মেঘের অশ্রু বৃষ্টি যেখান থেকে আমার যাত্রা শুরু হয়েছে সেখানে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। বলা যায় জীবনটা একমুখী, এ ওয়ান ওয়ে রোড দ্যাট ওনলি গোস ফর ডেথ। মৃত্যু নিয়ে একেকজনের ভাবনা একেকরকম। বেশির ভাগ জীব-ই জানে না তার মৃত্যুর পর কি অপেক্ষা করছে। আমাদের দর্মের বইগুলো আমাদের পূনর্জন্ম বা শেষ বিচারের কথা শোনায়।
তবে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে এসে পৌছুতে পারি না। জীবনের ব্যপ্তিকাল নিয়েও আমাদের কম বেশি অসন্তুষ্টি আছে। আমাদের সৃষ্টির যথার্থতা আমাদের বেঁচে থাকার আকাংখাকে দুর্বল করে দেয়।
আমাদের জীবনের শুরু টা বেশ ভয়াবহ। জন্মের বা সৃষ্টির শুরতে আমরা থাকি খাঁচা-বন্দী।
এর পর আমাদের কি করতে হবে বা কোথায় যেতে হবে তা আমরা জানি না। এই যাত্রা পথে আমরা অনেককেই দেখি ইতস্তত চলছে, কেউ শুরুতেই থেমে থাকে। ধরে নিন অনেকটা আনলোড করে দেয়া হয় আমাদের। এত দিন ধরে বেড়ে ওঠা খাঁচা থেকে যখন জোর করে বের করে দেয়া হয় তা আর মেনে নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না। আমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে ভীরু সে সবার পিছনে গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকে।
জন্মের আগে আমরা অনেক রুপকথা শুনের বড় হই। অনেক রাক্ষস খোক্ষসের গল্প শুনে আমরা আতংকিত হই অনাগত ভবিষ্যতের কথা ভেবে। সেই সব গল্পে সার্কাসের কথা বলা থাকে যেখানে নানা রকম খেলা চলে। খেলাজুড়ে থাকে বিনোদন, থাকে শঙ্কা। সেই আপকামিং শঙ্কারা ভয়ার্ত করে তুলে আমাদের শৈশবকে।
গল্পে আরও থাকে ভাগ্যের কথা,খুবই কনফিউসিং বিষয়। বলা হয় তোমার ভাগ্য হতে পারে কন্টকাকীর্ণ,হতে পারে ফুলসজ্জিত, হতে পারে কোন মমতাময়ী কারো হাতে জীবন গল্পের শুরু অথবা ভেসে যেতে পারে উত্তাল জলোচ্ছ্বাসে। কেউ কনক্রিটে এসে মুখ থুবরে পড়বে, আর কারো হয়তো কখনোই দেখা হবে না পৃথিবী। এভাবেই পার করে দিবে হাজার বছর। আমরা আরো গল্প শুনি আমাদের বিকলাঙ্গতার, ভয় পাই, কাঁদি, শান্তনা দেই নিজেকে এই ভেবে যে আমাদের সেই ভাগ্য বরণ করতে হয়নি।
এ গলি ও গলি, মেঠোপথ ধরে হেঁটে চলছে সবাই। এদের বেশির ভাগেরি জানা নেই গন্তব্য, তবুও কারো থেমে থাকেনি পথ চলা। লাল, নীল বিভিন্ন রঙয়ের মেলা চারিদিকে। এই পথের কথা রুপকথার গল্পে বলা ছিল। আমার স্পষ্ট মনে আছে রাজপ্রাসাদ আর রাজকন্যার গল্প।
রাজপ্রাসাদের ঢুকার সৌভাগ্য সবার হয় না। তবুও রাজপ্রাসাদ আর রাজকন্যার কথা ভেবেই স্বপ্ন দেখে লোকে। আমাদের মাঝে আছে কানা, খোঁড়া, বধির লোকের দল, এরাও ছুটে চলছে রাজবাড়ি। এভাবে কত পথ হাঁটলাম জানি না। এক সময় নিজেকে আবিষ্কার করলাম রাজপ্রাসাদের সদর দরজায়।
সুবিশাল এই স্থানে এসে মাথা ঘুরে উঠে। দূর থেকে হাজারো জনের ভীরে কিছুই দেখা যায় না। সবাই বলাবলি করছে হচ্ছেটাকি। উৎসাহী কিছু লোক লাফিয়ে লাফিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে কি ঘটছে। চারপাশে ঘুর ঘুর করে দেখতে পেলাম এই একটি পথ নয় আরো হাজারো পথ এসে মিশেছে এখানে।
এরি মাঝে কিছু লোক এক কোনে মিটিং করছে, স্বৈরাচারী শাসকের পতন চাই, আরো কত হাবিজাবি। দূরে যুবক-বয়সী কিছু ছেলে রাজকন্যাকে নিয়ে তাদের প্ল্যান করছে। একে অপরকে নিয়ে চলছে হাসি ঠাট্টা। হটাত ভীরের ভেতর থেকে কেউ একজন বলে উঠলো তারা প্রাসাদের দেয়াল ভাঙ্গবে। একে অপরের হাত ধরে এগিয়ে এলো অনেকেই।
কেটে যাচ্ছে সময়, আশাবাদীদের ভিড় তবুও কমছে না। আন্দোলন একসময় নিস্তেজ হয়ে আসলো। তখনি রাজমাতা ঘোষণা দিলেন পাত্রকে কন্যা নিজেই বেঁচে নিবে। উৎসাহে ফেটে পড়লো যেনো আজ তাদের পুরুষত্বের পরীক্ষা আজ হয়ে যাবে, এটাই তো চাই। আরো অনেক রকম গুঞ্জন চলল কিছুক্ষন।
কেউই বুঝতে পারলো না প্রাসাদের ভিতর থেকে তাদের দেখার কোন ব্যবস্থা তো দেখছি না, বাছাই হবে কিভাবে? নিশ্চয়ই কোথাও ফুটো আছে, কেউ যদি ফুটো খুঁজে পায় তাকেই ভিতরে নিয়ে যাবে। সার্কাস ভালোই জমেছে।
হাসি পেয়ে গেলো আমার। আজ তবে রাজকন্যাকে ছিনিয়ে নিবে কেউ, হয়তো নেতা গোছের ছেলেটিকেই অথবা নির্বিষ গোবেচারা ঐ লোকটা। তাকে নিয়ে যাবে ঘরে।
ঘর? আমাদের তো কোনো ঘর নেই, সেই যে কখন বেরিয়েছি খাঁচা থেকে। রুপকথার গল্পে সবসময় জয়ীদের গল্প থাকত। মনে পড়লো না এমন কারো কথা যারা খালি হাতে ফিরেছে। কোথায় যাবে তারা। এখান থেকে আমাদের ফিরে যাবার পথ জানা নেই।
আমার ভিতর চঞ্চলতা অনুভব করছি। মাথার ক্যাপটা ভালোভাবে ঝেড়ে নিয়ে খুঁজে চলি স্বপনের পথে। এখানে কারো সময়ের কথা মনে আসে না। এমনই সময় কোনো এক জায়গায় ভীড় দেখতে পেলাম। বোধহয় কেউ সত্যি সত্যি ফুটো পেয়ে গেছে।
ওদিকে তাকাতে তাকাতে মাথায় তীব্র ব্যাথা অনুভব করলাম, হয়ত জ্ঞান হারিয়েছি। যখন চোখ খুললাম তখন আশে পাশে কাউকে খুঁজে পেলাম না। সবাই কি আমায় ফেলে গেলো। কাউকে দেখছি না। শুধু একটা মৃদু গন্ধ।
মনে পড়ল ফুটো খুজতে গিয়ে এখানে চলে এসেছি।
ছোট্ট একটা গলি ধরে কিছুদুর এগিয়ে দেখি পথের দু ধারে সরু খাল বইছে। সুদৃশ্য কিছু টানেলে লাল, কালো জলের আনাগোনা। গন্ধের উৎস খুঁজে খুঁজে চলে এলাম অন্য কোথাও। এখানে কোন ভীড় নেই, নেই ভীতি, ভুলে গেলাম বিগত সব সময়ের স্মৃতি।
শৈশব, কৈশোর এখন আর নাড়া দিচ্ছে না। চোখের সামনে একটা সাজানো ঘর দেখতে পাচ্ছি। আমার মনে হল এই ঘরে পৌছাবো বলেই আমার জন্ম হয়েছে। বাইরের ঘরের প্রহরী ক্লান্ত আমার মাথা থেকে খুলে নিলো ক্যাপ। পুরো ঘর জুড়েই আমাকে স্বাগত জানানোর সব বন্দোবস্ত করা আছে মনে হলো।
আমি ভুলে গেলাম পিছনে ফেলে আসা শত সহস্র প্রাণের কথা, যাদের অনেকেই এখানে থাকার কথা আমার জায়গায়। সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে ঢুকে গেলাম রাজকন্যার ঘরে। আজই হয়ত পড়া হয়ে যাবে স্বর্ণ-মুকুট পড়া। তার কোলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়লাম আমি। আমি আর সে মিলে আমরা হলাম।
জ্যামিতিক হারে বেড়ে গেলো ভালোবাসা। শুরু হয় গেলো অন্য এক গল্প।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।