আমার বর্ণমালা, আমার অহংকার ইতিহাস সর্বদা চলমান একটু আগের মুহুর্তটিতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটিও এখন ইতিহাসের কোলে আশ্রিত । ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে কত বিস্মৃত ভুলে যাওয়া ঘটনা , হারিয়ে যাওয়া নায়কদের সোনালী দিনের কথা , কত নির্যাতনের নির্মম হৃদয়বিদারক ঘটনা । স্বাধীনতার ইতিহাসেও আছে কত ক্ষতচিহ্ন , কত বীরপুরুষের আত্মদান , কত গাদ্দারের আত্মমর্যাদাহীন অপকর্ম যারা নিজেদের সুবিধার জন্য মাতৃভূমিকেও অন্যের হাতে তুলে দিতেও পিছপা হয় না । এমন গাদ্দাররা কোন যুগেই দুর্লভ নয় । সোনালী বাংলার ইতিহাসের এক বড় আঘাত ছিল পলাশীর যুদ্ধ যেদিন এই দেশের মাটিতেই জন্ম নেয়া কিছু গাদ্দারদের কূটচালে পরাজিত হয় নবাব সিরাজুদ্দৌলা অস্তমিত হয় বাংলার স্বাধীনতা , দুইশত বছরের জন্য সম্রাজ্যবাদীদের করায়াত্ব থাকে আর হারিয়ে ফেলে নিজের জৌলুশ ক্ষয়িষ্ঞু হয়ে পড়ে স্বকীয়তা ।
যদিও ইতিহাস বলে মীর জাফর জগত্ শেঁটের মত গাদ্দারদেরও শেষ রক্ষা হয়নি নির্মম পরিণতি বরণ করতে হয়েছে । পলাশীর যুদ্ধের পর যে বীর পুরুষ রংপুর অন্চ্ঞলকে কেন্দ্র করে বৃটিশবিরোধী আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিলেন তিনি হলেন নুরুদ্দিন বাকের জং । তিনি বৃটিশদের বিরুদ্ধে গোপনে সংঘটিত করতে থাকেন মুসলমানদের ,ঢাকা থেকে অনেক দুরে রংপুরের মিঠাপুকুরের ফুলচৌকিকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলেন নতুন রাজধানী, নতুন দুর্গ যার ধ্বংসাবশেষ আজো ঘোষনা করছে মায়ের মত দেশকে রক্ষা করার জন্য তার সন্তানরা সবাই এক একজন অতন্দ্র প্রহরী । ১৭৬৫ থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত যে ফকীর সন্নাসী বিদ্রোহ চলেছিল বাকের জং ছিল তার অগ্রসেনানী । সবসময় ছদ্মবেশে কোম্পানির সৈনিকদের ফাঁকি দিয়ে সারা দেশ চষে বেড়াতেন আর জনগনের মধ্যে জাগিয়ে তোলার চেষ্টার করতেন জিহাদের জজবা , প্রতিশোধের দৃপ্ত আগুন ।
কিন্তু জাগিয়ে তোলার মত পর্যাপ্ত সময় তিনি পাননি । তার সঙ্গে সংঘর্ষে কোম্পানির বেশ ক্ষতি হওয়ায় তারাও প্রতিশোধের নেশায় মরিয়া হয়ে ওঠে । মুকুটহীন রাজা বাকের জংয়ের সাথে ১৭৮৭ সালে লালমনিরহাটের মোগলকোটে ইংরেজদের এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয় । এই যুদ্ধে আহত হলে তাকে নেয়া হয় তার স্বপ্নের রাজধানী মিঠাপুকুরের ফুলচৌকিতে, ইংরেজরা তার পিছুধাবন করে পৌছে যায় ফুলচৌকিতে সেখানে সংঘটিত হয় এক অবিস্মরণীয় হত্যাযজ্ঞ , বাকের জংয়ের সৈন্যরা পরাজিত হয়ে যখন বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ঠিক তখনি তারা খুজে পায় বাকের জংকে তাকে মারার পর নিয়ে আসা হয় রাজধানীর কেন্দ্রীয় মছজিদে । যে মসজিদে ছিল তার হাজারো সেজদার চিহ্ন প্রতিহিংশাপরায়ন ইংরেজরা সেই মসজিদের গেটে দাফন করে ইতিহাসের এ সূর্যসন্তানকে , যাতে প্রত্যেক মুসল্লী প্রত্যেক নামাজে তার কবরের উপর দিয়ে যেতে বাধ্য হয় ।
মসজিদের পাশে অবস্থিত টাকশাল আজ ভগ্নপ্রায় , দুর্গও বিলীন হওয়ার পথে কিন্তু আজো ইতিহাসের স্বাক্ষি হয়ে দাড়িয়ে আছে অনুপম শৈল্পিকতায় নির্মিত মসজিদ আর তার গেটের কবরে দেশমাতৃকার স্বাধীনতার স্বপ্ন বুকে নিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন বাকের জং । এভাবে দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে শত বীরদের বীরত্বগাঁথা যাদের ইতিহাস মনে করিয়ে দেয় আমাদের স্বাধীনতা কত রক্তের লালছোপে রন্জিত । মিঠাপুকুরের ফুলচৌকিতে সেই মসজিদের সামনে দাঁড়ালে আজো মনে হয় পরাশক্তিদের কূটচালের বিরুদ্ধে সবসময় জেগে থাকতে হবে আমাদের যাতে পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দী হয়ে মর্সিয়া ক্রন্দন করতে না হয় ।
মোবাশ্বের আহমেদঃ আমার বর্ণমালা ব্লগ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।