আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Secrets: Words you tell everybody not to tell anybody!

সে অনেককাল আগের কথা। আমি নিজ যোগ্যতার তুলনায় একটু 'অতিরিক্ত' ভালো ফল করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি মাত্র। [এসব নিজের ঢোল বাজানোর জন্য বলছি না, ঘটনার সাথে সম্পর্ক আছে বলে বলছি। পাঠক ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ] গুণীজনেরা বলেন, অতিরিক্ত কিছুই ভালো নহে।

অতি হক কথা! যাই হোক, আমার দুর্ঘটনাবশত ভালো পরীক্ষার ফলাফল স্বরূপ একটা ভালো বিষয়ে ভর্তি হলাম, কিছু কিছু অজ্ঞ মানুষ আমাকে 'Admission Test Guru' মনে করে আমার কাছে নিয়মিত পরামর্শের জন্য ধর্না দেয়া শুরু করলেন (আল্লাহ তাদের হেদায়েত দান করুন, তাঁরা যদি এখন আমার রেজাল্ট দেখত!)। তা সত্যি বলতে কি, ওই সময় সস্তা খ্যাতি খুব একটা মন্দ লাগে নি। তাদের মধ্যে ছিলেন আমার কলেজের এক 'সুন্দরী রমণী'। তাঁর সাথে আমার বছরখানেকের মত যোগাযোগ ছিল না। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর হুট করে তিনিই আমার সাথে যোগাযোগ শুরু করেন, আমার থেকে ভর্তি সংক্রান্ত পরামর্শ নেয়ার উদ্দেশ্যে।

ওইসময় আমার একজন 'ইমোশনাল ব্যাগেজ' ছিলেন, যার দরুন 'সুন্দরী রমণী'কে পটানোর কোন ইচ্ছা ছিল না। আবার আমার 'ব্যাগেজ' আর 'সুন্দরী রমণী' ভালো বন্ধু ছিলেন, আমার দুই সতীনের ঘর করার কোন ইচ্ছাই ছিল না। তারপরও 'সুন্দরী রমনী' বলে কথা, তাকে অগ্রাহ্য করা কঠিন। কবি বলেছেন, "You are irresistible, natural, physical It's indefinable, magical, illogical!" তো আমার এক ক্লোজ বন্ধুনী ছিলেন, তিনি আমার সাথে সব শেয়ার করতেন। যেহেতু আমার লেখাটা কোন রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা না বা কারো কুৎসা গাওয়া বা সমালোচনা করা না, তাই আমি কারো নাম উল্লেখ করব না।

ধরা যাক আমার বন্ধুনীর নাম 'স'। তো আমার বন্ধুনীর সাথে আবার 'সুন্দরী রমণী'র এক জিগরী বান্ধবীর মাঝে মাঝে ফোনে বাক্যালাপ হত। ধরি ওই জিগরী বান্ধবীর নাম 'শ'। জনশ্রুতি ছিল সুন্দরী রমণীর নাকি ছেলে ঘুরানোর অভ্যাস। শ ছিলেন একজন Secret Keeper i.e. who tells secrets to everybody and make them swear not to tell anybody. তিনি আমার বন্ধু স কে বলে দিয়েছিলেন যে সুন্দরী রমণীর ওই সময়কার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেক-আপ হয়ে গেছে।

ওই সময়ের বলছি এই কারণে, জনশ্রুতি আছে ওর আগে এবং পরে তাঁর জীবনে আরও অনেক বয়ফ্রেন্ড এসেছেন এবং ভেগেছেন বা বিতাড়িত হয়েছেন। কবির ভাষায়, "এসেছে নতুন বয়ফ্রেন্ড তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান। " মজার ব্যাপার হল স কিন্তু শ কে পছন্দ করত না, কিন্তু অতি ভদ্র মেয়ে ছিল বলে কখনো সেটা বুঝতে দেয়নি। আর তাদের মধ্যে খুব মাখামাখিও ছিল না যে ব্রেক-আপের কথাটা বলতে হবে। অবশ্য শ-র পরবর্তী কীর্তিকলাপ বলে যে (সেটা পরে আরেকদিন বলব) তাঁর দর্শন হচ্ছে, "আমার এই সিক্রেট ছড়ানোতেই আনন্দ"।

তা শ যেখানে তাঁর জিগরী বন্ধুর গোপন কথা গোপন রাখেনি সেখানে আমার ক্লোজ বন্ধুনীর কেন দায় পড়েছে আমার কাছ থেকে সেটা গোপন রাখতে? তাঁর থেকে আমি জানলাম। সুন্দরী রমণী যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন সেখানে আমার এক 'সাবেক' বন্ধুও পড়তেন। আমি যেহেতু নিজেও দুর্বলচিত্তের ছিলাম, কথায় কথায় বলে ফেললাম, "সুন্দরী রমণীর নাকি ব্রেক-আপ হইসে?" হায়! কেন বলেছিলুম এই কথা? ওই সুন্দরী রমণীর সাথে দেখা হবার পর বন্ধুর প্রথম কথা ছিল, "অমুক, রিফাত বলল তোমার নাকি ব্রেক-আপ হইসে?" আফসোস! ওই বিশ্বাসঘাতকের মাথায় কেন 'ঠাডা' পড়ল না? সুন্দরী রমণী যে এসব জেনে গেছেন সেটা আবার আমি খবর পেলাম ব্যাগেজের মাধ্যমে। দিন যায় সুন্দরী রমণী আমাকে আর চার্জ করেন না। অবশেষে এলো সেই 'মাহেন্দ্রক্ষণ', যদিও তাঁর জন্য আমি অপেক্ষা করছিলাম বললে ডাহা মিথ্যে বলা হবে।

সুন্দরী রমণীর কাছে তখন ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না। আমায় ফোন করে তিনি বললেন, "আমার রেজাল্টখানা দেখ তো। " আমি গরুর গাড়ি চালিয়ে রেজাল্ট বের করলাম। জ্বি আপনারা ঠিকই পড়েছেন, গরুর গাড়ি। বিটিসিএল এর ডায়াল-আপ ইন্টারনেটের যে গতি, তাঁতে গরুর গাড়ি বলায় শ্রেয়।

ভয়ে আছি ঠেলাগাড়ি যে বললুম না, ঠেলাগাড়িরা না আবার অভিমান করে মামলা ঠুকে দেয়! সে যাক, আসল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। সুন্দরীর কপাল খারাপ, তিনি চান্স পাননি। তারপর সুন্দরী আমাকে অস্বাভাবিক ঠাণ্ডা গলায় পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে জানালেন তিনি আমার এই 'মহৎ কীর্তি' জেনে ফেলেছেন। আমি তাঁর পঞ্চম বয়ফ্রেন্ডের সাথে (বিশ্বস্তসূত্রে প্রাপ্ত খবর, সত্য মিথ্যা জানিনে) তাঁর বিচ্ছেদের ঘটনা তৃতীয় পক্ষকে জানিয়ে ফেলে মোটেই ভালো করিনি ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি আবার এদিকে ভুলে গেছি 'স' আমাকে এটা কাউকে বলতে না করেছিল কিনা।

আমি তখন ডাইরেক্ট ঝাড়ি খেয়ে কাতর, স-র সামনে ছোট হবার শোকে পাথর এবং 'সাবেক বন্ধু'র বিশ্বাসঘাতকতায় বাক্যহারা। আমার মোটা মাথায় একবারও আসলো না, ওর বন্ধু শ-ই তো আসল ভিলেন। আমি কেন একা একা স্বার্থপরের মত ঝাড়ি খাব? এ ঝাড়ি তো আমার একার নয়, এতে তো শ-র পূর্ণ অধিকার রয়েছে। সত্যি বলতে কি, শ কে এই অধিকারবঞ্চিত করার বেদনা আমায় আজও পোড়ায়। যেহেতু আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে দু'বারের বেশী পরীক্ষা দেবার সুযোগ নেই, ওইবারই 'সুন্দরী রমণী'র শেষ সুযোগ ছিল পরীক্ষা দেবার।

ওর পর আর তিনি আমার সাথে যোগাযোগ করেননি। অতি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত! তাঁর মত মল্লিকা শেরাওয়াত আমার মত নানা পাটেকারকে (যারা Welcome দেখেছেন তাঁরা বুঝবেন) দীর্ঘ ছয় মাস যে পাত্তা দিয়েছেন, মিষ্টি মিষ্টি 'Friendship is অমুক Friendship is তমুক টাইপের মেসেজ করেছেন', নিজে থেকে ফোন করে চিনির মত মিষ্টি গলায় বাক্যালাপ করেছেন সেটা কি যথেষ্ট নয়? ইয়াত্রী ব্যান্ডের ভাষায়, "এই কি বেশী না?" তাছাড়া দেশের চলমান সংস্কৃতি তো মেনে চলতে হবে, যেখানে পুরুষজাতি সুন্দরী রমণীর পেছন পেছন ছুটবে। সেখানে সুন্দরী আমার পেছনে কোন কারণ ছাড়া ঘুরবে এটা মাথায় আনাও আবহমান সামাজিক পরম্পরার ওপর অশ্রদ্ধা এবং অবজ্ঞা প্রদর্শনের শামিল। এর দায় তো আমাকে মাথা পেতে নিতেই হবে! সবশেষে শ কে একটি কথা বলে শেষ করতে চাই। কবি বলেছেন, "দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ।

" ভাবছি তোমায় মুখ্যচরিত্র করে একটা লেখা বের করলে ঋণ পরিশোধ হবে কিনা। ভাবছি। [ওপরের ঘটনা সম্পূর্ণ সত্য। কাল্পনিক কোনকিছুর সাথে এর কোন মিল থাকলে তার দায় লেখকের নয় ] ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।