আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধূরন্ধর মিজানের কারসাজিঃ পাকিস্তানের সাথে নেপালেরও সার্কে চীনকে পর্যবেক্ষক করার প্রসঙ্গ চেপে যাওয়া এবং যথারীতি জিয়া বিদ্বেষ!

আমি চাই শক্তিশালী স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রথম আলোর মিজানুর রহমান খান গত সপ্তাহে সার্ক নিয়ে কারসাজিমূলক হলুদ সাংবাদিকতা করল। এটা প্রতারণারই নামান্তর। আমরা জানি সার্কের বর্তমান ৮ সদস্য দেশের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষক দেশ ও এই সংস্থা হিসেবে ইইউ আছে। এরা হল Australia, China, European Union, Iran, Japan, Mauritius, Myanmar, South Korea, United States ও South Africa. http://en.wikipedia.org/wiki/Portal:SAARC উপরোক্ত পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র সমূহের ক্ষেত্রে দেখা যায় মরিশাস, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং যুক্তরাষ্ট্র বহু দূরের দেশ। এরা আদৌ এই উপমহাদেশ দূরে থাকুক এশিয়ার নিকটবর্তীও নয়।

এখানে চীন বাদে কারোরই পর্যবেক্ষক হওয়া নিয়ে বিরোধ হয় নি বরং সর্বসম্মতি ক্রমেই তারা এভাবে সার্কে অংশগ্রহণ করতে পারছে। স্রেফ চীনের ক্ষেত্রেই দেখা দেয় বিপত্তি! কারণ আর কেউ নয়, তা হল ভারত। ভারতের সাথে চীনের যত দ্বন্দই থাকুক সার্কের অন্য সদস্য রাষ্ট্রের সাথে চীনের উষ্ণ ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। ভারত চায় না যে ভবিষ্যতে চীন সার্কের পূর্ণাঙ্গ সদস্য হয়ে সার্কের কতৃত্ব নিক তথা ছড়ি ঘুরাক। তাই পর্যবক্ষক হিসেবে মেনে নিতে সূচনা লগ্নেই ভারতের অনড় অবস্থান ছিল।

তাই সার্কের অন্য সব সদস্য চাইলেও ভারতের আপত্তিতেই চীনকে অন্তর্ভূক্ত করা যাচ্ছিল না। পরে যখন ভারত নিজ স্বার্থে আফগানিস্তানকে সার্কের পূর্ণ সদস্য করতে চাচ্ছিল তখন পাকিস্তানের পাশাপাশি নেপালও যে চীনকে পর্যবেক্ষক রুপে অন্তর্ভূক্তির শর্ত দেয় সেটা প্রআলোর মিজান উল্লেখ করল না; পাঁচ বছর আগে ভারত আফগানদের সার্কে আনতে চাইলে পাকিস্তান চীনকে পর্যবেক্ষক করে। Click This Link নেপালও যে চীনের বিষয়ে জোড়াল ও শক্ত অবস্থান রেখেছিল এটা ঐ সময়ে আলোচিত ঘটনা ছিল। নেপাল ও চীনের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক যে ঘনিষ্ঠ তা নীচের নেপালী সংবাদ সুত্র গুলো প্রমাণ করে। ১৯৮৮ সালে নেপাল ও ভারত সম্পর্কে টানপোড়নের সৃষ্টি হয়ে কাঠমন্ডু চীন মুখী হয়।

যা তাদের চীন-নেপাল মৈত্রী সমিতি গঠিত হয় ১৯৯৩ সালে; [b]Mr Chairman Delegates and friends, Realizing the need for a competent organization in order to strengthen as well as add greater dimensions to the close, mutually beneficial, friendly and age-old relationship between Nepal and the neighboring People's Republic of China, Nepal-China society was founded in April, 1993.[/b] Click This Link উপরোক্ত লিংকেই বুঝা যায় বিগত ২০ বছরেরও বেশী নেপাল ও চীনের সম্পর্ক কত শক্তিশালী! এ ছাড়াও চীন যে শুধু নেপাল নয় বরং সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার আর্থ-সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে তা নিয়ে নেপালের Upendra Gautam ২০০৩ সালেই একটি প্রবন্ধ সম্পাদনা করেন; SOUTH ASIA AND CHINA TOWARDS INTER-REGIONAL COOPERATION Click This Link এটা আফগানিস্তানকে সদস্য রাষ্ট্র করার আগেই চীনকে সার্কে প্রবেশ করানোর জন্য নেপালীদের ভূমিকা যে জোড়াল তা বিস্তারিত তথ্যের মাধ্যমে উল্লেখিত আছে। এরপর যখন আফগানিস্তানকে ভারত পূর্ণাঙ্গ সদস্য করতে চায় তখন নেপালই ভারতকে এই শর্ত দেয় যদি দিল্লী চীনের পর্যবেক্ষক হিসেবে সার্কে অন্তর্ভূক্তি মেনে নেয় তবে সেও কাবুলের সদস্য পদ মেনে নিবে। এ প্রসঙ্গে বলতে হয়; “It was a long time coming. But when it did in Dhaka over the weekend, China’s diplomatic big bang left in tatters India’s long-standing claim of an exclusive sphere of influence in the sub-continent. That Nepal’s King Gyanendra could hold up the consensus at the summit on Afghanistan’s membership for two days by linking it to China’s request for an association with the SAARC, heralds a new paradigm in the sub-continent’s geopolitics. Without even being present at the summit, China has significantly influenced the outcome of the Dhaka debate on expanding SAARC membership”, so wrote C. Raja Mohan for the Indian express (12, November 2005). King Gyanendra thus became instantly a villain in the Indian eyes. Chinese penetration in South Asia now beyond India’s control Click This Link পাকিস্তান অবশ্যই সার্কে চীনের পর্যবেক্ষক হিসেবে যুক্ত হওয়ার ভূমিকা রেখেছে তবে আসল ও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে নেপাল। তাই মিজান যে বলল পাঁচ বছর আগে ভারত আফগানদের সার্কে আনতে চাইলে পাকিস্তান চীনকে পর্যবেক্ষক করে। বিষয়টিকে উল্লেখ না করে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ বলে চালিয়ে দিল।

প্রকৃত পক্ষে এটা সত্য আড়াল এবং মিথ্যা-প্রতারণামূলক প্রোপাগান্ডা। মিজান গং দেখাতে চাইছে যে মুসলমান হওয়ার কারণে ভারতের সাথে স্রেফ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেরই দ্বন্দ! শ্রীলংকাতো দূর ভারতের সাথে যেন নেপালের কোন দ্বন্দ নেই। তাতে তার পাকিস্তানকে উসিলা করে খালেদা ও বিএনপির চীনকে পূর্ণাঙ্গ সার্ক সদস্য করার প্রস্তাবকে এক হাত নেওয়া যায় সে ভাবেই সে উক্ত "সরল গরল, বিএনপির চেয়ারপারসনের চীনা-চমক" আর্টিকেল লিখল। ভারত একেতো স্বার্থপর, প্রতারক রাষ্ট্র তার উপর নিজের দেশের জনসংখ্যা, চরম অনিয়ম-র্দূনীতি,দূর্বল অর্থনীতি ও ধীর বিচার বিভাগ তাই তার উপর সার্কের অন্য কোন রাষ্ট্র পুরোপুরি নির্ভর হতে পারে না। ভারত আক্ষরিক অর্থেই উপর দিয়ে ফিটফাট ভিতর দিয়ে সদর ঘাট! ভারতের প্রসিদ্ধ লেখিকা অরুন্ধতী রায় জানিয়েছেন যে প্রকৃত পক্ষে ৮০ কোটিরও বেশী ভারতীয় নাগরিকের দৈনিক আয় ২০ রুপি ৩০ পয়সা; Click This Link যা কিনা দৈনিক অর্ধ মার্কিন ডলারেরও কম।

যে ভারত নিজের আভ্যন্তরীন সমস্যায় চরম ভাবে জর্জরিত তার উপর সার্কের বাকী সব রাষ্ট্র কিভাবে নির্ভর করবে? আর অন্যদিকে চীন সাম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সহ গোটা ইইউর বিশাল অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে একাই সক্ষম তাকে খালেদা জিয়ার সেধে সেধে সার্কের সদস্য করার প্রস্তাব কি অন্যায় হয়ে গেল? গোটা বিশ্বের ভবিষ্যত অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক চীন হতে চলেছে এটা কি মিজান গং জেনেও না জানার ভান করে কেন? আজকে ভারত চীনের অবস্থানে থাকলে মিজান গংদের আনন্দ-ফূর্তির সীমা থাকত না। কিন্তু সার্কে চীনের সদস্য ও নিয়ন্ত্রক হলে মিজান গংদের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। আর বিএনপিকে মার্কিন ও অন্ধ ভারত বিরোধীতার জন্য জন্ম বলে মিজান দিল্লীর বিমাতা সুলভ আচরণকে অস্বীকার করল। নদ-নদীর সুষ্ঠ পানি বন্টন, স্থল-সুমুদ্র সীমা, বাণিজ্য ঘাটতি, নেপাল-ভুটানকে ট্রানজিট ইত্যাদি অভিন্ন বিষয়ে ভারত কেমন তা মিজান গং ধরি মাছ না ছুই পানির মত আচরণ করে। ১৯৭৭ সালে জিয়ার চীনের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়াকে কটাক্ষ করল অথচ এটা বলে না যে ভারত বাংলাদেশের অখন্ডতার বিরুদ্ধে উপজাতি চাকমাদের সশস্ত্র সংগঠন শান্তিবাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছিল।

যা চীনের সামরিক সহায়তায় বাংলাদেশ সন্ত্রাসী শান্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায়। তারপর ঐ ১৯৭৭ সালেই জাতিসংঘে জিয়ার ফারক্কা বাধের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে ভারতকে গ্যারান্টি ক্লজ রেখে ৩৪ হাজার কিউসেক পানির আনার ব্যাবস্থা যে বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনা তা মিজানের কাছে উগ্র ভারত বিরোধীতা। সে কি দেখে না যে বর্তমানে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতীয় বিশাল ট্রাক ও জাহাজ তার পূর্বাংশে যাওয়ার জন্য কোন লেভী দিতে চাচ্ছে না? এখন বিএনপি যদি সরকারে এসে ভারতকে এই শর্ত দেয় যে ন্যায্য টোল দাও আর তাতে দিল্লী রাজী না হয় এবং তথাকথিত ট্রানজিট বন্ধ হয়ে যায় সেটা কি ভারত বিরোধীতা হবে? মিজান গংদের কথা হল বাংলাদেশের লাভ না হউক এমনকি ক্ষতি হউক তবুও ভারতের বিরুদ্ধে যাওয়াতো দূর কোন বৈধ দেন দরবারও করা যাবে না। সে বিএনপিকে অন্ধ ভারত বিরোধী বলে পরিবর্তিত হতে বলে অথচ ভারত ৪০ বছর ধরে চলে আসা বিমাতা সুলভ আচরণ বদলাচ্ছে না তা নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য নেই। মিজান গং বাংলাদেশের জন্য যে উপদেশ তথা দর্শন বয়ান করে তার বেশীর ভাগই ভারতের পদ লেহন।

মিজানদের অভিলাস ঠিক থাকলে বাংলাদেশের নিজস্ব কোন স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকে না। মিজান গংদের মত তথাকথিত সুশীল গোষ্ঠীর দিল্লী ভক্তির অবস্থানের জন্য হাসিনার নির্লজ্জ-ক্ষতিকারক ভারত সেবা হতে বিরত রাখা যাচ্ছে না। এই কুলাংগার মিজানদের বয়কট ও রুখতে না পারলে আমরা জাতি হিসেবে ভারত হতে নিজেদের ন্যায্য পাওনা কোনদিনও আদায় করতে পারব না।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।