আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া কিছু প্রতারণার ঘটনা। সবাই সাবধান।

আমি এই ব্লগ সমুদ্রে একফোটা জলকণা মাত্র। সবার সহযোগিতা পেলে হয়ত ভাল কিছু করার উৎসাহ পাব। নিন্মের ঘটনাগুলো পড়লে এদের থেকে সাবধান হবার বিষয়ে সচেতনতা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আমি মনে করি। এক. আপনি হয়তো রিকশায় চেপে কোথাও যাচ্ছেন। হাতে সিগারেট।

ছাই ফেলছেন রাস্তার এপাশ-ওপাশে। আর আপনার সেই পথটি যদি হয় কোনো অলিগলি বা ছোট রাস্তা তাহলে তো টাউটদের জন্য সেটা হবে মোক্ষম স্থান। হঠাৎ দেখবেন, হাত দিয়ে তার এক চোখ চেপে ধরে আপনার দিকে আরেক চোখে অগি্নদৃষ্টিতে তাকিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেছে কেউ। আপনাকে ঘিরে ধরবে আশপাশের লোকজন। 'বাবাগো-মাগো' বা 'চোখ গেল, চোখ গেল' বলে যে ব্যক্তিটি চিৎকার করছে তার অভিযোগ, আপনার হাতের জ্বলন্ত সিগারেট থেকে আগুন খসে গিয়ে উড়ে এসে তার চোখে পড়েছে।

মর্মাহত হবেন আপনি। রিকশা থেকে নেমে সান্ত্বনা দেবেন নিছক ভদ্রতার খাতিরে। পথচারীবেশে ওই চক্রেরই কয়েকজন এসে আপনাকে উপদেশ দেবে, ভাই গলির ওপাশে একটা ডাক্তারের চেম্বার আছে, দ্রুত সেখানে নিয়ে যান তাকে। আপনি তাদের পরামর্শ, ওই ব্যক্তির কান্নাকাটি আর বিবেকের তাড়নায় বাধ্য হয়ে সেটাই করবেন। ব্যস, গলির মধ্যে ঢোকামাত্রই যা ঘটার ঘটে যাবে।

আপনার কাছে যা ছিল, সব খুইয়ে শূন্যহাতে গলি থেকে বের হতে হবে। একেবারেই যে শূন্য হয়ে ফিরবেন, তা নয়। যেটা নিয়ে ফিরবেন, সেটা হচ্ছে একটা বিশেষ অভিজ্ঞতা। দুই. অনেক দিন আগে পাবনার সাঁথিয়া থানা এলাকায় ঘটে যাওয়া এক ঘটনা। কারিগর সম্প্রদায়ের সহজ-সরল হাবাগোবা এক ছেলে।

হাবাগোবা হওয়ার কারণে মা-বাবা তাকে দেখতে পারতেন না। বাবার অঢেল অর্থ। ছেলেকে ব্যবসায় বসিয়েছিলেন বাবা। বাকিতে বিক্রি আর অসহায় মানুষদের দান করতে করতে দোকানের মালামাল শূন্য করতে তার এক মাসের বেশি সময় লাগেনি। একদিন এই হাবাগোবা ছেলেটাকে পেয়ে বসল এলাকার কয়েক টাউট যুবক।

টাউটরা তাকে বলল, 'তুই বিদেশে চলে যা, অনেক টাকা আয় কর, দেখবি মা-বাবা তোকে অনেক আদর করবে। ' হাবা ছেলে জানতে চাইল, বিদেশে যাওয়ার টাকা সে পাবে কোথায়। এবার টাউটদের পরামর্শ, 'মায়ের স্বর্ণালংকার চুরি কর। আমেরিকায় গিয়ে টাকা রোজগার করে এক মাসেই তুই তোর মাকে দ্বিগুণ স্বর্ণালংকার বানিয়ে দিতে পারবি। ' ছেলে মায়ের সিন্দুক থেকে ২২ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করে এনে দিল টাউটদের হাতে।

টাউটরা বলল, এই স্বর্ণ বিক্রি করে যে টাকা আসবে তাতে হবে না। আরো টাকা লাগবে। শেষ পর্যন্ত হাবাকে টাউটরা জানাল, বন্ধু মনে করে তারাই তাকে চার লাখ টাকা ধার দেবে। আমেরিকায় গিয়ে হাবা যাতে তাদের এই চার লাখ টাকার বিনিময়ে পাঁচ লাখ টাকা শোধ করে, সেটাও তারা শপথ করিয়ে নিল। হাবাকে নিয়ে টাউটরা পেঁৗছল ঢাকায়।

উঠল হোটেলে। পাসপোর্ট বানাল জরুরি। একদিন বিমানবন্দরে গিয়ে তাকে প্লেনেও চাপিয়ে দিল। যাওয়ার আগে মনে করিয়ে দিল, তাদের টাকা পরিশোধ করতে যেন ভুলে না যায়। আরো বলে দিল, বিমানে কারো সঙ্গে যেন সে কথা না বলে।

কেউ জেনে গেলে বিমান ঘুরিয়ে তাকে ফেরত আনা হবে। বিমান অবতরণ করল বিমানবন্দরে। অন্য যাত্রীদের সঙ্গে নামল হাবা ছেলেটাও। হাবা হলেও তার মনে একটা প্রশ্ন জাগল, 'আমেরিকার এয়ারপোর্ট এত ছোট কেন?' পরে বাইরে এসে দেখল লেখা রয়েছে, ঈশ্বরদী বিমানবন্দর, পাবনা। হাবা বুঝতে পারল সে ভুল করে ফেলেছে।

কিন্তু বাসায় ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। ঈশ্বরদী রেলস্টেশন এলাকার এক আবাসিক হোটেলে উঠল হাবা। পরদিন বিকেলে দেখা হলো টাউটদের একজনের সঙ্গে। ওই টাউট হাবাকে জানাল, 'তোকে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে এক বিমান আর তুই গিয়ে উঠলি আরেক বিমানে। এ কারণেই আমেরিকার বদলে তুই পেঁৗছলি ঈশ্বরদীতে।

' তাকে আরো জানানো হলো, তার মা-বাবা ঘোষণা দিয়েছেন হাবাকে যদি কেউ জীবিত ধরে আনতে পারে তাহলে এক লাখ টাকা আর মৃত ধরে আনতে পারলে দুই লাখ টাকা পুরস্কার দেবেন তাঁরা। এই খবর জেনে হাবা ঈশ্বরদী থেকেও পালাল। যেখানেই সে যাক, এলাকার কাউকে দেখলেই সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। ছয় মাস পর পাবনা শহর থেকে তাকে ধরে ফেলল এলাকার কয়েকজন। অনেকটা জোর করে আনা হলো বাড়িতে।

হাবাকে হারিয়ে মা-বাবা পাগলপ্রায় ছিলেন। তাঁরা হাবাকে বুকে টেনে নিলেন। ভয় কেটে গেল হাবার। ঘটনা খুলে বলল সে মা-বাবাকে। এরপর গ্রাম্য সালিসে এর বিচার হলো।

টাউটরা কিছু ক্ষতিপূরণ দিল। হতে পারে এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু সত্য যে এই ধরনের প্রতারণা থেমে নেই আজও। তিন. ম্যারেজ মিডিয়া ব্যবসার নামে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে চলছে প্রতারণার রমরমা ব্যবসা। এসব প্রতিষ্ঠানের অ্যালবামে যেসব ছেলেমেয়ের ছবি থাকে তার প্রায় সবই তাদের চক্রের সদস্য।

নানা আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা এই প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব ক্ষেত্রে দর্শকের ভূমিকা পালন করছে রহস্যজনক কারণে। অনেক সময় গোপনে বিয়েও পড়ানো হয়। আর বিয়ের রাতে স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া স্বর্ণালংকার নিয়ে পরদিনই চম্পট দেয় কনে। তারা সাধারণত বেছে নেয় সেই সব পুরুষদের, যারা প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে আমেরিকা-কানাডার গ্রিনকার্ডধারী আর বড়লোকের মেয়েকে দ্বিতীয় বিয়ে করে ওই দেশে পাড়ি জমানোর স্বপ্ন দেখে।

আর ধরা খাওয়ার পর তারা লজ্জায় আইনের সহায়তাও নিতে চায় না। চার. টিউশন মিডিয়ারও একই অবস্থা। রাজধানীতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। পত্রিকা খুললেই ম্যারেজ মিডিয়ার মতো তাদের বিজ্ঞাপনও চোখে পড়বে। গৃহশিক্ষকতা পেতে সাধারণ কলেজের ছাত্ররা নিজেদের পরিচয় দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের ছাত্র হিসেবে।

মিডিয়াগুলোও তাদের এভাবেই পরিচয় করিয়ে দেয় ছাত্রছাত্রীর অভিভাবকের কাছে। আর এর বিনিময়ে ওই শিক্ষক টিউশনি করে প্রথম ছয় মাসে যে বেতন পাবে তার অর্ধেক দিতে হয় ওই সব প্রতিষ্ঠানকে। এ ব্যাপারে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের বক্তব্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের ছাত্র ছাড়া কেউ গৃহশিক্ষক রাখতে চায় না বলেই তারা এই প্রতারণা করে আসছে। প্রতারণা করলেও তাদের মাধ্যমে অনেকে শিক্ষক পাচ্ছে। পাঁচ. সিনেমা হলে গেছেন ছবি দেখতে।

টিকিট কাউন্টারের সামনে প্রচণ্ড ভিড়। এক তরুণী এসে আপনাকে বলল তাকে একটা টিকিট কিনে দিতে। ভাবলেন, আসলেই এই ভিড় ঠেলে তার পক্ষে টিকিট কাটা সম্ভব নয়। আপনাদের বসার সিট পড়ল পাশাপাশি। আপনি হয়তো একমনে সিনেমা দেখছেন, এ সময় আপনার পাশে বসা তরুণীটি ফিসফিসিয়ে বলে উঠবে, 'আপনার কাছে মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ বা পকেটে থাকা নগদ টাকা, ঘড়ি, স্বর্ণের আংটি-চেইন যা আছে সব ভদ্রমানুষের মতো দিয়ে দিন।

নইলে চিৎকার করে সবাইকে জানাব, আপনি আমার শরীরে হাত দিয়েছেন। ' এবার ভাবুন, আপনার অবস্থাটা কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে। আপনি যে বের হয়ে আসবেন, সেটাও পারবেন না। কারণ মেয়েটা চিৎকার করে উঠবে। বাধ্য হয়ে আপস করেই আপনাকে বের হয়ে আসতে হবে।

আপস হলেও আগে মেয়েটি বের হয়ে যাবে। এর কিছুক্ষণ পর বের হবেন আপনি। আর এই ঘটনার কথা বলবেনই বা কাকে? ছয়. গত ২৭ আগস্ট সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পাইকারি শাড়ি-লুঙ্গি ব্যবসায়ী মনোজ পোদ্দার সুতা কিনতে ঢাকায় আসেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তিনি গুলিস্তান দিয়ে হাঁটছিলেন। এ সময় বাচ্চা কোলে শাড়ি পরা এক যুবতী তাঁর কাছে এসে করুণ সুরে ফিসফিসিয়ে বলে, 'ভাই, বিপদে পড়েছি।

শাড়িটি খুলে পড়ে যাচ্ছে। লজ্জায় বলতেও পারছি না। যদি বাচ্চাটিকে একটু ধরেন তাহলে ঠিক করে নিতে পারি। ' করুণ আকুতি দেখে বাচ্চাটিকে কোলে নেন মনোজ। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটি উচ্চৈঃস্বরে কাঁদতে শুরু করে।

কয়েকজন লোক এসে ঘিরে ধরে তাদের। মেয়েটি জানায়, সে মনোজের স্ত্রী। তিন বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। এর পর থেকে মনোজ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কোলের বাচ্চাটি মনোজেরই।

মনোজ বিপদ আঁচ করতে পেরে বাচ্চাটিকে মেয়েটির কোলে দিয়ে চলে যেতে চাইলে লোকজন ধরে ফেলে এবং টেনেহিঁচড়ে পাশের গলিতে নিয়ে যায়। এরপর গণধোলাইয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন মনোজ। জ্ঞান ফেরার পর দেখেন, তাঁর কাছে থাকা এক লাখ ৩০ হাজার টাকা, মোবাইল ফোন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কিছুই নেই। মনোজ পোদ্দার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার ৪৫ বছর বয়সের জীবনে এ রকম প্রতারণার ঘটনা দেখা দূরে থাক, শুনিওনি। ' সাত. ম্যাগনেটের পিলার।

এই মহামূল্য বস্তুর বিকিকিনির নামে চলছে প্রতারণা। প্রাচীন মুদ্রা বা ধাতুর বস্তুটির বিষয়ে প্রতারকরা বলে, এটি মূল্যবান। অনেক কাজে লাগে। বিক্রি হয় বিদেশে। এই প্রচারণায় ম্যাগনেটের পেছনে ছুটে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক স্বপ্নবিলাসী মানুষ।

কখনো শিকার হচ্ছেন বড় ধরনের প্রতারণার। এমনই একজন টঙ্গীর আকর্ড ওয়াশিং লিমিটেডের মালিক খন্দকার মোহাম্মদ মান্নানের সঙ্গে পরিচয় হয় কয়েক ব্যক্তির। তারা মান্নানকে জানায়, ম্যাগনেটের পিলার পেয়েছে। এই পিলার মান্নানের কাজে লাগবে। তিনি বিক্রি করতে পারবেন অনেক বেশি দামে।

চালচলন ও বেশভূষা দেখে মান্নান বিশ্বাস করেন ওই ব্যক্তিদের। কথা অনুযায়ী কাজ। গত ৫ এপ্রিল তাদের কাছ থেকে একটি ম্যাগনেট কিনছিলেন মান্নান। মান্নানের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সময়ই সেখানে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অভিযান চালায় ওই প্রতারকচক্রেরই আরেক গ্রুপ। 'ডিবি' পরিচয়েই মান্নানের কাছ থেকে ৪৮ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা।

এই ঘটনায় ৬ এপ্রিল টঙ্গী থানায় মামলা করেন মান্নান। গত ৬ মে রাজধানীর সাতরাস্তার মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই প্রতারকচক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আট. গত ২৩ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়ার বাসিন্দা রহমত আলী ফার্মগেট হলিক্রস স্কুল মোড়ে বাসায় যাওয়ার জন্য রিকশা খুঁজছিলেন। ২৫-৩০ বছরের এক যুবক তাঁকে কাগজে মোড়ানো একটি সোনালি রঙের বস্তু দেখিয়ে বলে, 'ভাই দেখেন তো এইটা কী? আমি রাস্তায় পাইলাম।

' রহমত কিছু বোঝা বা বলার আগেই পাশ থেকে আরেক যুবক বলল, 'আরে এইটা তো গোল্ড। সোনার বার। ' সহজ-সরল চেহারার ওই যুবককে হাত ধরে টেনে এক পাশে নিয়ে অন্য যুবক বলে, 'তুমি এইটা দিয়া কী করবা? আমারে দিয়া দেও। দুই হাজার টাকা দেব। ' কিছুক্ষণ কথা বলার পর অন্য যুবকটি চলে যায়।

চুল এলোমেলো ওই যুবক বস্তুটি নিয়ে আবার রহমতের কাছে যায়। বলে, 'ভাই আসলেই কি এইটা সোনা? ওই লোকটারে আমার বিশ্বাস হয় না। ' এবার রহমত বস্তুটি হাতে নিয়ে দেখেন। তাঁর কাছেও মনে হচ্ছিল, বস্তুটি সোনাই হতে পারে। লোকমান নাম এবং বরগুনায় বাড়ি পরিচয় দিয়ে ওই যুবক বলে, 'ভাই, আমি তেজগাঁও স্ট্যানে (ট্রাকস্ট্যান্ডে) আইছিলাম।

বাড়ি চইলা যামু। আপনি কি আমার এইটা একটু বেইচা দিবেন। ' রহমত একটু উৎসাহী হলেন। খুঁজতে লাগলেন দোকান। কিন্তু লোকমান ওই সময় জানায়, তার দ্রুত যেতে হবে।

একপর্যায়ে লোকমান প্রস্তাব দেয়, 'ওই লোকটা দুই হাজার ট্যাকা কইছে। আপনি ওই ট্যাকা দিয়াই রাইখা দ্যান। গরিব মানুষ, কপালে নাই। ' রহমত দেখলেন, তাঁর কাছে আছে এক হাজার ৪০০ টাকা। বলেন, 'ভাই, আমি তো এত টাকা দিতে পারব না।

এক হাজার টাকা দিব। ' লোকমান বলে, 'না ভাই, তাইলে একটু দোকানে নিয়া চলেন। আপনারে আমি নাশতা-পানির টাকা দিব। ' এবার রহমত ভাবলেন, সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে। বললেন, 'ঠিক আছে, আরো ৪০০ টাকা দেই।

আর টাকা নাই। ' লোকমান একটু হাসি দিয়ে বলল, 'ঠিক আছে, দেন। তাড়াতাড়ি যাইতে হইব। ' লোকমান বারটি রহমতের হাতে দিয়ে দেয়। টাকা দিতে গিয়ে রহমত বলেন, 'যদি কোনো ঝামেলা হয়, তোমারে কোথায় পাব, ভাই?' লোকমান বলে, আমার নম্বর নেন।

একটি মোবাইল ফোন নম্বর বলে দ্রুত ভিড়ে মিলিয়ে যায় লোকমান। এরপর বাসায় না গিয়ে স্বর্ণকারের দোকানে যান রহমত। সেখানে গিয়ে পরীক্ষা করলে দোকানদার জানান, এটি একটি ধাতুর বস্তু, সোনা নয়। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ফোন নম্বরটি বের করে কল করেন রহমত। তবে দেখেন নম্বরে একটি ডিজিট কম আছে।

এই ঘটনাটি রহমতের রিকশাচালক সিদ্দিকের কাছ থেকে জেনে এই প্রতিবেদক যোগাযোগ করেন রহমতের সঙ্গে। তিনি জানান, এ ঘটনায় কোথাও কোনো অভিযোগ করেননি। বলেন, 'এটা আমার বোকামির ফল। অভিযোগ দিয়ে কী হবে?' নয়. পল্লী চিকিৎসক আবদুল খালেকের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার সলোঙ্গা থানার আঙ্গুরা গ্রামে। এলাকায় সবাই তাঁকে খুব চালাক বলেই জানেন।

গ্রামে বসবাস করলেও সব সময় শুদ্ধ চলিত ভাষায় কথা বলেন এই চিকিৎসক। দিনভর প্রতিবেশীদের জ্ঞান-উপদেশ দিয়ে বেড়ানো এই ব্যক্তিও রাজধানীতে এসে নিজেই প্রতারণার শিকার হন। ২০০৯ সালের মার্চ মাস, পিলখানায় বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনার কিছুদিন পর ঢাকায় আসেন আবদুুল খালেক। রাত ৮টার দিকে আজিমপুর চায়না বিল্ডিংয়ের সামনে তরমুজ কিনছিলেন তিনি। এ সময় একজন তাঁর কাছে এসে বলে, 'স্যার যে আপনাকে এতক্ষণ ধরে ডাকছেন, শুনতে পাননি? বাড়ি কোথায় আপনার? কী করেন আপনি?' খালেক তাঁর পরিচয় দিলে ওই ব্যক্তির সঙ্গে থাকা একজন মোবাইল ফোনে কথা বলে, 'স্যার, বর্ণনা ঠিক আছে।

কিন্তু নাম-পরিচয় মিলছে না। আচ্ছা, আরেকটু কথা বলে দেখছি। ' ওই দুই ব্যক্তি নিজেদের সিআইডি অফিসার পরিচয় দিয়ে বলে, বিডিআর বিদ্রোহের পর আজিমপুর এলাকায় সিআইডির টহল জোরদার করা হয়েছে। খালেক সন্দেহভাজন। তাঁর দেহ তল্লাশি করা হবে।

এ কথা শুনে কিছুটা ঘাবড়ে যান খালেক। তারা খালেকের দেহ তল্লাশি করে দুই হাজার টাকা ছাড়া আর কিছু পায় না। টাকা খালেককে ফেরত দিয়ে আবার মোবাইলে কাকে যেন বলে, 'স্যার, জাল নোট পেলাম না। কী বললেন? রাইট স্যার। যে নোটগুলো পেয়েছি সেগুলোর নম্বর লিখে রাখছি স্যার।

আপনার কাছে তাঁকে পাঠাব, স্যার? জি স্যার, এখনই পাঠাচ্ছি। এরপর একজন টাকা হাতে নিয়ে নম্বর বলতে থাকে, আরেকজন তা লিখতে থাকে। এরই ফাঁকে একজন খালেককে বলে, 'সামনের ওই মাইক্রোতে স্যার বসে আছেন। আপনাকে ডাকছেন। আপনি যান, কথা বলে আসুন।

স্যারকে গিয়ে সালাম দিয়ে কথা বলবেন। তিনি অনেক বড় অফিসার। ' দুই ব্যক্তি টাকার নম্বর কাগজে লিখতে থাকেন। খালেক সামনের দিকে এগিয়ে যান, স্যারকে সালাম দিতে। কিন্তু গিয়ে দেখেন, সেখানে কোনো মাইক্রোবাস নেই।

স্যারকে না পেয়ে ফিরে আসেন খালেক। এসে দেখেন ওই দুই ব্যক্তিও নেই। খালেক গ্রাম্য জ্ঞানী। এর পরও তিনি কাউকে কিছু না বলে সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন। প্রায় আধ ঘণ্টা পর তিনি পাশের তরমুজ বিক্রেতার কাছে জানতে চান, স্যাররা কোথায় গেছেন? এভাবেই ঘটনাটি ছড়িয়ে যায় আশপাশে।

ছুটে আসেন পুলিশের লালবাগ জোনের তৎকালীন ডিসি আনোয়ার হোসেন, আসেন থানার ওসি। তাঁরা খালেকের সঙ্গে বথা বলেন। তাঁকে পেলেন। কিন্তু পাওয়া গেল না সেই প্রতারকদের। দশ. রাস্তায় বোরকা পরা কোনো মহিলাকে দেখলেন স্বামী-সন্তান নিয়ে দাঁড়িয়ে হাত পাতছে।

তাদের পরনের পোশাক-পরিচ্ছদও দামি। চেহারাটাও ভিক্ষুকের মতো নয়। তাদের ভাষ্য, 'গ্রাম থেকে আত্মীয়ের বাসায় আসছিলেন। বাসা খুঁজে পাচ্ছেন না। প্রতারকরা তাদের টাকা ভর্তি ব্যাগও ছিনিয়ে নিয়েছে।

এখন না খেয়ে আছে। বাড়ি ফেরার ভাড়া নেই। কিংবা এ রকমই অন্য কোনো কিছু বলবে তারা। আপনি সহজ-সরল। ভাববেন, আসলেই বিপদে পড়েছে তারা।

আপনি তাদের সহায়তা করলেন। খাওয়াদাওয়া, বাড়ি ফেবার বাসভাড়া সবই দিলেন তাদের। কিন্তু একবারও ভাবলেন না আপনি কিন্তু নিজের সরলতায় অজান্তেই প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে ধরা খেলেন। অনেকেই জানেন এসব প্রতারণার ঘটনা। কিন্তু কমছে না এর কোনোটাই।

এগারো. রাস্তায় লাশ শুইয়ে কাপড় দিয়ে ঢেকে কান্নাকাটি করছে এক মহিলা। লাশের পাশের আগরবাতি-গোলাপজল সবই আছে। মহিলা পথচারীদের কাছে অর্থ-সাহায্য চাইছে লাশ বাড়ি নিয়ে গিয়ে দাফন করার জন্য। স্বামী এত দিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল, সকালে মারা গেছে। টাকা যা ছিল, সব শেষ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে।

লাশ দেখে কার না চিত্ত উদার হয়। কিন্তু একবার অনুসরণ করলেই দেখবেন, তারা একটি পেশাদার চক্র। দাফন করার সামর্থ্য নেই এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে এনজিওর সদস্য পরিচয় দিয়ে লাশ নিয়ে আসে কবর দেওয়ার কথা বলে। এরপর চলে এই ব্যবসা। কিংবা পথের ধারে কেউ মরে থাকলে হাসপাতালে বা আঞ্জুমানে নেওয়ার কথা বলে পথচারী সেজে এই চক্রের সদস্যরা লাশ নিয়ে আসে।

লাশ হয়তো একসময় ঠিকই আঞ্জুমানে যায়, তবে এর আগে এই চক্র জমজমাট ব্যবসা করে নেয়। উপরের সত্য ঘটনাগুলো আজকে জাতীয় দৈনিক কালের কন্ঠ থেকে নেওয়া। সবাইকে সর্বদা সাবধান হতে অনুরোধ করছি। ধন্যবাদ।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।