maanush84@yahoo.co.uk মনা ডাকাত পেশায় একজন বিশিষ্ট ডাকাত। বিজ্ঞজন অবশ্য তাহার নাম সেটা শুনিয়াই বুঝিতে পারিবেন। ফ্যামিলি নেম যেহেতু "ডাকাত" সেইহেতু তাহাদের বংশানুক্রমিক ডাকাতির ইতিহাসও খুলিয়া না বলিলেও চলিবে। তা মনা যে ডাকাত ইহা লইয়া সে মোটেও লজ্জিত নহে। এই ঘোর কলি যুগে আকছার ডাকাতি হইতেছে।
খোদ আমেরিকার মতো ম্লেচ্ছ দেশীয় পরাশক্তি দিনে দুপুরে যেখানে সেখানে ডাকাতি করিয়া বেড়াইতেছে আর সে তো রাত আনে দিন খায়। ডাকাতি করিতে গিয়া সে দু-একবার ধরা পড়িয়া যে গণপিটুনি খায় নায় এমনটিও নহে। তবে কিনা আস্ত পদ্মা সেতু ডাকাতি করিতে গিয়া ধরা খাওয়া আবুল ডাকাত যদি অদ্যাবধি স্বীয় পেশায় বর্তমান থাকে তবে সে থাকিবে না কেন? তাহা ছাড়া সে অন্য অনেকের মতন তো নির্লজ্জ পুকুর চুরি করিয়া বেড়াইতেছে না। সুতরাং বলা চলে তাহার ডাকাতির অভ্যাস লইয়া কাহারো কোন কালে কোন অভিযোগ ছিল না। তবে কিনা মনার একটাই দোষ সে বিনা ক্লেশে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে, অবলীলায় মিথ্যা বলিয়া বেড়ায়।
বিজ্ঞজন এইক্ষনে প্রতিবাদ করিয়া বলিতে পারেন, "আহা এই ঘোর কলি যুগে কত পলিটিকাল লিডারইতো জনগণের সম্মুখে মুলোটা ঝুলাইয়া, ইলেকশনে ভোট বাগাইয়া অতঃপর মুলোর বদলে অপক্ব কদলী প্রদর্শন পূর্বক কাটিয়া পড়ে, সেই-স্থলে নমঃশূদ্র মনা ডাকাতে দুই চারিটি মিথ্যার ফুলঝুরিতে আর কিই বা যায় আসে" । তা সেই কাহিনী বলিতেই এই গল্পের অবতারণা ।
মনার তখন বাড়ন্ত বয়স। সহপাঠীদের নিকট হইতে নিত্য কলাটা মুলোটা ডাকাতি করিয়া বেড়াইতেছিল সে। প্রতিবেশীদিগের নিয়মিত নালিশ হেরিয়া মনার পিতৃদেব অনুধাবন করিলেন, পুত্র লায়েক হইয়াছে, এইক্ষনে তাহাকে বিষয় কর্মে ঢুকাইয়া দেওয়া চলে।
অতঃপর মনার মাতার শত ক্রন্দন, ওজর-আপত্তি উপেক্ষা করিয়া মনাকে এক আন্তঃজেলা ডাকাতের দলে ভর্তি করিয়া দেওয়া হইল। তা সেখানে তাহার দিন কাল খারাপ যাইতেছিল না। দিব্যি প্রত্যহ রাত্রিকালে পথে-ঘাটে ওত পাতিয়া চলমান নৈশ-কোচের ঘুমন্ত যাত্রীগণের যাত্রাভঙ্গ করিয়া বেড়াইতেছিল সে। হেনকালে হায় যমদূত প্রায়, কোথা হতে এলো RAB। ইতঃপূর্বে পুলিশ ভাইয়াদের সহিত তাহার ডাকাত দলের যথেষ্ট দহরম মহরম বিদ্যমান ছিল।
নিয়মিত বখরা পাওয়ায় পুলিশ ভাইয়ারাও তাহাদের পাহারা দিয়া আসিতেছিল। কিন্তুক এই RAB বাহিনী মোটেও বন্ধু ভাবাপন্ন নহে। তাহাদের ধারে কাছে ঘেঁষিবার উপায় নাই। দেখিতে পাইলেই ধরিয়া ধরিয়া ক্রসফায়ার করিয়া দেয়। ডাকাতের দল তাহাদের ভয়ে চোরের মতন লুকাইয়া থাকে।
তাহাদের ইজ্জতের শেষ টুকরাটিও হাতছাড়া হইবার উপক্রম। তো ডাকাতির এই ক্রান্তিলগ্নে কোন এক প্রত্যুষে ডাকাত সর্দার ভগ্ন হৃদয়ে গাড়ু হস্তে বনভূমিপানে ছুটিতেছিলেন প্রাতঃক্রিয়া সম্পন্নের উদ্দেশ্যে। হেনকালে মনার গগনবিদারী চিৎকার, RAB আসিতেছে, RAB আসিতেছে। RAB-এর কথা শুনিয়া সর্দারের আর বনভূমিতে প্রবেশ করা হইল না, পথ প্রান্তেই কর্ম সম্পাদিত হইয়া গেল। সকলে ছুটিয়া বাহির হইয়া দেখিল মনা হাসিয়া গড়াগড়ি খাইতেছে আর সর্দার বিরস বদনে কিংকর্তব্যবিমুঢ় অবস্থায় দণ্ডায়মান।
সর্দারের অবস্থা দেখিয়া সকলে মুখ টিপিয়া হাসিলেও উপরে উপরে মনাকে একচোট দেখিয়া লইল। অতঃপর দুই দিন যাইতে না যাইতেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। তারপর আবার। শেষে অবস্থা এমন দাঁড়াইল যে মনার ডাক না শুনিলে সর্দার প্রকৃতির ডাকে ঠিক ঠাক মতো সাড়াই দিতে পারেন না।
তো এইভাবে সুখে-দুঃখে, কায়-ক্লেশে তাহাদের দিনাতিপাত হইতেছিল।
হয়ত এইভাবেই মিথ্যা বলিতে বলিতে আর ডাকাতি করিতে করিতে মনা এক সময় বড় নেতা হইতে পারিত। কিন্তু বিধি সকলের ললাটে চির সুখের তিলক রচনা করেন না, মনারও করেন নাই। একদিন প্রত্যুষে মনা যখন সর্দারের জন্য ঘাপটি মারিয়া বসিয়া রহিয়াছে ঠিক সেই সময় অবলোকন করিল সত্যি সত্যিই RAB আসিতেছে। মনা RAB আসিতেছে বলিয়া তারস্বরে চিৎকার করিয়া উঠিল। তাহার হাঁকাহাঁকি শুনিয়া সর্দার গাড়ু হস্তে টুক করিয়া জঙ্গলে প্রবেশ করিলেন, ডাকাত দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিরক্ত হইয়া কম্বলের তলদেশে পাশ ফিরিয়া শুইলেন।
কেউ কেউ মনার চতুর্দশ গোষ্ঠীর পিণ্ডি চটকাইতে লাগিল আর বাকিরা শুনিয়াও শুনিল না। মনা বুঝিল অবস্থা বেগতিক। সে স্বীয় লুঙ্গিখানি মালকোঁচা মারিয়া ঝড়িয়া একখানা দৌড় দিল, উক্ত কর্মে সে চিরকালই বিশেষ পারদর্শী।
তাহার পরের কাহিনী সংক্ষিপ্ত। পরদিন খবরেরে কাগজে খবর বাহির হইল ডাকাত দল বমাল সমেত গ্রেপ্তার।
সাথে গাড়ু হস্তে ডাকাত সর্দারের একখানা বিরস বদন ছবিও শোভা পাইতে লাগিল। তাহাদের ক্রস ফায়ার হইয়াছিল কিনা তাহা জানা যাই নাই। হইলে খবরের কাগজে অস্ত্র উদ্ধারের সংবাদ আপনারা নিশ্চয় পাইতেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।