আমি গোলাপ খুব পছন্দ করি। পল্লি উন্নয়ন এবং সাম্প্রতিক বাংলাদেশ
শুরুকথা:
হরিতে-হিরণে, সবুজে-শ্যামলে, সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ-যার মূলভিত্তি বা প্রাণকেন্দ্র "ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি"। প্রায় বিরানব্বই হাজার (৯২,০০০; বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী) গ্রামের সমন্বয়ে ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কি.মি সমগ্র বাংলাদেশই প্রকৃতপক্ষে বিস্তৃর্ণ সমভূমির একটি প্রগাঢ় গ্রাম যেন। গ্রাম অর্থ "প্রকৃতির তনয়া", "অনেক পাতার ঘনিষ্ঠতায় একটি প্রগাঢ় নিকুঞ্জ"। দেশের শতকরা ৭৭ জন* লোক পল্লিগ্রামে বাস করে।
পল্লি বাংলার সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা রুপ কবির ধ্যানের খোরাক যুগিয়ে এসেছে যুগ যুগ ধরে। কবির কন্ঠে তাই ধ্বনিত হয়েছিল,
"আমাদের গ্রামখানি ছবির মতন
মাটির তলায় এর ছড়ানো রতন। "
কিন্তু পল্লির সে খ্যাতি আর নেই, নেই সেই রুপ-সেই সোন্দর্য্য; আমাদের অবহেলার কারণে পল্লিগ্রামগুলো আজ অন্নহীন, বস্ত্রহীন, শ্রীহীন-সে যেন আজ সভ্য মানুষের বসবাসের অযোগ্য। মানুষ কেবলই- "ইটের পর ইট মাঝে মানুষ -কীট, নেইকো ভালবাসা নেইকো মায়া" -এমনি কৃত্রিম সুখের অন্বেষণে শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। শিক্ষিম মানুষ তো বটেই, সামান্য শিক্ষিত এমনকি নিরক্ষর লোকও আজ পল্লিগ্রাম ছেড়ে ছুটেছে শহরের দিকে।
সমস্ত দেশের রক্ত শোষণ করে গড়ে উঠেছে শহর। তবু সে শহরে সকলের জায়গা নেই। সেখানে বাসস্থান সমস্যা, যানবাহন সমস্যা, বস্তি সমস্যা। শহরগুলোর বড় রাস্তা ছাড়া সব বৃহৎ বস্তিতে পরিণত হচ্ছে। বাংলার শহরগুলা এখন গরীব রিক্সাওয়ালার দখলে, সামান্য বেতনভূক কর্মচালীর দখলে, ভিক্ষুদের দখলে, নদীর ভাঙ্গনে ছিন্নমূল মানুষের দকলে, ঠগবাজ দালালদের দখলে এবং কতিপয় বাড়ীর মালিকদের দখলে যাদের কেউ বৃটিশ জমিদারের উত্তরাধিকারী মনে করছেন নিজেকে।
এই নগর জীবনের যান্ত্রিকতা, ভাঁড়ামি, ভন্ডামি, নীতিহীনতা এবং ফাঁপা মানুষ (Hollow Men)-এর কারসাজি দেখে ইংরেজ কবির মনে হয়েছে-
This is the dead land
This is cactus land. - এলিয়ট**
তাই পল্লি ও শহরের ব্যবধান দূর করার জন্য আজ শ্লোগান ধ্বনিত হচ্ছে-
"গ্রামে ফিরে যাও"-
"চল ফিরে চল মাটির পানে
সেখানে বাতাস গন্ধ উদাস
সোহাগ জানায় কানে কানে। "
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আর সেখানে যে কর্মসূচীটি সফল করতে হবে তা হচ্ছে পল্লি সংস্কার, পল্লি উন্নয়ন।
উৎস-নির্দেশ:
*পল্লি উন্নয়নে সাম্প্রতিক ভাবনা, বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন একাডেমী, কোটবাড়ী, কুমিল্লা-২০০২।
**বাংলা কাব্যে নগর চেতনা/কামাল আতাউর রহমান/২য় বর্ষ, তয় সংখ্যা/জুলাই-আগস্ট-১৯৭৭।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।