’ বারবার কণ্ঠ ভেঙে আসছিল ক্রিকেট কিংবদন্তির। গলা শুকিয়ে আসছিল। কথা আটকে যাচ্ছিল বলে বেশ ক’বার পানিও খেলেন। এর মাঝেই বলে গেলেন নিজের কথা। তাঁর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে যাদের অবদান রয়েছে, তাঁদের সবার নামের তালিকা ছিল টেন্ডুলকারের হাতে।
কেউ যেন বাদ পড়ে না যায়!
টেন্ডুলকার শুরুটা করেন বাবা রমেশ টেন্ডুলকারকে স্মরণ করে। ১৯৯৯ সালে তাঁকে হারিয়েছেন। লিটল মাস্টার জানান, প্রতিমুহূর্তই বাবাকে অনুভব করেন তিনি। এরপর একে একে পরিবারের সব সদস্য, বন্ধু-বান্ধব, কোচ, সাবেক ও বর্তমান সতীর্থ, ফিজিও, চিকিত্সক মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সবার অবদান স্বীকার করেন টেন্ডুলকার। সবশেষে ধন্যবাদ দেন গোটা বিশ্বে তাঁর ভক্তদের।
জানান, ভক্তদের ভালোবাসার কারণেই এ পর্যায়ে আসতে পেরেছেন তিনি।
বিদায়ী বক্তৃতায় বাবার প্রসঙ্গ তুলে যথেষ্টই আপ্লুত টেন্ডুলকার। ১৯৯৯ সালে বাবাকে হারানোর পর থেকে প্রতিটি পদক্ষেপেই যে তিনি তাঁর প্রয়াত বাবাকে মিস করেন, সেটা জানিয়েছেন তিনি। বলতে ভোলেননি প্রতিটি বড় ইনিংস খেলার পর আকাশের দিকে তাকিয়ে বাবাকে খোঁজার ওই মুহূর্তটির কথা।
ছোটবেলায় যথেষ্ট দুষ্টু ছিলেন তিনি।
বেড়ে ওঠার পথে তাঁর রত্নগর্ভা মাও যে বিশেষ অবস্থানে আছেন—জানিয়েছেন সেটাও, ‘ছোটবেলায় খুব দুষ্টু ছিলাম। আমাকে সামলানো ছিল যথেষ্ট কঠিন। সেই কঠিন কাজটিই মা করে গেছেন হাসি-মুখে। ক্রিকেটার টেন্ডুলকারের জন্য মায়ের প্রার্থনাও যে ছিল বিরাট কিছু, বিদায়ী বক্তৃতায় তা আবেগময় কণ্ঠে জানিয়েছেন তিনি, ‘তাঁর প্রার্থনা ও কল্যাণ কামনাই আজ আমাকে নিয়ে এসেছে এই জায়গায়। ’
বড় ভাই নিতিন ও অজিতের কথাও স্মরণ করেছেন তিনি।
বিশেষ করে অজিত টেন্ডুলকারের কথা স্মরণ করে শচীনের কণ্ঠ যেন বাস্পরুদ্ধ, ‘এগারো বছর বয়সে অজিত দাদা আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন স্যার রামাকান্ত আচরেকরের ক্লাসে। ক্রিকেটের বর্ণময় সুধা সেদিন থেকেই পান করছি আমি। ’ জানিয়েছেন, ভাই অজিত কখনোই নাকি শচীনের প্রশংসা করেননি, পাছে যদি অহংকার ভর করে তাঁর মধ্যে। জীবনের শেষ টেস্টটি শেষ করে ভাইয়ের উদ্দেশে একটি কথাই বললেন শচীন, ‘আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে যা কিছু পেয়েছি তারজন্য একটা প্রশংসা তোমার কাছ থেকে এখন আমি পেতেই পারি। আমি তো আর কখনোই মাঠে ক্রিকেট খেলতে নামব না।
’
বড় বোনের ক্রিকেট ব্যাট কিনে দেওয়ার কথাটি ভোলেননি শচীন, ‘জীবনের প্রথম ক্রিকেট ব্যাটটি আমি পেয়েছিলাম আমার দিদির কাছ থেকে। আজকের এই আমি যা কিছু পেয়েছি, তার শুরুটা তো দিদিই করেছিল। ওই তো ক্রিকেট ব্যাটের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল আমায়। ’
জীবনের শ্রেষ্ঠ জুটিটি তাঁর স্ত্রী অঞ্জলির সঙ্গেই—একথা বিদায়ী বক্তৃতায় তীব্র ভালোবাসা নিয়েই উচ্চারণ করলেন তিনি। স্মরণ করলেন ১৯৯০ সালে ইংল্যান্ড সফরে থেকে ফেরার দিন বিমান বন্দরের ওই মুহূর্তটিও, ‘সেদিন আমি দেখা পেয়েছিলাম এমন একজনের সঙ্গে, যে আমার সবসময়ের প্রেরণা।
’
দুই সন্তান অর্জুন আর সারাহকে এখন থেকে অনেক সময় দেবেন বলে কথা দিলেন কিংবদন্তি। ক্রিকেটের ব্যস্ত সময়সূচি তাঁর হীরকতূল্য দুই সন্তানের জীবন থেকে যে সময়টুকু কেড়ে নিয়েছে, শচীন আজ কথা দিয়েছেন, তিনি তাঁদের বাকী জীবনটাতে সেই অভাব পুষিয়ে দেবেন বেশ ভালোভাবেই।
বিদায় বক্তৃতাটা আবেগে আপ্লুত হয়ে শুনেছেন ওয়াংখেড়ের দর্শকেরা। আবেগে-আপ্লুত টেলিভিশনের সামনে বসা লাখো-কোটি দর্শকেরাও। ক্রিকেট মাঠের গ্রেট আজ তাঁর বিদায় অনুষ্ঠানেও প্রমাণ করে দিয়ে গেলেন মানুষ হিসেবেও তিনি কত বড়!
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।