আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

--------------ডেজিগনেশনঃ ফিল্ম মেকার----------------

© তন্ময় ফেরদৌস মাঝে মাঝে ঈশ্বরের উপর আমার ভীষন রাগ হয়। তিনি এত মানুষকে সফলতার পথ দেখান, আমার বেলায় এই কৃপনতা কেন ? তবে কি ইশ্বরও ফিল্ম মেকার দের পছন্দ করেন না ? আমি জনি,মরহুম জনি। নামের আগে মরহুম শব্দটা বলার কারন হতে পারে, মৃত মানুষের সাথে নিজেকে কম্পেয়ার করা। সমাজের চোখে আমি মৃত প্রায়। আমার কোন আত্মীয় সজন নেই, নেই কোন প্রেয়সী, এমনকি বন্ধু বান্ধব।

বিশাল এই পৃথিবীতে অনেকটা জিন্দা লাশের মতই বেচে আছি। দেয়ার মত কোন পরিচয়ও নেই আমার। একটা স্বপ্ন অবশ্য আছে। সেটা হচ্ছে সিনেমা বানানো। আমার জন্য আকাশ কুসুম কল্পনা হলেও এই নিয়েই বেচে আছি।

আমাকে দেখে অবশ্য খুব একটা আসুখী মনে হয় না। যদিনা লম্বা চওড়া 'আমি'র চোখের দিকে কেউ তাকায়। এ কারনেই আমি মাথা নিচু করে হাটি। চোখ নামিয়ে হাটার মাঝে সমাজের প্রতি আমার অবহেলা যেমন কাজ করে, তেমনি কাজ করে নিজের উপর অনাস্থা। আমি আসলে বুঝে উঠতে পারিনা- ভুল কি শুধুই আমার, নাকি গোটা সমাজটাই ভুল।

আজকেও আমি মাথা নিচু করে হাটছি। চোখে হয়তোবা দু এক ফোটা সলজ্জ জল। ঢাকা ফিল্ম ইন্সটিটিউটের ফিল্ম ফেস্টিভল থেকে আমাকে বের করে দেয়া হয়েছে। আমার নাকি ইনভাইটেশন কার্ড নাই, কোন যোগ্যতাও নাই। আমি যে এখনো একটাও সিনেমা বানাইনি।

এত সব নামিদামি ডিরেক্টর কলাকুশলিদের মাঝে আমার জায়গা কোথায় ? কিন্ত এতদিন যে স্বপ্ন লালন করে আসছি তা কি এভাবেই মরে যাবে ? ধর্ম বিসর্জন দিয়েছি আগেই। আমার একমাত্র ধর্ম এখন সিনেমা। ফিল্ম রিলিজিয়নের কথা শুনে অনেকেই হেসেছে আগে। ব্যাংগ করেছে। ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠিত সব ফিল্ম মেকারদের মাঝে এসে আজকে আবার সেই মুর্খ মানুষগুলার কথাই মনে হলো।

এদের ভিতর চিন্তাগত পার্থক্য নেই খুব একটা। এরা যেখানে একটা স্বপ্নের দাম দিতে জানেনা, কি করে হাজারও মানুষের স্বপ্নের জাল বুনবে ? চোখের জলটুকু মুছে নিয়ে হাটতে হাটতে কখন যে মতিঝিল পেরিয়ে নটরডেমের সামনে চলে এসেছি, ঠিক বলতেও পারবো না। কেমন যেন একটা ঘোরের মাঝে আছি। হটাৎ পায়ের আওয়াজ............ ধুপ......অসহ্য যন্ত্রনায় মাথাটা ছিড়ে যাচ্ছে। একি, আমার চোখ এমন জলছে কেন ? আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না কেন ? ----------------------------------------------- ব্যাঙ্ক কলোনীর মোড়ে বসে আছে তিন যুবক।

যেন হুমায়ুনের উপন্যাস থেকে উঠে চাদের আলোয় কয়েকজন যুবক। চাদের আলো আর সোডিয়াম আলোতে অদ্ভুত ভীনগ্রহীর মত লাগছে তাদের। কিছুটা দুরেই আরেক যুবককে দেখা গেলো একটা ব্যাগ নিয়ে কাছে আসছে। এক্টু নড়ে চড়ে বসে তারা। -"মতি নাকিরে ?"-প্রশ্ন করে ভারী কন্ঠের এক যুবক।

-"হ বস, জিনিস নিয়া আসলাম। সবকিছু পাইতে একটু দেরি হয়ে গেলো। মাইন্ড খাইসেন নাকি আবার ?" - "আরে না, টেনশনে ছিলাম। তামুকে দুইটা টান দিবি নাকি ?" -" দেন, কামে যাওয়ার আগে অবশ্য নেশাপানি করা ঠিক না" বলেই কল্কিতে টান দেয় মতি। বাকিরা হেসে উঠে হো হো করে।

কল্কের আগুন আর হো হো হাসির আওয়াজে নিস্তব্ধ রাতে কেমন যেন ভয় ধরিয়ে দেয়। ধি ধি পোকার ডাকও থেমে যায় মুহুর্তের জন্য। - "বিএ পাশ করে বসে আছি। কত কাজ করার চেস্টা করলাম, কোন ভাত নাই। ভালো থাকলেই লস, বুঝলি?" সবাই মাথা নাড়ে।

মৃদু কন্ঠে গান ধরে একজন। " আমার গায়ে যত দুখ সয় বন্ধুয়ারে কর তোমার মনে যাহা লয়..................." - এই, একদম চুপ, কালু, দেখতো নটরডেমের সামনে একজন লোক কে দেখা যাচ্ছে না ?" -"জি বস,মনে হয় একা। পিডে একটা ব্যাগও দেহা যায়। " ঝটপট উঠে দাঁড়ায় চার যুবক। -"পাশা, তুই মোড়ে গিয়া দাড়া।

কোন ঝামেলা দেখলে সিগ্নাল দিবি। কালু আর মতি আমার লগে আয়। জিনিস্পাতি বাইর কর। কালু পিছন থেইকা পিস্তলের বাট দিয়া বাড়ি মারবি। আর মতি চোখে মলম লাগাবি।

আয় তোরা। " এবার আর কোন হাসির শব্দ নেই। তারপরো থেমে যায় ঝি ঝি পোকার আওয়াজ। প্রকৃতি মনে হয় এক নাটক দেখার অপক্ষায় চুপ হয়ে যায়। সুনশান নিরবাতা............ ধুপ...............আহ,আআ................ ------------------------------------------------------------- আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা।

অসম্ভব চোখ জালা করছে। শুধু বুঝতে পারছি, আমার হাত মুখ বাধা। শরীরে কোন শক্তি নেই। শুধুই যন্ত্রনা। চাপা গলায় কথা শুনতে পেলাম।

কে যেন বলছে- -" বস পোলাডা মনে হয় আর্মির। দেহেন লম্বা চওড়া আছে। চুল ছোড ছোড কুইরা কাডা। এরে বাচায়া রাখা ঠিক হইবো না। পরে পিছে লাগলে নিস্তার নাই।

আর্মিরা হইলো হারামীর জাত। " -" হ বস, এহনি শেষ কইরা দেই। গুলি করন জাইবো না। সাউন্ড হইবো। জবাই দিয়া দিলে সকালের আগে কেউ টেরও পাইবো না।

" - "হুম, ঠিক আছে। আরো সাইডে নিয়া যা টান দিয়া। কি বিপদে পড়লাম। কপালে ছিলো শালার ডিফেন্সের লোক"। মরার আগে নাকি সব স্মৃতি ভেসে উঠে ছবির মত।

আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে শুধুই একটা সিনে আল্ট্রা ক্যামেরা আর ৩৫ মিমি রিল। কিছু সেলুলয়েড ফিতা। আহ, মরার আগে একটা সিনেমা বানাতে পারলাম না। জীবনটাই একটা সিনেমা। আর আমি হচ্ছি সেই ট্রাজেডির নায়ক।

গলার মাঝে স্পর্শ পেলাম ধারালো কিরিচের। বিদায় পৃথিবী। ----------------------------------------------------------- হটাৎ একটা কন্ঠ, " এই দাড়া, ওর মানিব্যাগটা আছেনা ? দেখতো ভিজিটিং কার্ড টা ?" -" পাইসি বস, আপনিই দেহেন। " এক মুহুর্ত সময় কেটে যায়। - " ওরে ছাইড়া দে, ওতো আর্মি না।

ওর ডেসিগনেশন ফিল্ম মেকার। " ছুরির স্পর্ষ আর অনুভব করিনা। আস্তে আস্তে মিলিয়ে যায় পদশব্দ। রাস্তায় পড়ে আছি আমি। পাশে আমার ভিজিটিং কার্ড।

কালো ভিজিটিং কার্ডের উপর রূপালি অক্ষরে চকচক করতে থাকে- " মরহুম জনি। ডেজিগনেশন- ফিল্ম মেকার। " (এটা একজন সফল ফিল্ম মেকারের জীবনের কাহিনী। হয়তো আমার খুব কাছের একজন মানুষ। সেই থেকেই তার মাথার ভিতর ঢুকে গেছে-"ডেজিগনেশন ফিল্ম মেকার।

")  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.