রাত 9.00 টার সময় উওর পূর্ব আকাশের দিকে তাকালে দেখতে পাবেন বিরাট এক প্রশ্ন বোধক চিন্হ আকারে জ্বল জ্বল করছে সপ্তর্ষী মন্ডল। এই মন্ডলটির পাশ্চাত্য নাম উরসা মেজর (Ursa Major) একে বিগ ডিপারও বলে। এখানে একটি বহৎ ভাল্লুকের কল্পনা করা হয়েছে। আরবীতে এই মন্ডলের নাম "দোব্বে আকবর"বা বৃহৎ ভাল্লুক বলা হয়। তথাপিও একে "বানাত নাশ"বা জানাযা হিসাবে অনেকেই জানে,পশ্চিমের চারটি তারা দিয়ে শবাধার এবং পূবের তিনটি তারা দিয়ে পিছনের লোক কল্পনা করা হয়।
ভারতীয় পূরানে এই মন্ডলকে "চিত্রশিখন্ডী বলা হয়েছে,এখানে একটি ময়ূরের আকৃতি প্রকাশ পায়। এই মন্ডলটি আকাশে যতগুলি তারা মন্ডল আছে তার মধ্যে তৃতীয় বৃহৎম তারা মন্ডল। এটি আকাশের 1,280 স্কয়ার ডিগ্রী স্হান দখল করে আছে। এই মন্ডলের পশ্চিম চারটি তারা দিয়ে ভাল্লুকের শরীর এবং পূবের তিনটি তারা দিয়ে ভাল্লুকের লেজ কল্পনা করা হয়েছে। যদিও সাতটি তারা নিয়ে এই মন্ডল গঠিত,তবুও চিত্রে ভাল্লুকের পায়ে এবং মুখে অনেকগুলি ছোট ছোট তারা আছে।
আবার একে যখন বড় চামচ হিসাবে কল্পনা করা হয়,তখন মন্ডলের পশ্চিমের চারটি তারা দিয়ে পেয়ালা এবং পূবের তিনটি তারা দিয়ে এই পেয়ালার হাতল কল্পনা করা হয়েছে,বিগ ডিপারে ছোট ছোট তারা গুলো স্হান পায়নি। এই মন্ডলে প্রথম শ্রেনীর কোন উজ্জল তারা নেই। সাধারনত অন্যান্য তারা মন্ডলের উজ্জল তারাগুলিকে ক্রমানুযায়ী গ্রীক বর্নমালার অক্ষর আলফা,বিটা,গামা,ইত্যাদি দিয়ে চিন্হিত করা হয়। কিন্ত সপ্তর্ষী মন্ডলের ক্ষেত্রে এর পশ্চিম বাহুর উওরের তারাটিকে আলফা,তারপরের তারাটি বিটা,এরপরে গামা,ডেলটা, ইপসিলন,জিটা,ইটা ইত্যাদি অক্ষরে চিন্হিত করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন দেশে এই সাতটি তারার আলাদা নাম আছে।
ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্রে এই সাতটি তারাকে সাতজন মূনীর নামে পরিচিত।
বাংলা নাম পাশ্চাত্য নাম আরবী নাম উজ্জলতা
ক্রতু Dubhe দোব্বে 1.95
পুলহ Merak মেরাকোল আরাবে 2.44
পুলস্ত্য Phecda ফাখদোল আবে 2.54
অত্রি Megrez মেগরেজোল আবে 3.4
অন্গিরা Alioth আলইয়াম 1.68
বশিস্ঠ Mizar মেসরেজ 2.16
অরুন্ধতী Alcor আলকোর 4.0
মরীচি Alkaid আলকায়েদ 1.91
এই সপ্তর্ষী মন্ডল আজকে আমরা যেভাবে দেখতে পাই তা এই রকম ছিল না,কারন এই মন্ডলের প্রথম তারা ক্রতু Dubhe এবং লেজের তারা Alkaid মরীচি এই তারা দুটির গতি দুই দিকে আলাদা আলাদা। এবং আজ থেকে 50,000 বছর পরে সপ্তর্ষীর বর্তমান আকার পরিবর্তন হয়ে যাবে।
এই মন্ডলের সাতটি উজ্জল তারার মধ্যে ক্রতু গাঢ় কমলা রংয়ের কম্পনশীল তারা এবং মরীচি রুপালী নীল রংয়ের তারা বাকী পাঁচটি নীলচে সাদা রংয়ের। এই মন্ডলের বশিস্ঠ তারাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য,এটি একটি জোড়া তারা এবং যে সমস্ত জোড়াতারা এ পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়েছে তার মধ্যে এটিই প্রথম।
এই সপ্তর্ষী মন্ডলের সাহায্যে আকাশের অনেক গুলো প্রথম শ্রেনীর উজ্জল তারা এবং মন্ডল খুজে বের করা যায়। যেমন-প্রথম দুটো তারা পূলহ ও ক্রতুকে একটি কাল্পনিক রেখা দ্বারা যোগ করে রেখাটিকে সামনে 6গুন বাড়িয়ে দিলে তা লূঘু সপ্তর্ষী বা ধ্রুব (Poll star) তারায় গিয়ে পৌছাবে। পূলহ ও ক্রতুর মধ্যবর্তী দূরত্ব 5 ডিগ্রী এবং ক্রতু থেকে ধ্রুব তারার দূরত্ব মোটামুটি 30 ডিগ্রী দূরে। পেয়ালের হাতলের তিনটি তারা অন্গিরা,বশিস্ঠ,মরীচি কে একটি কাল্পনিক বৃওচাপ গঠন করে এই বৃওচাপটিকে 5 গুন বাড়িয়ে দিলে বুটিস মন্ডলের উজ্জল তারা স্বাতী (Arcturus) এ গিয়ে পৌছাবে। এই বৃওচাপটিকে আরো একটু সামনে বাড়িয়ে দিলে কন্যা রাশির উজ্জল তারা চিত্রা (Spica) গিয়ে পৌছাবে।
পেয়ালের নীচের দুটো তারা অর্থাৎ পূলস্ত্যকে পূলহের সাথে যোগ করে বাড়িয়ে দিলে তা মিথুন রাশির প্রথম তারা সোমতারা (Polax) এ গিয়ে পৌছাবে। এই মন্ডলে অনেক গুলো গ্যালাস্কী আছে M81,M82,M108,M109,M101 এই গ্যালাস্কী গুলো ছোট আকারের দূরবীন দিয়ে দেখতে পাবেন।
সময় পেলে আকাশের এই মন্ডলটিকে দেখে নিবেন।
এর পরের পর্বে এই গ্যালাক্সী গূলোর অবস্থান জানবো।
ম্যাপ সৌজন্যে:গুগল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।