যুদ্ধ ইতিহাস আমার প্রিয় একটি বিষয়। আরবদের সাথে ইস্রাইলের আজ পর্যন্ত যত গুল যুদ্ধ হয়েছে সব গুলতেই ইস্রাইলের রয়েছে অসাধারণ জয়। শুধু মাত্র আমেরিকার সাহাজ্য পেয়ে ওরা টিকে আছে, এই কথাটি একদমই ঠিক নয়। জাতি হিসাবে নিজেদের সুসংগঠিত রেখে জ্ঞান বিজ্ঞান আর সামরিক প্রযুক্তির অগ্রগতি ওদের সমুন্নত রেখেছে। এসব দিক দিয়ে আমি ইস্রাইলীদের শ্রদ্ধার চোখে দেখি।
আরব রাষ্ট্র গুলর নিজেদের মধ্যে অনৈক্য আর তাদের প্রযুক্তি বিমুখতা ইস্লামের দুর্বলতার অন্যতম কারণ। ৬ দিনের যুদ্ধে মিশর আর আরব রাষ্ট্র গুলোর শোচনীয় পরাজয় তার অন্যতম প্রমান। ৬ দিনের যুদ্ধে প্রথম ২ দিনেই আরব রা ৪০০ র বেশি যুদ্ধ বিমান হারায়, বিপরীতে ইস্রাইলের মাত্র ২৯। এসব পরিসংখ্যান আমাদের জন্য অনেক কষ্টের, তা বলাই বাহুল্য।
কিন্তু হঠাৎ একটা জিনিস দেখে মন ভাল হয়ে গেল, ২০০৬ সালের যুদ্ধে মহাপরাক্রমশালী ইস্রাইলী বাহিণি হেরে গেল সামান্য হেজবুল্লাহর কাছে।
হেজবুল্লাহ কারা?
হেজবুল্লাহ আরবী শব্দ। যার অর্থ আল্লাহর দল, লেবাননের একটি শিয়া জঙ্গী গ্রুপ। হেজবুল্লাহর জন্ম ১৯৮২ সালের লেবাননে ইস্রাইলী হামলা থেকে। গ্রুপ টি ইরান ও সিরিয়ার কাছ থেকে আর্থিক ও সামরিক সহয়তা লাভ করে। Iranian Revolutionary Guards তাদের প্রশিক্ষন দিয়েছে।
হিজবুল্লাহর মুলনীতি হল, তাদের দেশে ইস্রাইলী আগ্রাসন প্রতিরোধ করা।
এবার আসি মূল প্রসঙ্গে।
লেবানন যুদ্ধ ২০০৬
লেবানন যুদ্ধ জুলাই যুদ্ধ এবং ইস্রাইলীরা একে ২য় লেবানন যুদ্ধ হিসাবে অভিহিত করে। এটি ৩৪ দিন ব্যাপি সংগঠিত একটি যুদ্ধ। মুলত দুইটি পক্ষ হেজবুল্লাহ এবং ইস্রাইলী সামরিক বাহিণি এই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে, লেবাননের সামরিক বাহিণি এই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ থেকে বিরত থাকে।
১২ জুলাই লেবাননের হেজবুল্লাহর সশস্ত্র ব্যক্তিরা ইস্রাইলের সীমান্ত এলাকায় ইস্রাইলী বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে দু'জন ইস্রাইলী সৈন্যকে আটক করার পর , ইস্রাইল সরকার একইদিন রাতে সামরিক বাহিনীকে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। যাতে ইস্রাইলের উত্তরাঞ্চলের ওপর হেজবুল্লাহর হুমকি দূর করা যায় ।
হেজবুল্লাহর অস্ত্র গুল ছিল পুরনো আমলের কাতিউশা রকেট( Katyusha-122 ) ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপন যোগ্য ইরানে প্রস্তুত Fajr-3 ও Fajr-৫ মিসাইল, কাধে বহন যোগ্য ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপনাস্ত্র (Kornet ATG্AT-3 Sagger, AT-4 Spigot, AT-5 Spandrel, AT-13 Saxhorn-2 'Metis-M'), ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপন যোগ্য SA-7 ও SA-18 surface-to-air missile (SAM), চীনে তৈ্রি C-802 জাহাজ বিধ্বংসী মিসাইল (বাংলাদেশ নৌ বাহিনী ব্যাবহার করে), একে ফরটিসেভেন অ্যাসল্ট রাইফেল।
কাতিউশা কর্নেট মিসাইল
ইস্রাইল মারকাভা ট্যাঙ্ক , আর্মারড পার্সোনেল ক্যারিয়ার, অত্যাধুনিক প্রিসিশন গাইডেড বোমা, গুচ্ছবোমা, এফ ১৬ ও এফ ১৮ যুদ্ধবিমান ব্যাবহার করে।
শক্তি
ইস্রাইল হেজবুল্লাহ
৩০,০০০ সৈন্য, ১০,০০০ হেজবুল্লাহ যোদ্ধা
সাথে বিমান ও নৌ বাহিনী
ক্ষয় ক্ষতি
ইস্রাইল লেবানন
১২১ জন নিহত ৫০০জন নিহত
৬২৮ জন আহত ১৫০০ আহত
এই যুদ্ধে ইস্রাইলের গর্ব বেশ কয়েকটি মারকাভা ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয়।
এ ট্যাংক গুলোকে তারা বিশ্বের সেরা ট্যাংক হিসাবে দাবি করে।
১৪ আগষ্ট আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি হয়। ইস্রাইল সরকার সামান্য মিলিশিয়াদের কাছে পরাজয়ের জন্য ব্যাপক ভাবে সমালোচিত হয় নিজ দেশের জনগনের কাছে। তৎকালিন প্রধান মন্ত্রি এহুদ ওল্মার্টের পদত্যাগের দাবি ওঠে। হিজবুল্লাহ লেবানীজ দের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
ইস্রাইলী কমান্ডার গুই যুর এর মতে হেজবুল্লাহ: “by far the greatest guerrilla group in the world” ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।