আমি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। মনে হয় না এর থেকে বেশী কিছু চাওয়ার আছে। অর্ক ও উপমা দুজন একইসাথে পড়ে। দুজন দুজনের খুব ভালো বন্ধু। সময়টা বিকাল।
তারা একটি পার্কের বেন্চে বসে আছে। আশেপাশে অনেক জুটি বসে গল্প করছে।
অর্ক: আমার মনে হয় পৃথিবীতেই এখন শুধু আমরাই বাকি আছে।
চারিদিকে একবার তাকিয়ে অর্ক বললো।
উপমা: আমারও তাই মনে হয় এখন!! বন্ধুদের সবার বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড আছে এখন।
দুনিয়াতে মনে হয় শুধু আমরা দুজনই বাকি আছি যাদের জীবনে কোন আলাদা কেউ নেই।
অর্ক: সেটাই!! কি করা যায় এখন বলতো ??
উপমা: পেয়েছি!! চল...আমরা একটা খেলা খেলি ৩০দিনের জন্য!!
অর্ক: কি খেলা ?
উপমা: ৩০দিনের জন্য আমি তোর প্রেমিকা আর তুই আমার প্রেমিক!!! প্রেমিক-প্রেমিকা একসাথে যা যা করে আমরা সব করবো। রাজি ??
জানি না কি মনে করে অর্কও রাজি হয়ে গেলো।
অর্ক: অসাম বুদ্ধি। আমি রাজি।
এই কয়েকদিন আমার তেমন কাজও নেই।
১ম দিন
অর্ক ও উপমা একসাথে একটি মুভি দেখতে গেলো। খুব মজা করেই তারা মুভি দেখলো।
৪র্থ দিন
দুজন একসাথে এদিন ঢাকার বাইরে সাভারের দিকে ঘুরতে গেলো। বেশ আনন্দই করলো দুজন মিলে বলতে হবে।
১২তম দিন
দুজন এদিন চিড়িয়াখানায় এসেছিলো ঘুরতে। বাঘের খাচার সামনে দাড়িয়ে ছিলো দুজনে। হঠাৎ বাঘের হুংকারে চমকে গিয়ে উপমা অর্কর হাত ধরতে গিয়ে ভুলে আরেকজনের হাত জাপটে ধরলো। অনেক হাসাহাসি করলো দুজনে এর জন্য।
১৫তম দিন
শাহবাগের রাস্তায় বসে থাকা এক হাত দেখে ভবিষ্যৎ বলা লোকের কাছে তারা হাত দেখালো।
লোকটি বললো: তোমরা তোমাদের জীবনের সময়গুলো আর এভাবে নষ্ট করো না। যতদিন একসাথে আছো একে অপরের সাথে থাকো। কিছু বলার থাকলে বলে ফেলো একে অপরকে।
কথাগুলো বলার সময় লোকটির চোখ দিয়ে কেন জানি পানি পড়ছিলো!!!
২০তম দিন
দুজনে একটি রেস্তোরার ছাদে বসে ছিলো। এমন সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে জ্বলন্ত তারা পড়তে দেখলো।
উপমা বিড়বিড় করে কি জানি বললো। অর্ক অনেক জানতে চাইলো কি বিড়বিড় করলো সে!! কিন্তু উপমা বললো না।
২৮তম দিন
অর্ক ও উপমা বাসে করে ভার্সিটিতে যাচ্ছিলো। পাশাপাশি বসা ছিলো তারা। খারাপ রাস্তায় প্রচন্ডবেগে বাসটি চলতে চলতে বিষম ঝাকি খেলো।
ভয়ে উপমা প্রথমবারের মতো অর্কর হাত ধরে ফেললো। একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে সাথে সাথে আবার উপমা হাত সরিয়ে নিলো।
৩০তম দিন
আবারো সেই আগের পার্ক। অর্ক ও উপমা বসে আছে। অর্ক বসে বসে বাদাম খাচ্ছে।
অনেকক্ষণ হলো দুজন বসে আছে। কারো মুখে তেমন কোন কথা নেই।
অর্ক: খুব ক্লান্ত লাগছে রে!!! ঠান্ডা কিছু একটা খেতে হবে। আমি কোক আনতে যাচ্ছি। তুই কিছু খাবি ??
উপমা: আমার জন্যও কোক আনিস একটা।
অর্ক: থাক কিছুক্ষণ বসে। নিয়ে আসছি।
প্রায় ৩০মিনিট হয়ে গেলো !! অর্কর কোন খবর নেই!! আজব তো!!! এতক্ষণ লাগে দোকান থেকে আসতে!!!
উপমা অর্ককে ফোন দেয়ার জন্য মোবাইলে কল দিতে যাবে কি পার্কের গেইটের কাছে অনেক মানুষের চিৎকার শুনতে পেল। মনটা হঠাৎ করে অজানা আশঙ্কায় কেপে উঠলো উপমার। দ্রুত ছুটে গেলো সে সেখানে।
ঢাকার একটি বড় হাসপাতাল। চুপচাপ হাসপাতালের বেন্চে বসে আছে উপমা। তার কাপড়ে রক্তের দাগ। এই রক্ত অর্কর। দোকান থেকে কোক কিনে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি বাস অর্ককে চাপা দিয়ে যায়।
অনেক মানুষের চিৎকার-শব্দ উপমা সেই এক্সিডেন্টের পরেই শুনেছিলো। কয়েকজন লোকের সহায়তায় সে অর্ককে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। সেই রক্তে উপমার কাপড় লাল হয়ে আছে। অর্ককে মূমূর্ষ অবস্হায় হাসপাতালের ইমার্জেন্সী রূমে নেয়া হয়েছে।
ইমার্জেন্সী রূম থেকে একজন নার্স বের হয়ে আসলো।
উপমার সামনে এসে সে উপমার হাতে অর্কর পকেট থেকে পাওয়া কিছু জিনিস এবং রক্তে ভেজা একটি চিঠি দিলো। উপমা চিঠিটি খুলে পড়তে লাগলো। চিঠিতে লেখা....
"উপমা আগে কখনো বুঝতে পারিনি যে তোকে আমি এত পছন্দ করি। এই কয়েকদিনে তোর সাথে অভিনয় করতে গিয়ে আমি তোর প্রেমে পড়ে গেলাম। এই কয়েকদিনে বুঝলাম তোর এই হাসিটা ছাড়া আমার হবে না।
তোর এই হাসিটার জন্য আমি তোর সাথে সারাজীবন এই অভিনয়ের খেলা খেলতে রাজি আছি।
I love you lady."
উপমা আর কিছু বললো না। চুপচাপ চিঠিটা পড়ে গেলো। হঠাৎ করে ইমার্জেন্সী রূমের দিকে ডাক্তার-নার্সের তাড়াহুড়া দেখতে পেলো। নার্সটি তার সামনেই দাড়িয়ে ছিলো এতক্ষণ।
নার্সটিও প্রায় দৌড়ে চলে গেলো রূমে।
উপমার কেনো জানি আর থাকতে ইচ্ছে করছে না এখানে। সে হাটতে হাটতে বাইরে চলে এলো। অর্কর রক্তে লাল চিঠিটা খুব সুন্দর করে ভাজ করে ব্যাগে রাখলো। সেই সাথে ব্যাগ থেকে আরেকটি চিঠি বের করে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে রাস্তায় ছড়িয়ে দিলো।
উপমার ছিড়ে ফেলা চিঠিতে লেখা ছিলো....
"চিঠিটা চুপচাপ পড়। হাসলে তোর খবর আছে। সেদিন রাতে জ্বলন্ত তারা দেখে আমি কি বিড়বিড় করলাম তুই জানতে চেয়েছিলি ?? আমি বিড়বিড় করে বলেছিলাম আমাদের এই অভিনয় যেন কখনো শেষ না হয়। সারাজীবন যেন আমি তোর কাছে থেকে এই সুন্দর খেলা খেলতে পারি। হাসিস না ফাজিল।
"
৩০তম দিন শেষ হলো। রাত ১২:৪৫ বাজে।
হাসপাতালের বেডে অর্ক শুয়ে আছে। ডাক্তার অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পর সিন্ধান্তে চলে এসেছেন। অর্কর হৃদপিন্ড তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
ডাক্তার অর্কর মৃত দেহের দিকে তাকিয়ে আফসোসই করলেন। অনেক কম বয়সেই ছেলেটা মারা গেলো।
অর্ক ও উপমার ৩০দিনের সেই অভিনয়ের খেলা ওরা না চাইলেও সেখানেই শেষ হয়ে গেলো।
বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।