শীতকালে বা শুকনো মৌসুমে বুড়িগঙ্গা নদীতে পানি কমে যায় বলে দূষণের মাত্রা বেশি থাকে। বর্ষায় সে দূষণ অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু গত মাসে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় এই বর্ষা মৌসুমেও নারায়ণগঞ্জের পাগলা থেকে গাবতলী পর্যন্ত বুড়িগঙ্গায় অস্বাভাবিক দূষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গার কয়েকটি অংশের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। আর বিদ্যুৎ পরিবাহিতা (কনডাকটিভিটি) আদর্শ মাত্রার প্রায় অর্ধেক।
পানিতে অম্ল ও ক্ষারের পরিমাপক পিএইচের মাত্রাও অস্বাভাবিক।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও ওয়ার্ক ফর অ্যা বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে সমীক্ষাটি করা হয়। গত ২০ জুন সমীক্ষার জন্য বুড়িগঙ্গার ১৮টি স্থান থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এইচকিউ ৪০ডি মাল্টিপ্যারামিটার মিটারের সাহায্যে তাৎক্ষণিক এসব নমুনার দূষণ পরীক্ষা করা হয়।
সমীক্ষায় নেতৃত্ব দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আবদুস সোবহান।
তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শুকনা মৌসুমে বুড়িগঙ্গার পানির দূষণ নিয়ে অনেক পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমেও এমন ভয়াবহ দূষণ পাওয়া যাবে, তা আগে বোঝা যায়নি। তিনি বলেন, নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন নেই বলে মৎস্য ও জলজ প্রাণী বিলুপ্তপ্রায়। বুড়িগঙ্গা আজ একটি মৃত নদী।
ভবিষ্যতে বুড়িগঙ্গায় দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ লেশমাত্র থাকবে না উল্লেখ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও পানিবিশেষজ্ঞ মুজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বর্ষাকালে নদীর দ্রবীভূত এই অক্সিজেনের অবস্থা খুবই আতঙ্কজনক।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে শীত বা শুকনা মৌসুমেও দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় শূন্য ছিল।
সমীক্ষায় ১৮টি স্থানের মধ্যে সাতটিতে ট্যানারিসহ শিল্পবর্জ্যের কারণে ভয়াবহ দূষণ হচ্ছে। তিনটি অংশে দূষণের জন্য প্রধানত দায়ী ওয়াসার পয়োবর্জ্য। আর পাঁচটি স্থানে দূষণের কারণ হিসেবে বাজার, দোকান ও গৃহস্থালির বর্জ্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। হাসপাতালের বর্জ্যের কারণে দূষণ হচ্ছে দুটি স্থানে।
ঢাকা ওয়াসার হিসাবমতে, প্রতিদিন ঢাকা মহানগরের ১২ লাখ ৫০ হাজার ঘনমিটার পয়োবর্জ্য অপরিশোধিত অবস্থায় সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। হাজারীবাগ ট্যানারি থেকে প্রতিদিন পড়ছে ২১ হাজার ঘনমিটার অপরিশোধিত বর্জ্য। এসব বর্জ্যে রয়েছে ক্রোমিয়াম, সিসা, সালফিউরিক অ্যাসিড, পশুর মাংস ইত্যাদি।
ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের উন্নয়ন কর্মকর্তা আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বুড়িগঙ্গার ২৩ কিলোমিটার অংশ পরিদর্শন শেষে ওই সমীক্ষার ফল পাওয়া গেছে। তবে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রতি লিটার পানিতে ছয় মিলিগ্রাম দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকা দরকার। এর কম হলে জলজ প্রাণী অক্সিজেনের সংকটে পড়ে। আর প্রতি লিটার পানিতে পিএইচের আদর্শ মাত্রা ৭। পিএইচ ৭-এর নিচে থাকলে পানিতে অম্লতা এবং বেশি থাকলে ক্ষারতা বলে বোঝানো হয়। বিদ্যুৎ পরিবাহিতার আদর্শ মাত্রা এক হাজার।
পরীক্ষায় যা পাওয়া গেছে: পরীক্ষায় বেশ কিছু এলাকায় দ্রবীভূত অক্সিজেন পাওয়া গেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়। সদরঘাট এলাকায় দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ সবচেয়ে কম; প্রতি লিটারে শূন্য দশমিক ২৪ মিলিগ্রাম। ধোলাইখালের মুখ ফরিদাবাদ এলাকায় শূন্য দশমিক ৭৯, শ্যামপুর খালের মুখে শূন্য দশমিক ৯৮, পাগলা পয়োশোধনাগারের নির্গমন নালির ভাটিতে শূন্য দশমিক ৫৬, পাগলায় শূন্য দশমিক ৬৩, মিটফোর্ড হাসপাতালের কাছে শূন্য দশমিক ২৯, আদি চ্যানেলের মুখে শূন্য দশমিক ৬০ এবং চাঁদনীঘাটে ঢাকা ওয়াসা পানি শোধনাগারে শূন্য দশমিক ৫১ মিলিগ্রাম। বাকি ১০ জায়গার নমুনায় দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ সামান্য বেশি হলেও তা প্রতি লিটারে তিন মিলিগ্রামের কম।
সদরঘাট টার্মিনালের পূর্ব পাশের পানিতে পিএইচ ৭ দশমিক ২৭।
পিএইচ সবচেয়ে বেশি শ্যামপুর খালের কাছে, ৯ দশমিক ৯৩। আর সবচেয়ে কম ফরিদাবাদে ৭ দশমিক ২২। সদরঘাট টার্মিনালের পূর্ব পাশে পানিতে বিদ্যুৎ পরিবাহিতা ৫০৭ পাওয়া গেছে। বিদ্যুৎ পরিবাহিতা সবচেয়ে কম গাবতলীতে, ৪৫২। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।