এখান থেকে
‘বিনা মূল্যে বিশ্বমানের শিক্ষা। সবার জন্য, সব সময়। ’ আকাশকুসুম কল্পনা মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই!
পৃথিবীজুড়ে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোয় শিক্ষার ব্যয় যখন দিন দিন আকাশচুম্বী, তখন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সালমান খানের প্রতিষ্ঠিত ‘খান একাডেমি’ বিশ্বজুড়ে শিক্ষানুরাগী, গবেষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাড়িয়েছে। এই ব্যাপকতার মাত্রা আঁচ করতে অসুবিধা হয় না, যখন এমআইটি (ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি সমাবর্তন বক্তা হিসেবে সালমানকে নির্বাচিত করে। মাত্র ৩৫ বছর বয়সী সালমান খানই হতে যাচ্ছেন এমআইটির ইতিহাসে কনিষ্ঠতম সমাবর্তন বক্তা।
এমআইটির ১৪৬তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান হবে এ বছরের জুনে।
শুধু এমআইটি নয়, আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন কমিটি কড়া নাড়ছে তাঁর দরজায়। আগামী মে মাসে রাইস ইউনিভার্সিটিতেও সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে সালমান খানের।
সালমান নিজেও এমআইটিতে স্নাতক। স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নকালে তিনি ছিলেন সিনিয়র ক্লাস প্রেসিডেন্ট।
এ ছাড়া তিনি ১৯৯৮ সালে সমাবর্তন কমিটিরও একজন সদস্য ছিলেন, যে কমিটির কাজ হলো সম্ভাব্য সমাবর্তন বক্তাদের তালিকা তৈরি করে অনুমোদন করানো। ওই বছর আমন্ত্রণ জানানো হয় প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে। আর আজ, মাত্র ১৪ বছরের ব্যবধানে সালমান নিজেই আমন্ত্রিত হয়েছেন সম্মানজনক এই অনুষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অতিথি হিসেবে।
সালমান দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি থেকে শুরু করে গণিত, পরিসংখ্যান, এমনকি অর্থনীতি বা ইতিহাসের মতো বিষয়কেও ভিডিও টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে সহজ-সরল করে একজন সাধারণ শিক্ষার্থীর জন্য উপস্থাপন করা যায়। আর তাই অনলাইনে এখন তাঁর শিক্ষার্থী (খান একাডেমির পোর্টালে নিবন্ধনকারী ব্যক্তি) ৩৫ লাখেরও বেশি।
এর মধ্যে আছেন বিল গেটস থেকে শুরু করে অসংখ্য অনুসন্ধিৎসু মানুষ।
এর আগে এই উদ্যোগের জন্য সালমান ২০১০ সালে গুগল থেকে ‘শিক্ষা বিভাগে সেরা প্রকল্প’ হিসেবে পেয়েছেন ২০ লাখ ডলার পুরস্কার। পরবর্তী সময়ে এই উদ্যোগকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিল অ্যান্ড মিলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনও সহায়তা করেছে খান একাডেমিকে।
২.
বাংলাদেশের বরিশালে জন্ম সালমান খানের বাবা ফখরুল আমিন খানের। তিনি পেশায় ছিলেন একজন চিকিৎসক।
দাদা আবদুুল ওয়াহাব ছিলেন ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার। সালমানের বাবা বিয়ের পর পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেই ১৯৭৭ সালে লুইজিয়ানার নিউ অরলিন্স শহরে সালমান জন্মগ্রহণ করেন, সেখানেই তাঁর বেড়ে ওঠা। মেধাবী সালমান ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব আইটি (এমআইটি) থেকে গণিত এবং তড়িৎকৌশল ও কম্পিউটার—এ দুই বিষয়ের ওপর স্নাতক করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎকৌশলের ওপর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন সালমান।
অতঃপর এমবিএ করেন হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে।
২০০৪ সালে সালমান নিউ অরলিন্সে থাকা তাঁর কাজিন নাদিয়াকে টেলিফোন আর ইন্টারনেটে অঙ্ক বুঝিয়ে দিতেন। ধীরে ধীরে অন্য কাজিনরাও তাঁর কাছে পড়তে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তাদের সুবিধার জন্য কয়েকটি ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে তুলে দেন সালমান। ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজের ছোট ভাইবোনদের পড়াশোনায় সাহায্য করার সেই ব্যক্তিগত উদ্যোগ, নিজের বানানো কয়েকটি ভিডিও সংকলন ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে দুই হাজার ৭০০ ভিডিওর এক জীবন্ত লাইব্রেরিতে।
লাখো মানুষ প্রতি মাসে এখান থেকে শিখে নিচ্ছেন গণিত, ভূগোল কিংবা জেনেটিকসের মতো কঠিন বিষয়।
পাঁচ বছর আগে যখন সালমানের বন্ধুদের সামনে তিনি পুরো পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করেছিলেন, তখন প্রথম যে প্রশ্নটির সম্মুখীন হয়েছিলেন তা হলো, এই সাইট থেকে তিনি কীভাবে অর্থ উপার্জন করবেন। উত্তরে দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে তিনি বলেছিলেন, এর থেকে আয় করার প্রয়োজন নেই তাঁর। সালমানের মতে, খান একাডেমির উদ্দেশ্য হচ্ছে, সবাইকে বিভিন্ন বিষয়ের মৌলিক সব ধারণা পেতে সহায়তা করা। তিনি ইচ্ছে করলেই তাঁর ভিডিওগুলো কিংবা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াকে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে চড়া মূল্যে বিক্রি করে দিতে পারতেন, একাধিকবার এমন প্রস্তাবও পেয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু না, তিনি সে পথে হাঁটেননি। জ্ঞানকে ব্যবসার পুঁজিতে পরিণত না করে তিনি বিনা মূল্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সারা পৃথিবীতে, শিশু থেকে বৃদ্ধ—জ্ঞানপিপাসী সব মানুষের মাঝে।
সালমান খানের খান একাডেমি ইতিমধ্যেই লস অ্যালটোসের একটি স্কুলে পরীক্ষামূলকভাবে এক নতুন ধরনের শিক্ষাপদ্ধতি চালু করেছে, যেখানে প্রচলিত ক্লাসরুমের ধারণাকে পুরো উল্টে দেওয়া হয়েছে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা তাদের যেসব লেকচার পড়তে হবে, তা বাসায় বসে খান একাডেমির সাইট থেকে দেখে আসে এবং স্কুলে এসে শ্রেণীশিক্ষকের সহযোগিতায় ক্লাসওয়ার্ক (আগে যা ছিল হোমওয়ার্ক) করে। এতে ক্লাসে শিক্ষক তাঁর সম্পূর্ণ সময় ও মনোযোগ শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয় করতে পারেন, তাঁদের সমস্যা সমাধান করতে পারেন, যা আগে কখনো সম্ভব ছিল না।
সালমান খান একজন মহান শিক্ষক, যাঁর স্বপ্ন শিক্ষাব্যবস্থাকে বদলে দেওয়া। কোনো স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক না হয়েও তিনি শেখাচ্ছেন সারা পৃথিবীকে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।