ব্লগিং জগতে অশিক্ষিত বালক নামেই রিচিত আমি। ওয়েবসাইট নিয়ে পাগলামি করার টুকটাক অভ্যাস। তাই, পড়ালেখার পাশাপাশি বন্ধুদেরকে নিয়ে টুকটাক ওয়েবসাইটের পাগলামি নিয়ে আছি। আমার কাজকর্ম দেখুন এখানেঃ http://banglatheme.com/ ঘুরে এলাম দক্ষিণ এশিয়ার সুইজারল্যান্ড (পর্ব: ১)
ঘুরে এলাম দক্ষিণ এশিয়ার সুইজারল্যান্ড (পর্ব: ২)
তৃতীয় পর্বটি দিতে একটু দেরী হয়ে গেল কেননা কয়েকদিন নেট থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলামঃ
”হাসান….এই হাসান……..সরে দাঁড়াও……লোকজনকে ঢুকতে দাও” – স্যারের এমন উক্তিতে চমকে উঠলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখি যে, আমার পেছনে ৫-৬জন লোক লাইন ধরে দাড়িয়ে আছে।
আমিতো অবাক যা হোক, ঘটনাটা খুলেই বলি।
বর্ডার পার করে আমরা সরাসরি চলে এলাম জয়ঁগাও(ভারত-ভুটান বর্ডার)। এই বর্ডারের বৈশিষ্ট্য দেখে একটু হকচকিয়ে উঠলাম। কেননা, এই বর্ডারে চলাফেরায় কোন ধরনের বাধা নেই। অথাৎ যে কেউ চাইলে ভারতে ঢুকতে পারে আবার যে কেউ চাইলে ভুটানে ঢুকতে পারে।
কী আজব! কী আজব! ও আচ্ছা, ভুটানের এই শহরটির নাম ফুন্টসলিং। তো সন্ধ্যার পর আমরা বের হলাম ফুন্টসলিং ভ্রমণে।
ফুন্টসলিংয়ে পা দেওয়ার পর মাথাটা নষ্ট হয়ে গেল। এ কোথায় এলামরে বাবা? এরা এমন কেন? কোন কোলাহল নেই, গাড়ির হণ নেই, কারো দিকে কারো তাকানোর সময় নেই। যা হোক, অবাক হওয়া থেকে নিজেকে সামলাতে সামলাতে একটি পার্কের গেটের সামনে এসে দাড়ালাম।
আশেপাশের আজব আজব সৌন্দর্য দেখে এতোই মুগ্ধ হলাম যে পার্কের গেটে দাড়িয়েই ভেতরটা দেখছিলাম এবং ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছিলাম। ঠিক এমন সময়ই আমার স্যার আমাকে ডাকলেনঃ
”হাসান….এই হাসান……..সরে দাঁড়াও……লোকজনকে ঢুকতে দাও” – স্যারের এমন উক্তিতে চমকে উঠলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখি যে, আমার পেছনে ৫-৬জন লোক লাইন ধরে দাড়িয়ে আছে এবং পার্কে ঢোকার জন্য অপেক্ষা করছে। অবাক করা বিষয় হলো, তারা সবাই দেখলো যে আমি গেটে খামাখাই দাড়িয়ে আছি কিন্তু তারা কেউ একবারের জন্য আমাকে বললো না যে, ভাই একটু সরেন, আমরা ঢুকবো। এরা এতোই সভ্য জাতি যে সবাই সুন্দর মতো আমার পেছনে দাড়িয়ে আছি।
তখন মনে হলো যে, আমাদের দেশে যদি এমনটা করতাম তাহলে, এতোক্ষণে কতগুলি গালি যে শুনতাম!!!
এভাবেই শুরু হলো আমার মনমুগ্ধকর এবং বিস্ময়কর ভুটান যাত্রা। মনমুগ্ধকর এবং বিস্ময়কর বলছি কারণ যা দেখছি তা দেখে একই সাথে মুগ্ধ হচ্ছি এবং বিস্মিতও হচ্ছি। আমার এই সম্পূর্ণ ভুটান যাত্রায় যে যে বিষয়গুলোতে বিস্মিত হয়েছিঃ
১. মানুষের আচরণঃ একটি উদাহরণ উপরে দিলাম। এরা খুব্ই কম কথা বলে এবং সবাই নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করে। কারো দিকে তাকানোর এদের সময় নেই।
২. গাড়ির হর্ণঃ উফফ! এই এক জিনিসটি শোনার জন্য আমাদেরকে ৬দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। কী? কথা মনে হয় বুঝেন নাই। জি! আমি ঠিক বলছি। আমাদের দেশে আমরা হর্ণ শুনে শুনে বিরক্ত। আর সেখানে গিয়ে আমরা হর্ণ না শুনে বিরক্ত হয়েছি।
আমরা যখন ভারত থেকে থিম্পুর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম এই ৯ঘন্টার পাহাড়ি রাস্তার ভ্রমণে আমরা বাসের হর্ণ শুনেছি খুব সম্ভব ২ বার। আমাদেরতো মাথায় হাত। একি অবস্থা। যারা পাহাড়ি রাস্তায় গিয়েছেন তারাতো জানেন যে পাহাড়ি রাস্তার মোড়গুলো কেমন হয়। এমন রাস্তাগুলো সব একের পর এক পার করছি কিন্তু কোন হর্ণ নেই!!! আমরা তো মনে হয় জানটা হাতে নিয়ে বসে আছি।
এই ড্রাইভারের কী মাথা খারাপ নাকি? হর্ণ বাজায় না কেন? পরে আমরা জানতে পারলাম যে, এদের এখানে হর্ণ বাজানো মানে হচ্ছে যে খারাপ ড্রাইভার!
গাড়ির হর্ণ নিয়ে আরেকটি বিচিত্র কথা বলি। আপনি ভুটানের রাস্তা পার না হয়ে রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে থাকতে পারেন। দেখবেন যে, গাড়িগুলো আপনার পেছনে দাড়িয়ে আছে কিন্ত হর্ণ তারা এতো সহজে বাজাবে না!!!
৩. দোকানের সাইনবোর্ডঃ ভুটানের দোকানের সাইনবোর্ডগুলো দেখেও বিস্মিত হয়েছি। সবগুলো দোকানের সাইনবোর্ড হচ্ছে সবুজ সাইনবোর্ডে সাদা কালি দিয়ে লেখা। এটি নাকি রাজার আদেশ।
বিষয়টি চমৎকার লাগলো। অন্যদিকে, সরকারি সাইনবোর্ডগুলোর রং হচ্ছে লাল রংয়ের মধ্যে হলুদ দিয়ে লেখা।
৪. বিলবোর্ড পেলাম নাঃ সম্পূর্ণ ভুটানে কোন বিলবোর্ড নেই।
৫. ভুটানি কুকুরঃ থিম্পু শহরের সবচেয়ে আজব বিষয় হচ্ছে রাত ৯টার পর সবগুলো দোকান বন্ধ হয়ে যায় এবং ৯টার পর সম্পূর্ণ শহরের কুকুর ছেড়ে দেওয়া হয়। What a security! কুকুরগুলোও দেখার মতো।
একেবারে রাজকীয় স্টাইলে বসে থাকে। তবে ভয় নেই। এরা আপনাকে ততক্ষণ কামড়াবে না যতক্ষণ আপনি এদেরকে দেখে দৌড় না দিবেন
৬. ভুটানের বাড়িঘরঃ ভুটানের প্রত্যেকটি বাড়ি দেখেই মুগ্ধ হয়েছি। এটি মনে হয় রাজারই আদেশ যে বাড়ি যত তলাই হোক বাড়ির ছাদটি হবে টিনের এবং প্রত্যেকটি বাড়িতেই আছে তাদের ঐতিহ্যবাহী নকশা।
৭. ধর্ম-কর্মঃ ধর্মের প্রতি ভুটানিদের বিশ্বাস থেকে বিস্মিত হতেই হয়।
এরা খুবই ধর্মভীরু। প্রত্যেকটি মোড়ে মোড়েই আছে উপসনালয় এবং তাদের মন্ত্রসম্বলিত রঙ-বেরঙের কাগজ।
৮. নিরাপত্তাঃ ভুটান থাকাকালীন যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি নিশ্চিন্ত ছিলাম তা হলো নিরাপত্তা। আমি রাতের বেলা এমন রাস্তা দিয়েও গিয়েছি যেখানে একটি মানুষও ছিল না। কিন্তু একটুকুও ভয় লাগেনি।
কেননা, যতটুকু শুনেছি এবং দেখেছি, ভুটানের মানুষ চুরি-ছিনতাই এগুলো বুঝে না। আরেকটি যে বিষয় ভালো লেগেছে তা হলো এরা কারো দিকে কুনজরে তাকায়ই না।
৯. ভুটানি মেয়েঃ ভুটানকে যদি মেয়েদের রাজত্ব বলি তা হলে অত্যুক্তি হবে বলে মনে হয় না। কেননা, যেখানে গিয়েছি সেখানেই মেয়েদের আধিপত্য। অধিকাংশ দোকানে বিক্রয়কর্মী মেয়ে……..পুলিশদের অধিকাংশই মেয়ে।
ছেলেরা সব গেলে কই???
যা হোক। এই হলো আমার ভুটান সফরের বিস্ময়কর কিছু অভিজ্ঞতা। পরবতী পর্বটি হবে শেষ পর্ব এবং সেখানে থাকবে ভুটান সফরের মনমুগ্ধকর কিছু অভিজ্ঞতা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।