চোখের বদলে চোখ নেওয়ার নীতি গোটা পৃথিবীকে অন্ধ করে ফেলেছে...গান্ধীজি সামুর সাম্প্রতিক পোষ্টগুলোর মুলবিষয় হল ভারতীয় পন্য বর্জন এবং আমার মত কিছু ব্লগারের অনর্থক গলাবাজি। অযথা গলাবাজি করে কাজের কাজ কিছুই হবে না। বাস্তবতা বুঝতে হবে। পরের যাত্রা ভংগ করতে গিয়ে যেন নিজের নাকটাই কেটে ফেলতে না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
আমাদের উদ্দেশ্য যদি দেশপ্রেমই হয়,এদেশকে আত্ব-নির্ভরশীল দেখতে চায়,তাহলে পন্য বর্জন করলে আমরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হব,সেগুলো থেকে কিভাবে পরিত্রান পাওয়া যাবে তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
সহ-ব্লগারদের কনভিন্স করতে হবে। তা না করে আমরা ব্যক্তি-আক্রমনে জড়িয়ে পড়ছি। একে অন্যকে আক্রমন করছি। পন্য বর্জনের একমাত্র উদ্দেশ্য যেন ভারত-বিদ্বেষ না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য হবে এই দেশকে স্বনির্ভর হিসেবে গড়ে তোলা।
বেশীরভাগ ব্লগারই পন্য-বর্জন সম্পর্কিত পোষ্টগুলোতে অন্ধভাবে গলাবাজি করছে আর বাসায় গিয়ে ঠিকই ভারতীয় পন্য ব্যবহার করছে। আর গলাবাজি না করেই বা কি করবে?সমস্যাগুলো তুলে ধরলেই তো তাদেরকে ভাদা,ভাকুর,দালাল এসব ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে গলাবাজিটা হচ্ছে ঠিকই,কিন্তু আসল উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে না।
খাদ্যদ্রব্যের জন্য আমরা ভারতের উপর নির্ভরশীল নয় এটা ঠিক। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের উপর যে ভারতীয় পন্যের প্রভাব রয়েছে সেটা কি অস্বীকার করতে পারব?কিছু কিছু কৃষিজাত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ভারত থেকে না এলে আমাদের স্থানীয় বাজারের সেগুলোর মূল্য কয়েকগুন বেড়ে যাবে।
তখন কি আমরা সহনশীলতা প্রদর্শন করতে পারব?
কিছু ব্লগার আবার "আমার ফ্যামিলি ভারতীয় পন্য ব্যবহার করেনা" এমন কথা তুলে যারা ভারতীয় পন্য ব্যবহার করে তাদেরকে এক হাত নিচ্ছেন। আমি আপনি হয়ত ভারতীয় পন্য ব্যবহার করি না। কিন্তু বাকি সবাই কি আমার আপনার মত?যদি তাই হয় তাহলে আমাদের মার্কেটে ভারতীয় পন্যের এত ছড়াছড়ি কেন?এর পিছনে নিশ্চয় কারন আছে। তাই পন্য বর্জনের সাথে সাথে এসব কারন উদঘাটন করতে হবে। তা না হলে আমাদের আন্দোলন ব্লগেই থেকে যাবে।
বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটবে না।
আমরা যে ভারতীয় পন্য ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে গেছি এর জন্য কি দায়ী শুধুই আমরা?আমরা সবাই দেশপ্রেমের মুখোশ পরে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত। দেশ,জাতি,সমাজের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতার বড় অভাব। ব্যক্তিগত লাভের জন্য পন্যে ভেজাল মেশাতে আমরা কুন্ঠিতবোধ করি না। জেনে-শুনে মেলামাইন সমৃদ্ধ দেশী দুধ কে ব্যবহার করবে বলুন?
আমাদের ভারত-পাকিস্তান বিদ্বেষী দেশ-প্রেমিক হলে চলবে না।
অন্ধ ভারত-পাকিস্তানভক্তি যেমন ক্ষতিকর তেমনি অন্ধ ভারত-পাকিস্তানবিদ্বেষও জাতির জন্য মংগল বয়ে আনবে না। সত্যিকার দেশ-প্রেমিক হতে হবে। দেশ,জাতি,সমাজের প্রতি দ্বায়বদ্ধতা থাকতে হবে।
হাতে ভারতীয় পন্যের লিষ্ট ধরিয়ে দিয়ে বর্জন করতে বললেই কি বর্জন হবে,হবে না। এসব পন্যের বিকল্প ব্যবস্থাও থাকতে হবে।
আর তাহলেই ভারতীয় পন্যের ব্যবহার এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। যেসব ভারতীয় পন্যের ভাল বিকল্প আছে সেগুলো তো আমরা এমনিতেই ব্যবহার করিনা।
একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার জন্য ভারতীয় পন্যসহ সকল বিদেশী পন্যের উপর নির্ভরতা কমাতে হবে। কিন্তু এখনি সকল ভারতীয় পন্যের বর্জন আমাদের জন্য ভাল ফলাফল নাও বয়ে আনতে পারে। যেমন পেয়াজ-রসুন-ডাল ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য।
এসব পন্যের মূল্যের উপর ভারতীয় পন্যের সরাসরি প্রভাব আছে। তাই আমরা প্রথমে লাক্সারিয়াস পন্য গুলো বর্জন করব। তারপর ধীরে ধীরে অন্যগুলো। আর এভাবেই একদিন স্ব-নির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।
(যেসব ব্লগার পন্য-বর্জনের পাশাপাশি এ থেকে উদ্ভুত সমস্যা সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে মতামত দিয়েছেন তাদেরকে সাধুবাদ জানাই।
)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।