আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডেপুটি গবর্নর নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে গেছে

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে গেছে। সোমবার বৈঠকে বসেও কোন তালিকা প্রণয়ন করতে পারেনি এ সংক্রান্ত সার্চ কমিটি। কমিটির একজন সদস্য আজ/কালের মধ্যে দেশের বাইরে যাওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে এই প্রক্রিয়া শেষ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের মতে, বর্তমানে অনেকটাই স্থবির জাতীয় অর্থনীতির এ নীতি নির্ধারণী প্রতিষ্ঠানটির উচ্চপর্যায়ের কর্মকা-। সকল ফ্লোরে একই আলোচনা- কারা হচ্ছেন নতুন ডেপুটি গবর্নর! ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকরা (ইডি) রয়েছেন ব্যাপক দুশ্চিন্তায়।

ইডিদের সঙ্গে দুশ্চিনত্মায় পড়েছেন মহাব্যবস্থাপকরাও। কারণ ব্যাংকের ভেতর থেকে ডিজি নিয়োগ দিলে মহাব্যবস্থাপকদের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যককে ইডি হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হবে। বিশেস্নষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈশ্বিক অর্থ মন্দা ও জাতীয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এ সময়ে যোগ্যতার পাশাপাশি সরকারের আদর্শে বিশ্বাসী লোকদের এ পদে নিয়োগ দেয়া দরকার। যারা সরকারের ভিশন টোয়েন্টি টোয়েন্টি ওয়ান (রূপকল্প-২০২১) বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে কাজ করবে। এর ফলে, ব্যাংকের ভেতর থেকে জ্যেষ্ঠতা ও আদর্শের ভিত্তিতে নতুন ডিজিদের নিয়োগ দিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকাণ্ডে বিরূপ কোন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন তাঁরা।

ডিসেম্বর মাস ৩১ দিনে হলেও এ বছরের শেষ দু'দিন ছুটি হওয়াতে ২৯ তারিখেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নরের তিনটি পদ শূন্য হচ্ছে। তাই আগামী দু'এক দিনের মধ্যেই সার্চ কমিটির কাজ শেষ করা হলে সরকার যথাসময়ে যোগ্য লোকদের ডেপুটি গবর্নর হিসেবে নিয়োগ দিতে পারত। কিন্তু সার্চ কমিটির এ গা-ছাড়া অবস্থার নেপথ্যে বিশেষ কোন রহস্য থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চপদস্থ অনেক কর্মকর্তা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন ডেপুটি গবর্নর নিয়োগে গঠিত সার্চ কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পলস্নী কর্মসংস্থান সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। সদস্য হিসেবে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক মোসত্মফা কে মুজেরি ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. খন্দকার বজলুল হক।

কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব গকুল চাঁদ দাস। জানতে চাইলে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ জনকণ্ঠকে বলেন, অনেক আবেদন পড়েছে। এগুলো সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে। কাউকে যাচাই না করেই বাদ দেয়াটা সমীচীন হবে না। সকলকে সমান দৃষ্টিতে দেখতে হবে।

তাই সময় লাগছে। যথাসময়ে শেষ করা সম্ভব কিনা?- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'কমিটির একজন সদস্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন। তাই আবার কবে বসতে পারব বলতে পারছি না। সকলকে নিয়েই কাজ করতে হবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব সকল সদস্যদের নিয়ে একসঙ্গে বসে প্রকৃত যোগ্যদের একটা তালিকা করে কর্তৃপৰের নিকট হস্তান্তর করব।

সার্চ কমিটি ও বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মোস্তফা কে মুজেরির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, দ্রুত সময়ে সংৰিপ্ত তালিকা প্রণয়ন করা হবে। তালিকা প্রণয়নে মেধা, অভিজ্ঞতা ও দৰতার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হবে। তবে, কোন ধরনের সাৰাতকার গ্রহণ করা হবে না। শুধুমাত্র তালিকা তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে হসত্মানত্মর করা হবে বলে জানান তিনি। সংশিস্নষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডেপুটি গবর্নর পদে নিয়োগ পেতে এরই মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরম্ন করেছেন আগ্রহীরা।

তারা সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ রৰাসহ যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ তদ্বির ও রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করছেন। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমানের সঙ্গে দেখা করলে তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে কোন দেশের অর্থনীতির কেন্দ্রে অবস্থান করে। তাই জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে সরকার যোগ্য লোকদের এ পদে নিয়োগ দেবেন। ' তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের উত্তরোত্তর প্রবৃদ্ধির কারণে বিশ্ব মন্দার ঢেউ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে স্পর্শ করতে পারেনি। তাই ব্যাংক ও সার্বিক অর্থনীতি গতিশীল রাখতে দৰ ও মেধাবীদের ডেপুটি গবর্নর নিয়োগ দেবে সরকার।

ব্যাংকের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরনোদের ধরে রাখলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজে স্থবিরতা নেমে আসবে। নতুনদের নিয়োগের ৰেত্রেও সাবধান হতে হবে বলেও মনে করছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, সরকারের সফলতার স্বার্থে, স্থিতিশীল অর্থনীতির একটি দেশ গড়তে, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে ও রূপকল্প-২০২১ বাসত্মবায়নে নতুন ডিজিদের নিয়োগের ৰেত্রে আদর্শ যাচাইয়ে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। এখানে সরকারের সামান্য ভুলের কারণে ব্যাপক মাশুল গুনতে হতে পারে বলেও মনে করছেন তাঁরা। নির্বাহী পরিচালকদের কথা ॥ বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দায়িত্বরত নির্বাহী পরিচালকদের (ইডি) সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ব্যাংকের মধ্য থেকেই নতুন ডিজি নিয়োগ দেয়া ভাল।

তাতে করে তাদের প্রতি যেমন সুবিচার করা হয়। তেমনি ব্যাংকের পদসোপান ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলাও রৰিত হয়। অন্যথায় ব্যাংকের বাইরে থেকে কাউকে এ পদে নিয়োগ দেয়া হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকা-ে এক ধরনের স্থবিরতা চলে আসবে। এছাড়া বাইরের ব্যাংকাররা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকা- বুঝতেই বছর পার করে ফেলবেন। কারণ সাধারণ ব্যাংকিং ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকিংয়ের মধ্যে বেশ তফাৎ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইডি জনকণ্ঠকে বলেন, কিছুদিন ধরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকা-ে স্থবিরতার সৃষ্টি হয়েছে। পুরনো ডিজিদের স্বপদে বহাল রাখতে বিভিন্ন মহলের পাঁয়তারা দেখে বিষণ্নতায় ভুগছেন অনেকেই। মহাব্যবস্থাপকদের কথা ॥ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপকরাও রয়েছেন সমান দুশ্চিনত্মায়। তাঁদের মতে, ব্যাংকের ভেতর থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে যোগ্যদের নিয়োগ দিলে দায়িত্বের প্রতি তাদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। ব্যাংকের বর্তমান নির্বাহী পরিচালকরা ডিজি হিসেবে নিয়োগ পেলে তাদের মধ্যে থেকে যোগ্যরা আবার ওই পদে পদোন্নতি পাবেন।

এত করে প্রতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা রৰিত হয়। এবং কর্মকান্ড গতিশীল থাকে। আর পুরনোদের ধরে রাখলে কর্মকা- স্থবির হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত ॥ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, অর্থনীতির ধারাবাহিকতা রৰায় দৰ ও অভিজ্ঞ লোকদের ডেপুটি গবর্নর পদে নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। সেটা ব্যাংকের ভেতর ও বাইরে থেকেও হতে পারে।

সাবেক তত্ত্বাবধায় সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, নতুন ডিপুটি গবর্নর নিয়োগে যেমন অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে। অন্যদিকে ওইসব জায়গায় নতুন বস্নাড আনারও দরকার আছে। যাদের নতুন চিনত্মাভাবনা আছে। কারণ একই ব্যক্তি একই জায়গায় বহুদিন ধরে কাজ করলে তাতে তারা মেন্টাল বস্নক হয়ে যান। সেখানে উদ্ভাবনী চিনত্মার জন্য নতুন ব্যক্তি আনারও দরকার হয়।

তবে তিনি মনে করেন, এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিতরে ও বাইরে অনেক দৰ, সৎ, যোগ্যতাসম্পন্ন ও অভিজ্ঞ ব্যাংকার রয়েছেন যাঁরা ডিপুটি গবর্নর হওয়ার যথেষ্ট যোগ্যতা রাখেন। কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, 'আমার মনে হচ্ছে অর্থনীতির এই পরিস্থিতিতে অভিজ্ঞ কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের নিয়োগ দেয়াই ভাল হবে। নতুন কেউ এলে তাঁর কাজ বুঝতেই অনেক সময় তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকন্ঠ । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.