আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেটালিকার দ্যা আনফরগিভেন ও ডায়ার স্ট্রেটসের ব্রাদারস ইন আর্মস এর ইন্টারপ্রিটেশন

অন্ধকার; মৃত নাসপাতিটির মতন নীরব' দ্যা আনফরগিভেনঃ লিরিক ডাউনলোড মেটালিকার মাষ্টারপিস ‘দ্যা ব্লাক অ্যালবাম’ এর বেষ্ট ট্রাক ‘দ্যা আনফরগিভেন ’ । আমার পচন্ড পছন্দের দশটা গানের একটা শর্ট লিষ্টে থাকবে ছয় মিনিট সাতাস সেকেন্ডের এই গান । লিরিক থিমেটিক্যালি প্রচন্ড স্ট্রং । ক্রিষ্টাল ক্লিয়ার গিটার সলো । ভোকাল জেমস হেটফিল্ড তো অসাধারন সবসময়ই, তবে এখানে অসাধারনের চেয়েও বেশি কিছু ।

আমাদের অনেকের ছোটবেলা থেকে বেড়ে উঠার ‘ব্যালার্ড’ বলা যায় এই গানটাকে । শুরুটা হয়েছে ইঞ্জিনের শব্দে । এই শব্দটুকু নেয়া হয়েছে ক্লিন্ট ইষ্টয়ুডের ‘ফর অ্যা ফিউ ডলার মোর’ নামের ওয়েষ্টার্ন মুভির দ্যা শোডাউন’ নামে একটা মিউজিকের থেকে । পরে এই শব্দটাকে রিভার্স করে গানে ব্যবহার করা হয় যদিও মেটালিকা এর সোর্স কখনও প্রকাশ করেনি । মেটালিকার বেশির ভাগ গানের মুল থিম বা মেনিং এর লিরিক থেকে ডিকোড করা কঠিন ।

বেশির ভাগ গানের মাল্টিপল মেনিং দাড়া করা সম্ভব । এই গানটার আমার ইন্টারপ্রিটেশ অনেকটা এরকমঃ সামাজিকীকরনের গতানুগতিক প্রসেসে ধর্ম, সমাজ কাঠামোর উপাদানগুলো একটা নতুন জন্মলাভ করা শিশুকে কিভাবে মানষিক ও আত্মিক দাশত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে তার একটা ভয়ঙ্কর পোট্রেইট এই গানটা । একেবারে আনকোরা এক মানব শিশুকে বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে সমাজ যেভাবে জাত, মান-মর্যাদা, লিংগভেদে বিভক্ত করে তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখনে । এখানে অযাচিত ব্রান্ডিং ও লেভেলিং করে সমাজ সবাইকে যেন আলাদা আলাদা একটা সোসাল সিকুরিটি নাম্বারে আবদ্ধ করে ফেলছে । সবাই হয়ে উঠছে সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতার আরেকটা সতন্ত্র স্টাটিস্টিক ।

New blood joins this earth And quickly he's subdued Through constant pained disgrace The young boy learns their rule গানটি একটা ছোট্ট বালককের ট্রাজিক গল্প । জড়দেহে প্রানবায়ু সঞ্চারে তার আগমন পৃথিবীতে । একটা রক্ষনশীল ফ্যামিলিতে তার বেড়ে উঠা । জন্মের পর থেকেই সে নিজের চাহিদা আর প্রত্যাশা মাফিক জীবন যাপনের ক্ষেত্রে প্রতি পদে পদে বাধার সম্মুখীন হয় । সারা জীবনব্যাপি তাকে তার চারপাশের মানুষদের খুশি রেখে চলতে হয় ।

দুই চোখ মেলে দেখা আজন্ম লালিত স্বপ্নগুলোকে জলাঞ্জলি দিয়ে তিক্ততাপুর্ন জীবনে একমাত্র সেই থেকে যায় অসুখী । সিন্ধু সেঁচে মুক্তা আনার স্বপ্ন গুলো ঝরে যেতে থাকে, ডানাহারা ইকারুশের মতই যেন সে ক্রমেই হারিয়ে যায় সমুদ্র এপিটাফে । "A vow unto his own That never from this day His will they'll take away" চিরাচারীত প্রথার অংশ না হয়ে ব্যাক্তি সাতন্ত্রবাদের জন্য সেই প্রথার বিরুদ্ধে স্ট্রাগল শুরু করে সে । কিন্তু তার নিজশ্ব চিন্তাভাবনা গুলো ক্রমশ চাপা পড়ে যায় ধর্ম, আইন, সমালোচনা, পুর্বনির্ধারিত সামাজিক সম্পর্ক, বিভ্রান্ত বিচারবোধ আর গোড়ামীগুলোর জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে, গ্রাসে । ধীরে ধীরে সে সামাজিক প্রথার দাসত্যের শৃঙ্খলে আটকে পড়ে ।

এভাবে সমাজই পয়জন আইভির মত সংক্রামিত করে সামাজিক জীব সেই বালককে । বালকের নিজ স্বত্ত্বা, মনের ঘরের খবর চিরকালই থেকে যায় অপ্রকাশিত । বিশাল সমাজের মাঝে জালে আটকে পড়া মাছের মত তার একাকিত্ব । এরপর যেন স্রোতহীন নদীতে রোদে পোড়া বালি হয়ে তার বেচে থাকা । অতপরঃ গানের শেষ দিকে একটা সারপ্রাইজিং টুইষ্ট ‘That old man here is me’ ।

নিস্ফল জীবনযুদ্ধ শেষে বৃদ্ধে পরিণত হওয়া সেই বালকের মৃত্যুর অপেক্ষায় নিরস জীবন যাপন । লিরিকের কোরাস অংশ সামাজিক রীতিনীতির বেড়াজালে আবদ্ধ জীবনের অসম্পুর্নতা আর অপুর্নতার কথা বলে । ‘They dedicate their lives To running all of his He tries to please them all This bitter man he is Throughout his life the same He's battled constantly This fight he cannot win’ -এই অংশটা একটা ডিসটোপিয়ান সমাজের ডিপিকশন । অনেকে Aldous Huxley এর "Brave New World" নোভেলটার সাথে গানটার সাযুজ্য খুজে পায় । এখন প্রশ্ন হল "I dub thee unforgiven" এখানে আনফরগিভেন বা অক্ষমার্হ কে? সে কি নিজের কাছে নিজে অক্ষমার্হ? নাকি অন্যকেউ? অথবা সেই ডিস্টোপিয়ান সমাজই অক্ষমার্হ? "Never free Never me So I dub thee unforgiven" কোরাসের এই অংশে বলা হয়েছে যে সমাজ তাকে জীবসত্বা থেকে মানবসত্বার ঘরে পদার্পনের সুযোগ করে দেয় নাই ।

সে তার নিজস্ব স্বত্তার আবিস্কার আর স্ফুরনের সুযোগ বঞ্চিত হয়েছে । মনের মাঝে কাল দাগ লেপন করেছে সমাজ । সে নিজের কাছে নিজে অক্ষমার্হ । "You labelled me I'll label you So I dub thee unforgiven" যে সমাজ তাকে 'whipping boy' বানিয়েছে, সেই সমাজকে এখানে একটা একক entity হিসাবে ‘thee’ দ্বারা ইন্ডিকেট করা হয়েছে । সেই ডিস্টোপিয়ান সমাজই এখানে অক্ষমার্হ ।

dubbee নিজেই এখানে dubber । গানটাকে বাবা আর পুত্রের রিলেশনশিপ কম্পলিকেসি হিসাবেও ইন্টারপ্রিট করা হয়েছে । এমনটাও বলা থাকে যে গানে যে বালকের কথা বলা হয়েছে সে ছোট বেলা জেমস হেটফিল্ড, সেক্ষেত্রে আনফরগিভেন ট্রিয়োলজি লিরিসিষ্ট জেমসের আত্মজীবনীমুলক । এই অ্যালবাম রিলিজ হওয়ার আগে ডেভ মাষ্টেইন এর সাথে মেটালিকার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় । এর পর অনেকদিন মাষ্টেইন মেটালিকার গান শুনে নাই ।

অনেক পরে সিচুয়েশন কিছু স্বাভাবিক হলে মেটালিকার এই ব্লাক অ্যালবাম শোনার পর মাষ্টেইন এই একটা গানের উচ্ছসিত প্রশংসা করেন । তার ভাষ্য অনুযায়ী, ‘I liked it because I thought this was really the first time I've ever really heard James sing. He had sung before, and he was a great singer. But that was the first time I ever heard him really, really sing’ ইউটিউব মিউজিক ভিডিও ডাউনলোড মিউজিক ভিডিওটার এক্সপ্লানেশনের জন্যঃ Hidden Themes In The Unforgiven ============ ব্রাদারস ইন আর্মসঃ লিরিক ডাউনলোড সঙ্গীন দশার একটি মিউজিক্যাল ব্লিস -ব্রাদারস ইন আর্মস । হুম, রিদম এন্ড ব্লুজ এর গুরু গায়ক ও লিড গিটারিস্ট মার্ক নফলার এর ব্যান্ড ডায়ার স্ট্রেটস যার নির্ভেজাল বাংলা নাম সঙ্গীন দশা । রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট, সুলতান অভ সুইং, টানেল অভ লাভ, কলিং এলভিস, ওয়াটার অভ লাভ, ওয়ান্স আপন অ্যা টাইম ইন দা ওয়েষ্ট -এই গানগুলো আমার পছন্দের তালিকাভুক্ত । চৌদ্দ, অক্টোবার ১৯৮৫ তে রিলিজড হয় ‘ব্রাদারস ইন আর্মস’ ।

কিছুটা স্কটিস ফোক গানগুলোর আমেজ রয়েছে আর কিছুটা ব্লুজ । ব্লুজ রক টাইপের এই গানের কথা অসাধারন আর অপুর্ব তার সুর । জি সার্প মাইনরে করা ইনিশিয়াল গিটার সলোটার বিষাদী টোন পুরো গানে একটা ইমোশনাল টাচ অ্যাড করেছে । আমার কাছে এটাকে একটা যুদ্ধ বিরোধী গান মনে হয়েছে । যুদ্ধ আর যুদ্ধের অন্তসারশুন্যতা নিয়ে এই গান ।

আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত এক যোদ্ধার মাতৃভুমি ও পরিবারের সাথে তার সেপারেশনের এলিজি বলা যায় এই গানকে । যুদ্ধরত সেনাদের সহযোদ্ধার প্রতি পারস্পারিক কম্পাশন ও মমত্ববোধ ফুটে উঠেছে এই গানে । রণসজ্জায় সজ্জিত এজজন যোদ্ধা যুদ্ধ ময়দানে মৃত্যুপথযাত্রী । প্রথম প্যারাতে সেই যোদ্ধা তার হোমসিকনেস আর নষ্টালজিয়ার কথা বলছে । গানের ভাবনাগুলো সেই যোদ্ধার মনকে আলোড়িত করছে ।

ভয়াবহ যুদ্ধে পাশেই উপস্থিত তার সহযোদ্ধারা "you did not desert me”। যুদ্ধ ধংস ডেকে আনে, তবুও আমরা বোকার মত যুদ্ধ করি । মানুষে মানুষে, ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ । বিশ্ব যুদ্ধের সময় যেমন আমরা দেখেছি ব্রিটিশ আর জার্মানরা একসাথেই ক্রিসমাস পালন করে, অথচ তারা লড়ছিল পরস্পরের বিরুদ্ধে । একটাই পৃথিবীতে আমাদের সকলের বসবাস ।

অথচ আমাদের মাঝেই কত বিভেদ, ভাবনায়-চিন্তায়, সভ্যতা-সংস্কৃতিতে, ধর্ম-জাতীয়তাবাদে । রুপান্তর প্রচেষ্টাঃ কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ে আমার বসবাস নিচুভুমিতে আমার স্বদেশ সে আমার আজন্ম নিবাস । একদিন আমি ফিরে যাব নিচু উপত্যকার সেই খামার বাড়িতে থাকবে না নির্মম প্রাননাশ হাতের উপর হাত রেখে আমরা হব নির্ভার নিঃশ্বাষের পরম আপনজন । এই মৃত্যুময় রণভুমি যুদ্ধন্মাতাল মৃতলাশগুলোর পাশে তোমাদের প্রলয়কাল যাপন ভীতি আর দুর্ভোগ ছাড়িয়ে গ্যাছে এই নিন্দিত নরকে লাশঘরে উপচে পড়েছে আমাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরন ধ্বংসের উপনিবেশে তোমরা ছেড়ে যাওনি আমাকে নির্ভার নিঃশ্বাষের পরম আপনজন । অজশ্র গ্রহলোকে অগুনতি তারা আমাদের পৃথিবী একটাই অথচ বিভাজিত আমাদের বসবাস ।

প্রকট সুর্য এক ডুবে গেছে গাঢ় অন্ধকারে আবার উদিত হয়েছে আধ ফালি চাঁদ আমাদের করতলের জ্যামিতিতে লিখে রাখা নক্ষত্রকথা যেখানে অংকিত আছে মৃত্যুর সাজঘর । এবার বিদায় বেলায়, হে সুহৃদ হাতের উপর হাত রেখে আমরা হব নির্ভার নিঃশ্বাষের পরম আপনজন । ১৯৮৯ সালে এক রেডিও সাক্ষাতকারে নফলার এই গানের থিম নিয়ে কথা বলেন, ফকল্যান্ড যুদ্ধের সময় নফলার তার বাবার সাথে এ বিষয়ে কথপোকথন কালে এই গানের আইডিয়া ভাবনায় আসে । তার বাবা ব্যাপারটা এভাবে বলছিলেন যে ফকল্যান্ড যুদ্ধে কমুনিষ্ট রাশিয়ানরা আর্জেন্টাইন্ ডিকটেটর দের সাথে ‘ব্রাদার্স ইন আর্মস’ । যদিও গানটা ফকল্যান্ড যুদ্ধ নিয়ে নয় ।

======== পছন্দের কিছু গান ও লিরিকের ইন্টারপ্রিটেশন  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।