আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাঞ্চা বয়সে মোর আগুন জ্বলে গায়

আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি। কিস্তি-১২ মেসের সন্ধানে মহিলা গলা নিচু করে বললেন, সেও এখানে থাকে। আমি মাথা মুন্ডু কিছু বুঝলাম না। একটা রুম।

এখানে একজন ঢাকা মেডিকেল পড়ুয়া ছাত্র থাকেন। আরেকজন লাগবে। তার রুমে। আবার একই রুমে কাজের মহিলা থাকে। আমি কিছুটা বিস্মিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস কলাম, মানে? মহিলা আমার বোকামি দেখে হেসে দিলেন।

আজিমপুর কবর স্থানের গেটের উল্টো দিকের ওই একতলা বাড়িতে আমি আর দ্বিতীয়বার যাইনি। এতটা নিম্ন রুচি আমার নয় যে, কাজের মহিলা নিয়ে ডাক্তার বেটার মত আমিও থাকব! পরে খোঁজাখুঁজি করে একটা মেস পাওয়া গেলো- ললিত মোহন দাস লেনে। এক আইনজীবীর বাড়ির চারতলা। মেস করার জন্যই মনে হয় আলাদা আলাদা চারটা রুম নিয়ে চতুর্থ তলা। সেখানে গিয়ে পরিচয় ঘটে শফিক ভাইয়ের সাথে।

সিএ করছেন রহমান রহমান হকে। ভালো ছাত্র। গোপালগঞ্জে বাড়ি। কেবল একটাই সমস্যা-রাগ বেশি। কিছু হলেই বটি নিয়া কোপাতে চান।

আমি অবশ্য দেখিণি। কেবল শুনেছি। যেহেতু আমি বেশির ভাগ সময় মেসের বাইরে থাকি। তবে শফিক ভাই একদিন বললেন, ঢাকা কলেজের মান্নান নাকি বুয়াকে কুপ্রস্তাব দিযেছে। তাই তাকে খেদিয়ে দেয়া হলো।

এত সঙ্কটের মধ্যে বুয়া নির্বাচনের দায়িত্বটা আমি নিলাম। ভালো একটা বুয়াটা পেয়েও গেলাম। পেশাদার নন, উনার স্বামী মারা যাওয়ার পর ঢাকায় আসেন। স্বামী যার বাড়িতে কাজ করতেন সেই বাড়িতে কাজ করেন। ভদ্র মহিলা ভালোই ছিলেন।

কিন্তু আমাদের সাথে একটা ফ্যামিলি থাকতো, সেই ফ্যামিলির ভাবির আবার আমাদের বুয়াকে পছন্দ না। তা নিয়ে রাজ্যের ঝামেলা। তবুও এতে আমরা গা করি না। মেস লাইফ খারাপ না। বেড়িবাঁধ ও পোস্টঅফিসের পাশের বাজার থেকে কেনাকাটা করে আনি, উনি রেঁধে দেন।

সকালে ঘিয়ে ভাজা পরোটা, মাছ মাংসের ছড়াছড়ির কারণে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ- সবাইকে ফতুর করার বুগিদ্ধ করেছি। কেবল শফিক ভাই রিপন ভাই ও মিল্টন কিছু বলে না। এখানে আমরা সবাই মিলে আড্ডা দিই। আমার সম সাময়িক কেউ ছিল না। পরে অবশ্য শফিক ভাইয়ের কাজিন মিল্টন আসলো।

ও ঢাবিতে পড়ে। তাই আমি আর ও এক রুমে উঠলাম। পরে ওর বন্ধু মিজান। মানিকগঞ্জের পোলা। আমরা খুব মজা করতাম।

মিজান প্রায় একটা গান গাইতো... ‌‌'যমুনার জল ঘোলা কইরা... ও সখি বলি গো তোমায়.. কাঞ্চা বয়সে মোর আগুন জ্বলে গায়। ' হা হা হা । এভাবেই ভালোই চলছিল। আমাদের সাথে থাকতেন রিপন ভাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয থেকে পাস করে একটি বেসরকারি ব্যাংকে জব করতেন।

ভালোই। তার কাছ নব্বুইয়ের গণ অভু্যত্থানের গল্প শুনতাম। ভালোই লাগতো। এক সময় জাসদ কর্মী রিপন ভাই পরে চাকরী নিলেন ইসলামী ব্যাংকে। তার কাছে শোনা গল্প নায়িকা মৌসুমী নাকি আগে মল চত্বরে আড্ডা মারতেন।

তার দিকে নাকি কেউ ফিরেও তাকাতেন না। হঠাৎ একদিন মৌসুমী নায়িকা। তাদের তো অবাক হবার পালা। মেসে আমাদের সাথে আরেকটা ফ্যামিলি থাকতেন, সামর্থ সে রকম ছিল না বলে হয়ত। তবে তারাও বেশ আন্তরিক ছিলেন।

সবচেয়ে আন্তরিক মনে হয়েছে বাড়িঅলাকে। তাদের বাসায় শুক্কুরবারে পোলাও রোস্ট হতো। তার একটা ভাগ চারতলার ব্যাচেলদের জন্য চলে আসতো। এত আদর আপ্যায়নের মধ্যে একটচা কঠিন শর্ত ছিল- ছাদে ওঠা যাবেনা, জানালা খোলা যাবে না। আমরা তাই করতাম।

কিন্তু বাড়িঅলা দুইকন্যা যে আমাদের উত্যক্ত করত, সেটা কাউকে বলা যেতে না। বলতামও না। বিশেষ করে মিল্টন ও আমি এ দুজনের অত্যাচারের শিকার ছিলাম। মেসে সবচেয়ে বেশি মজা হতো সুইটির মা ভাবিকে নিয়ে। তাকে নিয়ে এক পর্ব না লিখলেই নয় , আনন্দ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

পরের কিস্তি সুইটির মা ভাবিকে নিয়ে... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.