আনাড়ী রন্ধন শিল্পীর ব্লগ B-)। ব্লগের বাজে-মানহীন লেখাগুলোর মাস্টার পিস দেখতে চাইলে এই ব্লগারের পোষ্ট গুলো পড়ে দেখতে পারেন। কথা দিচ্ছি, নিরাশ হবেন না। B-) আমি সাধারনত হুমায়ুন আহমেদের বই তেমন পড়ি না। কেন যেনো আমার তেমন ভাল লাগে না (হয়ত হুমায়ুন আহমেদ প্রেমীরা আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছেন)।
গতকাল এক আপুর বাসায় গিয়ে চলে আসার এক পর্যায়ে যশোহা বৃক্ষের দেশ বইটা নেড়েচেড়ে বললাম বইটা নিয়ে যাই। আপু বলে নিলে নিতে পারো তবে চরম বিরক্তিকর বইটা। শুনে একবার রেখে আসতে চেয়েও আবার কি মনে করে হাতে করে নিয়ে আসলাম। বইটা শেষ করে বুজলাম চরম মজা মিস করতাম বইটা রেখে আসলে।
আপনারা হয়ত পড়েছেন তার পরেও একটু বিশ্লেষন করলাম।
আসলে শান্তি পাচ্ছিলাম না না লিখে। তাই....
নেভার নেভার ল্যান্ড
বইয়ের শুরুতেই অসহনীয় গরমকে সহনীয় করার পদ্ধতিটা বেশ মজা লাগে। চোখ বন্ধ করে বরফের দেশের কথা ভাবা! লোকটা পারেও...!
গরমে ঠান্ডার কথা চিন্তা করতে করতে এক সময়কর স্মৃতিময় ফার্গো শহরে চলে যান এবং সেখান থেকে আমেরিকা যাওয়ার প্ল্যান করেন।
মেয়েদের মতামত নিতে চাইলে তার সাথে মেয়েরা যাবে না বলে যে কারন গুলো দেখায় তা বেশ মজা লাগে। বড় মেয়ে পরীক্ষার কারন দেখায়।
মেজো মেয়ে ভাবে বাবা সেন্টমার্টিন যাবে তাই রাজী হয় না। ছোট মেয়ের কারনটা সবচেয়ে মজা লাগে। অভিযোগের সুরে বলে "তুমি যেখানে যাবে একগাদা লোক সংগে নিয়ে যাও। ওদের সংগে গল্প করো আমার ভাল লাগে না। " হা হা....হুমায়ুন আহমেদের যোগ্য মেয়ে! অথচ এই পিচ্চিটাই কিন্তু পরে অথচ আমারিকার কথা শুনেই এঁটো হাতেই দৌড়ে গিয়ে ফোনে বান্ধবীকে ফোনে খবরটা জানায়।
প্লেনে ওঠার আগে সদ্য কথা শেখা ছেলে নুহাশ বলে, "আমি এত বড় প্লেনে উঠবো না, ছোট প্লেনে যাবো ছোট্ট একটা পিচ্চি হাত পা ছুড়ে এসব বলছে, অবস্থাটা এক বার কল্পনা করেন!
নায়ে-গরা
আমেরিকা গিয়ে ফ্যামিলি সহ নায়াগ্রা যাওয়ার আগে পুরো ফ্যামিলিকে উপস্থাপন করে এভাবে "আমার ব্যাটেলিয়ন পুত্র-কন্যা এবং স্ত্রী সব মিলিয়ে ছয়জন রওয়ানা হলাম ট্রেনে" বেচারা এই ব্যাটেলিয়ন নিয়ে ট্যাক্সি এবং হোটেল ভাড়া করতে যেয়েও ঝামেলায় পড়েন।
নিলাম ওয়ালা ছ আনা
এখানে লেখা উপস্থাপন করেন স্ত্রী-কন্যা নিয়ে ৯৯ সেন্টের দোকানে যেয়ে কি অবস্থায় পড়েন সে কথা। নিজে সামনে মেয়েদের সাপোর্ট দিয়ে পেছনে বউকে বলেন শাসন করতে। এতে মেয়েরাও খুশী বউ ও খুশী। তবে বাচ্চাদের কন্ট্রোল করতে যেয়ে বউ নিজেই মজে যায় শপিংয়ে।
মরুভূমির জোছনা
জোছনা পাগল লেখকের খুব ইচ্ছে মরুভূমিতে জোছনা দেখার। আর তাই আমেরিকার মাহজি ডেজার্টে পূর্ণিমা কাটানোর মনস্থির করলেও বিভিন্ন বাধায় ব্যবস্থা না হলে যাওয়ার আশা ছেড়ে দিলেও চরম ভাগ্য গুণে সুযোগ পান লাস ভেগাস থেকে ফেরার পথে গাড়ী নষ্ট হয়ে গেলে। ভরা পূর্ণিমায় চাঁদের আলোয় মরুভূমিতে যেভাবে ক্যকটাসের বর্ণনা দেন পড়তে পড়তে আমিই এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিলো নিজেই চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি সে দৃশ্য!
কি আনন্দ কি আনন্দ!
এ পর্যায়ে বর্ণনা করেছেন আমেরিকানদের উদ্ভট পাগলামীর কথা। ১৫ তলা থেকে কোমড়ে রশি বেধে ধপাস করে লাফিয়ে পড়ে মজা করা! আসলেই হরিবল।
আমেরিকানদের দিয়েই সম্ভব এসব!
আমার মা'র আমেরিকা
লেখকের মায়ের আমেরিকা ভ্রমন কাহিনী দারুন মজা পেয়েছিলাম। নিউইয়র্ক নাকি চরম ব্যস্ত্য শহর কিন্তু সেখানকার মানুষ দেখেও তার কম মনে হয়েছে!
চরম মজা পেয়েছিলাম যখন কয়েকদিন কবরে দোয়া পড়ে এসে জানতে পারলেন এতদিন কুকুর-বেড়ালের কবরে দোয়া পড়েছেন এতদিন।
এইটুকু পড়ে কিছুক্ষন দুই ঠোট এক করতে পারিনি হাসিট চোটে। এর চেয়ে বেশী মজা পেয়েছি অবশ্য আরেক জায়গায়। সে কথা পরে বলছি।
মালিন্ডা, ফার্ষ্টলেডী অব ম্যাজিক
লাসভেগাসে যেয়ে স্ত্রী-মেয়েদের নিয়ে কিরকম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলেন যে কথাই বলেছেন এখানে। বহুত খুজে-টুজে বাচ্চাদের উপযোগী ম্যাজিক দেখতে যেয়ে কি চরম ধরাটাই না খেলেন প্রথমে। তবে পরবর্তীতে ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করেন এভাবে- লেখকের ভাষায়, "আমি বললাম মেয়েটি কি পোশাক পড়ে ম্যাজিক দেখিয়েছে সেটা বড় কথা না। ম্যাজিক কেমন দেখিয়েছে সেটা বড় কথা আমরা তার সৃষ্টিকে দেখবো। তাকে দেখবো না।
" কথাটা ভাল লেগেছিলো বেশ।
যশোহা বৃক্ষ
গ্রান্ড ক্যানিয়ন দেখতে যাওয়ার পথে এক প্রকার বৃক্ষের ক্ষুদ্র অরন্য। গাছ গুলোর বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে-- "দৈত্যাকৃতি ক্যাকটাস গাছ--আবার ঠিক ক্যাকটাসও নয়--কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলে এদের লোমশ প্রানীর মত মনে হয়। "
বৃক্ষগুলোর সৌন্দর্যে এমনই প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন যে যার উদ্দ্যেশে যাওয়া অর্থাৎ পৃথিবীর সপ্তম প্রাকৃতিক আশ্চর্যের প্রধান আশ্চর্য গ্র্যান্ডক্যানিয়নের সৌন্দর্য যশোহা বৃক্ষের সৌন্দর্যের কাছে ম্লান হয়ে যায়!
৮ম নর্থ আমেরিকা-বাংলাদেশ মহা সম্মেলন
আমেরিকায় বাংলাদেশীদের এক সম্মেলন হয়েছিলো যেখানে লেখককে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং ছোট্ট একটি বক্তৃতা দিতে বলা হয়।
বক্তৃতা দেওয়ার আগ মুহুর্তে লেখকের মনে পড়ে তিনি একটু আগে টয়লেটে যান এবং তিনি শিউর না প্যান্টের জিপার লাগিয়েছিলেন কিনা।
সেই টেনশনে নাকি চরম আবেগময় বক্তৃতা দেন!
মজা পেয়েছিলাম বেশ।
আমার সোনার বাংলা
একমাস ভ্রমনের পরে দেশে ফেরার আগে পুরো ভ্রমনটি কার কেমন লাগলো যাচাই করার জন্যে মেয়েদের জিজ্ঞেস করেন আমেরিকায় ঘুরে কার কি বেশী ভাল লেগেছে। বড় মেয়ের সবচেয়ে ভাল লাগে খজখজে তকতকে পাবলিক টয়লেট। এটা শুনে লেখক যা বলেন তা তার জবানিতে না দিলে মজা পাবেন না। তাই লেখকের ভাষায়-ই
= বিশাল আমেরিকায় তোমার পছন্দ হলো ওদের পায়খানা?
=> হ্যা।
পায়খানা শব্দটা তুমি উচ্চারন না করলেও পারতে।
= জিনিস কিন্তু মা একই। আগে আমরা বলতাম টাট্টি। শব্দটা দীর্ঘ ব্যাবহারে নষ্ট হবার পর বলা শুরু হয় পায়খানা। এটিও যখন নষ্ট হয়ে গেল তখন বলছি টয়লেট।
এই শব্দটিও এখন নষ্ট হয়ে গেছে......
অংশটুকু পড়ে কিছুক্দন মুখ বন্ধ করতে পারিনি হাসিট চোটে যা আগে একবার হয়েছিলো লেখকের মার কুকুর-বেড়ালের কবর জেয়ারতের কথা পড়ার পরে হয়েছিলো।
মোটের উপর দারুন মজা পেয়েছি বইটি পড়ে। ইতোঃপূর্বে হুমায়ুন আহমেদের কোন বই পড়ে মনে হয় এমন মজা পাইনি এই বইটি পড়ে যতটা পেয়েছি।
দৃষ্টি আর্কষণ: আমি সাহিত্য গবেষক বা সমালোচক না। বইটি পড়ে আমার ধারনা টুকুই শেয়ার করলাম।
একান্তই আমার চিন্তাটুকু। কারো ভাল না লাগলে কিছু করার নেই আমার বিনীতভাবে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া।
যে দুটি কথা আমার খুব মনে ধরেছে তা হলো.....
১। ভয়াহ সৌন্দর্যের সামনে বেশীক্ষন থাকতে নেই
২। অলৌকিক সৌন্দর্য দ্বিতীয়বার দেখতে নেই
শেষ কথা: বইটা পড়ার পর আমার খালি মনে হচ্ছে গুলতেকিন এবং তার ছেলেমেয়েদের কেমন লাগে এখন যখন বইটা দেখে.....
ধন্যবাদ সবাইকে কষ্ট করে পড়ার জন্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।