মন্ত্রীর জামাই অভিনেতা মাহফুজ
‘এয়ারপোর্টের রাজা’
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বিজ্ঞাপনী ব্যবসা এখন সদ্য বিদায়ী বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী জিএম কাদেরের জামাই অভিনেতা মাহফুজ আহমেদের একক দখলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মূলত শ্বশুর জিএম কাদের বিমান মন্ত্রী থাকাকালেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার কমোডর মাহমুদ হোসাইনের যোগসাজশে বেবিচকের সব বিজ্ঞাপনী ব্যবসা এককভাবে দখলে নেন ‘নকশীকাঁথা’র সত্ত্বাধিকারী মাহফুজ আহমেদ।
শাহজালাল বিমানবন্দরের বোর্ডিং ব্রিজ, বিলবোর্ড, প্রান্তিক ভবন, অভ্যন্তরীণ ভবন ও লাইট বক্সসহ অধিকাংশ জায়গা বিজ্ঞাপনের জন্য এককভাবে অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন মন্ত্রীর জামাই বলে খ্যাত মাহফুজ আহমেদ।
শুধু তাই নয়, বেবিচক যতটুকু জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে তার চেয়ে বেশি জায়গা দখল করে ব্যবসা করছেন মাহফুজ আহমেদ।
শ্বশুরের ক্ষমতাবলে অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও বিমানবন্দরের ব্যবসার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, ব্যবসার স্বার্থে বেবিচক চেয়ারম্যান বিজ্ঞাপনের জায়গা ভাড়া দেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটির মূল উদ্দেশ্যে হলো যাতে অন্য কোনো কোম্পানি বিজ্ঞাপনের জায়গা ভাড়া না নিতে পারে। আর এই কমিটির নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে উল্টো মাহফুজ আহমেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘নকশীকাঁথা’র হয়ে কাজ করেছে।
সূত্র জানায়, শ্বশুর জিএম কাদের বিমানমন্ত্রী হওয়ার পর ২০০৯ সালে বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপনের জন্য বেবিচকের কার্গো রোডের উত্তর পাশের বাউন্ডারি ওয়ালের জায়গা, সিকিউরিটি বক্সেও দক্ষিণ পাশের জায়গা এবং বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের জায়গা লিজ নেয়। একই বছর প্রান্তিক ভবনের বহির্গমন লাউঞ্জের এক নং গেট, দুই নং গেট, তিন নং ও চার নং গেট লিজ নেয়।
এছাড়া তাকে লিজ দেওয়া হয় প্রান্তিক ভবনের নিচ তলার ইমিগ্রেশন এলাকার পশ্চিম পাশের জায়গা, আগমনী লাউঞ্জের কাস্টম হল, র্যাম্প কর্নার ও ক্র এন্ট্রি পাশের ওয়াল লিজ দেওয়া হয়।
২০১১ সালে শাহজালাল বিমানবন্দরের দুই, চার, পাঁচ ও ছয় নং বোর্ডিং ব্রিজের ভেতর ও বাইরের জায়গা লিজ নেন মাহফুজ আহমেদ। এছাড়া অভ্যন্তরীণ প্রান্তিক ভবনের ১৪টি পিলার, আন্তর্জাতিক প্রান্তিক ভবনের দ্বিতীয় তলার বহির্গমন লাউঞ্জের ১৯টি পিলার এবং আন্তজাতিক আগমনী এক্সলেটরের উভয় পাশের দুটি স্থানও তাকে লিজ দেওয়া হয়।
২০০৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরের কার্যাদেশ অনুযায়ী ৩০ x ১৫ মোট ৮টি বিলবোর্ড। এর মধ্যে অবৈধভাবে মোট তিনটি (৪৫ x ১৫‘) এবং (৩০ x ১৫) দুটি বিলবোর্ডকে একত্র করে মোট (৪৫০ x ২)=৯০০ বর্গফুট হওয়ার কথা।
অথচ ৯০০ বর্গফুট না করে বাড়িয়ে এইচএসবিসি ব্যাংকের জন্য বিলবোর্ড (৮০ x ২০)=১৬০০ বর্গফুট তৈরি করে ভাড়া দেয়।
একইভাবে ২০১১ সালের নকঁশীকাথার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৪৫৬ (৪টি) বোর্ডিং ব্রিজ দেয়। প্রতিটি বোর্ডিং ব্রিজের বিজ্ঞাপন ব্যববহার করা জায়গা ২৪ বর্গফুট। আর অনুমোদন নেয় (ভিতরে ৬৭১ x ৪)=২৬৮৪ বর্গফুট। বাইরে ৬৯৯ x ৪=২৭৯৬ বর্গফুট।
মোট চারটি বোর্ডিং ব্রিজ (২,৪,৫ ও ৬)=৫৪৮০ বর্গফুট।
বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করে (২৪০০ x ৪)=৯৬০০ বর্গফুট (ভিতরে ও বাইরে)। কার্যাদেশ ছাড়া ক্ষমতাবলে ব্যবহার করে (৯৬০০-৫৪৮০)=৪১২০ বর্গফুট ভেতরে ও বাইরে। ৪১২০ বর্গফুটের বাইরে ভাড়া, ভ্যাট ও ট্যাক্স=(৮০০x ৪১২০)=৩২,৯৬,০০০ টাকা প্রায়।
আগের কার্যাদেশ এক ও তিন এর দুটিসহ মোট বোর্ডিং ব্রিজের শুধুমাত্র ঢাকায় এক থেকে ছয় নং পর্যন্ত ছয়টি বোর্ডিং ব্রিজের বিজ্ঞাপনের জায়গা ব্যবহার করে ১৪,৪০০ বর্গফুট।
অথচ ভাড়া দেয় ছয়টি বোর্ডিং ব্রিজের ভেতরে-বাইরে=১৩৫০ x ৬)=৮১০০ বর্গফুট। মোট ছয়টি বোর্ডিং ব্রিজ থেকে সরকারকে ফাঁকি দেয় (১৪,৪০০-৮১০০)=৬৩০০ বর্গফুট।
ভাড়া, ভ্যাট ও ট্যাক্স ফাঁকি দেয় (৬৩০০ বর্গফুট x ৮০০)=৫০,৪০,০০০ টাকা।
এভাবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরে ও বাইরে অনেক জায়গা দখল করে সরকারকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার কমোডর মাহমুদ হোসাইনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কেউই ফোন ধরেননি।
Banglanews24.com ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।