আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভেনিজুয়েলার রাজনৈতিক পরিবর্তনে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা; সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা।

শুরুর বক্তব্য ঃ সালটা ছিল ১৪৯৮ ক্রিস্টোফার কলম্বাস অবতরন করলেন গলফ অফ পারিয়াতে (Gulf of Paria) আবিষ্কার করলেন একটি ভূখণ্ড। তিনি তখন পর্যন্তও নিশ্চিত হতে পারেনি, যে অঞ্চলটি তিনি আবিষ্কার করেছেন তাঁর নাম আসলে কি?। নাম যেটাই হোক, ক্রিস্টোফার কলম্বাস নির্বাক হয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। সম্ভবত কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তাঁর ভাষায় সেই অঞ্ছলটি ছিল এক কথায় ‘স্বর্গ’, ‘পৃথিবীর স্বর্গ’ (টিয়েরা দি গ্রসিয়া) ।

সেই অঞ্চলটি আজকের ভেনিজুয়েলা। যে ভেনিজুয়েলার ইতিহাসের রন্ধে রন্ধে রক্তের চিহ্ন, সামরিক জান্তাদের শাসন, শাসনের নামে সাধারণ মানুষের অস্থি-মজ্জা শোষণ। বার বার হয়েছে সামরিক হস্থক্ষেপ ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সামরিক শাসন। এরপর ১৯৫৮ সাল থেকে পরিবর্তনের কিছুটা ছোঁয়া লাগল কিন্তু এই পরিবর্তন হল না দীর্ঘস্থায়ী, হল না কার্যকরী। রাষ্ট্রযন্ত্র পরিনত হল জনগনকে শোষণ করার যন্ত্রে।

একপর্যায়ে ভেনিজুয়েলার কর্তাগন শাসনকার্যে ব্যর্থ হয়ে ভেনিজুয়েলার হাত পা বেঁধে তুলে দিলেন আই.এম.এফ আর বিশ্ব ব্যাংক এর হাতে যার ফলাফল ছিল আরও অবনতির দিকে অবিরাম যাত্রা। প্রকৃতির নিয়ম পরিবর্তন , পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে সমাজের অগ্রগতি। সেই পরিবর্তনের মহেন্দ্রক্ষনটি এল ১৯৯২ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি, এক অপরিচিত সামরিক বাহিনীর কর্নেলের অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টার মাধ্যমে। নাম তাঁর হুগো শাভেজ , আজকের ভেনিজুয়েলার ‘রূপান্তরের লড়াইয়ের’ নেতা। কার্ল মার্ক্স ঠিকই বলেছেন, মানব সভ্যতার পরিবর্তন আসে দ্বন্দ্বের মাধ্যমে সম্ভবত ভেনেজুয়েলার ইতিহাসও ঠিক একই ভাবে দ্বন্দ্বের মাধ্যমে উন্নয়নের ধারায় নিজের নাম লেখানোর চেষ্টায় অবিরত সংগ্রাম করে যাচ্ছে।

ভেনিজুয়েলার নামকরণ ঃ ১৪৯৯ ভেনিজুয়েলার মারাকাইবো হ্রদ দেখে অভিযাত্রী আলেনসো দি ওহেদা ভূখণ্ডটিকে ভেনিস নগরীর সাথে সাদৃশ্য লক্ষ্য করেন এবং ভূখণ্ডটির নাম দেন ভেনিজুয়েলা। অর্থাৎ ইতালীয় ভাষায় ছোট ভেনিস। এরপর থেকে এই নামেই পরিচিত হয়ে আসছে দেশটি । এক নজরে ভেনিজুয়েলা ঃ ভেনেজুয়েলা (স্পেনীয় ভাষায়: Venezuela বেনেসুয়েলা [beneˈswela]) দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উত্তর উপকূলে ক্যারিবীয় সাগরের তীরে অবস্থিত রাষ্ট্র। ভেনেজুয়েলার ভূপ্রকৃতি উত্তরে আন্দেস পর্বতমালার সুউচ্চ পর্বতচূড়াগুলি থেকে দক্ষিণের ক্রান্তীয় অরণ্য পর্যন্ত বিস্তৃত।

দেশের মধ্যভাগে আছে তৃণময় সমভূমি এবং রুক্ষ উচ্চভূমি। উপকূল জুড়ে রয়েছে নয়নাভিরাম বেলাভূমি। তীর থেকে অদূরে অনেকগুলি দ্বীপ ভেনেজুয়েলার সীমানার অন্তর্গত। ভেনেজুয়েলার রাজধানী ও বৃহত্তম শহরের নাম কারাকাস। ভেনেজুয়েলা ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি স্পেনীয় উপনিবেশ ছিল।

১৯শ শতকের শুরুতে দক্ষিণ আমেরিকার যেসব স্পেনীয় উপনিবেশ প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা করে, তাদের মধ্যে ভেনেজুয়েলা ছিল অন্যতম। পূর্বে এটি ভেনেজুয়েলা প্রজাতন্ত্র নামে পরিচিত ছিল। ১৯৯৯ সালে এর নাম সরকারীভাবে বদলে ভেনেজুয়েলা বলিভারীয় প্রজাতন্ত্র রাখা হয়। নামটি ভেনেজুয়েলার স্বাধীনতাতে অবদান রাখা সামরিক নেতা সিমন বলিভারের নামে রাখা। স্বাধীনতা লাভের পর ভেনেজুয়েলা অন্তর্সংঘাত ও স্বৈরশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে পার হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর শক্তিশালী প্রভাব আছে। ১৯৫০-এর দশকের শেষ থেকে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার দেশটি শাসন করে আসছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভেনেজুয়েলাবাসী মেস্তিসো, অর্থাৎ ইউরোপীয় ও আদিবাসী আমেরিকানদের সংকর জাতি। এটি আদিতে একটি কৃষিপ্রধান দেশ ছিল। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর শুরুতে এখানে পেট্রোলিয়ামের বিশাল মজুদ আবিষ্কৃত হওয়ার পর অর্থনীতির গতি পাল্টে যায়।

১৯৭০-এর দশক থেকে সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা তেলের উৎপাদন দেখাশোনা করছে। যদিও তেল শিল্প প্রচুর সম্পদের সৃষ্টি করেছে, তা সত্ত্বেও ভেনেজুয়েলাতে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে রয়েছে সুস্পষ্ট বিভাজন। ব্যবসায়ী, তেল কোম্পানির কারিগর, এবং বিরাট জমিদারেরাই দেশের অধিকাংশ সম্পদের মালিক। অন্যদিকে শহরের অদক্ষ শ্রমিক ও গ্রামের খামারকর্মীরা তুলনামূলকভাবে দরিদ্র অবস্থায় জীবন যাপন করে। তবে বর্তমানে তা পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে।

অন্যান্য তথ্য (সংক্ষিপ্ত আকারে) ঃ República Bolivariana de Venezuela বলিভিয়ান রিপাবলিক অফ ভেনিজুয়েলা জাতীয় সঙ্গীত Gloria al Bravo Pueblo (স্পেনীয়) Glory to the Brave People রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী কারাকাস(Caracas) 10°30′N 66°58′W রাষ্ট্রভাষা (সমূহ) স্প্যানিশ জাতীয়তাসূচক বিশেষণ ভেনিজুয়েলান সরকার ফেডারেল ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক - প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজ স্বাধীনতা স্পেন হতে জুলাই ৫/ ১৮১১ গ্রান কলোম্বিয়া হতে জানুয়ারি ১৩ /১৮৩০ - স্বীকৃতি মার্চ ৩০ ১৮৪৫ - জলভাগ (%) ০। ৩২ জনসংখ্যা - July 2007 আনুমানিক 27,730,469 (42nd) - 2001 আদমশুমারি 23,054,210 জিডিপি (পিপিপি) 2006 আনুমানিক - মোট $176.4 billion (47th) - মাথাপিছু $7,165 (90th) জিনি সহগ (2000) 44.1 (medium) মানব উন্নয়ন সূচক (2007) 0.792 (medium) (74th) মুদ্রা বলিভার (VEB) সময় স্থান UTC-4:30 ইন্টারনেট টিএলডি .ve কলিং কোড +58 স্বাধীন ভেনিজুয়েলার রাজনীতি এবং সামরিক বাহিনীর প্রভাব ঃ স্বাধীন ভেনিজুয়েলা স্বাধীনতা লাভ করে এবং যাত্রা শুরু করে সেনা শাসকদের হাত ধরে। স্বাভাবিকভাবেই সেনা শাসকদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা ছিল অনেক বেশি অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে পুরটাই এর বিপরীত। ফলে বারবার ভেনিজুয়েলার ক্ষমতায় আসেন সামরিক শাসকগণ। আমরা যদি ভেনিজুয়েলার রাজনীতিতে সামরিক শাসকদের সম্পৃক্ততা বিশ্লেষণ করতে যাই , সেক্ষেত্রে আমাদের উচিত হবে ইতিহাসের দিকে আলকপাত করা।

ভেনিজুয়েলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনার দিকে তাকালে আলোচ্য বিষয়টি দিনের আলোর মত পরিষ্কার হবে। নিম্নে আলোচনা করা হল; স্বাধীনতা লাভ এবং পরবর্তী সময় ঃ ১৮২৬ সালে বলিভিয়ান কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয় পানামায়। সেখানে কারাকাসের এলিটগন ভেনিজুয়েলার পৃথকীকরণের দাবী করেন। ১৮২৯ সালে জেনারেল যোশে আন্টোনিও পৃথকীকরণের ক্ষেত্রে সফল নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি ১৮৩০ থেকে ১৮৬৩ সালের মধ্যে ৩ বার ক্ষমতায় আসেন।

এর মধ্যে ১১ বৎসর তিনি ক্ষমতাসীন ছিলেন। তাঁর পর ক্ষমতায় আসেন আন্টিনিও গুজমান ব্লাঞ্চ এবং কেউডিলো। বিংশ শতকের সামরিক শাসক এবং তাদের কর্মের বিবরণী ঃ ১৯০৮ সালে জুয়ান ভিসিনটি গোমেজ ভেনিজুয়েলার ক্ষমতা দখল করেন। তিনি ছিলেন বর্ণবাদী সামরিক শাসক। ১৯১৮ সালে ভেনিজুয়েলার তেল খনি থেকে তেল উৎপাদন শুরু হয়।

কিন্তু সেই তেলের অর্থ ব্যবহিত করা হয় তাঁর অর্থনৈতিক হাত শক্তিশালী করার জন্য। ১৯১০ সালে ম্যাক্সিকোতে রেভুলিউশন এবং ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ভেনিজুয়েলার ছাত্রদের মাঝে চলমান দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লবের প্রেরনা যোগায়। ১৯২৮ সালে ভেনিজুয়েলার রাজধানী কারাকাসের সেন্ট্রাল উনিভারসিটি অফ ভেনিজুয়েলার (Central University of Venezuela) ছাত্রগণ গোমেজের শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। কিন্তু গোমেজ সামরিক বাহিনীর সহায়তায় শক্ত হাতে দমন করেন। তাঁর পোষা বাহিনী ছাত্রদের উপর নির্দয় ভাবে গুলি চালায় এবং গ্রেফতার করে।

অনেক আন্দোলনকারী আহত ও নিহত হয়। ১৯৩৫ সালে গোমেজের মৃত্যু ঘটে। এরপর ক্ষমতায় আসেন ইলেয়াজার লোপেজ কন্টারিয়াস। তিনিও গোমেজের মতনই শাসন কায়েম করেন। কিন্তু ১৯৪১ সালে আইসাইসাস মেডিনা আঙ্গারিতা ক্ষমতায় এসে কিছু সংস্কারের আশ্বাস প্রদান করেন।

এরই মধ্যে ২য় বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ফলে তাঁর আশ্বাস বাস্তবায়িত হয়নি গনতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু ঃ ১৯৪৫ সালে জনগন-সেনাবাহিনী যৌথ বিদ্রোহে ক্ষমতা ছাড়তে মেডিনা বাধ্য হন। ১৯৪৭ সালের ভেনিজুয়েলায় প্রথম নিরপেক্ষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক একশন এর প্রার্থী Rómulo Gallegos বিজয়ী হন। তবে টিকতে পারেনি বেশীদিন, মাত্র এক বৎসর পরই তাঁকে হটিয়ে জান্তা সরকার ক্ষমতায় আসে Marcos Pérez Jiménez এর নেতৃতে ।

তাঁর দুঃশাসন চলতে থাকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত। ১৯৫০ ও ৬০ এর দশকে ভেনিজুয়েলা ঃ ১৯৫৮ সালে ভেনিজুয়েলার AD (Democratic Action) এবং COPEI (Christian Democratic Party) পার্টি ‘Punto Fijo’ বা ‘অনড় অবস্থান’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যার মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা। এই চুক্তি অনুযায়ী দুটি দল ১৯৫৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর তাদের দল যদি হেরেও যায় তবুও একে অন্যকে সহায়তা করবে। এই নির্বাচনে Betancourt বিজয়ী হন এবং ১৯৭৬ সালে COPEI এর প্রার্থী Rafael Caldera. বিজয়ী হন। ১৯৭০ থেকে ৯০ এর দশকে ভেনিজুয়েলা ঃ ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে AD এর প্রার্থী কার্লোস এন্দ্রেস পেরেজ নির্বাচিত হন।

ক্ষমতায় আসার পরপরই শুরু হয় দলীয়করণ আর সীমাহীন দুর্নীতি। এদিকে ১৯৭৬ সালে তেল কূপগুলো জাতীয়করণ করা হয়। একদিকে তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমতে থাকে অন্যদিকে দেশের ঋণ বাড়তে থাকে। ১৯৮৯ সালে দুর্নীতির মাধ্যমে ও সেনাবাহিনীর মদদে পেরেজ আবারও নির্বাচিত হন। এইদফায় শুরু হয় আই এম এফ এর প্রেসক্রিপশনে দেশ চালানোর কাজ।

তিনি আই এম এফ এর পরামর্শ অনুযায়ী দেশের অর্থনৈতিক খাতগুলোতে কিছু শক্ত বিধিনিষেধ আরোপ করেন। সেই শর্তগুলো ছিল ভেনিজুয়েলার মানুষের ও ভেনিজুয়েলার জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। ২৫শে ফেব্রুয়ারী ১৯৮৯ সালে এর ফলপ্রসুতিতে কারাকাসে শুরু হয় ব্যাপক দাঙ্গা ও লুটপাট। পেরেজ তাঁর পোষা সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দেন নিরীহ লোক জনের উপর হামলা করার জন্য। প্রায় ১০০০এর মত নিরীহ লোক এই হামলায় মারা যান।

এই নেক্কারজনক ঘটনাটি ভেনিজুয়েলার ইতিহাসে ‘কারাকাজো’ (Caracazo) নামে ভেনিজুয়েলাবাসী উল্লেখ করে। দিন বদলের পালা ঃ সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে শ্যাভেজের কর্মজীবনের সূচনা। জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৫৪ সালের ২৮ জুলাই, ভেনিজুয়েলার বার্নিস অঞ্চলের সাবান্তিয়া শহরে। পিতা হুগো ডি লস রয়েজ শ্যাভেজ এবং মাতা এলেনা ফ্রেইস ডি শ্যাভেজ দুইজনই ছিলেন স্কুল শিক্ষক। পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান শ্যাভেজের প্রাথমিক স্তরের পড়াশুনা শুরু হয় জুলিয়ান পিয়ানো স্কুলে।

১৭ বছর বয়সে হুগো শ্যাভেজ ভেনিজুয়েলার সমর বিজ্ঞান একাদেমীতে ভর্তি হন। সমর বিদ্যার উপর স্নাতক ডিগ্রী অর্জন সম্পন্ন করার পর ১৯৭৫ সালে সামরিক বাহিনীতে সাব লেফটেন্যান্ট হিসেবে যোগদান করেন। অধ্যায়নের প্রতি তীব্র আগ্রহের কারণেই কয়েক মাস সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করার পরই আবার পড়াশুনায় যুক্ত হন। এবার ভর্তি হন কারাকাস সাইমন বলিভার বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটিক্যাল সায়েন্সে। মূলত এই কলেজ জীবনে রাজনীতির প্রতি তার আগ্রহের সৃষ্টি হয়।

তিনিসহ বেশ কয়েকজন বন্ধু মিলে অনেকটা বামপন্থী দর্শনের ন্যায় অভিন্ন ল্যাটিন আমেরিকার মতবাদ বলিভাররিয়ানইজম এর প্রতিষ্ঠা করেন। বলিভাররিয়ানইজম শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন আমেরিকার বিখ্যাত নেতা সাইমন বলিভারের নাম থেকে। শ্যাভেজ নিজস্ব অর্থনৈতিক মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য সাইমন বলিভারের দর্শন,পেরুর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জোয়ান ভ্যালাস্কু,বিশ্ব বিখ্যাত বামপন্থী নেতা কার্ল মার্কস,ভ.ই লেনিন এবং চেগুয়েভারার মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। দর্শন, রাজনীতির ইত্যাদির পাশাপাশি এই সময় শ্যাভেজ খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত রাখেন । বেসবল এবং সফটবলে তার দক্ষতা ছিল জাতীয় পর্যায়ের।

তিনি ১৯৬৯ সনে অনুষ্ঠিত ভেনিজুয়েলা জাতীয় বেসবল চ্যাম্পিয়নশীপে একজন কৃতি খেলোয়াড় হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কবিতা, গল্প এবং নাটক রচনা করে সুনাম অর্জন করেন। পড়াশুনা শেষ করে শ্যাভেজ সক্রিয় মিলিটারি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মস্থলে যোগদান করেন। জীবনের প্রথম ভাগে তিনি ভেনিজুয়েলার বার্নিশ অঞ্চলে কাউন্টার ইনসারজেন্সি ব্যাটেলিয়নের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৭ বছরের মিলিটারি জীবনে শ্যাভেজ বিভিন্ন পর্যায়ে কমান্ড এবং স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পর্যায়ক্রমে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেলের পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত হন। এ সময় মিলিটারি সায়েন্স বিষয়ে শিক্ষকতা এবং লেকচ্যার প্রদানের মাধ্যমে সর্বপ্রথম আলোচনার পাদপ্রদীপে আসেন। শিক্ষকতার সময় তার বক্তব্য ভেনিজুয়েলার সরকার এবং অসম সামাজিক ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনায় ভরপুর ছিল। সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি ১৯৮৩ সালে বলিভারিয়ান বিপ্লবী আন্দোলন-২০০ নামে একটি দল প্রতিষ্ঠাকরেন। শাভেজের উত্থানপর্ব ঃ রাজনীতি বিষয়ক সমালোচনায় অনেক আগে থেকে শ্যাভেজ যুক্ত ছিলেন।

ভেনিজুয়েলার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার মাধ্যমে তিনি ল্যাটিন আমেরিকার রাজনৈতিক মঞ্চের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। ভেনিজুয়েলার অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্বের উর্ধ্বসূচকের কারণে প্রেসিডেন্ট পেরেজের বিরুদ্ধে জন অসন্তুষ্টি ঐ প্রেক্ষাপটে চরম পর্যায়ে উঠে। সাধারণ মানুষের আবেগকে ধারণ করে শ্যাভেজ তার সংগঠন এমভিআর-২০০ এর মাধ্যমে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায়। প্রায় ১০% ভেনিজুয়েলান সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ এবং সমর্থন তার সঙ্গে থাকার পরও অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়। শাস্তি হিসেবে ভোগ করতে হয় দুই বছরের কারাদণ্ড।

যাই হোক প্রেসিডেন্ট পেরেজ তারপরও বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। এর এক বছর পরই সে ইমপিচমেন্টের শিকার হয়ে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে তাঁকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়। জেল থেকে ১৯৯৪ সালে মুক্ত হয়ে শ্যাভেজ পুনরায় এমভিআর-২০০ পুনর্গঠনে উদ্যোগ শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ সালে শ্যাভেজ প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করে। সেসময় তার অগ্নিতুল্য বক্তব্য এবং সামাজিক সংস্কারের অর্থনৈতিক কর্মসূচী নির্বাচনী এজেন্ডা হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

১৯৯৮ সালের ৬ ডিসেম্বর ৫৬% ভোটারের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে নিরস্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে শ্যাভেজ প্রথমবারের মত ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই সংবিধান সংশোধন করার জন্য শ্যাভেজ উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ লক্ষে সাধারণ জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্য ফেব্রুয়ারিতে গণভোটের আয়োজনও হয়। গণ মানুষের প্রয়োজনীয় সমর্থন পাওয়ার সংবিধানে ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন তিনি। আবার এই সংস্কারকে বৈধতা দেয়ার জন্য ১৯৯৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর পুনরায় গণভোটে অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত গণভোটেও সংশোধনী পাশের জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন তিনি অর্জন করেন। নতুন সংবিধানে রাষ্ট্রপতির মেয়াদকাল ৫ বছরের স্থলে ৬ বছর এবং একজন রাষ্ট্রপতি সর্বোচ্চ দুইবার মতায় আসীন হওয়ার বিধান রাখা হয়। দেশের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম 'রিপাবলিকা বলিভারিয়ানা ডি ভেনিজুয়েলা' রাখা হয়। দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে এক কক্ষে পরিণত করেন তিনি। হুগো শ্যাভেজ ইতোমধ্যে সারা পৃথিবীতে মুক্ত বাজারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

ইরাক, আফগানিস্তানসহ পৃথিবীর দেশে দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনার কারণে তার জনপ্রিয়তা ল্যাটিন আমেরিকা ছাড়িয়ে এখন বিশ্বব্যাপী। ইতোপূর্বে শ্যাভেজ খোদ যুক্তরাষ্ট্রে দাঁড়িয়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশকে মদ্যপ দানব বলে আখ্যায়িত করেন। মুক্ত বাজার অর্থনীতি এবং উদারনীতিবাদের সমালোচক হিসেবে প্রায়োগিক উদাহরণ তার দেশের বিভিন্ন সেক্টরে ইতোমধ্যে স্থাপন করেছেন। ২০০৩ সালে ভেনিজুয়েলা চরমভাবে মুদ্রাস্ফীতির স্বীকার হয়। সেসময় খাদ্য পণ্যের দাম জনসাধারণের নাগালের বাইরে চলে যায়।

এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য ৪০০ প্রকার গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যদ্রব্যের মূল্য কঠোরভাবে রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। এই কারণে খাদ্য ব্যবসায়ীরা কৃত্রিমভাবে খাদ্য সংকট পরিস্থিতির উদ্ভব করে। বিপরীতে শ্যাভেজ খাদ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয়করণের মাধ্যমে জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে। তার বর্তমান শাসনামলে টেলিফোন, বিদুৎ, ইসপাত এবং স্টীল কালখানাসহ আরো বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রায়ত্ত্ব খাতে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে যে বিষয়টি ভেনিজুয়েলাকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করেছে, তা হলো ভেনিজুয়েলার পেট্রোলিয়াম নিয়ন্ত্রণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান পিডিভিএসএ'কে যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ এবং তেল স্থাপনা বহুজাতিকের কবল থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত্বকরণ।

নিজ ক্ষমতা রক্ষা এবং জাতীয়করণ কর্মসূচীকে অব্যাহত রাখতে গিয়ে শ্যাভেজের পথ খুব একটা কন্টকমুক্ত ছিল না। ২০০২ সালে তার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার স্বল্পকালীন পরেই কৌশলী বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তিনি ক্ষমতায় পুনরায় আরোহণ করেন। এর কয়েক মাস পরেই তার ক্ষমতার ভিতকে দুর্বল করে দেয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পিডিভিএসএর'র কর্মকর্তাদের একটা অংশ তেল সেক্টরে দুই মাস ব্যাপী ধর্মঘট পরিচালনা করে। ভেনিজুয়েলার প্রধান অর্থনৈতিক কাঠামো তেল সেক্টরে অরাজকতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করাই ছিল ধর্মঘটকারীদের লক্ষ।

যাই হোক এই দফায়ও তার বিরুদ্ধে খুব বেশি কিছু করা যায়নি। সর্বশেষ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ২০০৪ সালে গণভোটের আহবান করা হয়। কিন্তু বিপুল জনপ্রিয়তা এবং জনগণের আস্থার কারণে এই দফায়ও শ্যাভেজ বিরোধীরা সফল হয় নি। বিভিন্নভাবে একাধিকবার প্রমাণিত হয়েছে শ্যাভেজ বিরোধী এই সব কর্মকাণ্ডকে সুনিপুণভাবে পরিচালনা করে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, সমগ্র ল্যাটিন আমেরিকায় বালভারিয়ানইজম সমর্থকদের ক্রমাগত শক্তিশালী অবস্থান সৃষ্টির কারণে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব তাদের বাজার হারাতে বসেছে।

২০০৬ সালের ৩ ডিসেম্বর শ্যাভেজ দ্বিতীয়বারের মত ৬৩% ভোটারের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। জাতীয় সম্পদকে যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে একটা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি স্বল্প সময়ে কিভাবে আসতে পারে তার নিদর্শন শ্যাভেজ ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছেন। ভবিষ্যতেও কি ভেনিজুয়েলার রাজনৈতিক পরিবর্তনে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা থাকবে? ঃ এই প্রশ্নটির জবাব দেওয়া খুব একটা সহজ কাজ নয়। তবে এই বিষয়টি নির্ভর করে সত্যিকার অর্থে ভেনিজুয়েলার মানুষের উপর। কারণ প্রায় অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ভেনিজুয়েলায় গণতন্ত্র চলছে।

সত্যিকার অর্থেও যদি গণতন্ত্রের ইতিহাস ধরা হয়, সে ক্ষেত্রেও এর বয়স প্রায় ২০ বৎসরের কাছাকাছি অর্থাৎ হুগো শাভেজের আগমনের পর থেকে। সাধারণ জনগণ কি চাইবেন আবারও সেই ভয়ঙ্কর রকমের শাসনকর্তাদের শাসনের অধীনে যেতে ? আপাত দৃষ্টিতে দেখতে গেলে সেটা হয়ত সম্ভব হবে না কারণ জনগন তা সহজে মেনে নেবে না। জনগণ আন্দোলন শুরু করবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ,প্রতিঘাত করে অবশ্যই গণতন্ত্র কে ফিরিয়ে আনবে। তবে একটি বিষয় কিন্তু আবার উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না যে , জনগণ সামরিক শাসন একদমই মেনে নেবে না বা সেনা অভ্যুত্থানের কোন সম্ভাবনা নেই। এর জন্য দরকার বিশেষ পরিস্থিতির।

বিষয়গুলো নিম্নে উল্লেখ করা হল; হুগো শাভেজের পরবর্তী শাসকগণ যদি তাঁর মত বলিষ্ঠ নেতৃতের অধিকারী না হন। জনগণের আশা- প্রত্যাশার প্রতিফলন যদি না ঘটাতে পারেন। বৃহৎ শক্তির দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যদি সরকার পরিবর্তন করানোর লক্ষ্যে কোন অভ্যুত্থানে ইন্ধন প্রদান করে। যেমনটি করা হয়েছিলো ২০০২ সালে। অতি লোভী সামরিক প্রধানগন তাদের বাক্তিগত উচ্চাভিলাষ বাস্তবায়ন করতে চাইলে।

সাইমন বলিভার, হোসে মাতি এবং অর্নেস্- ল্যাটিন আমেরিকার তিন কিংবদন্তী। যারা এই মহাদেশের জনগণকে সাম্রাজ্যবাদী শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে থাকার স্বপ্নের সন্ধান দিয়েছিলেন। তন্মধ্যে সাইমন বলিভার অভিন্ন ল্যাটিন আমেরিকা গঠনের জন্য আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের বৃত্ত থেকে তার সেই প্রচেষ্টা খুব বেশিদূর অগ্রসর হয়নি। পরবর্তীতে ল্যাটিন আমেরিকার সম্পদ লুণ্ঠনের ভয়াবহ ইতিহাস আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।

প্রত্যক্ষ করেছি কিভাবে প্রত্যেকটি জান্তা সরকার বর্বর শাসন পরিচালনা করতেন। শোষণ এবং শ্রেণী থাকলে তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম থাকবেই। আর সেই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় '৯০ দশকের মধ্যভাগে হুগো শাভেজের উত্থান পর্ব ভেনিজুয়েলার ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেয়। তার গৃহীত অর্থনৈতিক কর্মসূচী ইতোমধ্যে ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে। বিশেষ করে ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রীয় সম্পদ পেট্রোলিয়াম এবং এর নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান পিডিভিএসএ'কে স্বায়ত্তশাসন প্রদানের মাধ্যমে তিনি সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী থেকে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হলেও নয়া উপনিবেশের বলয় থেকে তেল সম্পদকে রক্ষার কারণে শোষিত মানুষ কর্তৃক সমাদৃত হয়েছেন।

শোষণের বলয় থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সাইমন বলিভারের দর্শন ল্যাটিন আমেরিকার দেশে দেশে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। নয়া উপনিবেশ বিরোধী সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কিউবার সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্কও তিনি নির্মাণ করেছেন। ইতোমধ্যে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস, নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট দানিয়েল ওর্তেগা, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভাকে তার মতাদর্শ অর্থাৎ অভিন্ন ল্যাটিন আমেরিকা নির্মাণের সমর্থকে পরিণত করেছেন। এইসব কারণে শ্যাভেজ আধুনিক সময়ে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের একজন মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। তার এই পথচলা খুব একটা সহজ ছিল না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রতিনিয়ত হুমকী, অবৈধ অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টাসহ বিভিন্নভাবে তাকে উৎখাতের জন্য একাধিক ষড়যন্ত্রের পটভূমি নির্মিত হয়েছে। কিন্তু তার দূরদর্শিতা এবং বুদ্ধিমত্তার কারণে প্রতিবারই তিনি ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিতে সামর্থ্য হয়ছেন আর সাম্রাজ্যবাদীগণ হয়েছে মর্মাহত। একথা আজ বলতে বাঁধা নেই যে ভেনিজুয়েলার রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের বিষয়টি নিয়মিত থেকে অনিয়মিতের দিকে যাচ্ছে। হয়ত হুগো শাভেজের কল্যাণে আর কিছুদিন পরে সামরিক শাসকদের নখের আঁচড় ভেনিজুয়েলার বুক থেকে চিরতরে মুছে যাবে, আমরা তো এমনটি আশা করি। কারণ ভেনিজুয়েলা আজ শক্ত শাসকের শক্ত হাতে রুপান্তরের দিকে যাচ্ছে।

=========তথ্য সূত্র=========  A short history of Venezuela – new Internationalist magazine 2006  THE CRISIS IN VENEZUELAN CIVIL-MILITARY RELATIONS. By: Trinkunas, Harold A., Latin American Research Review, 00238791, 2002, Vol. 37, Issue 1  POLITICS: U.N. CHIEF STRESSES RULE OF LAW IN VENEZUELA DISPUTE- by -Byline: Deen, Thalif. Publication Date: 01-17-2003  The Caudillo in His Labyrinth Moynihan, Michael C Reason 11-01-2007  Sullivan, Mark P. "Venezuela: issues in the 111th Congress." Congressional Research Service (CRS) Reports and Issue Briefs. Congressional Research Service (CRS) Reports and Issue Briefs, 2010.Academic OneFile. Web. 28 July 2011.  Country review of 2011 by http://www.countrywatch.com  http://www.en.Wikipeadia.com  Venezuela ; the wind of change. ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।