চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হাউলি ইউনিয়াধীন রঘুনাথপুর গ্রামের ৫ সন্তানের জননী মরিয়ম (আমি তাকে ডাকলাম দাদি)। বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য ঠেঁকি শিল্পকে আঁকড়ে ধরে সংসারের ঘানি টানছেন। ৫০ বছর সংসার জীবন কাটানো সংগ্রামী নারী এ মরিয়ম দাদি ঢেঁকি থেকে নেমে মাথার ঘাম কাপড় দিয়ে মুছতে মুছতে বললেন, স্বামী মরেছে ৫ সন্তান রেখে। দু ছেলে ও ৩ মেয়ের বিয়ে হয়েছে। মেয়েরা স্বামীর গৃহে ঘর সংসার করছে।
জমিজমা নেই। ১ ছেলে স্ত্রী নিয়ে গ্রাম ছাড়া। আর এক ছেলে ছালাম বহুত ত্যাড়া (বখাটে) । আমার কাছে স্ত্রী ছেলেমেয়ে ফেলে রেখে ইচ্ছামতো চলাচল করে। পূত্রবধূ লতিফা দু সন্তানের জননী, একুলে তার কেউ নেই।
নিজের নুন আনতে পান্তা ফুরাই। পুত্রবধূ সন্তানদের নিয়ে স্রোতের শেওলার মতো ভেসে যাবে তাই তাদেরকে বুকে আঁকড়ে ধরে কোনো রকম অনাহারে অর্ধাহারে কাটিয়ে দিই বেলা। অভাব অনটনে যখন ৪ জনে মিলে মরতে বসছিলাম, তখন ইউনিয়ন থেকে আমি একটি ভিজিএফ’র কার্ড বরাদ্দ পায়। গ্রামের প্রতিবেশী হাবিবুর রহমান তার পড়ে থাকা ঢেঁকিটা দিয়েছে কাজ করার জন্য। গ্রামের লোকদের চালের আটা কুঁটে আর ধান ভেনে সেই সাথে পরের বাড়ির ঝিয়ের কাজ করে কোনো রকম দিনাতিপাত করছি।
নতুন ধান উঠলে আর ঈদ পব্বন এলে ঢেঁকির কাজ ভালোই হয়। গ্রামের মানুষগুলো সাহায্য সহযোগিতা করে এ জীবনগুলো বাঁচিয়ে রেখেছে। আমি গ্রামের লোকের কাছে দায়বদ্ধ । গ্রামের লোকদের সাহায্য সহযোগিতা না পেলে নাতিপুতি নিয়ে বাঁচাতে পারতাম না। ছেলেমেয়েদের মা ডাক শুনতে না পেলেও নাতি দুটির বুকের কাছে কান রেখে আমি শুনতে পায়, আমাকে তারা ডাকে আয় দাদি আয়।
তাদের আদরের ডাকে আমি ধন্য।
রঘুনাথপুর গ্রামের গৃহবধূ জুলেখা খাতুন বলেন, অসহায় এ মানুষটির কাজের হাতের ছোয়া বড়ই নিপুণ। গ্রামের আ. মালেক, মতিয়ার রহমান বলেন, মরিয়ম দাদি শুধু একজন গর্ভধারিণী মা ই নয় সে একজন গর্বিত শ্বাশুড়িও বটে। মরিয়ম দাদির সাথে কথা বলে মোটরসাইকেল চেপে বাড়ী ফিরতে ফিরতে মনে হলো এরা এখনো বেঁচে আছে দেখে আমি/আমরা ঢেঁকি নিয়ে দু,চার কথা লিখতে পারছি। সে দিন বেশী দুরে নেই যে দিন এই বাংলার ঐতিহ্য দেখতে যেতে হবে যাদুঘরে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।