জীবন গঠনে নিজেস্ব প্রতিক্রিয়ার দায় বেশি, ঘটে যাওয়া ঘটনার ভূমিকা সামান্য।
এইচ এস সির আগে দু' সপ্তাহ ছুটি ছিল। ছুটি শুরুর আগে পড়ি নি, ভেবেছিলাম ছুটি শুরু হলেই ঘরের দরজা বন্ধ করে, নাওয়া খাওয়া ভুলে পড়াশোনা করব।
কিসের কি, ছুটি শুরুর পরেই শুরু হলো আমার আসল ফূর্তি। প্রতিদিন মনে হইতো, কত্তদিন আছে! এখন পড়া ধরলেও প্রতিটা সাবজেক্টের জন্য দুই দিন।
মানে পুরা আটচল্লিশ ঘন্টা। এত পড়ে কে?
তখন বিশেষ ভাবে বন্ধুদের কথা মনে পড়তো। একজনের কাছ থেকে প্রতিদিন মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের টুয়েলভ ফন্টের তিন পাতার মেইল না পেলেই হতো, দুনিয়া উল্টে ফেলতাম। ফলস্বরূপ তিন পাতার জায়গায় বাধ্যবাধকতা দশে গিয়ে ঠেকতো। ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনালাপ তো ছিলই।
আর টিভি দেখতাম। পড়তে হবে, তাই বাসায় কোন মুভ্যি আনা হতো না কিন্তু তাতে কি আর দমে যেতাম? বাসা থেকে মা বাবা সকাল বেলা বের হয়ে যাওয়া মাত্র টিভির সামনে বসে যেতাম। ওই সাত সকালে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কথা মনে করে কেউ তো আর বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ছাড়ত না, তখন হতো পিচ্চি পিচ্চি বাচ্চাদের অনুষ্ঠান। 'প্লে স্কুল'। ওদের ঘড়ি দেখা শিখানো হতো, সপ্তাহের সাত দিনের নাম শিখানো হতো, দুই এর নামতা শেখানো হতো।
বহুত শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান। বসে বসে ওটাই দেখতাম আর একা একই হি হি করে হাসতাম। কিংবা প্যাশন--পৃথিবীর বিচ্ছিরিতম সোপ অপেরা দেখতাম মন্ত্রমুগ্ধের মত।
মানুষ পরীক্ষার টেনশনে কান্নাকাটি করে, আমি করতাম এই কান্ড। পরীক্ষা আগালেই আমার ভিতর পরীক্ষা ভূত চেপে বসে।
নিজের কান্ডকারখানায় নিজেই টাসকি খেয়ে যাই।
এখন আবার পরীক্ষা আগাচ্ছে। জুনের পনের তারিখ থেকে পরীক্ষা শুরু।
পরীক্ষার টেনশনে যে পড়ে গিয়েছি বুঝতে পারছি। এত কাল যা পড়াশোনা করতাম তাও বাদ দিয়ে দিয়েছি।
পৃথিবীটা হঠাৎই খুব রঙিন হয়ে গিয়েছে। এই যে সেদিন বন্ধুদের ফোন করে নস্টালজিয়াটা জুগিয়ে নিলাম। পরের দিন খুব অস্থির লাগছিল বলে মীরাকে নিয়ে গেলাম পাইরেটস অফ ক্যারিবিয়ান - ৩ দেখতে। আড়াই ঘন্টার মুভ্যিটা দেখে আমি মুগ্ধ! সেরা পাইরেটস!
কাল বসে বসে বিউইচড রিভিশন দিলাম। নিকোল কিডম্যানের অভিনয় দেখে আবার মুগ্ধ হলাম।
কারাদাওয়ীর যেই নতুন বই কিনে এনেছি সেদিন বুকশপে গিয়ে, ওটা পড়া শুরু করেছি মনযোগ দিয়ে। সিডনী মর্নিং হেরাল্ড এর আগে কখনও এত খুঁটিয়ে পড়ি নি সত্যিই। খবর এক মিনিটের জন্য মিস করছি না, এসবিএসে বসে বসে ডকুমেন্টারিগুলো দেখছি গভীর আগ্রহে।
বুঝতে পারছি, ডুব দেয়ার সময় এসেছে! সব বাদ দিয়ে একটা ইচ্ছা-ডুব দিতে হবে, জোর করে। কোন এসএমএস না, ফোন না, এমএসএন, ইয়াহু, জিমেইল না।
আর অবশ্যই, সামহোয়ার না, সামহোয়ার না, সামহোয়ার না।
সারা পৃথিবী থেকে এক মাসের জন্য পরিপূর্ণ সুইচ অফ দরকার স্রেফ পড়াশোনার জন্য। যেই সুযোগ আর ছাতা পেয়েছি মাথার উপর, তার উপর কৃতজ্ঞতা দেখাতেও ডুবটা দেয়া দরকার।
বুঝতে পারছি। প্রশ্ন হলো: ইন্টারনেট, টিভি, ফোন, বই--সব জানালা বন্ধ করে ডুব দিতে পারব তো? ধুর, আগের দিনই ভাল ছিল, যখন গুহাবাসী হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ একটা জানালা বন্ধ করতে হতো।
এখন নিভৃতে থাকার জন্য কত্তগুলো জানালায় পেরেক লাগানো লাগে রে... (
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।