আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগ প্রশ্নঃ রফিক-উল হক ও আমীরুলের ভিন্ন মত

আমি নিজের মাঝে খুজে পেতে চাই আমার আমাকে। যেতে চাই বহুদূর। বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর ক্ষেত্রে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য হবে কি না, সে বিষয়ে ভিন্ন মত দিয়েছেন অ্যামিকাস কিউরি রফিক-উল হক ও আমীর-উল ইসলাম। মানবতাবিরোধী অপরাধী কাদের মোল্লার দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানিকালে ওঠা দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইনগত প্রশ্নের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে আজ সোমবার এ মতামত দিয়েছেন এই দুই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর ক্ষেত্রে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য নয় বলে মত দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রফিক-উল হক।

তিনি বলেছেন, ২০১৩ সালে আইনের ২১ নম্বর ধারায় সংশোধনী আনা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট এটাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা না করছেন, ততক্ষণ তা ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে। রফিক-উল হক আরও বলেন, সংবিধানের ৪৭ (৩) অনুচ্ছেদে এ আইনের বিধানগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। তাই মানবতাবিরোধী অপরাধী কাদের মোল্লার দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করতে সরকারের সব ধরনের অধিকার রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে আদালতে রফিক-উল হকের এই বক্তব্য উপস্থাপন করেন আইনজীবী মৌলবি মো. ওয়াহিদ উল্লাহ।

প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি চলছে। রফিক-উল হকের পর বক্তব্য দেন অপর অ্যামিকাস কিউরি আমীর-উল ইসলাম। এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, ১৯৭৩ সালে যখন আইনটি করা হয়, তখন প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে তা করা হয়েছে। প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। আপিলের সমানাধিকার নিশ্চিতের জন্য আইন সংশোধন করা হয়েছে।

সংবিধান অনুসারে বিচারে সমান সুযোগ থাকতে হবে। অসম বিচার হলে আইন সংশোধন করে সমতা সৃষ্টির বিধান করতে পারে সংসদ। এ কারণে আইন সংশোধন করা হয়েছে। এটা সংবিধানবিরোধী নয়। পরে আমীর-উল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এই সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

কাল মঙ্গলবার আবার বক্তব্য উপস্থাপন করবেন আমীর-উল ইসলাম। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে দুটিতে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ, তিনটিতে ১৫ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেন। অন্য একটি অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। এরপর ৩ মার্চ কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। পরদিন ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ডাদেশ বাতিল করে অব্যাহতি চেয়ে আরজি জানিয়ে আপিল করেন কাদের মোল্লা।

এরপর কাদের মোল্লার দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি শুরু হয়। শুনানিকালে দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইগত প্রশ্ন ওঠে। প্রশ্ন দুটি হলো—আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন-১৯৭৩-এর অধীনে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য হবে কি না? দ্বিতীয়টি হচ্ছে—গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন সংশোধন করে ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে এর ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেওয়া হয়েছে, যাতে খালাস বা দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অধিকার দেওয়া হয়। কাদের মোল্লার দণ্ড ঘোষণার পর আইনের ২১ ধারায় আনা ওই সংশোধনীতে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের যে সুযোগ দেওয়া হলো, তা কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি না? এসব প্রশ্ন ওঠায় গত ২০ জুন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ বিষয়ে মতামত দিতে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে জ্যেষ্ঠ সাত আইনজীবীর নাম ঘোষণা করেন। আজ তাঁদের মতামত দিতে বলা হয়।

কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের পর মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। শাহবাগে গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ। এরপর ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) (সংশোধন) বিল, ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়। সংশোধিত আইনে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অধিকার-সংক্রান্ত ধারায় সংশোধনী আনা হয়। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।