এ কাহিনী গতরাতে আমার বন্ধু সুমনের কাছ থেকে শোনা। বন্ধুর বাড়ি নাটোর। কাহিনীও নাটোরের। জগদিশ বাবুর ছয় ছেলে মেয়ে। পেশায় শিক্ষক জগদীশ বাবুর পরিবারটি নাটোরের আলোচিত একটি পরিবার।
জগদীশ বাবুর ছয় সন্তানের মধ্যে চার ছেলে দুই মেয়ে। ছয়জনের প্রত্যেকেই কোনো না কোনো দিক থেকে অনন্য। একটু ব্যাখ্যা দিলেই বুঝতে পারবেন সবাই। প্রথম ছেলের নাম অভিজিৎ, রাজশাহী বোর্ডে এসএসসি ও এইচএসসিতে দ্বিতীয় ও চর্তুথ স্ট্যান্ড করা ছাত্র। বুয়েটের ইলেট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে বিএসসি ও এমসি।
প্রেম করতো নিজ গ্রামের এক মুসলিম মেয়ের সঙ্গে। দীর্ঘদিনের প্রেম। পড়াশোনা শেষে নাটোর গিয়ে দেখে সেই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বিষয়টি কোনোভাবেই মানতে না পেরে প্রায় দুইবছর প্রেমিকার জন্য অর্ধপাগল হয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরেত আর প্রলাপ বকত। বিষয়টি মেয়েটির পরিবার তাদের সম্মানের উপর আঘাত বলে বিবেচনা করে অভিজিৎকে মার দেয়।
এর কিছুদিন পর সে ঢাকা এসে বুয়েটের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে। যোগদানের ৩ বছর স্কলারশিপ নিয়ে জার্মানি চলে যায়। বর্তমানে সেখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। জগদীশ বাবুর দ্বিতীয় ছেলেটির নাম প্রসন্ন। ম্যাট্রিক ও আইয়েতে সে ও বড় ভাইয়ের মতো রাজশাহী বোর্ডে দুটি স্ট্যান্ড করে বুয়েটে ম্যাকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে দুটি প্রথম শ্রেনী নিয়ে বের হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই সে মুসলমান এক মেয়েকে বিয়ে করে করে দুটি সন্তানের পিতা হয়। পরে স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় চীন সরকারের বৃত্তি নিয়ে সেখানে পিএইচডি করে বর্তমানে সেখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বপালন করছে। জগদীশ বাবুর তৃতীয় সন্তানটির নাম অবনী। এসএসসিতে স্ট্যান্ড করা মেয়েটি নাটোরের বনপাড়ার সবচেয়ে সুন্দরী বলে খ্যাতি ছিল তার। পাশের বাড়ির কাকা সম্পর্কের এক মুসলমান প্রতিবেশীর সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নাটোর শহরে বসবাস করছে।
চতুর্থ সন্তানটির নাম ধীরেন। সেও এসএসসি ও এইচএসসি দুটিতেই রাজশাহী বোর্ডে প্ল্যাস ছাত্র। ইন্টার পরীক্ষার পর থেকে গ্রামে অনেকগুলো টিউশনি করতো। এইচএসসি ও এসএসসির গণিত বইয়ের অধ্যায় ও অংকের নম্বর শুনে উত্তর বলে দিতে পারতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার দেয়ার প্রস্তুতি নেয়ার সময় মাথায় গন্ডগোল দেখা দেয়।
এর কিছুদিন পর মাথা খারাপ হয়ে মারা যায় সে। পঞ্চম সন্তানটির নাম লাবনী। এ মেয়েটিও পড়াশোনায় ভাল ও বড় বোনের মতোই অপরুপ সুন্দরী। গ্রামের ছেলেরা ডিস্টার্ব দেয় বলে পাবনার এক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার বিয়ে দেয়া হয়। তাদের সংসার বেশ ভালই চলছিল।
বিয়ের চার বছরের মাথায় হঠাৎ করে একদিন লাবনীর স্বামী ও লাবনীর মাকে আর পাওয়া যাচ্ছেনা। টানা পাঁচদিন খোঁজার পর জানা গেলো মেয়ের জামাই শাশুড়িকে নিয়ে ভেগেছে। এ ঘটনার পর পরিবারটি নাটোরের আলোচনার টেবিলে আরো ফোকাসে চলে আসে। এর কিছুদিন পর জগদীশ বাবু মারা যায় গ্রামের পুকুরে ডুবে। ষষ্ঠ সন্তানটির নাম অরুপ (ছন্দ নাম)।
এসএসসি ও এইচএসসিতে এ ছেলেটিও দুটি গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। এ বছর সেও বুয়েটে ভর্তি হয়েছে। এ ছেলেটিও অমাবস্যা ও কালীপূজার রাতে গায়ে কাপড় রাখতে পারেনা। রোগটি এখনো কেউ ধরতে পারেনি। জার্মান ও চীন থেকে পাঠানো বড় দুই ছেলের টাকায় ও বনপাড়ায় তাদের সব সম্পত্তি বিক্রি করে পরিবারটি সম্প্রতি শহরের কয়েক এককর জমি কিনে দর্শনীয় একটি বাড়ি নির্মাণ করেছে।
বর্তমানে সে বাড়ি অবনী একাই অবস্থান করছে। মাস দুয়েক আগে মেয়ে জামাইয়ের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়া জগদীশ বাবুর স্ত্রী গ্রামে এসেছে। গ্রামের কোনো লোক তার সঙ্গে কথা বলেনি। তারপর সে আমার ফিরে গেছে।
( রাত ২ টায় সত্য কাহিনীটি শোনার পর আমি আসলে কোনো মন্তব্য করতে পারিনি।
গভীর ভাবনায় তলিয়ে গিয়ে প্রায় ১০ মিনিট চুপ থেকেছি। ‘মানব জীবন সত্যিই বড় বৈচিত্র্যময়’ বলে সুমনই আমাকে ভাবনার রাজ্য থেকে উদ্ধার করেছে। বড় একটি নি:শ্বাস ফেলে আমিও মনে মনে বললাম, “মানব জীবন আসলেই রহস্যময়। ”)
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ কথিত আছে গণিতের মাস্টার জগদীশ বাবু ছিলেন সমকামী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।