আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকায় হাত পুড়ে যাওয়া দামেও কেএফসি’র মান নেই

একটি পৃথিবী ৭০০ কোটি মানুষ, তবুও আমি একা দূর থেকে কাছের-পাশের মানুষ ও জিনিষগুলোকে খুব প্রিয় ও আপন বলে মালুম হয়। ভালোবাসা ও বিচ্ছেদের মিলন ও ব্যবধান ভেতরটা নাড়িয়ে দিয়ে যায়। টিকে থাকার সংগ্রামে ব্যস্ত বাংলাদেশের মানুষদের আশেপাশে তাকানোর ফুরসৎ নেই। সামর্থ্যও নেই অনেকের। আজকাল প্রতিবেশীসহ অন্যদের দিকে নেকনজর দেবার মানসিকতাও খুঁইয়ে বসেছেন অনেকে।

প্রিয় রাজধানী আজকাল আর আগের মতো কাকডাকা ভোরে জেগে ওঠে না। নাস্তার হোটেলগুলোর উনুনেই আগুন জ্বলে সাতটা নাগাদ। তবুও সামান্য চাকুরীজীবীরা প্রায় নিত্য ছোটেন দৈনন্দিন বাসে চড়ার যুদ্ধে। যানজট এড়িয়ে কর্মস্হলে পৌঁছানোর স্বপ্নে। আর তাদের ততোধিক ছাপোষা গৃহবধূরা ওয়াসার চকিত আসা-যাওয়ার পানি ধরতে জীর্ণ বালতি লাইনে শুরু করেন দিন।

তারপর মৃত মানুষের দমের মতো গ্যাস সাপ্লাইয়ের হেঁশেলে স্বামীর ‘লাঞ্চ’জাতীয় খাবার, বাচাদের নাস্তা ইত্যাকার আয়োজন শেষে প্রায় উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়ানো মানুষের সাথে পাল্লা দিয়ে সাত বছরের বাচ্চাকে স্কুলে পৌঁছান। এগুলো দৈনিক যুদ্ধের তালিকাটার সূচনা মাত্র! সীমিত সাধ্যে বাজারের আগুনে দাম আর দরাদরির সংগ্রামটা ফেলনা নয়। চারিদিকের এতো যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাবের মাঝখানে নিজের জন্যে এক চিলতে সময় বের করে নেওয়া যেখানে কষ্টসাধ্য, সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে ভাবনার অবকাশ কোথায়? বাংলাদেশ ভাবনা চকিতে মাঝেমধ্যে উঁকি দেয় অবসন্ন রাতের টিভি সংবাদে-টকশোর ‘জ্ঞানী-গুনী’আয়োজনে। প্রবাসে অবস্হাটা একেবারেই ভিন্ন। দূরে থাকে বলেই প্রবাসীরা ফেলে আসে মানুষগুলোকে, হারিয়ে ফেলা জিনিসগুলোকে আরো বেশি ভালোবাসেন।

স্মরণ করেন। তারা খোয়ানোর ব্যথাটা নিত্যদিন অনুভব করেন শয়নে-যাপনে। প্রবাসীদের নিত্যকার আডডায়-নৈমিত্তিক সাপ্তাহিক দাওয়াতের একমাত্র ‘খাদ্য বহির্ভূত’মেন্যু বাংলাদেশ, বাংলাদেশের রাজনীতি, ভবিষ্যৎ, দ্রব্যমূল্য, আইন-শৃংখলা ইত্যাকার চটকদার রসালো ‘খাবার’। আমাদের নিবিড় বন্ধুত্ব ধাক্কা খায় রাজনৈতিক বিতর্কে। হাসিনা-এরশাদ-খালেদা বিভাজনে।

কেউ দেশে যাছেন বা যাবেন খবরে উৎসাহের কমতি হয় না। স্বদেশ ফেরত মানুষগুলোর ফার্স্টহ্যান্ড অ্যাকাউন্ট শোনার জন্যে এক নাগাড়ে দু’তিন সপ্তাহ বিরতিহীন দাওয়াতের নহর নামে। কিছুদিন আগে আমার চাচাতো ভাই পড়তে এসেছে মেলবোর্নে। তার কাছে রাত জেগে ঢাকার গল্প শুনি। অদ্ভুত এই নেশায় হেন কোনো বিষয় বাদ পড়ে না।

শুক্রবার এলেন শাহীনূর সোহাগ। ছেলেটা লেখালেখিতে ভালো। সৎ, আন্তরিক ও বন্ধু বৎসল। তবে বড় বেশি কাঠখোট্টা। মুখের ওপর অপ্রিয় কথা ছুড়ে দিতে জুড়ি নেই।

মাস কয়েক আগে আমার ’কুৎসা’ গেয়ে একটা লেখা লিখেছিলেন। সোহাগের জবানিতে জানলাম, বাংলাদেশের হাল হকিকত। সতেরো শ’ টাকা দামের পিৎজার দোকানের লম্বা লাইনের খবর। হাত পুড়ে যাওয়া দামের কেএফসি’র মান। বারোশ’ টাকা কেজির মিষ্টির অবিশ্বাস্য কাহিনী।

‘ইহুদি-নাসারার’ এই দেশে রোজগারটা হালাল। কমবেশি সবাই ভালো রোজগেরে। এখানে ন্যূনতম বেতন ঘন্টায় হাজার পঞ্চাশ টাকার বিপরীতে ফ্যামিলি সাইজ পিৎজার দাম বাংলাদেশী আটশ চল্লিশ টাকা। এক ঘন্টার রোজগারে একটি পিৎজা কেনা সম্ভব। বাংলাদেশে কাদের বেতন ঘন্টায় সতেরো শ’ টাকা? এখানে সাড়ে ছয়শ’ টাকার কেএফসি ‘মিলে’ ভাত-পাগল বাংগালীর মুখ মেরে আসে।

ঢাকায় কেএফসি’র দাম কতোজনের সাধ্যের নাগালে? পেটের কতো শতাংশ পুরে? ফরমালিনের সুবাদে ছয় মাস আয়ু বাড়া আংগুরগুলোর কেজি নাকি আটশ টাকা। ফরমালিনের দাপট মাছবাজার ছেড়ে দুধ-মিষ্টিতেও নাকি লেগেছে! কী খাচ্ছেন দেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনেরা? সব খাবারের মধ্যে যদি ফরমালিন পাওয়া যায়, তাহলে ক’দিন পরতো মানুষের মৃতদেহগুলোও পচবে না? আজিমপুর গোরস্হানের এক কবরের উপর তিন বছর পর অন্য মানুষকে কবর দেবে কিভাবে? দেশেতো কবরের সংকট দেখা দেবে। হাসিনা-খালেদা-এরশাদকে কেবল গালি দিয়ে কিছু হবে না। নিজেদের সচেতন হতে হবে। দলীয় বিভাজনের উর্ধ্বে কিছু সামাজিক ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হবার বিকল্প দেখি না।

আমাদের উদ্যমী জনগণের নিবিড় উৎসাহেই আমাদের জিডিপি আগামী পাঁচ বছরে দুই অংকের ঘরে উঠতে বাধ্য। এজন্যে কোনো দল ও সরকারকে ধন্যবাদ দেবার প্রয়োজন নেই। নিজেদের সম্মিলিত অর্জনের সাফল্য কেনো আমরা একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলের হাতে তুলে দেবো বিনা কারণে? সুড়ঙ্গ শেষে দেখি কেবল নিকষ অন্ধকার! আলোহাতে প্রতীক্ষায় কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।