বৃথা হয়রানি
অনেকদিন পর প্রথম আলো’য় শ্রদ্ধেয় শিক্ষক রাজীব মীরের লেখা পড়ে (Click This Link) নষ্টালজিক হয়ে পড়লাম। প্রাত্যহিক জীবনের কর্মব্যস্ততায় ভুলেই বসছিলাম আজ (৫ নভেম্বর’) আমার চিরদু:খী বিশ্ববিদ্যালয়টির সমাবর্তন। এ সমাবর্তনে আমারো অংশ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু যাইনি। ইচ্ছে করেই যাইনি।
যাওয়ার কোনো আগ্রহবোধও করিনি।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানের ঘোষণার পরপরই তড়িঘড়ি করে মূল সনদ তুলে নিয়ে আসি। যেদিন আমার হাতে সনদ এলো, মনে হলো, আমার জীবনের এক অন্ধকার অধ্যায়ের অবসান ঘটল।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যেহেতু প্রগতিশীল চিন্তা করতাম, টুকটাক লেখালেখি ও সাংবাদিকতায় জড়িয়ে ছিলাম, তাই সবসময় একটা আতংকের মধ্যে থাকতাম। একদল অসভ্য-বর্বর ছেলে সারাক্ষণ আমাদেরকে চোখে চোখে রাখত।
ওদের ছিল শত-সহস্র চক্ষু-কর্ণ। চুন থেকে পান খসলেই মাটি ফুঁড়ে একেকজন উদয় হত। শুরু হতো তালেবানি স্টাইলে শায়েস্তা।
ক্লাস ভর্তি ছাত্রের সামনে ওরা আমার এক সহপাঠীকে মেরে গেল, আমরা কিসসু বলতে পারিনি। আমার দু’জন সহপাঠী বৈধভাবে হলে থাকার’ অপরাধে প্রহৃত হয়েছিল।
এখনো তারা ঘুমের মধ্যে ভয়ে লাফিয়ে ওঠে সেই দু:সহ স্মৃতি মনে করে। ভাগ্য জোরে বহুবার মারের হাত থেকে বেঁচেছি। শেষ রক্ষাটা পেয়েছিলাম আমাদের বিদায় অনুষ্ঠানের দিনে। স্যার, নিশ্চয় মনে আছে, সেদিন আপনারই শার্টের খুটো ধরে বেরিয়ে এসেছিলাম ওই নিন্দিত নরক থেকে।
বড়ো দু:খ হয়; মানুষের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কতো ভালোবাসা থাকে, কতো আবেগ, আমাদের কিসসু নেই।
যেন একটা কালো স্যালেট বুকে নিয়ে ঘুরছি। সেখানে একটাও ভালোবাসার আঁচড় নেই। এ বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের বিকশিত হতে দেয়নি। সেশনজটে ৫ বছরের কোর্স ৮ বছর করেছি ঠিকই, কিন্তু ঋদ্ধ হয়নি। আমাদেরকে বানসাই বানিয়ে রেখেছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়।
আমরা একটা পয়লা বৈশাখ করতে পারিনি সেখানে। আমাদের নবীণবরণের মুখোশ-খেলনাগুলোকে পর্যন্ত তারা মূর্তি বলে পুড়িয়ে দিয়েছিল। নাট্যকলা তো বন্ধই হয়ে গেল।
আমাদের বেশিরভাগ শিক্ষক ছিলেন নির্দয়। ছাত্রনেতরা বিশুদ্ধ বেনিয়া।
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছিলেন সিরাজউদ্দোল্লাহ’র নাতি-নাতনি। এরা আমাদের সহায় হয়নি কখনো। আমরাও প্রতিবাদ করিনি। কাপুরুষত্বের পরাকাষ্ঠা ছিলাম। জানতাম শুধু ভেড়ার পালের মতো ট্রেন থেকে নামতে আর উঠতে।
তারপরও কেন জানি ট্রেনের হুইসেল শুনলে এখনো বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। মনে হয় শাটল ট্রেন আমাকে ডাকছে। জোবরার গাঢ় সবুজ পাহাড়গুলো আমাকে ডাকছে। এখনো মাঝে মাঝে অফিস ফেরার পথে গোধূলির ম্লান আলো আমাকে স্মৃতি কাতর করে তুলে। মনে হয় ৫ টা ২০-র ট্রেনে দুলেদুলে ফিরছি।
ধনচে গাছগুলো দু’পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে হাতছানি দিচ্ছে।
মাঝে মাঝে ভাবি, আহা কি অানন্দেরই না হতে পারত আমাদের সেই দিনগুলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।