শুনতে পেলাম চৌধুরী বাড়ির নতুন বউকে নাকি ভূতে ধরেছে । একথাটা দিনে দিনে মহি্লাদের কানে মুখে সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল । সারা গ্রামের মানূষ সকাল বিকাল চৌধুরী বাড়িতে আনাগোনা শুরু করল । আর সন্ধ্যায় হাজার মানূষের ভীড় । রাত ৮ টার সময় নতুন বউ এর উপর ভূত আছড় করে ।
তখন নতুন বউ চোখ মুখ খিচিয়ে চিৎকার করে কথা বলে । হাতের কাছে যা পায় ভেঙ্গে ফেলে । কেউ নতুন বউকে ধরে রাখতে পারে না । হঠাত করে তার শরীরে শক্তি বেড়ে যায় । সামনে যাকে পায় তাকেই মারতে যায় ।
অশ্লীল গালা-গাল দেয় । হাসে । কখনো গুন গুন করে লালনের গান গায় । দৌড়-ঝাপের কারনে তার শাড়ির আঁচল এলোমেলো হয়ে যায় । নিজের মনে একা একা কথা বলে ।
তার স্বামী কাছে এলে রাগ যেনো হাজার গুন বেড়ে যায় । তেড়ে স্বামীকে মারতে আসে ।
বাধ্য হয়ে এ অবস্থা থেকে পরিত্রানের জন্য আমাকে ডাকা হলো । গর্ব করি না কিন্তু খুব অল্প সময়ে ভূত তাড়ানোয় আমার খুব নাম-ডাক আছে । চৌধুরী বাড়ির নতুন বউ আমাকে দেখেই রাগে চোখ বড় হয়ে গেলো ।
চোখ মুখ খিচিয়ে আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করতে লাগল । তবুও আমি কোনো ভয় পেলাম না, এরকম অনেক দেখেছি । সারা দেশে আমার অনেক খ্যাতি আছে । মধ্যরাত্রে আমি উঠানে শীতল পাটি বিছিয়ে বসলাম । আমার সামনে আগরবাতি জ্বলছে, চারিদিকে সৌরবে ভরে গেছে ।
চৌধুরী বাড়ির নতুন বউকে আমার সামনে ধরে আনা হলো । এখন নতুন বউ এর ঘাড়ে ভূত নেই । বউ এখন শান্ত-হাসি-খুশি । একজন বলল- আমাকে দেখে নাকি ভূত পালিয়ে গেছে । আমি ভীড় পাতলা করতে বললাম ।
নতুন বউ অজানা এক লজ্জায় মাটির দিকে তাকিয়ে আছে । এখন সে খুব শান্ত, আমি তার ঘাড়ে ভূত আনার ব্যবস্থা করলাম । যেনো আর কখনো নতুন বউকে জ্বালাতন না করে । মানুষকে যন্ত্রনা না দেয়, তার একটা উত্তম ব্যবস্থা আমি করবোই ।
আমি বিড়বিড় করে আমার সব বিখ্যাত মন্ত্রগুলো পড়তে লাগলাম ।
তারপর ডাকলাম আয়...আয়... আয়রে....। তাড়াতাড়ি আয়, দেরী করিস না, তাহলে আমার খুব রাগ লাগবে । চারপাশে পিনপতন নিরবতা । আমি আবার ডাকলাম- কিরে এত দেরী কেন ? তাড়াতাড়ি আয়, আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে- তোর ঝামেলা শেষ করে আবার আমাকে উত্তরবঙ্গ যেতে হবে । হঠাৎ নতুন বউ এর পেছনের বেল গাছটা নড়ে উঠল ।
মনে হলো কেউ একজন বেল গাছ থেকে নেমে এলো । চারিদিকে নিরবতা, শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া । নতুন বউ মুখ তুলে কথা বলে উঠল । আমায় ডেকেছেন কেন ? যেন সে খুব বিরক্ত ।
আমি বললাম- তোর নাম কী ? ভূত বলল আমার নাম জেনে আপনার দরকার কী ? আমি বললাম- সে কথা পরে, আগে তোর নাম বল ।
বেয়াদবি করবি না । আমি বেয়াদবি লাইক করি না । ভূত বলল আমার কোনো নাম নেই । আমি বললাম- ফাজলামো বাদ দে । ভূত বলল আমি ফাজলামো করছি না ।
আমি বললাম- তাহলে তুই নাম কইবি না ? তুই নাম ছাড়া ? ভূত বলল- হুম । আমি বললাম- তোর বাপের নামও বুঝি নাই ? ভূত বলল আছে । আমি বললাম বল, তোর বাবার নাম বল । ভূত বলল- আমার বাপের নাম হামবুড়া । আমি বললাম- ভূতের বাপের নাম হামবুড়া ।
এ কথা প্রথম শুনলাম । আর তোর কোনো নাম নাই, না ? ভূত বলল- আমার নাম আছে, আমার নাম হলো- চ্যাংড়া, এই বলেই ফিকফিক করে হেসে উঠল নতুন বউ । আমি রেগে গিয়ে বললাম- তয় তুই যে এতক্ষন বললি তোর নাম নেই । এখন কচ্ছিস চ্যাংড়া । তুই হলি একটা মস্ত বড় ফাজিল ।
বড় শয়তান । চ্যাংড়া তুই আমার সাথে ফাজলামো কচ্ছিস । এখন আমি তোর নামও জানি, তোর বাপের নামও জানি । আমার সাথে বাঘ-বন্দী খেলতে চাস ? তোর বাপের নাম হলো রাম । আর তোর নাম কবো ? না থাক ।
আমি আবার দুইটা মন্ত্র পড়ে, রেগে গিয়ে চিৎকার দিয়ে ভূতকে বললাম- তোর বাড়ি কোথায় ? ভূত বলল- কোয়েকাফ নগরীতে । আমি বললাম আচ্ছা, ভালো । ওটা তো ভূতের'ই নগরী । তুই এখানে কোথায় থাকিস ? ভূত বলল- নতুন বউ এর সাথে আর বেল গাছে । আমি বললাম- তুই নতুন বউ এর ঘাড়ে চেপে অশান্তি শুরু করলি ক্যান ? ভূত বলল- আমি কোনো অশান্তি করি নাই হুজুর ।
আমি বললাম- তুই ওর ঘাড়ে চেপে আসিস ক্যা ? নতুন বউকে আমার ভালো লাগছে । ভালো লাগলেই বুঝি ঘাড়ে চেপে বসতে হবে ? ওর স্বামী সংসার আছে না ? ভূত চুপ করে আছে । আমি আবার ধমক দিতে ভূত বলতে শুরু করলো- ও সেদিন সন্ধ্যায় নদীর ঘাটে পানি আনতে গেলো, মাথায় ছিল না ঘোমটা । বাতাসে চুল উড়ছিল-শাড়ির আঁচল উড়ছিল । তখন আমি স্মার্ট যুবক সেজে ওর চলার পথে দাঁড়িয়ে ছিলাম ।
ও আমাকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে ছিল । আমার খুব ভালো লেগেছিল ।
আমি বললাম- শোন- তুই নতুন বউ এর ঘাড়ে আর চাববি না । বেল গাছে আর থাকবি না । এই এলাকা ছেড়ে চলে যাবি ।
তোর ভঙ্গিমা ভালো না । ভূত বলল- না, আমি যাবো না । আমি থাকব । ভূতের এই কথা শুনে আমার অনেক রাগ লাগল, আমি দিলাম এক থাপ্পড় । তারপর বললাম- তোর এই এলাকায় কোনো স্থান নেই ।
আর যদি না যাস, তো আমি অন্য ব্যবস্থা করবো । ভূত বলল- কী ব্যবস্থা করবেন জানতে পারি ? আমি বললাম- তা পারিস । তোর মুরব্বিদের ডেকে বলে দিব । আর তাতেও যদি কাজ না হয় । তাহলে তোকে বোতলে বন্দী করে রাখব ।
এখন যা ভাগ । আর বিরক্ত করিস না । ভূত বলল- আমি যাবো না । আমাকে তাড়িয়ে দিবেন না বস্ । আপনার অনেক কাজে লাগব আমি ।
আমাকে যা বলবেন আমি তাই করবো । তবু আমাকে নতুন বউ এর কাছ থেকে আলাদা করবেন না । আমি বললাম - না । নো নেভার । তোকে শেষ বারের মতন কয়ে দিচ্ছি যা চলে যা ।
ভূত বলল- ঠিক আছে, আপনি মনে রাখবেন, সুযোগ পেলে আমি আপনাকে দেখে নিবো । আমাকে যেমন এলাকা ছাড়া করেছেন, আমিও আপনাকে দুনিয়া ছাড়া করবো । আমি বেশ রেগে গিয়ে বললাম- দাড়া তোকে বোতল বন্দী করছি । দেখি, তুই আমার কী ক্ষতি করতে পারিস । ভূত কটমট করে বলল- না বস্ ।
তার আর দরকার হবে না । আমি চলে যাচ্ছি । তখন নতুন বউ অজ্ঞান হয়ে গেলো । তারপর জ্ঞান ফেরার পর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠল ।
ভোর বেলা আমি সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলাম উত্তর বঙ্গের দিকে ।
যাবার আগে বলে গেলাম- বউ, ঝি, বেটি- সন্ধ্যার পরে নদীর ঘাটে, পুকুর ঘাটে না যাওয়াই ভালো । তারপর আমি গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে হাঁটতে শুরু করলাম- "Allow me to say...." ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।