আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আনিতার জন্য ভালোবাসা- ৩য় ও শেষ পর্ব ( আগের দুই পর্ব সহ)

নতুনদিনের মিছিলে,একজন বেয়নেটধারী সৈনিক ১ম পর্ব (প্রথম পর্ব) ছোড়দার চলে যাওয়া............ আনিতার সাদামাটা জীবনে এতোদিন একমাত্র উপদ্রব ছিলো, ছোড়দার খুনসুটি। ছোড়দাও এখন আর অতবেশী জ্বালায়না। কয়েকদিনপর দেশের বাইরে চলে যাবে। তাই মন খারাপ করে বসে আছে। যেনো অগ্যস্ত যাত্রা! সবাই সারাদিন বোঝাচ্ছে, "আরে বাপু, এখনতো আর চিঠির যুগ না।

টেলিমিডিয়ার এই যুগে দূরে গেলেও কি দূরে থাকা যায়? বাটন টিপলেই কথা হয়ে গেলো। কম্পিউটারের মনিটরের সামনে বসলেই দেখা হয়ে যাচ্ছে। একেবারে সকালের আয়না দেখার মতো করে। " ছোড়দার মন তবু ভালো হয়না। মুখ কালো করে মায়ের কোলে মাথা রেখে বলে, "দেখবো ঠিকই, কিন্তু তোমাকে ছুঁতে পারবোনা।

" মা মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। আনিতা ছোড়দার এই বিষন্ন ভাবের আরেকটা কারন আবিস্কার করেছে। মৌমিতাদি। পাশের বাসার দিদি। ছোড়দার সাথে তার প্রেম।

বাসার কেউ জানেনা। অথচ আনিতা জানে। সেদিন সুমীর সাথে কলাভবনের পাশে দাঁড়িয়ে চটপটি খাচ্ছিলো আনিতা। হঠাৎ দেখে, ছোড়দা আর মৌমিতাদি। রিকশায় করে কোথাও যাচ্ছিল।

মৌমিতাদি বউদি হলে বেশ হয়। মৌমিতাদিকে বড় ভালো লাগে আনিতার। কত আদর করেন। আর কি সুন্দর হাসেন। এই কদিন স্কুল বন্ধ।

বন্ধ মানে আর সব বছরের মত বন্ধ নয়। সামনে এস.এস.সি ফাইনাল। তার প্রস্তুতি চলছে। আনিতা এইবার এস.এস.সি দেবে। পড়াশুনা কিচ্ছু হচ্ছেনা।

নির্ঘাত ফেল মারবে। তার মাথা ছোড়দার মত তুখোড় নয়। ছোড়দা কি সুন্দর স্কলারশিপ বাগিয়ে নিয়েছে। আজীবন ফার্ষ্ট বয় ছিলো। তার দ্বারা ওসব হবেনা।

মা বলেন, ইন্টার পাস করলেই বিয়ে দিয়ে দিবেন। সেটা হলেই ভালো। আর পড়তে হবেনা। দুৎ! আনমনে লজ্জা পেলো আনিতা। এসব কি ভাবছে! ওই ছেলেটাই যত নষ্টের গোড়া।

বাসা থেকে বেরুলেই পিছু নেয়। কোন জ্বালাতন করেনা। অনেক দূর থেকে শুধু তাকিয়ে থাকে। স্কুলের গেট পর্যন্ত গিয়ে আনিতা বহুবার পেছনে তাকিয়েছে। নাহ, কোনদিন দেখা যায়নি।

পিছু নিয়ে আবার কোনফাঁকে যে পালিয়ে যায়, টের পাওয়া যায়না। পাগল একটা। ভুতের মতো করে আসে, আবার ভুতের মত করে ভ্যানিস হয়ে যায়। ছোড়দা চলে গেলে বড্ড একা হয়ে যাবে,আনিতা। ................. ২য় পর্ব (দ্বিতীয় পর্ব ) এবং ভালোবাসা......... ছোড়দা চলে যাওয়াতে ঘরটাকে বড় খালি খালি মনে হচ্ছে।

এখন আনিতা চাইলেই চুলগুলো খোলা রেখে শান্তিতে পিঠে এলিয়ে দিতে পারে। ছোড়দার হঠাৎ এসে টেনে ধরার ভয়টুকু নেই। সন্ধ্যায় পড়া বাদ দিয়ে টিভিটা খুলে দেখলেও, কেউ এসে রিমোট কেড়ে নেবেনা। শাসন আর আদরের জায়গাটুকু অভিমান জায়গা করে নিয়েছে। কেনো গেলো! না গেলে কি হতো? কি হবে, অতসব ছাইপাঁশ পাস করে! ছোড়দার উপর রাগ হয় আনিতার।

কাল ফোন দিয়ে মার সাথে অনেকক্ষন কথা বলেছে। একবারও তাকে চায়নি। আনিতা কতবার মায়ের আশেপাশে ঘুরে এসেছে। মার কথাই যেনো শেষ হয়না। তারপর গিয়ে দেখে মায়ের কথা বলা শেষ।

মা ফোনটা টেবিলে রেখে কোথায় যেনো গিয়েছেন। ছোড়দা তাকে খোঁজেনি! তাকে চায়নি! ফোনটাকে গালে লেপ্টে ছোড়দাকে অনুভব করার চেষ্টা করেছে আনিতা। ছোড়দাটা কি পাজী! আনিতা আশায় থেকেছে ওপাশ থেকে ছোড়দা বলবে, খুকি, রাগ করেছিস? না কেউ কিছু বলেনি। নিজের রুমে ফিরে এসে অনেক্ষন কেঁদেছিল আনিতা। আজ বিকেলে নাসিম স্যারের কোচিং এ যেতে হবে।

গতকয়েকদিন যাওয়া হয়নি। সকালে অর্পিতা ফোন দিয়েছিলো। আজ নাকি সাজেশন দিবেন স্যার। যারা আসবেনা, তাদের দেয়া হবেনা। দুপুরের পরে তাই আর ঘুমানো হয়নি।

স্যারের কোচিং ৪.৩০ এ শুরু হবে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৩.৪৭ বাজে। তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে বসে। রেডী হতে হবে। স্যারের বাসা বেশী দুরেনা।

কাছেই। যেতে বেশীক্ষন লাগবেনা। বাসা থেকে বের হয়ে আনিতা রিকশা খুজছিলো। তাকিয়ে দেখে ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে হাসলো।

ছেলেটার হাসিটা বেশ। দেখতে ভালো লাগে। আনিতাও ভুল করে হেসে ফেললো! সর্বনাশ হয়ে গেলো! কি দরকার ছিলো হাসার! এখন কি হবে? ছেলেটা এগিয়ে আসছে। কি বলবে! বাসার কেউ যদি দেখে ফেলে! কি হবে! নিজের উপর রাগ হলো আনিতার। ছেলেটা কাছে এসে বললো," রিকশা খুঁজছেন? একটু সামনে এগিয়ে গেলে পাবেন।

" আনিতা কোন উত্তর দিলোনা। সামনে এগোতে লাগলো। ছেলেটা বললো, " আমি আপনার সাথে যদি হাঁটি, রাগ করবেন?" -"কেনো?" -"এমনি। " বলে ছেলেটা আবার হাসলো। "আচ্ছা, ঠিক আছে।

আপনি একাই হাঁটুন। আমি যাচ্ছি। " ছেলেটা চলে গেলো। আনিতার মনে হলো, চলে না গেলেই ভালো হতো। আজকে না হয় হেঁটেই কোচিং এ যেতো।

নিজের মনের ভাবনায় চমকে উঠলো আনিতা। এসবের মানে কি! সে কি ছেলেটাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে! সমস্ত শরীর-মন ঝনঝন করে বেজে উঠলো আনিতার। ভালোবাসা! (৩য় পর্ব ও শেষ পর্ব ) ছেলেটা আজ আর আসেনি............. কোচিং থেকে ফিরে আনিতা সারাটা সন্ধ্যা বারান্দায় পেতে রাখা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ছিলো। দৃষ্টি বারবার গলির মোড়ের ল্যাম্পপোষ্ট ঘুরে এসেছে। নাহ।

নেই। আনিতার কান্না পেলো। ছেলেটা তার ফেরার পথে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকে। আজ ছিলোনা। নিশ্চই রাগ করেছে।

করবেইতো। আনিতার কি দরকার ছিলো, অমন করে বলবার। মুখটাকে শক্ত করে কথা বলার। ছেলেটাতো অন্যায় কিছু বলেনি। শুধু একটু হাঁটতে চেয়েছে।

নিজেকে বড় অহঙ্কারী মনে হলো,আনিতার। মা চা খেতে ডাকছে। ধুর ইচ্ছে করেনা, চা খেতে। গেলোনা আনিতা। - কি রে কতক্ষন ধরে ডাকছি।

শুনিসনা? বারান্দা অন্ধকার করে বসে আছিস কেনো? মা এসে বারান্দার লাইট জ্বেলে দেন। দেখেন, আনিতা কাঁদছে। -কি রে, কাদছিস কেনো? কি হলো,আবার! মা কে দেখে আনিতা চমকে উঠে! কি বলবে! মাকে কিভাবে বলবে, সে কেনো কাঁদছে! - ছোটনের কথা মনে পড়ছে বুঝি? পাগলি মেয়ে। মায়ের কথায় খেই ফিরে পায় আনিতা। মা ভেবেছেন, ছোড়দার জন্য কাঁদছে।

-যাও, মা। আমি মুখ ধুয়ে আসছি। নিজেকে সামলে নেয় আনিতা। বেসিনে দাঁড়িয়ে অনেক্ষন ধরে মুখ ধোয়। চায়।

আয়নার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে, আর কখোনো না। আর কখনো তোমাকে কষ্ট দেবোনা। কাল, তুমি আবার এসো। সারাটা বিকেল হাঁটবো। শুধু,আমরা দুজন।

কাল স্যারের কাছে যাবোনা। দিনের পর দিন কেটে গেলো। কত পাতা ঝরার দিন গেলো। ছেলেটা আর আসেনি। আনিতার পিচ্ছি বাবুটা আজ বড় হচ্ছে।

তবু ছেলেটার কথা মনে আছে, মনে পড়ে। ছেলেটাকে আর কখোনোই দেখা যায়নি। কোথাও না। আনিতা, ভোলেনি ছেলেটা নিচ্ছয়ই ভুলে গেছে। মনে রাখেনি, আনিতাকে।

মনে রাখেনি, আনিতার জন্য তার ভালোবাসা।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।