আজমেরী জেসি সুপ্তিকে নিজের মেয়ে বলে দাবি করেছেন লক্ষ্মীপুরের ওয়াহিদা বেগম নামে একজন। তিনি গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আসেন। এ সময় তার সঙ্গে সুপ্তির ছোট বোন পরিচয়ে বিউটি ও লিপি নামে আরও দু'জন ছিলেন। অবশ্য তাদের কাউকেই মা-বোন বলে স্বীকার করেননি সুপ্তি। বরং এই তিনজনকে শত্রুপক্ষের লোক বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে শনাক্তকরণ প্রমাণ হিসেবে ওয়াহিদা বেগম এইচএসসি পরীক্ষার একটি সনদ উপস্থাপন করেন। এ সনদকে অবশ্য জাল হিসেবে দাবি করেন সুপ্তি। প্রাথমিকভাবে পুলিশের একটি সূত্রও সনদটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। সনদটি যাচাই করা হচ্ছে। অন্যদিকে সুপ্তির মা-বোন দাবিদারদের বক্তব্য সমন্বয়হীন বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠেছে, মা-বোন দাবিদার এ তিনজন আসলে কে? গতকাল একই সময় তার ভাসুর আরশাদকে হাজির করা হলে সুপ্তি তাকে চিনতে পারেন। ভাসুর বা স্বামী আশরাফের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি সুপ্তি। এ অবস্থায় সুপ্তিকে নিয়ে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সহযোগিতায় সুপ্তির জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির ভিকটিম সাপোর্ট ও ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের ডিসি শামীমা বেগম বলেন, লক্ষ্মীপুর থেকে মা-বোন পরিচয়ে যারা এসেছেন তাদের কাউকেই সুপ্তি নিজের স্বজন বলে স্বীকার করেননি।
তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। তারা সুপ্তির এইচএসসি পাসের একটি সার্টিফিকেট দেখাচ্ছেন। সেখানে সুপ্তির ১৯৯১ সালে রাজধানীর নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজ থেকে মানবিক শাখায় প্রথম বিভাগে পাস করার কথা উল্লেখ রয়েছে। সুপ্তি এ সার্টিফিকেটও ভুয়া বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, আমেরিকার নিউ জার্সি থেকে এইট গ্রেড কমপ্লিট করে তিনি মা-বাবার সঙ্গে বাংলাদেশে আসেন।
অন্যদিকে সুপ্তির ভাসুর আরশাদ কোনো দায়িত্ব নিতে চাননি। শামীমা বেগম আরও জানান, সুপ্তির মানসিক বিপর্যয়ের পেছনে পারিবারিক বিভিন্ন জটিলতা থাকতে পারে। এ অবস্থায় তাকে চিকিৎসার পাশাপাশি ঘটনাটি তদন্ত করে দেখবে পুলিশ।
গতকাল দুপুরে সুপ্তিকে মা-বোন পরিচয়ধারী তিনজন ও ভাসুরের মুখোমুখি করা হলে সুপ্তি বলেন, আমি আমেরিকায় জন্মেছি, আমার মা খ্রিস্টান। তারা আমাকে নিতে পারলে মেরে ফেলবে।
একই সঙ্গে আরশাদকে দেখিয়ে সুপ্তি বলেন, তিনি আমার স্বামীর বড় ভাই এবং ভালো মানুষ। এ সময় মা-বোন পরিচয়ধারীদের সঙ্গে সুপ্তির কিছু বিষয় নিয়ে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।
ওয়াহিদা বেগম বলেন, লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের মৃত মোহাম্মদ ইউসুফ তার স্বামী। তাদের পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে সুপ্তি সবার বড়। নবম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার পর সুপ্তি ঢাকার এক আত্মীয় রুস্তমের বাসায় বেড়াতে এসে নিখোঁজ হয়।
দু'বছর পর জানা যায় সুপ্তি পুরান ঢাকার এক ধনী পরিবারের বউ। দরিদ্র মা-বাবার পরিচয় স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে আড়াল করে সুপ্তি। তার শঙ্কা, ছিল বাবার বাড়ির পরিচয় পেলে তার শ্বশুর তাকে মেনে নেবেন না। অবশ্য বিয়ের তিন বছর পর সুপ্তি কয়েকবার রায়পুর গিয়েছিল বলে দাবি করেন ওয়াহিদা। এ সময় বেশকিছু কাগজপত্র সেখানে রেখে আসে সুপ্তি।
সেখান থেকেই এইচএসসির সনদটি তারা পেয়েছেন। ওয়াহিদা আরও বলেন, সুপ্তির শ্বশুরের মৃত্যুর পর তাদের সম্পত্তি ভাগ হয়। এ সময় সুপ্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমি বিক্রির কয়েক কোটি টাকা জমা করা হয়।
এদিকে ভাসুর আরশাদ বলেন, সুপ্তিকে আমেরিকান নাগরিক জেনেই তার ভাই আশরাফ ১৯৯৫ সালে বিয়ে করেন। মেয়ে খ্রিস্টান বলে শুরুতে এ বিয়ে মেনে নেননি তাদের বাবা পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ এরশাদ নান্না।
শুরু থেকেই আলাদা থাকতেন সুপ্তি-আরশাদ। ২০০৭ সালে বাবার মৃত্যুর পর সম্পত্তি বিক্রির টাকা তার ভাই সুপ্তির অ্যাকাউন্টে রাখেন। চিকিৎসার জন্য আশরাফ ভারত যাচ্ছেন বলে এক মাস আগে ফোন করে জানান। সুপ্তিও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বলে আশরাফ জানিয়েছিলেন।
সমকাল ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।